#ভালোবাসার প্রজাপতি
#তাসনিম তামান্না
#পর্ব-৪
পরিবেশ শান্ত নিঃচুপ কারোর মুখে কোনো কথা নাই। সবাই কৌতুহল নিয়ে অপেক্ষা করছে। ১২টা বেজে গেছে অয়ন ল্যাপটপের কিবোর্ডে অাফরার রোল আর রেজিষ্ট্রেশন নম্বর চাপছে। ইশরাক অয়নের এক পাশে আর আফরা একপাশে বসে আছে। ইশরাক একবার ল্যাপটপের স্কিনে তাকাছে তো একবার আফরার দিকে তাকাছে। আফরা চোখ বন্ধ করে শুধু মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করে যাচ্ছে সাথে উত্তেজনা, অস্থিরতা তো আছেই। আয়রা দাঁড়িয়ে আছে আফরার থেকে কয়েক হাত দূরে। আয়রা মন চাইছে আফরার পাশে বসে সেই আগের মতো দু’হাতে আগলে ধরে বলতে ‘কিছু হবে না দেখিস ভালোটাই হবে তোর আপি বলছে দেখিস সব ভালো হবে’। কিন্তু এমনটা করতে পারছে না হয়ত বা দীদ্ধায় নয়ত বা জড়তা-সংকোচ কাজ করছে! এতদিনে দূরে দূরে থাকায় একটা অদৃশ্য দেওয়াল তৈরি হয়েছে ওদের মধ্যে তাই তো এমন অবস্থা। অয়ন সাবমিট বাটনে ক্লিক করে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ল্যাপটপের স্কিনে। নেট প্রবলেম হওয়ায় রেজাল্ট আসতে দেরি হলো।
-‘আফরা তুই এটা কি করলি? ছিঃ তোর থেকে এটা আমি আশা করি নাই! তুই…?’
অয়নের কথায় আফরা চোখ খুলে অয়নের দিকে দৃষ্টি দিলো। অয়ন বেশ সিরিয়াস হয়ে গম্ভীর মুখে কথাটা বলল। আফরা ভয়ে কেঁদেই দিলো সবার সামনে। আর কাঁদতে কাঁদত বলতে লাগলো…
-‘আমি জানতাম আমি পারবো না। আমি আর পড়াশোনা ঘোড়ার ডিম করবো না। ছেলে দেখো আমি বিয়ে করবো এক্ষণি মানে এক্ষণি’
আফরাকে কাঁদতে দেখে আরা আফরার গলা জড়িয়ে ধরে। শিউলি বেগম আফরার মথায় হাত বুলিয়ে কান্না থামাতে বলছে কিন্তু আফরা থামছে না। আয়রার চোখে পানি চলে আসলো আফরার কান্না দেখে। রাহেলা বেগম ফোড়ন কেটে বলল…
-‘রেজাল্ট খারাপ হয়ে মেয়ে সুবুদ্ধি আসছে তাইলে। বোঝ লেখাপড়া করে কিছু হবে না সেই স্বামীর সংসারের হেসেল ঠেলতে হবে এবার রান্না বান্না শেখ কিছুই তো পাড়স না।
রাহেলা বেগমের কথা গুলা আফরার কাছে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেয়ার মত লাগলো। কিছু না বলে কাঁদতে লাগলো।
-‘দাদি আফরা খারাপ রেজাল্ট করছে একথা কে বলল তোমায়?’
-‘ক্যান তুই-ই তো বললি’
-‘আমি কখন বললাম’
অয়নের হেয়ালি পানা কথা শুনে আফরার কান্না থেমে গেলো। অয়নের মা শিউলি বেগম বিরক্তি নিয়ে বলল
-‘অয়ন তুই ফাইজলামি করছিস? এটা ফাইজলামি করার সময়?’
অয়ন আর ইশরাক উচ্চ সরে হেসে উঠলো সবাই বোকা বনে গেলো।এখানে হাসির মতো কি বলল…।শিউলি বেগম অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো
-‘হাসছিস কেনো? হাসির মতো কি বললাম?’
-‘মা মিষ্টি দাও! আফরা এ+ পেয়েছে!’
সবার মুখে হাসি ফুটলো। আফরা থমকে গিয়ে হাত দিয়ে মুখ চেপে হু হু করে কেঁদে দিলো। অয়ন আফরাকে আগলে নিলো আফরা অয়নের বাহুতে দুইটা কিল মেরে শান্ত হলো। আরা সেটা দেখে অয়নের সাথে খিলখিল করে হেসে দিলো। শিউলি বেগম ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে ছুটলো রান্নাঘরে পিছু পিছু আয়রাও গেলো। রাহেলা বেগমের খুশি মুখ চুপসে গেলো থমথমে মুখ নিয়ে রুমে চলে গেলেন।
-‘এভাবে অনেক বড় হ বোন অনেক দূর এগিয়ে যা আমি তোর পাশে আছি!’
-‘আমি জানি তো তুমি আমার পাশে আছ এবং সবসময় থাকবে’
ওদের কথার মানে বুঝতে না পেরে আরা বলল…
-‘আমি ও তোমাল পাশে আছি দেখনা?’
আরার কথা শুনে ওরা হেসে দিলো…। কলিং বেল বাজতেই অয়ন বলল ‘আমি দেখছি’ বলে উঠে চলে গেলো দরজা খুলতে। ইশরাক আফরার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল ‘কংগ্রাচুলেশনস বউ’
[লেখিকা -তাসনিম তামান্না]
আফরা চমকালো থমকালো মৃদু কেঁপে উঠল ইশরাকের ওষ্ঠ যুগল আফরার কান স্পর্শ করায়। পরক্ষণেই রাগ হলো বউ বলায় সেকি বউ নাকি। ও তো এখনো বিয়েই হয়নি তার আগেই তাকে বিবাহিতার টেগ লাগিয়ে দিয়ে বউ বানিয়ে দিলো? দিলো তো দিলোই কিন্তু কার বউ আমি? এইসব আজগুবি চিন্তাভাবনার মধ্যে মা’কে জড়িয়ে ধরে দেখে অবাক হলো। অস্ফুটস্বরে বলল ‘আম্মু – আব্বু’
আজিজুল হক আফরার বাবা আফরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
-‘দোয়া করি। অনেক বড় হ মা। অনেক দূর এগিয়ে যা’
আফরা একহাত দিয়ে বাবা আর একহাত দিয়ে মা’কে জড়িয়ে ধরলো।
★★★
আজ অয়ন আর ইশরাক মিলে সকল বন্ধুরা কতগুলো বছর পর একসাথে হয়েছে। হাসি আড্ডায় মেতে আছে ওরা।
.
আফরা আর আরা রুমে বসে আছে আরা আফরার ফোনে গেমস খেলছে শুয়ে। আর আফরা আরার খেম খেলা দেখছে? সত্যি কি সে গেমস খেলা দেখছে না-কি অন্য ভাবনায় ডুবে আছে? হ্যাঁ সে ইশরাক নামক ব্যাক্তির ভাবনায় ডুবে আছে। কাল দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সেই যে চলে গেছে আর দেখা হয় নি কথাও হয় নি।
আগে যখন ইশরাককে আফরা মিস করতো তখন যেকোনো কারোর ফোন নিয়ে লুকিয়ে ছাদে গিয়ে কথা বলত। অতীতের ভাবনায় ডুব দিলো আফরা…
-‘হ্যালো কে?’
-‘হ্যালো জান! জানো আমি তোমাকে না খুব খুব খুবউউ-ই মিস করছি। একটু কথা বলো না প্লিজ’
-‘হ্যাঁ রে আফরা তোর কি নূন্যতম লাজ্জ-লজ্জাটুকুও নেই? কিভাবে আমার পিছনে পড়ে আছিস? তোর মতো নিলজ্জ আমি একটাও দেখি নি। আমি তোর ভাই হই তাই ভাইয়া বলে ডাকবি আর একবারও যদি জান টান বলে ডাকছিস না তোর বাবা-মাকে বলতে বাদ্ধ্য হবো’
আফরা যতবারই ইশরাককে ফোন করত ততবারই পেত অপমান অবহেলা যা তার ছোট কিশোরী মনে বড় আঘাত আনত। তাও সেটা ইশরাককে বুঝতে না দিয়ে বলল
-‘আচ্ছা বাবা-মাকে বলল তাহলে আমাদের বিয়ে দিয়ে দিবে’
-‘ফোন রাখ আর একবারও ফোন দিবি না তোর মতো ফালতু নিলজ্জ মেয়ের সাথে কথা বলে আমার ইনপ্টেন টাইম ওয়েস্ট করতে চাইছি না’
টুটু করে ফোন কেটে গেলো। আফরা বিষণ্ণ মন নিয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে সে কি কান্না করছিলো সেদিন রাতে খাইও নি ওভাবে ঘুমিয়ে পড়ছিল। সকালে উঠে অবশ্য আবার সব ভুলে যেত ইশরাককে নিয়ে রঙিন স্বপ্ন দেখত। ইশরাক বাসায় আসলে ইশরাককে প্রচুর জ্বালাতো। মায়ের চোখে পড়ে গেলে বকনিও শুনেছে অনেক তাও হাল ছাড়ে নি আফরা।
যে-দিন ইশরাককের বিদেশে চলে যাওয়ার খবর পাই সেইদিন যে আফরার মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগতে শুরু করে। সেদিন ইশরাককে ছাঁদে একা পেয়ে আফরা ইশরাককে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ছিলো আর বলে ছিলো।
-‘তুমি প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না আমি বাঁচতে পারবো না মরে যাবো’
ইশরাক আফরাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো নিজের থেকে। আর বলল
-‘ডোন্ট টার্চ মি ইউ ব…(একটু থেমে আবার বলল) এইটুকু বয়সে ভালোবাসার কি বুঝিস তুই? তোর এই বয়সটা ভালোলাগার আবেগের এসব ছেড়ে ভালো করে পড়া শোনা কর’
আফরা ইশরাককের পা ঝাপটে ধরে বসে পড়ে বলল…[লেখিকা-তাসনিম তামান্না]
-‘প্লিজ প্লিজ যেও না আমি আর তোমাকে জ্বালাবো না তোমার সামনেও জাবো না শুধু দূর থেকে দেখবো প্লিজ জেও না’
সেদিন আফরার আকুতি ভরা কান্না করে বলা কথাগুলা ইশরাকের মন গলাতে পারে নি।
-‘আফরা উঠ তোর সব ফালতু কথা আর নাটক ভালো লাগছে না সর তো আমার কাজ আছে অয়ন কোথায়? আমাকে এখানে রেখে কই গেলো?
ইশরাক আফরাকে রেখে চলে যায়। ইশরাকের যাওয়া দিকে অশ্রু ভরা নয়নে তাকিয়ে রইলো আফরা। সেদিনের পর আর দেখা হয়নি ওদের এমনকি কথাও হয় নি। আফরার কিশোরী মনের আবেগ মিশ্রিত সত্যি ভালোবাসাটা মনের কোণে রয়ে গেলো শুরু হলো ব্যাস্থ জীবন। তারপরই তো সব এলোমেলো হয়ে গেলো সব পাল্টে গেলো।
#চলবে