ভালোবাসার পরিনতি পর্ব-১৪+১৫

0
1155

#ভালোবাসার_পরিনতি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১৪

“কে কল করেছে? তোমার চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেনো? কি হয়েছে? ”
“কি ভাবে যে তোমাকে বলবো বুঝতে পারছি না? ”
“কোনো খারাপ খবর আছে?”
“কথাটা শুনে তুমি সহ্য করবে পারবে না, তোমার মনে হবে,,,,,, ”
“যতো খারাপ খবর হোক, তুমি বলো?”
তিহান আমার দু’গালে হাত দিয়ে বললো,
“তোমার জব হয়ে গেছে, সামনের মাসের এক তারিখ জয়েন করতে পারবে হাহাহাহ্”
“সত্যি জব হয়ে গেছে ইয়য়য়ে ” বেশি খুশিতে তিহানকে জড়িয়ে ধরলাম।
“খুশির খবরে যদি এভাবে জড়িয়ে ধরো তহলে রোজ খুশির খবর দিবো ”

তিহানের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে ওকে ছেড়ে দিয়ে ফুপিকে খবরটা বললাম, শুনে তো খুশি হলো আর বললো রাতের জন্য বিরিয়ানি রান্না করবে। বাবা-মাকে কল করে জানিয়েছি তারাও অনেক খুশি। সবাই আমাকে ভালো রাখার জন্য আপ্রান চেষ্টা করে। অনেক ভাগ্য করে শ্বশুর বাড়ি, বাবার বাড়ি পেয়েছি। সমাজের যেসব ডিভোর্সি মেয়ে আছে তাদের ভাগ্য আল্লাহ যদি আমার মতো করে দিতো তাহলে তাদের কোনো কষ্ট থাকতো না।

বিকেল বেলা তিহান,ইশান ঘুমাচ্ছে আর আমি, রাফিসা, ফুপি ছাদে গল্প করছি এবং অনেক গাছ আছে সেগুলোর পরিচর্যা করছি। রাফিসা হঠাৎ বলে উঠলো,
-আম্মু দেখো এই মেয়েটা কতো কিছু কিনে এনেছে, আজ আমার বাবা থাকলে আমাকেও অনেক কিছু কিনে দিতো

আমি ওর এমন কথার উওর কি দিবো বুঝতে পারছি না বাবা মায়ের অভাব তো কেউ পূরণ করতে পারে না। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে ফুপি বললো,
-আমার মিষ্টি দাদুর কি লাগবে বলো, আমি কিনে এনে দিবো?
-আমি এই মেয়েটার মতো নিজে দোকানে গিয়ে আমার যা পছন্দ তাই কিনবো
-আচ্ছা আমি তোমাকে দোকানে নিয়ে যাবো
-সত্যি নানু তুমি নিয়ে যাবে?
-হুম তবে আমাকে দাদু বলবে নো নানু ওক্কে।
-ওক্কে।

এর মধ্যে তিহান ইশানকে কোলে নিয়ে এসে বললো,
-এই যে আপনার আরেক নাতি যে ঘুম থেকে উঠে গেছে তার কি খেয়াল আছে?
-হ্যাঁ আমার দুই নাতি-নাতনীদের আদর করতে হবে তো দে আমার কাছে।
-এই নেও।

তিহান আমার কাছে এসে বললো,
-কি তেমার মন খারাপ?
-না
-না তুমি মিথ্যে বলছো, মুখ দেখলে বুঝা যায় তোমার মন খারাপ?
-চা খাবে, এনে দিবো?
-কথা না ঘুরিয়ে সত্যি বলো?
-রাফিসা ওর বাবার কথা বলেছে, কোনোদিনও ওর বাবার অভাব পূরণ হওয়ার না।
-তুমি চিন্তা করো না একদিন ঠিক আমি ওর বাবার জায়গা নিতে পারবো।
-হলে ভালো ।
-ফুসকা খাবে?
-না তোমার এখন বাইরে যেতে হবে না৷
-আরে ওই দেখো রাস্তার ওখানে ফুসকার দোকান এসেছে।
-থাক অন্য একদিন খাবো।
-কেনো?তুমি কি আমার কাছে সুখ খুঁজে পাও না?আমি কি তোমাকে ভালো রাখার যোগ্য না?
-এসব বলো না, তোমার সবাই ছিলে বলে আমি নতুন সুখের ঠিকানা পেয়েছি
-তাহলে আমাকে ভালোবাসো প্লিজ?
-কি সব বলছো, এখানে মা আছে বাচ্চারা আছে তোমার কোনো লজ্জা সরম নেই?
-নাহ্ বউয়ের কাছে আবার কিসের লজ্জা?
-ধ্যাত, যাও ফুসকা নিয়ে আসো।
-হুহ

কিছুদিন পরে আমি জব জয়েন করি। সকালে উঠে নাস্তা রেডি করে খেয়ে স্কুলে যাই বাকি সব কাজ ফুপি করে। স্কুল থেকে এসে যতটুকু কাজ থাকে তা আমি করি। ইশানও ফুপির কাছে ভালো থাকে। ফুপি মায়ের অংশে কম না সবদিকে সে আগলে রেখেছে।
রাফিসাও স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। ওর বাবার নামের জায়গায় তিহানের নাম দেওয়া আছে।

নিশিতা রাগের বসে এবোয়শন করিয়ে খুব পস্তাচ্ছে। এখন মনে করে রোহান যদি কখনো বাচ্চার হাহাকারে নিশিতাকে ছেড়ে দিলে কি করবে? এত সম্পত্তি দিয়ে কি করবে যদি বাচ্চা না থাকে? নিশিতা মন মরা হয়ে থাকে বেশির সময়। পাঁচ বছর কেটে যায় তাও নিশিতার কোনো বেবি হয় না। নিশিতা বেবির জন্য পাগল হয়ে যায় তাই ঠিক করে যেভাবে হোক ইভার বেবি আনবে। উকিলের সাথে কথা বলে, যতো টাকা লাগুক তাই দিবে তাও আইনের মাধ্যমে বাচ্চা আনবে কারন রোহান বাচ্চাদের বাবা ওর অধিকার আছে।

পাঁচ বছরে ইভা, তিহানের সম্পর্ক আগের মতো নেই। ইভাও তিহানকে ভালোবাসে।
-ও বউ, বউ
-কি হয়েছে কি?এতো চিৎকার করে ডাকছো কেনো?
-একটা গুড নিউজ আছে।
-কি
-আমাদের পাসপোর্ট, ভিসা রেডি। কবে টিকিট কাটবো সেটা বলো?
-সবাই ছেড়ে আমার ইচ্ছে করছে না।
-কয়েক বছর পর পর দেশে আসবো তো।
-তাও ভালো লাগবে না।
-আমরা আরও দুটো পুচকে সোনা লাগবে তাহলে তোমারও ভালো লাগবে।
-ইসসসস্, এখান বাচ্চারা বড় হয়ে গেছে।
– ওতো টাও বড় হয় নি।
-উফফফ্ এখন হঠাৎ করে,,,,,,
-চুপ। বলে তিহান আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। দুজনে পবিত্র ভালোবাসায় আবদ্ধ হলাম।

সকালে গোসল করে খেয়ে বাচ্চাদের রেডি করিয়ে দিলাম স্কুলের যাওয়ার জন্য। রাফিসা এখন পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ে আর ইশান এবার প্রথম শ্রেনীতে পড়ে।
বাইরে শুনছি তিহানের সাথে কারো কথা কাটাকাটি হচ্ছে তাই আমি এগিয়ে দেখলাম সেই ছয় বছর আগের মানুষটি যে আমাকে ঠকিয়েছে
#ভালোবাসার_পরিনতি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১৫

ছয় বছর পরে রোহানের সাথে দেখা, ওর সাথে নিশিতাও এসেছে। আমাকে দেখা মাত্র রোহান বললো,
-আমার মেয়ে কোথায়?
-কার মেয়ে? কোন অধিকারে মেয়ের কথা জিজ্ঞেসা করো?
-ওর সমস্ত অধিকার আছে ওর মেয়ের প্রতি তাই বলো ওর মেয়ে কোথায়?(নিশিতা)
-তোমার সামনে তো আমাকে আর আমার মেয়েকে কাজের লোক বলেছিলো মনে আছে তাহলে আজ কেনো একটা কাজের লোকের মেয়েকে দরকার (ইভা)
-ওসব পুরোনো কথা না তুলে আমার মেয়েকে আমাকে দেও (রোহান)
-যে বাবা সন্তানদের কোনো দায় দায়িত্ব নেয় নি সে আজ সন্তান দাবি করবে আর আমি দিবো সেই পুরোনো ইভাকেও ভুলে যাও (ইভা)
-আমার সন্তানকে আমার কাছে রাখার সম্পূর্ণ অধিকার আছে এই দেখো আমি আইনের সাহায্য নিয়েছি (রোহান)
রোহানের হাত থেকে তিহান পেপারটা নিয়ে ভালো করে পড়তে লাগলো।
– প্রেগনেন্সির সময় আপনাদের আইন কোথায় ছিলো?তখন তো আমাকে আইন দেখাতে আসেন নি? যাকে এতো সম্পত্তি দেখে বিয়ে করেছো যার এতো এতো টাকা আছে সে একটা বাচ্চা দিতে পারে না?????(ইভা)
-যা খুশি রোহানকে বলো আমাকে কেনো অপমান করো? আমার তো কোনো দোষ নেই (নিশিতা)
-হাহাহাহ্ তোমার দোষ নেই তাই না, একটা পুরুষ মানুষ একা একটা ফ্ল্যাটে থাকে আর সেখানে একজন কাজের লোক আছে যে কি না প্রেগনেন্ট এবং ছোট বাচ্চা মেয়ে আছে, মালিককে বাবা বলে ডেকেছে এটা কি অস্বাভাবিক কিছু না? তারপর কি বলবে তুমি একটুও কিছু বুঝতে পারো নি একটা সুখের সংসার ভেঙ্গে দিচ্ছো(ইভা)
-ইভা এই পেপার টা দেখো (তিহান)
আমি তিহানের হাত থেকে পেপারটা নিয়ে ছিড়ে টুকরো টুকরো করলাম।
-পেপারটা ছিড়ে ফেললে কেনো? (রোহান)
-ওটার কোনো দরকার নেই এখন আমার বাসা থেকে আপনারা বিদেয় হন (তিহান)
-আমাদের অপমান করা হচ্ছে কিন্তু (নিশিতা)
-এখনো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করি নি এটা তোমাদের কপাল (ইভা)
-তোমার এতো বড় সাহস আমাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করার কথা বলো। (রোহান)
-গলা নামিয়ে কথা বলেন এটা আমার বাসা আর আমার স্ত্রীর সাথে কেউ খারাপ ব্যবহার করলে তাকে ছেড়ে দিবো না (তিহান)

স্কুলে যেতে লেট হয়ে যাচ্ছে তাই রাফিসা, ইশান ড্রয়িং রুমে আসে আমাকে ডাকতে,
-আম্মু স্কুলে যেতে লেট হচ্ছে তো, চলো যাই।
-তুমি ভাইকে নিয়ে উপরে যাও, আমি একটু পরে আসছি (ইভা)
-রাফিসা এই দেখো আমি তোমার আব্বু, তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যেতে এসেছি (রোহান)
-তুমি আমার আব্বু না আমার আব্বু তো এই (রাফিসা তিহানের হাত ধরে বললো)
-না তোমার আব্বু এই লোকটা না (নিশিতা)
-তোমার মতো পঁচা লোক কারো আব্বু হয় না (রাফিসা)
-শুনেছো তো, এখানে তোমার কোনো মেয়ে নেই (ইভা)
– যে ভাবে হোক নেক্সট টাইম, আমার মেয়েকে আমি নিয়ে যাবো (রোহান)
-সে গুড়ে বালি (তিহান)

রোহান, নিশিতা চলে গেলো। আমার অস্থির লাগছে, কেমন জানো মনে হচ্ছে আমার সন্তানকে এই বুঝি হারিয়ে ফেলি। রাফিসা, ইশানকে আজকে স্কুলে যেতে দিলাম না এবং নিজেও গেলাম না। আমার খুব বেশি খারাপ লাগছে তাই তিহান লেবুর সরবত বানিয়ে এনে বললো,
-সরবতটা খাও তোমার ভালো লাগবে।
-হুম কিন্তু কতোদিন আমি ওদের সাথে লড়াই করবো? ওরা আমাদের শান্তিতে থাকতে দিবে না।
-আর মাত্র দশ দিন ওয়েট করো তারপর আমাদের ওরা খুঁজে পাবে না।
-কেনো দশ দিন পরে কোথায় যাবো?
-বিদেশে তো এক মাস পরে যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু আজ যা হলো তারপরও দেশে থাকা ঠিক হবে না।
-ওদের জন্য আমার পালিয়ে যাবো তা হয় না।
-আমরা পালিয়ে যাচ্ছি না তো আমরা বিদেশে যাবো সেটা আগে থেকে ঠিক করা ছিলো, এখন শুধু সময়টা এগিয়ে এনেছি।
– খুব খারাপ লাগছে, আমার জন্য কেউ শান্তিতে থাকতে পারে না।
-এমন কথা একদম বলবে না।

ফুপি আমার বাবার বাড়ি গিয়েছে তাকে কল করে আসতে বলেছি। ফুুপি দুপুর বেলা আসে, মা আমাদের জন্য রান্না করে পাঠিয়েছে। সবাই এক সাথে খেতে বসেছি। আমি খেতে পারছি না কেমন না ভালো লাগে না গা গোলাচ্ছে, একটু খেতে আমি বমি করলাম। ফুপি তিহানকে বললো,
-বিকেল বেলা ইভাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাস।
-বাসায় তুমি একা বাচ্চাদের নিয়ে থাকবে আমার ভয় করছে, থাক এতোটুকু এতে ডক্টরের কাছে যাওয়া লাগবে না।
-আমি কি বাচ্চা নাকি যে ওদের সামলাতে পারবো না
-আম্মা ডক্টরের কাছে যেতে হবে না আমি এখন ঠিক আছি
-বেশি কথা বলবি না, আমি যা বলেছি তাই হবে।

বিকেলে ডক্টরের কাছে গেলাম। আজকে এতোটা খারাপ লাগার পর এখন মনে হচ্ছে সব আবার সুখ খুঁজে পেলাম। আমি তৃতীয় বারের মতো মা হবে। তিহান এতো বেশি খুশি হয়েছে যে রাস্তায় যার সাথে দেখা হয়েছে তাকেই মিষ্টি দিয়েছে।
আর দশ দিন দেশে থাকবো তাই ঠিক করলাম এই ক’টা দিন সবাই এক সাথে থাকবো তাই পরের দিন সকালে বাবার বাড়ি গেলাম।
সবার সাথে সময়গুলো খুব ভালো যাচ্ছে কিন্তু ভয় থেকে যাচ্ছে কখন কি হয়।

দু দিন পরে রোহান আবার এসেছে,
-কি ভেবেছো আমার থেকে পালিয়ে বাবার বাড়ি আসলেই আমার মেয়েকে আমি নিতে পারবো না?
-রাফিসা যদি তোমার সাথে যেতে চায় তাহলে ওকে নিয়ে যাও আমি বাধাঁ দিবো না (ইভা)
-জানি ও আজকে যাবে না তাই পনেরো দিন সময় দিলাম তার পরে আমি আমার মেয়েকে নিয়ে যাবো। (রোহান)

রোহান চলে যাওয়ার পর আমরা খুব হাসি পাচ্ছে এটা ভেবে, যে আমাকে একদিন ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিয়েছিলো, সন্তানকে অশিকার করেছে আজকে সে সন্তানের জন্য হাহাকার করে। লোভে পরে আসল সুখটা হারিয়ে ফেলেছে। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে, কিছু সময় কষ্ট দিয়ে আবার সুখের সন্ধান দেয়।
-ইভা তুমি এখানে বসে আছে আর সারা বাড়ি তোমাকে খুঁজি।
-কেনো?
-আরে ব্যাগ গোছাচ্ছ তোমার দেখতে হবে তো সব কিছু ঠিক ঠাক নিয়েছি কি না।
-ওহ্ হ্যাঁ চলো।

কয়দিন পরে দেশ ছেড়ে চলে গেলাম। ফুপিকেও আমাকে সাথে নিয়ে এসেছি। বাবা -মা, ভাইয়া -ভাবী সবার সাথে প্রতিদিন কথা হয়। পনেরো দিন পরে রোহান আমাদের বাড়িতে গিয়েছিলো কিন্তু আমাদের কোথাও তো খুঁজে পাবে না।

চলবে,,,,,,#ভালোবাসার_পরিনতি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১৫

ছয় বছর পরে রোহানের সাথে দেখা, ওর সাথে নিশিতাও এসেছে। আমাকে দেখা মাত্র রোহান বললো,
-আমার মেয়ে কোথায়?
-কার মেয়ে? কোন অধিকারে মেয়ের কথা জিজ্ঞেসা করো?
-ওর সমস্ত অধিকার আছে ওর মেয়ের প্রতি তাই বলো ওর মেয়ে কোথায়?(নিশিতা)
-তোমার সামনে তো আমাকে আর আমার মেয়েকে কাজের লোক বলেছিলো মনে আছে তাহলে আজ কেনো একটা কাজের লোকের মেয়েকে দরকার (ইভা)
-ওসব পুরোনো কথা না তুলে আমার মেয়েকে আমাকে দেও (রোহান)
-যে বাবা সন্তানদের কোনো দায় দায়িত্ব নেয় নি সে আজ সন্তান দাবি করবে আর আমি দিবো সেই পুরোনো ইভাকেও ভুলে যাও (ইভা)
-আমার সন্তানকে আমার কাছে রাখার সম্পূর্ণ অধিকার আছে এই দেখো আমি আইনের সাহায্য নিয়েছি (রোহান)
রোহানের হাত থেকে তিহান পেপারটা নিয়ে ভালো করে পড়তে লাগলো।
– প্রেগনেন্সির সময় আপনাদের আইন কোথায় ছিলো?তখন তো আমাকে আইন দেখাতে আসেন নি? যাকে এতো সম্পত্তি দেখে বিয়ে করেছো যার এতো এতো টাকা আছে সে একটা বাচ্চা দিতে পারে না?????(ইভা)
-যা খুশি রোহানকে বলো আমাকে কেনো অপমান করো? আমার তো কোনো দোষ নেই (নিশিতা)
-হাহাহাহ্ তোমার দোষ নেই তাই না, একটা পুরুষ মানুষ একা একটা ফ্ল্যাটে থাকে আর সেখানে একজন কাজের লোক আছে যে কি না প্রেগনেন্ট এবং ছোট বাচ্চা মেয়ে আছে, মালিককে বাবা বলে ডেকেছে এটা কি অস্বাভাবিক কিছু না? তারপর কি বলবে তুমি একটুও কিছু বুঝতে পারো নি একটা সুখের সংসার ভেঙ্গে দিচ্ছো(ইভা)
-ইভা এই পেপার টা দেখো (তিহান)
আমি তিহানের হাত থেকে পেপারটা নিয়ে ছিড়ে টুকরো টুকরো করলাম।
-পেপারটা ছিড়ে ফেললে কেনো? (রোহান)
-ওটার কোনো দরকার নেই এখন আমার বাসা থেকে আপনারা বিদেয় হন (তিহান)
-আমাদের অপমান করা হচ্ছে কিন্তু (নিশিতা)
-এখনো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করি নি এটা তোমাদের কপাল (ইভা)
-তোমার এতো বড় সাহস আমাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করার কথা বলো। (রোহান)
-গলা নামিয়ে কথা বলেন এটা আমার বাসা আর আমার স্ত্রীর সাথে কেউ খারাপ ব্যবহার করলে তাকে ছেড়ে দিবো না (তিহান)

স্কুলে যেতে লেট হয়ে যাচ্ছে তাই রাফিসা, ইশান ড্রয়িং রুমে আসে আমাকে ডাকতে,
-আম্মু স্কুলে যেতে লেট হচ্ছে তো, চলো যাই।
-তুমি ভাইকে নিয়ে উপরে যাও, আমি একটু পরে আসছি (ইভা)
-রাফিসা এই দেখো আমি তোমার আব্বু, তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যেতে এসেছি (রোহান)
-তুমি আমার আব্বু না আমার আব্বু তো এই (রাফিসা তিহানের হাত ধরে বললো)
-না তোমার আব্বু এই লোকটা না (নিশিতা)
-তোমার মতো পঁচা লোক কারো আব্বু হয় না (রাফিসা)
-শুনেছো তো, এখানে তোমার কোনো মেয়ে নেই (ইভা)
– যে ভাবে হোক নেক্সট টাইম, আমার মেয়েকে আমি নিয়ে যাবো (রোহান)
-সে গুড়ে বালি (তিহান)

রোহান, নিশিতা চলে গেলো। আমার অস্থির লাগছে, কেমন জানো মনে হচ্ছে আমার সন্তানকে এই বুঝি হারিয়ে ফেলি। রাফিসা, ইশানকে আজকে স্কুলে যেতে দিলাম না এবং নিজেও গেলাম না। আমার খুব বেশি খারাপ লাগছে তাই তিহান লেবুর সরবত বানিয়ে এনে বললো,
-সরবতটা খাও তোমার ভালো লাগবে।
-হুম কিন্তু কতোদিন আমি ওদের সাথে লড়াই করবো? ওরা আমাদের শান্তিতে থাকতে দিবে না।
-আর মাত্র দশ দিন ওয়েট করো তারপর আমাদের ওরা খুঁজে পাবে না।
-কেনো দশ দিন পরে কোথায় যাবো?
-বিদেশে তো এক মাস পরে যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু আজ যা হলো তারপরও দেশে থাকা ঠিক হবে না।
-ওদের জন্য আমার পালিয়ে যাবো তা হয় না।
-আমরা পালিয়ে যাচ্ছি না তো আমরা বিদেশে যাবো সেটা আগে থেকে ঠিক করা ছিলো, এখন শুধু সময়টা এগিয়ে এনেছি।
– খুব খারাপ লাগছে, আমার জন্য কেউ শান্তিতে থাকতে পারে না।
-এমন কথা একদম বলবে না।

ফুপি আমার বাবার বাড়ি গিয়েছে তাকে কল করে আসতে বলেছি। ফুুপি দুপুর বেলা আসে, মা আমাদের জন্য রান্না করে পাঠিয়েছে। সবাই এক সাথে খেতে বসেছি। আমি খেতে পারছি না কেমন না ভালো লাগে না গা গোলাচ্ছে, একটু খেতে আমি বমি করলাম। ফুপি তিহানকে বললো,
-বিকেল বেলা ইভাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাস।
-বাসায় তুমি একা বাচ্চাদের নিয়ে থাকবে আমার ভয় করছে, থাক এতোটুকু এতে ডক্টরের কাছে যাওয়া লাগবে না।
-আমি কি বাচ্চা নাকি যে ওদের সামলাতে পারবো না
-আম্মা ডক্টরের কাছে যেতে হবে না আমি এখন ঠিক আছি
-বেশি কথা বলবি না, আমি যা বলেছি তাই হবে।

বিকেলে ডক্টরের কাছে গেলাম। আজকে এতোটা খারাপ লাগার পর এখন মনে হচ্ছে সব আবার সুখ খুঁজে পেলাম। আমি তৃতীয় বারের মতো মা হবে। তিহান এতো বেশি খুশি হয়েছে যে রাস্তায় যার সাথে দেখা হয়েছে তাকেই মিষ্টি দিয়েছে।
আর দশ দিন দেশে থাকবো তাই ঠিক করলাম এই ক’টা দিন সবাই এক সাথে থাকবো তাই পরের দিন সকালে বাবার বাড়ি গেলাম।
সবার সাথে সময়গুলো খুব ভালো যাচ্ছে কিন্তু ভয় থেকে যাচ্ছে কখন কি হয়।

দু দিন পরে রোহান আবার এসেছে,
-কি ভেবেছো আমার থেকে পালিয়ে বাবার বাড়ি আসলেই আমার মেয়েকে আমি নিতে পারবো না?
-রাফিসা যদি তোমার সাথে যেতে চায় তাহলে ওকে নিয়ে যাও আমি বাধাঁ দিবো না (ইভা)
-জানি ও আজকে যাবে না তাই পনেরো দিন সময় দিলাম তার পরে আমি আমার মেয়েকে নিয়ে যাবো। (রোহান)

রোহান চলে যাওয়ার পর আমরা খুব হাসি পাচ্ছে এটা ভেবে, যে আমাকে একদিন ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিয়েছিলো, সন্তানকে অশিকার করেছে আজকে সে সন্তানের জন্য হাহাকার করে। লোভে পরে আসল সুখটা হারিয়ে ফেলেছে। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে, কিছু সময় কষ্ট দিয়ে আবার সুখের সন্ধান দেয়।
-ইভা তুমি এখানে বসে আছে আর সারা বাড়ি তোমাকে খুঁজি।
-কেনো?
-আরে ব্যাগ গোছাচ্ছ তোমার দেখতে হবে তো সব কিছু ঠিক ঠাক নিয়েছি কি না।
-ওহ্ হ্যাঁ চলো।

কয়দিন পরে দেশ ছেড়ে চলে গেলাম। ফুপিকেও আমাকে সাথে নিয়ে এসেছি। বাবা -মা, ভাইয়া -ভাবী সবার সাথে প্রতিদিন কথা হয়। পনেরো দিন পরে রোহান আমাদের বাড়িতে গিয়েছিলো কিন্তু আমাদের কোথাও তো খুঁজে পাবে না।

চলবে,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে