#ভালোবাসার_দূরত্ব(পর্ব 11 ও শেষ)
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম
,,
,,
,,
নেহাকে রুমে নিয়ে এসে ,, ফুপিকে দাফন করা হলে একে একে সবাই চলে যেতে লাগলো। আরো একজন এসেছিলো সে হলো রশনি, আগেই দেখে রেখেছিলাম ওকে ও চলেই যাচ্ছিলো,পেছন থেকে ডাকলাম।
সামির : রশনি
রশনি : হ্যাঁ ভাইয়া বলো
সামির: বাড়ির ভেতরে চল কথা আছে তোর সাথে
রশনি: ভাইয়া আমাকে ক্ষমা করে দাও,এছাড়া
আমার কাছে আর কোনো কিছু করার ছিলো
না
সামির: তোর কিছুই হবে না শুধু সত্যিটা বাড়ির
সকলের সামনে বলবি
রশনি: আচ্ছা
বাড়ির ভেতরে এসে সামির সকলকেই ডাকলো। আজকে কারোরি মন ভালো নেই কিন্তু এটার সমাধাধ আজ না করলে এটা অসম্পূর্ণই থেকে যাবে। এভাবে সবাই কখন একসাথে হবে আর রশনিই বা কবে আসবে ঠিক নেই। ততোদিনে নেহাকে সবার কথা শুনতে হবে সেটা সামির চাচ্ছে না। তাই এই ঝামেলা আজকেই মিটিয়ে নিতে চায়।
সবাই উপস্থিত হলে সামির রশনিকে ডাকে। ওকে দেখে সবাই চমকে ওঠে। মিশু এগিয়ে যায় ওর দিকে।
ওর আম্মু আব্বু চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। যেই কিছু বলতে যাবে,,
সামির : না ফুপি আজ তুমি রশনিকে কিছুই বলবে
না, যা জিজ্ঞেস করার আমি করবো
রশনি তোকে কি নেহা বাড়ি থেকে পালানোর
কথা বলেছিলো? সোজাসুজি উত্তর দিবি
রশনি : না
সামির : নেহা কি বাড়ি থেকে পালাতে সাহায্য
করেছিলো
রশনি : না
সামির : তাহলে বল তুই এমন একটা কাজ করলি
কেনো
রশনি কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।
সামির : রশনি চুপ করে থাকিস না বল,তোর জন্য
নেহাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে, এবার
তুই নিজে মুখেই সবটা বল
রশনি : আসলে সেদিন আমার পালানোর কথা
ছিলো না, নেহা আমাকে বলেছিলো আব্বু
আম্মুকে সবটা বোঝাবে সামির ভাইয়া এ
বিষয়ে রিয়াদ(রশনির স্বামী)এর সাথেও কথা
বলবে, কিন্তু সেদিন আমি আম্মু আব্বুর কিছু
কথা শুনতে পাই,
অতীত
রশনির আব্বু: দেখো সামিরের তো আর ভাই বোন নেই, রশনির সাথে বিয়ে হলে একসময় সবকিছু ওর নামেই লিখে নেবো, তাহলে সব সম্পত্তির মালকিন হবে আমাদের মেয়ে।
রশনির আম্মু : হুমম, ভালোই ভালোই একবার বিয়েটা হয়ে গেলেই হলো। সাবিনা ভাবির রাজত্ব শেষ , সবকিছু আমাদের কথামতো চলবে।
বর্তমান,,
রশনির আম্মু : রেগে বলে উঠলো, রশনিইইইই
সামির : আর কি বলবে ফুপি,আর আম্মুকে বলি, তোমার কি আরো কিছু জানার বা বোঝার আছে।
সাবিনা : ছিহ আমি কখনই ভাবি নি এরকম করবে
এরা
মিশু: আম্মু, আব্বু তোমরা এমন, সম্পত্তির জন্য
এতোতা নিচে নামতে পারলে, আমাকে তো
বলেছিলে সামির ভাইয়া রশনিকে ভালোবাসে।
আমিও তোমাদের কথা বিশ্বাস করে রশনিকে
বুঝিয়েছিলাম বিয়ে করতে।কিন্তু সম্পত্তির
লোভে না
সামিরের বাবাও চুপচাপ আছে, তার বোনদের তিনি সমানভাবেই ভালবেসেছেন, কিন্তু তার এক বোন যে এতোটা নিচে নামবেন ভাবতে পারেন নি।
,,
তারপর, তারপর কি হলো নাহিদ,নেহা আপুর কথা বলো, সাবনা বেগম কি মেনে নিয়েছে আপুকে,,
হ্যাঁ এতোক্ষন এসবকিছু নাহিদ ওর প্রেমিকা সাদিয়াকে এসব বলছিলো। তিন বছরের প্রেম,
অবশেষে ,, দুই দিন পর ওদের বিয়ে , সাদিয়া অনেকদিন থেকে শুনতে চায় নাহিদের অতীত বিষয়ে কিন্তু এভাবে সময় হয়ে ওঠে নি। দুই দিন পর বিয়ে তাই আজ একদম অতীতে চলে গেছিলো ও।
চোখেঁর পানি মুছে আবারো বলতে শুরু করে,,
সেইদিনের পর সবাই আপুকে মেনে নিলেও আপু পারেনি সামির ভাইয়াকে মেনে নিতে। আপুর ঙ্গান ফেরার পর সবাই আপুর রুমে যায় কিন্তু আপু স্বাভাবিক ছিলো না, কেমন যেনো আবোল তাবোল বলছিলো শুধু,, সামির ভাইয়া আপুকে থামানোর জন্য কাছে যেতেই একটা স্টিল এর স্কেল ছুরে মারে যা দিয়ে সামির ভাইয়ার কপাল কিছুটা কেটে যায়, তারপরও হাতের কাছে যা পায় তাই দিয়ে মারতে থাকে। ডাক্তার দেখানো হলে ডাক্তার বলে,অতিরিক্ত শক এর জন্য মাথার ব্রেইন এর সমস্যা হয়েছে। ভালো হতেও পারে আবার নাও হতে পারে।
বাড়িতে রাখলে কোনো কিছু ঠিক রাখছিলো না,বাদ্ধ হয়ে মেন্টাল হসপিটালে রাখা হয়েছে। কিন্তু আপুর এভাবে পরিবর্তন সামির ভাইয়া মেনে নিতে পারে নি। সামির ভাইয়াও একবছর নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছিলো, কারো সাথে কথা বলে নি,বাহিরে বের হয় নি। ঘরে খাবার দিয়ে আসতো তাই খেতো। এখন কিছুটা ঠিক হলেও কারো সাথেই বেশি কথা বলে না। ওর আম্মুর সাথে সেই দিনের পর থেকে একবারো কথা বলেনি।
একমাত্র ছেলের সাথে কথা না বলতে পেরে সাবিনা বেগম ও নিজেকে সবকিছু থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। যে বাড়ি হাসি হৈ হুল্লোর এ পরিপূর্ণ ছিলো সেই বাড়ি এখন নিস্তব্ধ। কখনো কারো মুখে হাসি দেখা যায় না।
আজ নয় বছর হেয় গেছে, মীরা আপু হীরা আপুর মেয়ে আর ছেলে হয়েছে, রাসেল ভাইয়ার ও মেয়ে হয়েছে মিশু আপু ওর স্বামীর সাথে বিদেশেই চলে গেছে, ও চায় নি দেশে থেকে ওর বাবা মায়ের সাথে যোগাযোগ রাখতে,রশনিও আসে না বাড়িতে, ও বাড়িতেও হাসিঁ নেই।
আর আমাদের বাড়ি সে তো কখনই আর আগের মতো হবে না, বাড়ির যেখানেই যাই না কেনো আম্মু আর আপুর সৃতি সবটা জুড়ে, যা ভোলার মতো ক্ষমতা আমার নেই। আব্বু তো বেঁচে থেকেও ম*রে গেছে। আগের মতো কথা নেই খাওয়া নেই, সবকিছু আমাদের সেদিন থেকেই শেষ হয়ে গেছে।
আচ্ছা নাহিদ আজকে চলো না,আপুর কাছে যাই,
যাবা, চলো যাই।
তারপর দুইজন মিলে চললো নেহার সাথে দেখা করতে। এই নয় বছরে কম করে হলেও নাহিদ চল্লিশ বার এসেছে ওর আপুকে দেখতে সামিরো এসেছে অনেকবার কিন্তু আপুকে স্বাভাবিক দেখতে পায় নি। তবে আর ওরকম পাগলামি করে মারেও নি। শুধু একা একা নিজের মতো থেকেছে।
এবারে নাহিদ ছয় মাস পর আসলো। পড়াশুনা শেষ করে কিছুদিন আগে জব পেয়েছে তাই, তাই এই শেষের ছয় মাস সুযোগ হয় নি আসার। আজ সাদিয়া সহ আসলো। আসার সাথে সাথে কোথেকে একটা মেয়ে ভাই ভাই বলে দৌড়ে এসে নাহিদকে জরিয়ে ধরে,
মুখ তুলে দেখার সাথে সাথে নাহিদ অবাই হয়ে যায়, এই এতো বছরে নেহা ওকে এঈবারো ভাই বলে নি আর নেহাকে বাহিরেও দেখে নি, আজ নেহা বাহিরে আর ওকে ভাই বলে ডাকলো তাহলে কি নেহা আপুর সব মনে পরেছে নেহা আপু ঠিক হয়ে গেছে,, নাহিদ বোনকে নিয়ে ডাক্তার এর কাছে যায় ডাক্তার বললো, দেখুন এখন ওনার মাঝে মাঝেই কিছু মনে পরে কিন্তু পরেক্ষনে আবার ভূলে যায়, তবে আমরা আশা রাখছি খুব তারাতারি ওনার সৃতি অনেকটা ফিরে আসবে। তবে কোনো ভাবে ওনাকে চাপ দেয়া যাবে না। না হলে বিপরীত হবে।
নাহিদ নেহার দিকে তাকিয়ে দেখে তখন ভাই ভাই বললেও এখন আবার আবোলতাবল কিছু বলতেছে। নাহিদ এবারো বিষন্ন মন নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে। আসার সময় আর একটা কথাও বলে নি। সাদিয়াও জোর করে নি।
তবে এখনো অপেক্ষা করে আছে সবাই সেই দিনের। যেদিন নেহা এসে বলবে দেখো আমি একদম ঠিক হয়ে গেছি। সেদিন আবারো সবার মুখে হাসি ফুটবে।
সমাপ্ত
ভূল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ।
❌কপি করা নিষেধ ❌