ভালোবাসার পরিনতি পর্ব-০৯

0
1061

#ভালোবাসার_পরিনতি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_৯

সবাই ঘুমিয়ে গেছে এখনই পালানোর সময়। রাফিসা ঘুমাচ্ছে তাই ওকে কোলে নিলাম আর এক হাতে ব্যাগ নিয়েছি। প্রেগনেন্ট অবস্থায় রাফিসাকে কোলে নিতে কষ্ট হচ্ছে তাও কিছু করার নেই। সন্তানদের ভালোর জন্য এতোটুকু কষ্ট সহ্য করতে হবে। রুমের দরজা আসতে করে খুলে বেরিয়ে মেইন দরজার কাছে গিয়ে দরজাটা খুললাম তখন আমার বাবা বললো,
-তুই এতো রাতে কোথায় যাচ্ছিস?
-তুমি এখনও ঘুমাও নি কেনো?
-আমরা কি তোর কেউ হই না? এতোটা পর হয়ে গেছি যে তোর সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছিস? আমরা কি তোর কোনো ক্ষতি চাচ্ছি নাকি?
-না বাবা এভাবে বলো না, আমরা জন্য তোমাদের কোনো অসুবিধায় ফেলতে চাই না।
-খুব বেশি বড় হয়ে গিয়েছিস, যা ইচ্ছে হবে তাই করবি নাকি? রুমে গিয়ে ঘুমা যা। বলে,
বাবা রাফিসাকে আমার কোল থেকে নিলে গেলো।
বাবা খুব রাগ হয়ে গেছে তাই কিছু না বলে রুমের চলে যেতে লাগলাম ,
Happy birthday to u Eva
কয়েকটা বেলুন ফাটানোর শব্দ, পিছনে ফিরে দেখি বাবা,মা,ভাইয়া, ভাবি,ফুপি,তিহান দাঁড়িয়ে আছে সাথে একটা কেক।
চোখ ঝল ঝল করছে,যারা আমাকে এতো ভালোবাসে তাদেরকে ছেড়ে চলে যাচ্ছিলাম শুধু মাত্র কারো স্মৃতি আগলে রাখার জন্য যে আমার সাথে বেইমানি করেছে।
না আমি ভুল করেছি তাদেরকে আবার কষ্ট দিয়ে। মা আমার কাছে এসে বললো,
-তুই তোর সন্তানদের কথা ভেবে আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি। তুই কি আমার সন্তান না যে তোর কথা আমরা ভাববো না? আমরা তো তোর ভালো চাই।
-মা আমার ভুল হয়ে গেছে।
-তোর এই ভুলের শাস্তি অনেক কঠিন হবে (বড় ভাই)
-এ্যাহ্
-এ্যা না হ্যাঁ। তোর শাস্তি হচ্ছে কেক কেটে সবাইকে খাইয়ে দে (ছোট ভাই)
সবাই হাহাহাহ্ করে হেসে উঠলো। খারাপ সময় পরিবার পাশে থাকলে হাজারটা খারাপ সময় অতিক্রম করা যায়।
কেক কেটে সবাইকে খাইয়ে দিলাম, তিহান ভাইয়া আমার দিকে তাকায় নি।
-আজকে তিহানের জন্য তোকে ধরতে পেরেছি, তিহান তোকে দেখেছে তুই জিনিসপত্র গোছাচ্ছি (বাবা)
-তুই চলে গিয়ে আমাদেরকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলি তাই আমরা আগে তোকে সারপ্রাইজ দিলাম। (ছোট ভাই)
-তোর বার্থডে কেক তিহান নিজে বানিয়েছে (বড় ভাই)
আমি তিহান ভাইয়ার কাছে গিয়ে বললাম,
-ধন্যবাদ ভাইয়া। তোমার জন্য আবার পরিবারকে ফিরে পেলাম, আমার একটা ভুলে অনেক ক্ষতি হয়ে যেতো
-তোর সুন্দর জীবন নষ্ট হয়ে যাবে সেটা কি আমি চাইতে পারি নাকি?আমরা সবাই তোর ভালো চাই
-হুম, আমার ভুল হয়ে গিয়েছে।।
-আচ্ছা সবার এখন ঘুমানোর দরকার, বিশেষ করে তোর। যা গিয়ে ঘুমা
যে যার মতো করে ঘুমাতে গেলো। আমিও ঘুমাতে এসেছি কিন্তু ঘুম আসছে না।
এপাশ ওপাশ করতে লাগলাম, ঘুমানোর অনেক চেষ্টা করছি তাও ঘুম আসছে না। ঘড়ি দেখলাম ২:৩০টা বাজে তাই ওজু করে তাহাজ্জুদ নামাজ পরি তারপর একটু ঘুমিয়ে ফজরের নামাজ পরে ছাদে গেলাম। ছাদের অনেক গোলাপ ফুলের গাছ আছে আমার খুব ভালো লাগার জিনিস। গাছে পানি দিয়ে হাটতে শুরু করি।
তিহান ভাইয়ার আগমন ঘটে সেও নিয়মিত ফজরের নামাজ পরে। আমাকে দেখে বললো,
-তোর এই সময়ে ছাদে আসা একদম উচিৎ হয় নি, আর কখনও একা আসবি না
-জানি উচিৎ হয় নি তাও প্রকৃতির সাথে একা থাকতে ইচ্ছে হলো।
-বেবিটা আসুক তারপর তোর যতো খুশি একা থাকিস।
-আমাকে এতো ভালোবাসো তাহলে সেদিন অন্যের বৌ হতে দিয়েছিলে কেনো?
-তোকে বলার সাহস পাই নি
-সাহস করে বলে দিতে, যা হবার হতো।
-বুঝতে পারি নি তুই এতো তাড়াতাড়ি আমাকে ছেড়ে যাবি
-এখন নিজের জীবনটা গুছিয়ে নেও
-তোকে ছাড়া সম্ভব না, অনেক চেষ্টা করেছি তাও পারি নি তুই চাইলে তোকে আমার বৌ করবো
-এটা হয় না।
-কেনো হয় না? আমাকে একটা বার সুযোগ দে তোর আমি সব থেকে আমি সুখী রাখতে পারবো
-আমার দুটো সন্তান আছে তাদেরকে ছেড়ে কখনও থাকতে পারবো না আর তুমি অন্যের সন্তানের দায়িত্ব কেনোই বা নিবে?
-তোর সন্তানেরা কখনও বাবার অভাব বুঝবে না, আমি ভালো বাবা হয়ে দেখাবো।
-না ভাইয়া, চাইলে সব হয় না।
তিহান ভাইয়া আমার হাত ধরে বলে,
-শুধু একটা বার আমাকে বিশ্বাস করে দেখ, তোর বিশ্বাসের মর্যাদা রাখবো।
আমি হাতটা সরিয়ে দিয়ে বললাম,
-আমি প্রতিষ্ঠিত হতে চাই, কারো উপর ডিপেন্ড করে বাঁচতে চাই না কারন আমার মনে হবে সে আমাকে দয়া করছে।
-আচ্ছা সবকিছুতে তোকে আমি হেল্প করবে, আমাকে সাথে রেখে দেখিস তারপর তোর যদি মনে হয় আমি তোর বিশ্বাসের জায়গা করতে পারি নি তখন আমি সারাজীবনের জন্য তোর জীবন থেকে সরে যাবো।
-ঠিক আাছে তাই হকে, এখন তুমি সবাই বলবে যে তুমি বিয়ে করবে না
-আচ্ছা

নিচে এসে সবার জন্য চা বানালাম। মা একটু রাগারাগি করেছে কেনো রান্না ঘরে গিয়েছি তাই । আজকে আমার পছন্দের সবকিছু রান্না করেছে। দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে কিছুক্ষন শুয়ে থেকে রেডি হয়ে বের হলাম, কাছেই একটা পার্কে ঘুরতে যাবো আমি, তিহন, রাফিসা আর তিয়াস।

বাসা থেকে বের হতে পাশের বাসার একজন আরেক জনকে আমাকে শুনে বললো,
-ডিভোর্স হয়েছে তাও কোনো লজ্জা নেই, প্রেগন্টে অবস্থায় বাসা থেকে বের হয়েছে।
-হ্যাঁ, স্বামীকে ধরে রাখতে পারে নি নিশ্চয় কোনো দোষ আছে নয়তো এই অবস্থায় কেউ কি ছেড়ে দেয়।

ওদের কথা শুনে তিহান বললো,
-আল্লাহ না করুক আপনার মেয়ের সাথে যদি কিছু হয় তাকেও কি এসব কথা বলবেন?ও কি আপনার টাকায় খায় না পড়ে যে আপনার অসুবিধা হচ্ছে?
তিহানের কথা শুনে নিজের কাছে খুব ভালো লাগলো তাই আমিও গিয়ে প্রতিবাদ করলাম,
-প্রেগনেট অবস্থায় বাসা থেকে বের হওয়া যাবে না কেনো? কোথাও কি লেখা আছে? আর আমার দোষ আছে কি না তা আপনি জানলেন কিভাবে? কোনো নিউজ পেপারে আমার নামে লেখালেখি হয়?
-এসব বাদ দিয়ে ভালো কিছু চিন্তা করুন।

ওনাদের সাথে আর কোনো কথা না বলে আমরা পার্কে গেলাম। ওনাদের কথা শুনে খারাপ লাগলে, ঘুরতে এসে খুব ভালো লাগলো । ফুসকা ও আইসক্রিম খেয়ে সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরে গেলাম।

পরেরদিন তিহান ভাইয়া তাদের বাসায় চলে গেলো। মাঝে মাঝে দেখতে আমাকে আসতো আর প্রতিদিন খোঁজ নিতো এভাবে কেটে যায় কয়েক মাস।

[গল্পটা কেমন হচ্ছে গঠন মূলক কমেন্ট করে জানাবেন]

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে