#ভালোবাসার_পরিনতি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১১
“ইভাকে আমার সবাই অনেক বুঝিয়েছি, অনেক সময় দিয়েছি এখন আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব না তাই বিদেশে চলে যাবো”
“না বাবা তুই বিদেশে যাস না, আমরা সবাই আছি তো ইভা ঠিক বিয়েতে রাজি হবে ”
“না মামা জোর করে কারো মন পেতে চাই না, যে এতোদিনে আমাকে বুঝলো না সে আর কখনো বুঝতে পারবে না, মা সকলে আমরা বাসায় চলে যাবো রেডি থেকে ”
তিহান রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। এবার ফুপি বললো,
-তোকে আর আমি জোর করবো না। জোর করে কোনো সম্পর্কে সুখী হওয়া যায় না তাই তোর ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে করতে হবে না।
-তোকে আমরা সবাই সুখী দেখতে চেয়েছি কিন্তু তুই আমাদের বিশ্বাস করতে পারলি না।
বাবা আমার রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, ফুপিও চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলো।
সকালে তিহান, ফুপি রেডি হয়েছে বাসায় যাওয়ার জন্য। রাফিসার সাথে তিহানের খুব ভাব। রাফিসা তিহানকে বললো,
-তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে আমাকে কে ঘুরতে নিয়ে যাবে বলো?
-ফুলি তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমারও কষ্ট হবে কিন্তু আমার অনেক কাজ আছে তাই যেতে হবে (তিহান রাফিসা আদর করে ফুলি ডাকে)
-তোমার সাথে আমিও কাজ করবো আমাকে নিয়ে যাও।
-না ফুলি, আমি কিছু দিন পরে আবার আসবো।
-আবার আসলে আমাকে নিয়ে যাবে তো।
-হুম।
তিহানের চোখ ঝল ঝল করছে। সবার সামনে নিজেকে কন্ট্রোল করছে সেটা বুঝতে পারছি।
আমি দরজার এক কোনে দাঁড়িয়ে আর আমার কোলে ছোট্ট ইশান আছে।
ছোট ভাবী আমাকে আসতে করে বললো,
-বোন আমার তুমি তিহানকে যেতে দিও না এখনো সময় আছে তিহানকে আটকাও।
-ভাবী আমি কি দ্বিতীয় বার সুখী হবে পারবো, কোনো গ্যারান্টি আছে ??
-খুব সুখী হবে, দেখেছো রাফিসার সাথে ভাইয়ার সম্পর্ক কতো ভালো। মনে হয় বাবা চলে যাচ্ছে তাই মেয়ে কাঁদছে আর বাবাও মেয়ের জন্য কাঁদছে।
বড় ভাবী বললো,
-ইভা যাও তিহানকে আটকাও।
-আচ্ছা তোমাদের সবার কথা রাখলাম।
তিহান শেষ বারের মতো ইশানকে কোলে নেওয়ার জন্য আমার কাছে এসে বললো,
“ইশানকে একটু কোলে নিবো”
“হুম নেও”
ইশানে কোলে নিয়ে খুব আদর করলো। তখন আমি সাহস করে বললাম,
“সারাজীবন বাচ্চাদের বাবার আদরে বড় করবে? ”
তিহান আমার কথা শুনে এক গাল হাসি দিয়ে বললো,
“সত্যি তুই চাস আমি ওদের বাবা হই?”
“হুম চাই তুমি তোমার ফুলি আর পুচকের বাবা হও। ”
তিহান ফুপির কাছে গিয়ে বললো,
-মা ইভা বিয়েতে রাজি হয়েছে
-সত্যি ইভা তুই রাজি হয়েছিস?
