ভালোবাসার প্রজাপতি পর্ব – ১২(শেষ পর্ব)

0
1631

#ভালোবাসার প্রজাপতি
#তাসনিম তামান্না
#পর্ব-১২(শেষ পর্ব)

নিস্তব্ধ পরিবেশ চার দেওয়ালের মধ্যে দুই মানব-মানবীর শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কিছু শোনা যাচ্ছে না। নিরবতা ভেঙে আফরা বলল

-‘ইশরাক এগুলা কি? আপনি কথা বলছে না কেনো? কেনো আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না?’

ইশরাক তবুও নির্বিকার মুখে কোনো কথা নেই এমন কি আফরা’কে বোঝানোর তাড়াও নেই। যেনো এটাই হবে আগে থেকে ওর সবটা জানে। আফরা উত্তর না পেয়ে রাগ তিরতির করে বাড়িতে লাগলো রাগে ঠোঁট কাঁপছে। কিন্তু সেটা প্রকাশ করলো না ইশরাককের সামনে নিভৃতে পুশে রাখলো। আরো কিছুক্ষণ নিরবতা চললো আফরা আর নিজের রাগটা দমাতে না পেরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো

-‘কি হলো কথা বলছেন না কেনো? আমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না কেনো? তার মানে এটা সত্যি? আপনি কেনো এগুলা আমাকে আগে বলেন নি? আমি আপনাকে বিশ্বাস করছিলাম তার সেকেন্ড টাইম ভেবেছিলাম আপনি ভালো হয়ে গেছেন আমাকে ভালোবাসে বিয়ে করেছেন কিন্তু না আপনি আমাকে নিয়ে খেলেছেন। [আফরা থেমে লাগেজ বের করে গুছাতে গুছাতে আবার বলল] আমাকে কি আপনার মানুষ মনে হচ্ছে না? আমি কি এতোটাই সস্তা যে আপনি যা করবেন তাই মেনে নিবো? লাইফ ইজ ভেরি ইজি আপনার যা খুশি তাই করবেন নো নো মিস্টার ইউ আর রং লাইফ ইজ ভেরি হার্ড সবটা নিজের মতো হয় না আমি আর একমুহূর্ত আপনার সাথে থাকবো না। এক মুহুর্ত না ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিবো সাইন করে দিবেন আপনিও মুক্ত আর আমিও’

তাও কিছু বলল না ইশরাক নির্বিকার ভংঙিতে বসে রইলো। আফরা ভাবলো ইশরাক আটকাবে কিন্তু আফরার আশায় পানি ঢেলে দিয়ে ইশরাক বসে আছে। আফরা কাঁদতে কাঁদতে নিজ বাসায় রওনা দিলো।

সারারাস্তা কাঁদতে কাঁদতে বাসায় এসেছে আফরা। কলিং বেল চাপতেই দরজা খুললো শিউলি বেগম আফরা হাসার চেষ্টা করলো। শিউলি বেগম অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো

-‘তুই এখন? এখানে? আগে বললি না কেন? ইশরাক কই?’

-‘সারপ্রাইজ দিলাম কেমন ছিলো? ওনার কাজ আছে তাই আসে নি আমি একাই আসছি’

-‘আয় আয়’

আফরা ভিতরে আসতেই বাসার সবাই এক এক করে হাজির হলো। আফরাকে দেখে সবাই বিষ্ময় নিয়ে প্রশ্ন করছে

-‘আফরা তুই আসবি আগে বলিস নি তো আর ইশরাক কোথায়?’

-‘আমি কি এ বাসায় আসতে পারি না? আর আমি এসেছি দেখে খুশি হওনি তোমরা ইশরাক ইশরাক করছ কেনো?’

-‘আরে রাগ করছিস কেন মা আমি তো শুধু…. ‘

-‘হ্যাঁ বুঝছি আম্মু এখন আমার বিয়ে হয়ে গেছে তো আমি তো এখন আর এবাড়ির কেউ না তাই না তাই এবাড়ি আসার অধিকার ও আমার নেই সেটাই তো?’

-‘আফরা এভাবে ওভার রিয়াক্ট করছিস কেনো?’

-‘তো কি করবো? আমি এসেছি আমি কেমন আছি? আমার কথা না শুনে তোমরা ইশরাককের কথা শুনছ’

-‘এটাতে এমন করার কি আছে’

আফরা রাগে গজগজ করতে করতে রুমে দিকে যেতে যেতে বলল

-‘হ্যাঁ হ্যাঁ কি আবার থাকবে কিছু নেই আমাকে কেউ ভালোবাসো না তোমরা আমার রুমে কেউ আসবে না তোমরা ডোন্ট ডিস্টার্ব মি’

সবাই হতাশ নিশ্বাস ছাড়লো। আয়রা বলল

-‘তোমার মেয়ে ভালোই চটেছে আম্মু’

-‘চুপ কর শুনতে পাবে’

___________________________

দু’দিন কেটে গেছে আফরা এই দু’দিন সারাক্ষণ কেঁদে কেটে কাটিয়েছে। বাসার কারোর সাথে তেমন কথা বলেনি। আর বাসার কেউ-ই আফরাকে ঘাটেনি। আফরা ভেবে ছিল ইশরাক আফরার কাছে ফোন দিয়ে সরি বলবে সব ঠিক-ঠাক করে নিবে কিন্তু ইশরাক মনের ভুলেও আফরাকে ফোন দেয় নি আর না আফরা দিয়েছে! আফরা প্রচন্ড ভেঙ্গে পড়েছে। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না খাওয়া দাওয়া একপ্রকার ছেড়ে দিয়েছে বলতে গেলে।

আফরা রাতে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ছিল। প্রিয়মানুষটির দেওয়া কষ্ট তীব্র ভাবে অনুভব হয় প্রতি নিয়ত অভীমানগুলা হচ্ছে আকাশ ছোয়া পাহাড় ছুঁই ছুঁই। আফরার মুখে গরম নিশ্বাস পড়তেই আফরার ঘুম ছুটে গেলো পিটপিট করে আঁখি যুগল উনুক্ত করে দিলো ঝাপসা চোখে ড্রীম লাইটের সবুজ কৃত্রিম আলোই ইশরাককে দেখতে পেলো বুঝতে পারলো না এরা স্যালুসিলেশন, স্বপ্ন নাকি সত্যি আফরা বুঝতে পারছে না দূর্বল হাতে ইশরাককের মুখশ্রীতে হাত বুলিয়ে দিলো। ইশরাক হাসলো কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে নেশাভরা ঘোর কন্ঠে বলল

-‘Happy Birthday Jan’

উইশ করেই ইশরাক আফরার কানের ছোট করে কামড় দিলো। আফরার ঘুম পুরো পুরি উড়ে গেলো। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো ইশরাককের দিকে। ইশরাক আবার বলল

-‘আমি সত্যি এসেছি জান তুমি স্বপ্ন বা ভ্র্যম নয়! আমি এসেছি তুমি খুশি হওনি?’

আফরা ইশরাককে আচমকা জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো। ইশরাক আফরার খোলা চুলে হাত ডুবিয়ে বিলি কেটে দিতে লাগলো।

-‘আ আপ নি সত্যি এসেছেন? আমাকে আপনি একটুও মিস ক করেন নি? আমাকে এ একটা বা র ও ফোন দেন নি?’

-‘আচ্ছা’

আফরা হঠাৎ রেগে গেলো। ইশরাককে ধাক্কা দিয়ে বলল

-‘কেন এসেছেন আপনি? চলে যান’

-‘আচ্ছা চলে যাবো। আগে আমার সাথে চলো সবাই ওয়েট করছে’

-‘মানে?’

ইশরাক আফরার গলায় হাত ডুবিয়ে দিয়ে চোখের অশ্রু মুছে দিতে দিতে বলল

-‘মানে গেলেই দেখতে পাবে’

আফরাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ইশরাক আফরার চোখ বেঁধে দিয়ে আফরাকে কোলে তুলে নিলো।

-‘কি করছেন কি আপনি?’

-‘হিসস চুপ একটাও কথা না’

আফরার চুপ করে রইলো এখন বোম ফাটালেও ইশরাক যে একটা কথার উত্তর দিবে না সেটা আফরা ভালো করে বুঝে গেছে।

মিনিট পাঁচেক হাঁটার পর ইশরাক আফরাকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে চোখের বাঁধন খুলে দিলো আফরা চোখ খুলতেই সবাই বলে উঠলো।

-‘Happy Birthday afra. Many many happy return of the day’

চারিদিকে মোমবাতি, মরিচ বাতি, বেলুন দিয়ে সাজানো এটা আফরাদের ছাদ। আফরার সামনে ভ্যানিলা সেডের কেক তার ওপর লেখা ‘-‘Happy Birthday afra’-‘

আফরা অবাক হয়ে সবার দিকে তাকালো। বাসার সবাই এমন কি আফরার শশুর শাশুড়ী সবাই এসেছে এমন কি দূরে কয়কজন ছেলে মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাদেরকে আফরা চিনে না কিন্তু তাদের মধ্যে একটা মেয়েকে দেখে আফরা চমকে যায় হ্যাঁ এটা আর কেউ নয় ইশরাককের সাথে সেই মেয়েটির থাকা ছবি। আফরা মেয়েটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু সবাই তাড়া দেওয়ায় কেক কাটার জন্য ছুরি নিলো। কেক কেটে নিলো সবার আগে আরাকে দিয়ে এক এক করে সবাইকে দিলো। কিন্তু ইশরাককে খুঁজে পেলো না এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো তবুও পেলো। কারোর সাথে ইশরাককের কথা শুনতে কোথাও যেনো বাঁধছে ওর। আফরা কাঁধে কারোর স্পর্শ পেয়ে পিছন ফিরে সেই মেয়েটাকে হাসি মুখে দাড়িয়ে থাকতে দেখে। আফরার মনটা কেমন করে উঠলো আফরাকে চুপ থাকতে দেখে মেয়েটা বলে উঠলো

-‘কাকে খুঁজছো? ইশরাক কে?’

আফরা প্রতি উত্তর করলো না মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটা হেসে আবার বলল

-‘সরি’

আফরা অবাক হলো মেয়েটার কথায় মনে মনে বলল ‘ সরি কেনো বলছে পাগল নাকি ‘

-‘আমি ডলি। ইশরাক আর আমি ফেন্ড মিট মাই হাসবেন্ড (একটা ছেলেকে দেখিয়ে বলল) হ্যারি। আমাদের লাভ ম্যারেজ ইশরাককের সাথে আমার বিদেশে গিয়ে পড়াশোনার সুত্রে বন্ধুত্ব হয় এই চারবছরে আমরা বেষ্ট ফেন্ড বলতে পারো ও তোমার কথা সবসময় বলল ও যে ভুল করেছে সেটা ভেবে অনুতাপ করতো এতো কিছুর মধ্যেও ও তোমাকে ভালোবাসে। যাইহোক যেটা তোমাকে বলতে আসছি ঔটা জাস্ট ফান করে তুলছি আর ছবিতে এতো খারাপ কিছুই নেই আর তোমার সাথে মজা করেই এটা করছি আমরা বাট তুমি…’

আফরা মনে মনে বলতে লাগলো ‘ছবিতে সত্যি ঘনিষ্ঠ খারাপ এমন কিছু ছিলো না শুধু এক হাত জড়িয়ে কাঁধে মাথা রাখা দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকা ‘

মেয়েরা এমনই হিংসুটে শুধু নিজের প্রিয় মানুষ/জিনিস গুলা সে কাউকে দিতে নারাজ। তার টা শুধুই তার অন্য কেউ একটু ছুঁলেই আকাশ সমান রাগ এসে ভর করে।

আফরা মনে মনে অনুপাত হয়ে। কান্না পাচ্ছে রাগের বশে কত কি বলে ফেলেছে ও আফরা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল

-‘সরি আপু আমি আসলে ওভার রিয়াক্ট করে ফেলেছি প্লিজ বলেন ওনি কোথায়?’

ইশরাক জন মাবনহীন নির্জন রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের আলোই হাঁটছে সামনে ইট পাথর আসলে সেটা খেলতে খেলতে দূরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। হাঠাৎ আফরা কোথা থেকে দৌড়ে এসে ইশরাককের সামনে দাড়িয়ে হাঁটুতে ভর দিয়ে দাড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে থেমে থেমে বলল

-‘আপনি আপনি আমাকে রেখে আসলেন কেন?’

ইশরাক শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল

-‘তুমিই তো বললে চলে আসতে’

আফরা বিরক্তি চোখে তাকিয়ে ইশরাককের হাত জড়িয়ে ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলল

-‘আপনি জানেন আপনি খুব খুব খুবই খারাপ। আমাকে শুধু কষ্ট দেন’

-‘হুম জানি আমি খারাপ তুমি ভালো’

-‘হ্যাঁ আমি ভালো অনন্ত আপনার মত মিথ্যা বলি না সত্যিটা বললেই পারতেন যে আমাকে আপনার আর ভালো লাগে না আমি পুরনো হয়ে গেছি’

-‘বড্ড বেশি বুঝো তুমি’

-‘তা নয় তো কি হ্যাঁ?’

ইশরাক থেমে গিয়ে আফরার মুখোমুখি দাড়িয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে এনে বলল

-ভালোবাসি আমার ভালোবাসার প্রজাপতিকে তাকে হারিয়ে ফেলার ভয় হয় খুব। আমি তাকে প্রতিটা সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা, দিন, মাস, বছর এমন কি যুগের পর যুগ তাকে চাই তাকে ভালোবাসাতে চাই মরে গিয়েছও ভালোবাসতে চাই। আগে যে ভুল করেছি সে ভুল আর ভুলেও দ্বিতীয় বার করার সাহস আমার নাই।’

-‘এতো ভালোবাসেন আমাকে?’

-‘কে বলল আমি তোমাকে ভালোবাসি?’

-‘আমি জানি’

-‘ভুল জানো আমি তোমাকে একটুও ভালোবাসি না’

-‘সরি আসলে আমি…’

-‘ওসব কথা শুনতে চাইছি না’

-‘ আমি কিন্তু আপনাকে খুব খুব ভালোবাসি। আপনাকে ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হয়’

-‘পাগলীটাকে আমি কম ভালোবাসি না’

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে