#ভালোবাসার প্রজাপতি
#তাসনিম তামান্না
#পর্ব-২
গোধূলি লগনো আফরা জানালায় মাথা দিয়ে বাইরের মাঠের বাচ্চাদের খেলা দেখছে।আরা সেই দুপুরে ঘুমিয়েছে এখনো উঠি নাই আফরাও আর জাগায় নাই জাগালে উঠে কান্না করবে তাই। আফরাকে বিষন্ন মনটা ইশরাকের কথা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে কাল থেকে একটুও শান্তি পাচ্ছে না। আফরার মা বাবা আফরার মামাবাড়ি গিয়েছে নানুভাই ইদানীং অসুস্থ থাকে বয়স হয়েছে তার। আফরা বিষন্ন মন নিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ ড্রাইংরুম থেকে ‘আফরার’ বলে অয়ন (বড় চাচার ছেলে) ডাক দেওয়ায় চমকে গেলো।ইশরাকের ভাবনায় ডুবে থাকায় হঠাৎ ডাকায় চমকে গেলো।আফরা আরার দিকে একপলক তাকিয়ে জানালা আটকিয়ে। ড্রাইংরুমের দিকে যায়।
ড্রাইংরুমে আসতেই আয়রার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। অয়নের পাশে ইশরাককে দেখে। ইশরাক অবশ্য অয়নের খালাতো ভাই আর দু’জন সমবয়সী হওয়ায় গলায় গলায় ভাব। ইশরাক ৪ বছর দেশের বাইরে ছিল। সে এখন নামকরা ডাক্তার। আফরাকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশরাক চোখ মারলো। এতে আফরা কিছুটা হকচকিয়ে গেল চোখ নামিয়ে নিলো। ইশরাক বলল
-‘কেমন আছো আফরা?’
-‘জী আল্লহামদুল্লিলা ভালো ভাইয়া আপনি কেমন আছেন?’
আফরা ‘ভাইয়া’ বলে সমদ্ধন করায় ইশরাকের রাগ হলো তাও রাগটা কন্ট্রোল করে বলল
-‘ভালো’
-‘মা আর দাদি কোথায় রে'(অয়ন)
-‘জানি না চাচি মনে হয় পাশের বাসায় গেছে আর দাদি সাদে কেনো?’ (আফরা)
-‘ও তাহলে তুই চা বানিয়ে দে তো আমার আর ইশরাককের জন্য’ (অয়ন)
আফরা ‘আচ্ছা’ বলে চা বানাতে চলে গেলো। আফরা চা বানাতে বানাতে ইশরাককের গুষ্টি উদ্ধার করতে লাগলো। চা বানিয়ে ওদের সামনে দিতেই আরার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসলো ঘুম ভেঙে পাশে কাউকে না দেখতে পেয়ে কাধছে সে। আফরা ছুটলো রুমের দিকে। ইশরাক তাকিয়ে রইলো আফরার যাওয়ার দিকে। অয়ন বিচলিত হয়ে আফরাকে চিলিয়ে প্রশ্ন করলো
-‘কি হলো আরা কাঁদছে কেনো?’ (অয়ন)
-‘কিছু না ভাইয়া ঘুম থেকে উঠে পাশে কাউকে না পেয়ে কাদছে’ (আফরা)
-‘কে কাঁদছে?’ (ইশরাক)
অয়ন থেমে ছোট করে উত্তর দিলো
-‘আয়রার মেয়ে’ (অয়ন)
ইশরাক মটেও অবাক হলো না সে জানতো সব তার বোনের কাছ থেকে জেনেই এসেছে ও।
-‘এসব কবে হলো আমাকে কিছু জানাস নি কেনো? তুই না আয়রাকে ভালোবাসিস? তাহলে এসব কি?’
অয়ন মলিন হেসে বলল
-‘ভালোবাসলে তার ভালো খারাপ সবকিছু নিয়েই ভালোবাসতে হয় তাই তো এখনো ভালোবাসি কিন্তু আয়রা তো মানে না আমাকে’
ইশরাক অয়নের মধ্যে কিছুক্ষণ নিরবতা চললো। নিরবতা ভেঙে ইশরাক বলল
-কি করবি ভাবলি?
অয়ন দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলল
-‘কিছু ভাবি নাই যেমন চলছে তেমনই থাক’
-তাহলে এভাবেই থাকবি সারাজীবন
অয়ন কিছু বলল না কি বলবে ও নিজেও জানে না।অয়ন প্রসংগ পাল্টে বলল
-‘আরে আমার কথা বাদ দে তো ওখানে কাউকে ভালো টালো বেসে ফেলছিস নাকি সেটা বল’
-‘একজনের ওপর তো আটকে আছি তাকে সামলাতে সামলাতেই তো আমার দিন কেটে যাবে’
-‘মানে ঘটনা কি সত্য? তুই কাউকে সত্যি ভালোবাসিস? আমি তো ভাবছিলাম তোর দারা এসব হবে না! তাহলে তুই তলে তলে ট্রেন চালাস? বল মেয়ের নাম কি? কোথায় থাকে? কি করে?’
-‘তোর বোন আফরা!’
-‘হোয়াট!’
ইশরাক মুখ টিপে হাসলো। সেটা দেখে অয়ন বলল
-‘ভাই তুই এ কথাটা আগেও বলছিলি আমি কথাটায় অতটা গুরুত্ব দেয় নি কাহিনি কি সত্যি?’
-‘হুম ভাই কাহিনী ১০০ তে ১০০০/ সত্যি’
-‘মানে এসব কি? কখন কি ভাবে হলো? আমার জানা মতে আফরা তোকে লাইক করে জ্বালাতো তুইও ওকে বকতিস কখনো এমনটা মনে হয়নি আমার’
[লেখিতে-তাসনিম তামান্না]
ওদের কথার মাঝে আয়রার রুম থেকে চিৎকার চেচামেচির শব্দ আসলো। ইশরাক অবাক হয়ে প্রশ্ন করতে যাবে তার আগেই অয়ন ছুটে চলে গেলো। ইশরাক ও কিছু না বুঝেই অয়নের পিছু পিছু গেলো। অয়ন আর ইশরাক যেতেই দেখলো আয়রা আরাকে মারার জন্য হাত টানছে আর আফরা আরাকে আগলে রেখেছে আরা কাঁদছে ও যতবারই ওর মায়ের কাছে আসছে ততবারই মার খেয়েছে অবহেলা পেয়েছে কখনো আদর পাই নি এইটুকু বয়সে কত কিছুই না সহ্য করলো মেয়েটা সে-তো অবুঝ তার তো কোনো দোষ নাই। দোষ না করেও সে এতো কিছু সহ্য করছে।
অয়ন রাগ কন্ট্রোল করতে না আয়রার হাত টেনে সজোরে দুইটা থাপ্পড় মারলো। আফরা আয়রার ধাক্কা সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নিলেই ইশরাক এসে ধরলো। আরা ভয় পেয়ে আফরার গলা জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে কাঁদছে।
-‘কি শুরু করেছিস? প্রতিদিন বাড়িতে একটা না একটা অশান্তি না করলে হয় না তোর? আর এই মেয়েটারই বা কি দোষ? নিজে অপরাধ করে অন্যকে অত্যাচার করতে খুব ভালো লাগে তাই না? এই টুকু মেয়ের ব্রেনে ওপর কতটা এফেক্ট পড়ছে সেটা কখনো ভেবে দেখেছিস?’
কথাগুলা বলে আফরার কাছ থেকে আরাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। পিছু পিছু ইশরাক আর আফরাও গেলো।
সত্যি তো সে কখনো এতোটা গভীর ভাবে ভেবে দেখিনি। আরাকে দেখলে ক্ষতটা জ্বালা করে সৃতিগুলা তীব্র ভাবে সব মস্তিষ্কে এসে হানা দেয়। খুব কষ্ট হয় ওর খুব বেশি। আরাকে দেখলে ওর পাপের ফল মনে হয়। কেনো এমন হয় ওর ও নিজেও জানে না।
.
.
অয়ন আরার গালে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিচ্ছে আর আরা চুপ করে বসে আছে। আয়রার হাতের তিন অাঙ্গুলের সাপ পড়ে ফুলে গেছে।
-‘মা গালে ব্যাথা না-কি?’
-‘না পাপা’
-‘আফরা কই থাকিস তুই?’
-‘আসলে ভাইয়া আমি বেড গুছাছিলাম আরা কখন আপুর রুমে গেছে আমি দেখতে পাই নি।’
অয়ন কিছু বললো না আরাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখলো।
কিছুক্ষণ পর অয়নের মা শিউলি বেগম বাসায় এসে নিজের বোনজীকে এতো দিন পর দেখে খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ গল্প করে রান্না জন্য ব্যাস্থ হয়ে পড়লো। পাড়লে এখনি সব রান্না করে দিবেন এমন ভাব।
আরা অয়নের কাছের জাওয়ার পর আর আফরার কাছে আসে নি। এর মধ্যে আরা আর ইশরাককের মধ্যে ফেন্ডশিপ হয়ে গেছে। ইশরাক, আরা, অয়ন আর রাহেলা বেগম ড্রাইংরুমে গল্পের আসর বসিয়ে ফেলেছে। আফরা শিউলি বেগমের কাজে সাহায্য করছে রাতের রান্নার জন্য।
রাতে রান্না শেষ করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেলো ইশরাক চলে যেতে চাইলেও শিউলি বেগম যেতে দেয় নি। ইশরাক আজ রাতটা এ বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নিলো।
এরমধ্যে আফরা যতবারই ইশরাককের দিকে তাকিয়েছে ততবারই ইশরাক চোখ টিপ দিয়েছে না হয় তাকিয়ে হেসেছে। আফরা ইশরাকের মতিগতি কিছু বুঝতে পারছে না। কিছু বলতেও পারছে না শুধু রাগী চোখে তাকাছে।
#চলবে