-হুম বলে রুমে চলে এলাম। দ্বিতীয় বিয়ে তাও দুটো বাচ্চা নিয়ে সহ লজ্জা তো করবেই।
বাবা বাজার থেকে এসে শুনেছে আমি বিয়ে করতে রাজি হয়েছি তাতে খুব খুশি হয়েছে। ভাই, ভাবি, মা তারাও খুশি।
এখন সবার খুশিতে আমার খুশি হয়ে গেছে। নিজের জন্য আলাদা কোনো ভালো লাগা নেই। জীবনে সব ভালো লাগার রং মুছে গেছে।অনেক দিন হলো শাড়ি পড়ি না তাই আলমারি থেকে লাল -কালো কম্বিনেশন কালারের শাড়ি বের করে পরলাম। হাতে কয়টা চুড়ি, কানে ঝুমকো আর চুলগুলো খোপা করেছি। এমন সময় বড় ভাবি এসে বললো,
-ওয়াও, এতোগুলো কিউট লাগছে। দেখি দেখি কারো নজর যেনো না লাগে বলে একটু কাজল আমার কানের পাশে দিলো।
-আরে ভাবী কি করছো? এই বুড়ো বয়সে আমার দিকে কেউ তাকাবে না আবার তো নজর।
-ইসসস্, আমার ছোট বোনটাকে দেখতে কতো সুন্দর ।
-তোমাদের মতো ভাবী যেনো সবার ঘরে হয় তাহলে আমাদের মতো মেয়ের কোনো কষ্ট থাকবে না।
-হাহাহাহ্ তোমার মতো মেয়েও যেনো সবার হয়।
-চলো তোমার সাথে রান্না করবো
-আচ্ছা চলো।
ইশানকে কোলে নিয়ে তিহানকে বললাম,
-ওনাকে নিয়ে বসে থাকেন আমার কাজ আছে।
তিহান আমার হাত টেনে ওর পাশে বসিয়ে বললো,
-তোকে শাড়ি পরলে কতোটা সুন্দর লাগে জানিস আর এতো দিন কেমন ভুতুমপেঁচা হয়ে থাকতি
-তুমি আমার নামে একটু বেশি প্রশংসা করো
-হুহ আমার কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই যে তোর নামে প্রশংসা করবো, যেটা সত্যি আমি সেটা বলেছি পাগলী
-হয়েছে আর বলতে হবে না। আমি রান্না করতে যাবো।
-একটু সময় আমার কাছে থাক
-না এখন সময় নেই
-একটু কি ভালোবাসা যায় না?
-বিয়ের পর সব ভালোবাসা পাবে এখন গেলাম
হঠাৎ অঝোর ধারায় বৃষ্টি শুরু হলো তাই খিচুড়ি, ইলিশ মাছ ভাজা আর গরুর গোসত রান্না করলাম দু’ভাবী আর আমি।
আমার আর তিহানের বিয়ে ঠিক হলো পাঁচ দিন পরে। ঘরোয়া ভাবে আয়োজন হবে। দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই একসাথে বসে লিস্টি করছে বিয়েতে যা যা কিনতে হবে।
ওদিকে রোহান আর নিশিতার সাথে খুব ঝামেলা হচ্ছে। নিশিতা সব সত্যি জানার পর রোহানকে ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।রোহান অনেক আকুতি মিনতি করছে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য তাই নিশিতা বলেছে ক্ষমা করতে পারে একটা শর্তে সেটা হচ্ছে বেবি এবোয়শন করবে তাহলে রোহানের সাথে থাকবে। নিশিতার সাথে থাকলে রোহান সব সম্পত্তি, বড়লোক বিলাসিতা উপভোগ করতে পারবে পাবে তাই বেবি এবোয়শন করতে রাজি হলো। নিশিতার এতো তাড়াতাড়ি বেবি নেওয়ার ইচ্ছে ছিলো না এখন যখন সুযোগ পেয়েছে বেবি এবোয়শন করার তাই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ফেললো।
বিয়ের সব কেনাকাটা করা কম্পিলিট। ঘরোয়া ভাবে বিয়ের আয়োজন হলেও কেনাকাটায় কোনো কমতি নেই।
বিয়ের দুদিন আগে স্কুলে জবের জন্য এ্যাপলাই করেছে সেটার ইন্টারভিউ দিতে যেতে হবে তাই তিহান এসেছে ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার জন্য।
ইন্টারভিউ খুব ভালো হয়েছে মনে হয় জবটা হবে। ফুপি বলেছে নাতিনাতনিদের সে সামলাবে, আমি জব করলে কোনো সমস্যা নেই। দিন শেষ আমি আর তিহান ভালো থাকলেই তারা সবাই ভালো থাকবে।
[গল্পটা কেমন হচ্ছে তা গঠন মূলক কমেন্ট করে বলবেন]
চলবে,