ভালোবাসার প্রজাপতি পর্ব – ১০

0
1224

#ভালোবাসার প্রজাপতি
#তাসনিম তামান্না
#পর্ব-১০

ঘুমের মধ্যে নড়াচড়া করতে না পাড়ায় পিটপিট করে চোখ খুলে ইশরাককের মুখ ভেসে উঠলো।নিজেকে ইশরাক’কের বাহুডোরে আবধ্য হয়ে আছে। আস্তে আস্তে কাল’কের সব কথা মনে পড়লো।

ফ্যাল্সব্যাক…

ইশারা আর আফরা শুয়ে গল্প করছিলো তখন-ই আফরার মা এসে বলল

-‘ইশারা তুমি একটু আরা’কে নিয়ে বাইরে যাও তো আফরার সাথে একটু কথা ছিলো’

ইশারা ‘আচ্ছা’ বলে আরা’কে নিয়ে বাইরে চলে আসে। ইশারা আর আরা যেতেই আফরা বলল

-‘কি হইছে আম্মু এমন কি কথা যে ওদের বাইরে পাঠিয়ে দিলা পরে বললে হতো না’

-‘না শোন তোর বাবা আর সবাই মিলে ঠিক করেছি তোর আর ইশরাককের আজই বিয়ে দিবো পড়ে না হয় বড় করে অনুষ্ঠান করা যাবে আর তোর কলেজ থেকে ওদের বাসাও কাছে প্রতিদিন আর এত কষ্ট করে যাওয়া আসা করতে হবে না সব ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি’

আফরা অবাক হয়ে বলল

-‘কি বলছ আম্মু? আমার স্টাডি বাকি… এগুলা… এখন… এসব কি ভুত চাপলো তোমার মাথায় তোমার মাথার পোকা গুলা কে নাড়া দিলো?’

-‘দেখ আমরা সবাই ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আয়রা যে ভুলটা করেছে সেটা তুই ও করবি না তার কি গ্যারান্টি আছে?’

আফরার মা’র কথায় আফরা ধাক্কা খেলো। নিজেকে সামলে বলল

-‘আম্মু তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করো না? আর আমি তো আগেই বলেছি আপুর মতো কোনো ভুল করবো না’

-‘তুই এখন এসব বলছিস আয়রাও তো বলতো কাউকে ভালোবাসলে ও আমাকে বলবে কিন্তু বলেনি। বলেছিল কি? আফরা আমি তোর ব্যাপারে রিক্স নিতে চাই না মানুষ পরিবর্তনশীল কখন কীভাবে তার মন পরিবর্তন হয় সে নিজেও জানে তাই। তাই আমি চাই না তুই এমন ভুল করিস না তোর জীবনটা শেষ করে দিবে তাই আগে থেকে শুধরে নেওয়ায় ভালো’

আফরা কিছু বলল না আসলে ওর বলার কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। এমন না ও ইশরাককের বিয়ে করতে চাই না। ভালোবাসার মানুষ সবাই বিয়ে করতে চাই। যে যতই ভুল করুক না কেনো! যতই অবহেলা করুক না কেনো! কিন্তু মেন্টালি প্রিপিয়ারেরও তো একটা ব্যপার আছে। হঠাৎ অভিমান হলো বাবা-মা ওপর। আফরা জানে নাটের গুরু ইশরাক তাও অভিমান হলো। বাসার সবাইকে ছেড়ে কি ভাবে থাকবে ও?

কিছুক্ষণের মধ্যে ইশরাক আর আফরারও বিয়ে হয়ে গেলো। এর মধ্যে ইশরাক আফরার দিকে একমুহূর্তের জন্য ও তাকাই নি। সন্ধ্যা হয়ে গেছে দেখে আফরার বাসার সবাই থেকে যেতে বললেন কিন্তু বাঁধ সাধলো ইশরাকের মা ওনি আজই বউ ঘরে তুলতে চায়। যেহেতু শুক্রবার দিনটা শুভ। কেউ আর কিছু বললো না। আফরা ছলছল চোখে মায়ের দিকে তাকালো আফরার মা ভিতরে চলে গেলেন আর আফরার বাবা আফরার শেষ হওয়ার পর থেকে কোথায় গিয়েছে তার দেখা নেই। বাবা বরাবরই তার রাজকণ্যার প্রতি দূর্বল হয়।

“আজ কি করছ? কাল ও কি ঠিক এভাবে চলবে? বলা মুশকিল! আমাদের জীবন কখন কিভাবে বদলে যাবে সেটা বিধাতা ছাড়া কেউ বলতে পারবে না।”

ঔ সন্ধ্যায়ই বেড়িয়ে পড়তে হয় ইশরাককের বাসার উদ্দেশ্যে আসার সময় আফরা কাঁদছিল দেখেও ইশরাক কিছু বলে নি। নিরব ছিলো।

রাত ক’টা বাজে জানা নেই ইশরাককের রুমের ব্যালকণির ডিভাবের উপর শুয়ে কাঁদছে আফরা কিছু ভালো লাগছে না ওর। বাসার সবাইর কথা মনে পড়ছে ওর বিশেষ করে আরা কথা। বিয়ে অনুযায়ী আজ ওদের বাসররাত হলেও বাসরের কোনো ছিটেফোঁটা নেই সবটাই সাদা মাটা। কাঁদত কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো আফরা।

ঠোঁটে তীব্র ব্যাথা অনুভব হতেই আফরা পিটপিট করে চোখ ইশরাককে দেখে থমকে যায়। কি হচ্ছে বোধভ্যম হতেই ইশরাককে ধাক্কা দিতে লাগলো আফরা কিন্তু একচুল ও নাড়াতে পারলো না উল্টো ঠোঁট ব্যাথায় চোখ দিয়ে অশ্রু কণা গড়িয়ে পড়লো। বেশ কিছুক্ষণ পর ইশরাক আফরার পাশে শুয়ে বলল

-‘কাঁদছ কেনো? এখনো তো কিছুই করলাম না জাস্ট কিস করলাম তাই এই অবস্থা?’

আফরা কাদতে কাদতে হাত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে উঠে বসে বলল

-‘আপনি মানুষ নাকি জানোয়ার? এভাবে কেউ… ‘

ইশরাক আফরার কথাই রেগে গিয়ে বাহু টেনে কাছে নিয়ে এসে বলল

-‘হ্যাঁ আমি জানোয়ার জানো না তুমি?’

আফরা ইশরাককের চোখের দিকে অশ্রু সিক্ত নয়নে তাকালো। ইশরাককের কঠিন চোখ শীতল হয়ে আসলো শান্ত কন্ঠে বলল

-‘ঘুমিয়ে পড়’

আফরা কিছু বলল না চোখ থেকে গড়িয়ে পরলো অশ্রু কণা ইশরাক আফরার মুখ দু’হাতে ধরে মুক্ত দানাগুলা মুছে বলল

-‘আ’ম সরি। আমার রাগ হয়েছিল তাই এমনটা করছি সরি মাই স্মল বাটারফ্লাই’

আফরা থমকালো ইশরাককের মুখে ‘মাই স্মল বাটারফ্লাই’ শুনে বিষ্ময়ে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে রইলো ইশরাককের দিকে ইশরাক মিটমিট করে হেসে নিজে শুয়ে আফরাকেও নিজের বক্ষঃস্থলে রেখে মাথায় বিলি কেটে দিতে থাকে। আফরাও আর কোনো কথা না বলে ইশরাক’কের হৃৎস্পন্দন শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গেলো।

বর্তমান…..

আফরা এখনো এভাবেই ইশরাককের বুকে শুয়ে ইশরাককের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আফরার বুক ধুকপুক করছে ভালোবাসার মানুষটাকে এতোটা কাছে পাবে সে কখনোই ভাবি নাই এভাবে তাকে স্পর্শ করতে পারবে তার বুকে শুয়ে ঘুমিয়ে রাত পাড় করতে পারবে। আফরা কাঁপা হাতে ইশরাককের গাল, ঠোঁট, চোখ স্পর্শ করলো। ইশরাক একটু নড়েচড়ে আফরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ঘুমিয়ে রইলো। আফরা শব্দহীন নিভৃতে হাসলো। হঠাৎ আরার কথা মনে হতেই মুখ মলিন হয়ে আসলো। কিছুক্ষণ পর ইশারা দরজায় নক করে বলল

-‘ভাইয়া ও ভাবি তোমাদের কি বাসর করা হলো নাকি আজ সারাদিন লাগবে’

আফরা ইশারার কথায় লজ্জা পেলো ইশরাককের হাতের বাঁধন ছুটিয়ে উঠে বসলো এতক্ষণ সময়ের দিকে খেয়াল ছিলো না। সময় দেখলো ৯.৩৮ বাজে লজ্জায় মুখ রক্তিম আভার ছড়িয়ে পড়লো মনে মনে বলল ‘ইশ কত দেরি হয়ে গেলো সবাই কি ভাববে? নিশ্চয়ই খারাপ ভাববে? নতুন বউ এতো বেলা ওবধি ঘুমাই বিষয়টা দৃষ্টি কটু’

আফরা মন খারাপ করে বেড থেকে নামতে নিলেই ওড়নায় টান পড়তেই পিছনে ফিরে দেখলো ইশরাক মাথার নিচে এক হাত দিয়ে আর একহাত দিয়ে ওর ওড়না ধরে আছে। আফরার ভ্রু কুচকে এলো ওভাবেই বলল

-‘কি?’

ইশরাক দুষ্ট হেসে বলল

-‘মনিং কিস দিবা না? না দিলে যেতে দিবো না’

আফরার মন খারাপ ছিলো ঘুম থেকে দেরি করে উঠায় ইশরাককের কথায় ক্ষেপে গিয়ে বলল

-‘তোরে থাপ্পড়াবো’

ইশরাক আফরার রাগার কারণ বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে আফরার যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো আফরা ওড়না রেখেই ওয়াসরুমে চলে গেছে।

আফরা ওয়াশরুম থেকে এসে রেগেমেগে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি মেরে চুল টানলো। ইশরাক আফরাকে থামিয়ে বলল

-‘হোয়াট? প্রোবলেম কি তোমার? সকাল থেকে কি শুরু করছ?’

-‘তুই আমার ঠোঁটের কি করছিস? এই নিয়ে আমি বাইরে যাবো কি ভাবে?’

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে