#ভালোবাসার_পরিনতি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১৬
বিশ বছর পরে রোহানে বেশি কিছু ধরে হার্টের সমস্যায় হাসপাতালে শুয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। হার্টের আর্টারি এমন ভাবে ব্লকেজ হয়ে গেছে যেটা ঠিক হওয়া সম্ভাবনা খুব কম। বিশেষজ্ঞ হার্টের সার্জেনরা মিলে বোর্ড মিটিং বসিয়েছে। বোর্ড মিটিংয়ে সবার মতামত, রোহানের বাঁচার সম্ভাবনা খুবই অল্প। এমন অবস্থায় তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব এবং বিপদজনক।
একজন ডক্টর বললো,
-আমেরিকায় হার্ট সার্জেন ডক্টর আছে সুলতানা রহমান, শুনেছি উনি অনেক জটিল অপারেশন করে।
আরেক জন ডক্টর বললো,
-তাহলে দেরি না করে তার সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থা করো।
সুলতানা রহমান নিজের বাড়িতে বসে ল্যাপটপে কাজ করছেন তখন বাংলাদেশের একজন ডক্টর তাকে ইমেইল করেছে। তিনি দেখলেন হার্টের রোগীর অপারেশন সার্জারীর মতামত চাইছেন। তিনি সব তথ্য দেখে ইমেইলের রিপ্লাই দিলেন,
“রোগীর একটি ছবি ও পরিবারের তথ্য দেন ”
ডক্টর কিছুক্ষন পরে রোহানের ছবি ও পরিবারের তথ্য দিলেন তারপর সুলতানা রহমান বললো,
“আমি নিজেই এই রোগীর অপারেশন করবো, পরশুদিন আমি বাংলাদেশ আসছি ”
ডক্টর নিশিতাকে বললেন,
-আপনার স্বামীর অপারেশন করতে আমেরিকা থেকে একজন ডক্টর আসছে তাহলে বুঝতে পারছেন অনেক টাকার দরকার।
-যতো টাকা লাগবে তাই দিবো আপনারা শুধু আমার স্বামীকে সুস্থ করে তুলুন।
-পাঁচ লাখ টাকা ক্যাশে জমা করেন
-আচ্ছা
নিশিতা বাসায় গিয়ে চেক বই বের করে তখন নাহিয়ান বললো,
-আমাকে পঁচিশ লাখ টাকার একটা চেক লিখে দেও
-এতো টাকা দিয়ে তুই কি করবি?
-একটা ফ্ল্যাট বুকিং দিবো
-তোর বাবার শরীরের অবস্থা ভালো না আর তুই এখন ফ্ল্যাট বুকিং দিবি? এখন অনেক টাকার দরকার
-হ্যাঁ দিবো তোমাদের এই বাড়িতে আমি থাকবো না
-তোকে আমি কোনো টাকা দিবো না
-আমাকে টাকা না দিলে বাবার যতোটুকু চিকিৎসা হতো ওতোটুকু চিকিৎসাও হবে না।
-ছিঃ ছিঃ সন্তান হয়ে বাবার ক্ষতি করতে একটুও বাজে না।
-না, আমার টাকা চাই
-তোর বাবা সুস্থ হওয়া না পর্যন্ত কোনো টাকা পাবি না
-বুড়োটা অনেক বয়স হয়েছে এখন আর বাঁচতে হবে না।
নিশিতা নাহিয়ানের গালে একটা থাপ্পড় দিলো আর বললো,
-এই মানুষটার জন্যই এতো টাকার দাপট দেখাতে পারিস নয়তো পঁচিশ পয়সাও চোখে দেখতি না
নাহিয়ানের হাতে কাছে একটা গ্লাস ছিলো সেটা ছুড়ে মেরে চলে গেলো।
রোহান-নিশিতার ছেলে নাহিয়ান। বয়স মাত্র বিশ বছর কিন্তু সব সময় অহংকার নিয়ে চলে ঠিক বাবা মায়ের মতো তবে এখন আর রোহান নিশিতার আগের সেই অহংকার নেই।
নিশিতা হসপিটালে গিয়ে পাঁচ লাখ টাকা জমা দিলো।
ইভা তিহান আমেরিকায় থাকে। বছরে একবার দেশে আসে। রাফিসা, ইশান বড় হয়ে গেছে। রাফিসার ডক্টর আর ইশান ইন্জিনিয়ারিং পড়ছে। ওদের একটা ভাইও আছে নাম ইয়ান।
আজ ইভা -তিহানের বিবাহ বার্ষিকী। এবারের বিবাহ বার্ষিকী অনুষ্ঠান নিজের দেশে, নিজের বাড়িতে করতে চেয়েছিলো কিন্তু এক সপ্তাহ পরে রাফিসার এনগেজমেন্ট তাই দেশে যাওয়া হলো না। ইভা -তিহানের বিবাহ বার্ষিকী ঘরোয়া ভাবে অনুষ্ঠান হবে তাতে রাফিসার হবু শ্বশুর বাড়ির লোকজন আর কিছু ফ্রেন্ডরা রয়েছে। বাসায় সবাই এসেছে তখন রাফিসা ওর মাকে আলাদা ডেকে বলে,
-আম্মু আমাদের এনগেজমেন্ট আজকেই হবে, তুমি ব্যবস্থা করো।
-কেনো?
-আমি বলছি তাই প্লিজ আম্মু কিছু করো।
-আরে এটা বললে হয় না। ওনারা কি মনে করবে
-কিছু মনে করবে না তুমি বলো
তিহান এসে বললো,
-মা মেয়ে সবাইকে রেখে এখানে এসে কি মিটিং করছে
-আরে দেখো তোমার মেয়ে বলছে আজকেই এনগেজমেন্ট করার কথা।
-ওর কোনো চাওয়া পাওয়া আমি অপূর্ণ রাখি নি আজও ওর ইচ্ছে পূরণ করবো।
-আমার সোনা আব্বু, এই জন্যে আমি তোমাকে বেশি ভালোবাসি(রাফিসা)
-বাহ্ আমার তো কারো খেয়াল নেই (ইভা)
-বুড়ো বয়সেও হিংসে গেলো না সবসময় বাবা মেয়ের মধ্যে থাকবে (তিহান)
-না না আমি তোমাদের দুজনেই খুব ভালোবাসি তোমরাই তো আমার সব (রাফিসা)
-এখন চলো এনগেজমেন্ট শুরু করি (তিহান)
তিহান রাফিসার হবু শ্বশুর শ্বাশুড়ির সাথে কথা বলে তারাও রাজি হয়ে যায় এবং ঠিক করে এক মাস পরে বিয়ে হবে বাংলাদেশ এসে। এনগেজমেন্ট শেষ রাফিসার হবু বর সাদিক রাফিসাকে বললো,
-তুমি হঠাৎ আজকেই এনগেজমেন্ট করার কথা বললে কেনো?
-আমি দেশে যাবো
-কেনো?কিসের জন্য?
-খুব ইচ্ছে দেশে আমার সব আপন লোকজন আমার বিয়েতে থাকবে।
-তোমার মাথায় কখন যে কি পোকা ঢুকে বুঝি না
-পোকা না ভালো কিছু
-হুহ, এখন আসছি কালকে দেখা হবে
-হুম সাবধানে যেও।
রাতে সব গেস্টরা যাওয়ার পর ইভার রুমে রাফিসা গিয়ে বললো,
-আম্মু তোমার একটা শাড়ি দিবে
-তোর যে শাড়িটি পছন্দ তুই সেটা নিয়ে পড়
-আচ্ছা আমি দেখছি তোমার কোন শাড়ি পড়া যায়, আলমারির চাবি দেও।
-হুম, এই নে।
রাফিসা সব শাড়ি ভালো করে দেখে একটা শাড়ি বেড় করে বললো
-আমি এই শাড়িটা একদিন পড়বো
শাড়িটি দেখে ইভার বুক কাঁপলো, সেই প্রথম ভালোবাসা পুরোনো স্মৃতি আজ ওর মেয়ে পড়তে চেয়েছে।
-না তুই এই শাড়িটা পড়তে পারবি না
-কেনো?
-যদি নষ্ট করে ফেলিস তাই
-আম্মু তুমি আজও ওইরকম খারাপ লোকের স্মৃতি আগলে রাখবে? তোমাকে তো আব্বু ভালোবাসায় কোনো কমতি রাখে নি তাহলে কেনো পুরোনো স্মৃতি আগলে রেখে কষ্ট পাও
-শত হলেও উনি তোর জন্মদাতা পিতা সেটা ভুলে যাস না
-উনাকে ভুলি নি সব মনে আছে, প্রতিটা অপমান আজও স্পষ্ট মনে আছে
রাফিসা চলে গেলো, ইভারও মন খারাপ হলো কিন্তু পুরোনো কথা ভেবে আর কি করবে শুধু দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ভুলে যায়।
পরের দিন সকালে তিহান ড্রয়িং রুমে একটা চিঠি পেলো।
চলবে,,,