#ভালোবাসার প্রজাপতি
#তাসনিম তামান্না
#পর্ব-১১
এপ্রিল মাস তপ্ত দুপুর ২.৪৫ বাজে সূর্যের তির্যক রশ্মি ছড়িয়ে আছে চারিদিকে কালো কুচকুচে কাকটা সেই কখন থেকে কা কা করে ডেকে যাচ্ছে হয়ত পিপাসায় নয়ত ক্ষুদায় নয়ত বা অন্য কিছু! আফরা আর ইশরাককের বিবাহিত জীবনের কয়দিন মাত্র পার হয়েছে আফরা ইশরাককে নতুন ভাবে চিনতে শিখছে। এর মধ্যে ও বাড়ি থেকে ও ঘুরে আসছে আর দিনে বেশ কয়েকবার ফোন করে কে কি করছে জেনে নেয়। পড়াশোনাও আগের মতো করা হয় ইশরাক আফরার পড়াশোনায় দিক দিয়ে স্ট্রিক।ইশরাক হসপিটালের ডিউটিতে আছে। আফরা স্টাডি টেবিলে বসে পড়ছে মন দিয়ে আজ আর কলেজে যায় নি। আফরা মনযোগ দিয়ে পড়ছিলো হঠাৎ হোয়াটসঅ্যাপে টুং করে ম্যাসেজ আসায় আফরার পড়ায় মনযোগ ক্ষুন্ন হলো। ইশরাক ম্যাসেজ দিয়ে ভেবে আফরা ঝটপট ফোন হাতে নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ডুকতেই ভ্রু আপনা-আপনি কুঁচকে এলো। ইশরাক নয় একটা আননোন নম্বর থেকে পিক আসছে আফরা কৌতুহল দমাতে না পেরে ম্যাসেজ সিন করে থমকে গেলো। মাথা ফাঁকা লাগতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ তবদ্ধা মেরে বসে রইলো। চোখ দিয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো। সব তো ঠিক ছিল তাহলে এমন কেনো হলো? দ্বিতীয় বার মানুষ টাকে বিশ্বাস করা কি ভুল হলো?
নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে আফরা চোখ দিয়ে অনলগল শ্রাবনধারার বষনের মতো অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে ইশরাককের কাছে এর মধ্যে কয়েক বার ফোন দিয়েছে কিন্তু ইশরাককের ফোন বন্ধ হয়ত ওটিতে আছে। আফরার বুকে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে ছবিগুলোর দিকে তাকালেই কেমন ঘৃণা জন্মাছে ইশরাককের প্রতি। মনে হাজারো প্রশ্নের মিছিল তৈরি হয়েছে। দরজায় নক পড়তেই আফরার ধ্যান ভাঙ্গলো ঝটপট চোখ মুখ ভালো করে মুছে নিলো। মুখে কৃত্রিম হাসি টেনে নিলো। আফরা মনে মনে বলল ‘হুটহাট কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না যা করতে হবে ঠান্ডা মাথায় করতে হবে’
দরজা খুলে আয়রাকে দেখে চমকে গেলো।
-‘আপু তুই’
-‘হ্যাঁ আমি কেমন সারপ্রাইজ দিলাম বল?’
-‘ফাটাফাটি! আরা, ভাইয়া কই?’
-‘আছে ড্রাইংরুমে। কিন্তু চোখ মুখ এমন লাগছে কেনো? কি হয়েছে?’
-‘ক কই কি হইছে?’
-‘চোখ মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে কান্না করছিস?’
-‘কি সব বলিস আপু?’
-‘আচ্ছা যা রেডি হয়ে নে’
-‘রেডি হবো কেনো?’
-‘আমরা বেড়াতে যাবো সবাই মিলে ইশরাক ও আসবে তুই তাড়াতাড়ি রেডি হ’
-‘কিন্তু… ‘
-‘কোনো কিন্তু টিন্তু না রেডি হ এক্ষুনি’
আয়রা একপ্রকার ঠেলে পাঠিয়ে দিলো আফরাকে রেডি হতে।
★
বিকাল হয়ে গেছে সূর্য অস্ত যাচ্ছে আকাশে কমলা, ধুসর, সাদা রঙের মেঘেরা ছুটোছুটি করছে এদিক সেদিক পাখিরাও সেই সাথে তাল মিলিয়ে ছোটাছুটি করছে। আয়রা আর অয়নকে স্বাভাবিক আচারণ করতে দেখে আফরা শান্তি পেলো। কিন্তু সেই ছবি গুলার দৃশ্য ভুলতে পারছে না। ইশরাক এসেছে বেশকিছুক্ষণ হলো। সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলছে। আফরা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইশরাককের দিকে মনে হচ্ছে কিছু করে নাই সব ঠিক আছে। আফরা যথাসম্ভব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে। পরে সময় সুযোগ বুঝে সবটা শুনবে এখন সিনক্রিয়েট করতে চাইছে না।
-‘কি হলো বউ আজ কি আমাকে এতোই হ্যান্সাম লাগছে যে তোমার চোখই সরছে না’
আফরা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে কৃত্রিম হাসি টেনে বলল
-‘না তেমন কিছু না’
-‘তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে? কেমন লাগছে তোমাকে’
-‘আরে না আমি ঠিক আছি’
কথাটা বলে আফরা ইশরাককের পাশ কাটিয়ে আরা আর ইশারার কাছে গিয়ে ওদের সাথে বাচ্চাম করতে লাগলো মন থেকে ওগুলা ডিলিট করার বৃথা চেষ্টা করতে লাগলো। আরা বলল
-‘আমি আইসক্রিলম খাবো’
-‘আমি ও খাবো’
অয়ন বলল
-‘হ্যাঁ চলো কে কোন ফ্লেভারের খাবে পছন্দ করে আনি চলো’
-‘আমি আইসক্রিম আর হওয়ায় মিঠায় দুটাই খাবো’
-‘আচ্ছা চল’
সবাই সবার পছন্দ মতো আইসক্রিম হাওয়ায় মিঠায় কিনলো। আফরা আইসক্রিমটা খাওয়া শুরু করছে তখন ইশরাক আফরার কানে ফিসফিস করে বলল
-‘শোনো আইসক্রিম খাওয়ার সময় যেনো মুখের আশেপাশে না লাগে। আমি কিন্তু নিজেকে কনট্রোল করতে পারবো না আগে থেকে বলে দিলাম পরে কিছু ঘটে গেলে আমাকে বলতে এসে না আবার’
আফরা খাওয়া থামিয়ে ইশরাককের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকালো কিন্তু কিছু না বলে ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে হাতে নিয়ে আইসক্রিম খেতে শুরু করলো। আইসক্রিম খাচ্ছে আর মুখ মুচ্ছে। কেননা ইশরাক’কে বিশ্বাস নেই যখন যা খুশি তাই করতে পারে যারে এককথায় বলে নিলর্জ্জ। ইশরাক আফরার কান্ড দেখে বেশ শব্দ করেই হাসলো। আফরা ইশরাককের দিকে তেমন পাত্তা দিলো না ভেংচি কেটে মনে মনে বলল
-‘শালা শয়তানের নানা আমা’কে রেখে অন্য মেয়ের সাথে ঢলাঢলি করিস একবার বাঘে পাই তোর এক দিন তো আমার যে কই দিন লাগে দেখে নিস। পার্টি করা না সব বের করে দিবো দেখিস হাস হাস খুব হাসা হেসে নে জন্মের হাসা হেসে নে এর পর তো তোর কপালে শনি নাচবে দেখিস তুই শুধু দেখতে থাকবি।’
অয়ন আর আয়রা হাঁটছিল হঠাৎ রায়হান ওদের সামনে এসে দাড়িয়ে বলল
-‘কেমন আছো?’
আয়রা চমকালো কিন্তু প্রকাশ করলো না স্বাভাবিক ভাবেই বলল
-‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো’
অয়ন আয়রার হাত শক্ত করে ধরে আছে। রায়হান সেদিকে তাকিয়ে বলল
-‘শুনলে না তো আমি কেমন আছি?’
-‘শোনার কি আছে নিশ্চয়ই ভালোই আছেন! খারাপ থাকার তো কোনো কারণ দেখছি না’
রায়হান মলিন হেসে বলল
-‘সবসময়ই চোখের দেখা সত্যি হয় না’
আয়রা কিছু বলল না রায়হান আবার বলল
-‘আ আয়রা আ আমার মেয়ে ক কোথায়?’
আয়রা রেগে গেলো। রেগে বলল
-‘আপনার মেয়ে মানে কে আপনার মেয়ে? এতো বছর পর এসে বলছেন আপনার মেয়ে কোথায়? কিন্তু আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে ও আপনার মেয়ে নয় ও আমার আর অয়নের মেয়ে আরা আর ওর জন্মনিবন্ধনে বাবার নাম অয়ন দেওয়া আর ফিউচারের সব সার্টিফিকেটে বাবার নামের জায়গায় অয়নের নামই থাকবে’
অয়ন থমকালো বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো আয়রার মুখ পানে। আরা দৌড়ে এসে বলল
-‘মাম্মা তুমি লেগে গেছো কেনো?’
রায়হান আরাকে স্পর্শ করতে গেলেই আয়রা আরাকে সরিয়ে নিলো আর বলল
-‘আপনার নোংরা হাত দিয়ে আমার পবিত্র মেয়েকে স্পর্শ করবেন না আর বাবার অধিকার নিয়ে কখনো আসবেন না কারণ আপনার বাবা হওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই’
রায়হানের চোখে পানি চিকচিক করছে আয়রার প্রতিটা কথা রায়হানের বুকে তীরের নেই বিধছে। একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল
-‘আয়রা আর কখনো তোমাদের সামনে আসবো না। আল্লাহ আমাকে শাস্তি দিয়েছে হয়ত আর কয়েক দিনের মধ্যে নিয়ে নিবে। একটু আরাকে কোলে নিতে দিবে প্লিজ’
-‘মানে?’
রায়হান মলিন হেসে বলল
-‘এইচআইভি রোগে আক্রান্ত আমি।’
.
সারা সন্ধ্যা শপিং করে রাতে ডিনার করে বাসায় রওনা দিলো ওরা এইটুকুতে অনেক ক্লন্ত লাগছে ওদের। অয়ন, আয়রা, আরা ও পাশ দিয়ে চলে গেছে। ইশরাক, আফরা, ইশারা এদিক দিয়ে চলে আসছে। ইশারা ইতিমধ্যে পিছনে ঘুমিয়ে গিয়েছে। আফরার চোখটাও বারবার লেগে আসছে বহু কষ্টে খুলে রাখছে একপ্রকার যুদ্ধ করে।
বাসায় ফিরতেই আফরা ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লো ক্লান্তি সারা শরীরে ঝেকে বসছে যেনো। ক্লান্তির কারণে ইশরাককের ব্যাপারে কথাটাও মাথা থেকে বেড়িয়ে গেলো আফরার।
#চলবে