#ভালোবাসার বন্ধন
#পর্ব_০২
#অধির_রায়
তূর্জয় মিহুকে এতটাই জোরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে মিহু নড়তেও পারে না৷ মিহু সহ্য করতে না পেরে কান্না করে দেয়৷ মিহুর চোখের জল দেখে তূর্জয় মিহুকে ছেড়ে দেয়৷
— সামান্য আঘাত সহ্য করতে পারো না। সামনে অনেক বড় বড় আঘাতের সাথে মোকাবেলা কিভাবে করবে?
মিহু মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে৷ তূর্জয়ের প্রশ্নের কোন জবাব দিচ্ছে না৷ যা তূর্জয়কে আরও ক্ষেপিয়ে তুলছে৷ তূর্জয় মিহুকে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে৷
— “এই মেয়ে আমাকে ইগনোর করার সাহস কি করে হয়? আমার কথার জবাব কই? কোন প্রশ্ন করলে তার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবে।” চোখ পাকিয়ে বলে উঠে।
— মিহু কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে, ” আসলে আমি আপনার কথা বুঝতে পারিনি!”
— এখন কথা না বলে রেডি হয়ে তারাতাড়ি নিচে নেমে আসো৷ সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে৷
মিহু কিছু বলতে নিবেই তার আগেই রুম থেকে তূর্জয় হন হন করে বেরিয়ে যায় ৷ মিহুর কথা শুনার তার কাছে একটুও সময় নেই৷
মিহু নিজের মতো করে হালকা মেকআপ করে। হলুদ রঙের একটা লেহেঙ্গা পড়ে নিচে চলে আসে৷ রাতে রুম পরিষ্কার করার সময় কিছু তাজা ফুল মিহু লুকিয়ে রাখে। সেই ফুলগুলো দিয়ে কোনো রকম কেশগুলো বেঁধে রেখেছে৷ মিহু বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে আসতে ভয় পাচ্ছে৷ সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছে৷ মিহু জানতো না, এখনও বাড়ি ভর্তি লোক থাকবে৷
তূর্জয়ের মা খেয়াল করে মিহু সিঁড়িতে আপসেট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তূর্জয়ের মায়ের বুঝতে বাকি রইল না মিহু ভয় পাচ্ছে। তিনি এগিয়ে এসে মিহুর কাঁধে হাত রাখে।
— এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো? নিচে চলো?
— ছোট ছোট করে ” আসলে মা আমি..
— বলতে হবে না। আমি সব বুঝি৷ চলো আমার সাথে৷
তূর্জয়ের মা মিহুকে নিচে নিয়ে এসে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়৷ মিহু তো ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করছে৷ গতকাল থেকে কিছু খায়নি৷
— “ভাত কাপড়ের অনুষ্ঠানটা হয়ে যাক৷” পিসি মনি পিছন থেকে বলে উঠেন।
— হ্যাঁ ঠিক বলছো। ভাত-কাপড়ের অনুষ্ঠানটা হয়ে যায়৷ (তূর্জয়ের মা)
তূর্জয়ের মা মিহুকে ডাইনিং রুমে নিয়ে আসে৷ মিহু তো আবাক! এত বড় করে ভাত কাপড়ের আয়োজন করবে ভাবতেও পারেনি৷ তার থেকে বেশি অবাক তূর্জয়কে দেখে৷ তিনি তার বন্ধুদের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে৷ দেখে মনে হচ্ছে তূর্জয় এই বিয়েতে তিনি সব থেকে বেশি খুশি৷
ভালোই ভালোই ভাত কাপড়ের অনুষ্ঠান মিটে যায়৷ মিহু তো ভেবে নিয়েছিল তূর্জয় তার ভাত কাপড়ের দায়িত্ব নিবে না৷ কিন্তু তার ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিল তূর্জয়।
রাতের বেলা রিসিপশন পার্টিতে মিহু আর তূর্জয়কে পাশাপাশি বসানো হয়েছে৷ সবাই তাদের অনেক প্রশংসা করছে৷ হুট করেই তূর্জয়ের একটা ফোন আসে, তূর্জয় চলে যায় সেখান থেকে৷ তূর্জয়ের কিছু খারাপ ফ্রেন্ড মিহুকে ঘিরে ধরে,,
মিহুর কোমরে হাত দিয়ে পিছন থেকে নির্ঝর জড়িয়ে ধরে৷ মিহুর কানে কানে বলে উঠে ” মিহু পাখি তুমি কি করে পারলে তূর্জয়কে বিয়ে করতে?” আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।
— “ছাড়েন আমাকে? কে আপনি?” ক্ষেপে বলে উঠে মিহু।
— মিহু পাখি তুমি রাগ করলে তোমাকে খুব সুন্দর লাগে৷ তোমার গালগুলো স্ট বেরির মতোন হয়ে যায়।
মিহু আশে পাশে তূর্জয়কে দেখতেও পাচ্ছে না৷ সকলে মিহুকে চারিদিক থেকে ঘিরে রেখেছে৷ ভিতরে কি হচ্ছে কিছু দেখা যাচ্ছে না? মিহু কোন উপায় না পেয়ে নির্ঝরের পায়ে উঁচু হিল দিয়ে এক লাথি৷ লাথি সহ্য করতে না পেরে নির্ঝর মিহুকে ছেড়ে দেয়৷
— তোকে আমি ভালোই ভালোই বলেছিলাম আমাকে ছেড়ে দে। কিন্তু তুই আমার কথা শুনলি না৷ এইজন্য তোর এমন অবস্থা।
সবাই মিহুর দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই তূর্জয় এসে যায়৷
— কি হচ্ছে এখানে? (তূর্জয়)
তূর্জয়ের কন্ঠ পেয়ে সকলে একটু দূরে সরে দাঁড়ায়৷ তূর্ণ বলে উঠে ” বউদির সাথে কথা বলতে এসেছিলাম৷ কিন্তু বউদি আমাদের দেখে ভয় পেয়ে যায়৷ আমাদের সাথে কথা বলতেই চাইনা৷
— তূর্জয় মিহুকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ” দেখতে পাচ্ছিস মিহু কথা বলবে না। তাহলে কেন তাকে বিরক্ত করছিস?”
— একি মামা বউ পেয়ে আমাদের ভুলে গেলি৷ (তূর্ণ)
— দূর সা** তোদের কি ভুলা যায়? তোরা খেয়ে যাবি।
দূরে দাঁড়িয়ে নির্ঝর নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। কিছুতেই নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না নির্ঝর৷ তূর্ণ নির্ঝরের বিষয় বুঝতে পেরে নির্ঝরকে নিয়ে চলে যায়৷
তূর্জয় সেখানে মিহুকে কিছু না বলে মিহুকে নিয়ে রুমে নিয়ে আসে৷ রুমে এসে মিহুকে বিছানায় ফেলে দেয়৷
— ক্ষেপে বলে উঠে ” এত মানুষ থাকলে তাদের সামনে তোমাকে কে যেতে বলেছে?”
— আসলে আমার খুব জল পিপাসা লাগছিল। সেজন্য এক গ্লাস জলের জন্য ওয়েটারের কাছে যেতেই তারা আমাকে ঘিরে ধরে৷
— সে জায়গায় বসে কারো কাছে জল চাইলে নিশ্চয় কেউ না করত না৷
— আসলে আমি বুঝতে পারিনি তারা আমাকে এভাবে ঘিরে ধরবে।
— কেন? তুমি কি এখনও কচি খুঁকি? কিছু বুঝতে পারো না৷
— আমি কি জানতাম তারা আমার পথ আটকাবে?
তূর্জয় মিহুর কথা শুনে কিছুটা রেগে যায়। রেগে মিহুর হাত টান দিয়ে বিছানা থেকে তুলে। হঠাৎ পা স্লিপ করে মিহুর উপর পড়ে যায়৷ তূর্জয়ের ঠোঁট মিহুর ঠোঁটের সাথে লেগে যায়। দুই জনেই অবাক হয়ে যায়! তূর্জয় নিজেকে সংযত করে মিহুর উপর থেকে উঠে যায়৷
— সরি! আসলে এটা একটা এক্সিডেন!
মিহু তূর্জয়কে কিছু না বলে মুচকি হেঁসে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ তূর্জয় মিহুর মুচকি হাসির রহস্য উৎঘাটন করতে চাই৷ কিন্তু কিছুই উৎঘাটন করতে পারে না৷ চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে যায় তূর্জয়।
মিহু ওয়াসরুম থেকে এসে দেখতে পাই তূর্জয় বিছানায় আঁধা শুয়া অবস্থায় ঘুমিয়ে আছে৷ মিহু তূর্জয়কে বিছানায় ভালো করে শুইয়ে দেয়৷ শুইয়ে রেখে চলে আসতে নিলেই তূর্জয় ঘুমের মাঝে মিহুর হাত টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়৷ মিহু নিজেকে ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়৷
মিহুর ভালো লাগা কাজ করে। সেজন্য মিহু নিজেকে আর ছাড়ানোর চেষ্টা করে না। এক দৃষ্টিতে তূর্জয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে ঘুমিয়ে যায়৷
।
।
।
সকালে পাখির কিচির মিচির শব্দে তূর্জয়ের ঘুম ভাঙে। ঘুম থেকে উঠে নিজের বুকের উপর মিহুকে আবিষ্কার করে। মুহুর্তের মাঝেই তূর্জয় রাগ উঠে যায়। তূর্জয় মিহুর চুলের মুড়ি ধরে মিহুর ঘুম ভাঙায়।
— “তোমাকে ভালোই ভালোই বলেছিলাম; তুমি আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে না৷ কিন্তু তুমি লিমিট ক্রস করে ফেলেছো।” ক্ষেপে বলে উঠে
— ঘুম ঘুম ভাবে কিছু বুঝতে না পেরে, “কি হয়েছে? আপনি আমার চুল ধরে টানছেন কেন? কি দোষ করেছি আমি?”
— তোমার দোষ হলো তুমি আমার বিছানায় কি করছো? তোমাকে বলেছিলাম, তোমার সাথে আমি বেড শেয়ার করতে পারবো না৷
— “আসলে গতকাল রাতে আপনিই তো?” চোখ পাকানো দেখে থেমে যায়।
— “আমি কি?” চোখ পাকিয়ে বলে উঠে।
— চোখ বন্ধ করে মিহু বলে উঠে ” আমি আপনার কাছে আসতে চাইনি৷ আপনি নিজ থেকে আমাকে কাছে টেনে নিয়েছেন৷ আমার কোন ইচ্ছাই নেই আপনার কাছে আসার৷ আমার একটা সম্মান আছে৷ আমি কেন আপনার মতো বাজে লোকের কাছে আসার জন্য বাজে উপায় অবলম্বন করবো৷”
এমন ঘটনা ঘটতে পারে মিহু কল্পনাও করতে পারেনি।
চলবে….