ভালোবাসার দূরত্ব পর্ব-০৫

0
970

#ভালোবাসার_দূরত্ব(পর্ব 5)
#লেখানীতে_নাফিসা_আনজুম
,,
,,
,,
আকাশ ঘনো কালো মেঘে ছেয়ে গেছে,তবে সব কেমন যেনো স্থির হয়ে আছে। ঝড় ছাড়া বৃষ্টি আসবে মনে হচ্ছে। এই বৃষ্টি আমার খুব ভালোলাগে,বেলকোনিতে দাড়িয়ে হাত দুটো গ্রীল এর মধ্যে দিয়ে বের করে দিই।ঝড় থাকলে আম্মু ওখানে দাড়াতেই দেয় না।আর আমারো ভয় লাগে।

আকাশের মতো আমার মনটাও আজ বিষন্নতায় ছেয়ে গেছে।আজ কতোদিন হলো সামির ভাইয়ার সাথে দেখা নেই কথা নেই।
সেদিন মামা বাড়ি থেকে আসার পর আর দেখা হয় নি উনার সাথে। শুধু ফোন এ কথা হয়েছিলো তবুও শুধু রশনির ব্যাপারে। রশনি একজনকে ভালোবাসে সেটাই বাড়িতে বুঝিয়ে বলতে হবে। এছাড়া আর কথা হয় নি।
দুই দিন পর,কোম্পানির কোনো কাজে নাকি ওনাকে বাহিরে যেতে হয়েছে,ভালোভাবে বলেও যায় নি।খুব মনে পরছে ওনাকে, একটিবার ভালোবাসি শুনতে ইচ্ছা করছে। না চাইতেও চোখঁ থেকে কয়েকফোটা জ্বল গড়িয়ে পরলো।

নেহা মা

চোখঁ মুছে,আম্মুর দিকে ফিরলাম। হুমম আম্মু বলো

মন খারাপ

না আম্মু, চোখেঁ একটু ময়লা পরছিলো

একটু হেসে,নিজের মা কে বোকা বানাচ্ছিস
সামির আর রশনির বিয়ে নিয়ে মন খারাপ করে আছিস।

কিছু না বলে চুপ থাকলাম।কারন সামির ভাইয়া বলেছে আগে কাউকে কিছু না জানাতে।সময় হলে সবাই সবটা জানবে।

আম্মু আবারো বলতে লাগলো, জন্ম মি*ত্যু, বিয়ে সব আল্লাহর হাতে মা। তিনি, যেটা ভালো সেটাই করেন।তাই মন খারাপ করতে নেই। দেখবি তোর কপালে আরো ভালো স্বামী জুটবে।

কিভাবে বোঝাবো তোমাকে আম্মু,তোমার ভাতিজা ছাড়া আমি আর কাউকেই চাই না।আর ভালো ও লাগবে না আমার।

এমন সময় তুমুল বেগে বৃষ্টি শুরু হলো।আম্মুকে বললাম আম্মু একটু ভিজি।

জানিনা আজ কি মনে করে আম্মু আমাকে ভেজার অনুমতি দিলো। এক ছুটে ছাঁদে চলে গেলাম।
বড় বড় বৃষ্টির ফোটা গায়ে পরতেই শরীর কাটা দিয়ে উঠলো। একটু পর ভালো লাগছে। আর ঠান্ডা লাগছে না। দুই হাত মেলে দিয়ে চোখঁ বন্ধ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।
পেছন থেকে একজোড়া হাত এসে কোমর জরিয়ে গলাতে হালকা করে কামর দিলো। আচমকা এরকম হওয়াতে শরীরে যেনো এক অন্য রকম অনুভূতি হতে লাগলো। চেনা পারফিউম এর গন্ধ নাকে আসতেই চোখঁ মেলে তাকালাম।আর
অভিমানে দূরে সরে গেলাম।

কি হলো পাগলি,রাগ করেছো

এই প্রথম আমাকে তুমি করে বললো,কি যে ভালো লাগছে।কিন্তু সেটা মুখে প্রকাশ না করে মুখটা রাগি ভাব নিয়ে থাকলাম।

শুনো না,অফিসে এইটা ইমপোর্টেন্ট কাজ ছিলো তাই ঠিকভাবে কথা বলতে পারি নি আর যাওয়ার সময় বলেও যেতে পারি নি। কান ধরে বললাম সরি কলিজা।

ইশারা দিয়ে বোঝালাম উঠবোস করতে

উনি অসহায় ফেস করে তাকালো

কোনো লাভ নেই, আমি আর ভয় পাই না আপনাকে

কি ডেঞ্জারাস মেয়ে, যে মেয়ে আমার ভয়ে কাপতো,আজ তার অভিমান ভাঙাতে আমার বৃষ্টির মধ্যে কান ধরে উঠবোস করতে হচ্ছে।এখন তো ভয় পাবাই না। ভালোবাসি বলে অধিকার খাটাবা। আগেই যদি বুঝতা পাগলি এসব,মনে মনে বললাম কথা গুলো ।

আপনাকে এই ফেসে যা লাগছে,গায়ে লাল টি-শার্ট, আর কালো ট্রাউজার।পায়ের দিকে ওনেকটা ভাজ করা মনে হয় বৃষ্টির জন্যই এমন করে রেখেছে। কপালের চুলগুলো দিয়ে পানি ঝরছে, নাকটা আর গালদুটো লাল টমেটো হয়ে আছে। থুতনির পানি গরিয়ে গরিয়ে ফর্সা গলা দিয়ে যাচ্ছে। ঠোঁট দুটো কামরানোর ফলে লাল হয়ে আছে।

এদিকে
সামির এক দৃষ্টিতে নেহার দিকে তাকিয়ে ভাবছে, কলিজা তুমি আমার সামন ছাড়া আর কারো সামনে তোমাকে বৃষ্টিতে ভিজতে দিবো না। বৃষ্টিতে ভিজলে যে তোমাকে কতোটা মায়াবতী লাগে বলে বোঝাতে পারবো না। শ্যামলা মেয়েগুলার মধ্যে আমার দেখা শ্রেষ্ট নারী তুমি। তোমার লম্বা বেনি, কপালে লেপ্টে থাকা চুল আর এক চিলতে হাসিঁ আমাকে ঘায়েল করার জন্য যথেষ্ট।

খুব জোরে একটা বাজ পরাতে নেহা চিল্লিয়ে সামিরকে জরিয়ে ধরে। সামির ও আগলে নেয় তার প্রেয়সিকে।

মেয়ের চিৎকার শুনে আহিরা বেগম ছুটে আসে ছাঁদে, কিন্তু এসেই যে এমন একটা দৃশ্যে চোখেঁ পরবে তিনি তা ভাবতেও পারে নি।

নেহাআআআ

আহিরা বেগমের চিৎকারে দুজন দুইদিকে সরে যায়

নেহার চোখেঁ মুখে আতঙ্ক কিন্তু সামির একদম স্বাভাবিক ভাবে দাড়িয়ে আছে।

ছিহ নেহা ছিহহ, তোকে আমার মেয়ে ভাবতেও অবাক লাগছে, এতোটা নিচে নামতে পারলি তুই

নেহা কি বলবে বুঝতে পারছে না।আম্মু আমার কথাটা,,

কি কথাটা হুমম, কি বা বলবি। তোকে এতো করে বোঝানোর পর ও এমন করতে পারলি।

ফুপি আমি আর নেহা দুজন দুজনকে ভালোবাসি

কথাটি শুনে কিছুক্ষণের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে যায় আহিরা বেগম।

এই মূহুর্তে এই কথা বলা ছাড়া আহিরা বেগমকে শান্ত করার মতো আর কিছু খুজে পায় নি সামির। তাছাড়া, আজ না হোক কাল তো সবাই সবটা জানতেই পারবে।
,,

সামির আর নেহা নিচে এসে কাপর চেন্জ করে এসেছে। নেহা ওনেকদিন আগে সামিরের একটা টি-শার্ট নিয়ে এসেছিলো,যেটার বুকে সামিরের ছবি ছিলো। আজ সেটাই কাজে লাগলো।

সবাই চিন্তিতো হয়ে বসে আছি। নাহিদ ওর রুমে আছে।

ফুপি তুমি তো জানো,নেহার প্রতি ছোট থেকে কতটা সিরিয়াস আমি,আমি ওনেক আগে থেকেই ওকে ভালোবাসি।

কিন্তু সামির বাবা,তোমার তো রশনির সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে,এই মুহূর্তে এসব ঝামেলা

কোনো ঝামেলা না ফুপা, ওসব আমার ওপর ছেড়ে দিন। আপনারা শুধু বলুন,নেহাকে আমার হাতে তুলে দিতে আপনাদের কোনো আপত্তি আছে কি না।

এ তুমি কেমন কথা বললে, তুমি তো সব দিক দিয়েই পারফেক্ট, সব থেকে বড় কথা তুমা আমার মেয়েকে ভালোবাসো। আর যাই হোক আমার মেয়ের জন্য ভূল মানুষ তুমি নও।

আহিরা বেগম কিছু না বলে এক দৃষ্টিতে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে, তার মাথায় তো অন্য চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। সাবিনা ভাবি এটা কিছুতেই মেনে নিবে না।অনেক বড় একটা ঝামেলা হতে চলেছে।
যখন শুধু নেহার ভালোবাসার কথা জানতাম,তখন অনেক কষ্টে নিজের মেয়েকে সামলাতে পেরেছি, কিন্তু এখন যে ছেলেমেয়ে দুজনি দুজনকে ভালোবাসে এখন কি করবো। আমি মা হয়ে কিভাবে ছেলেমেয়ে দুটোকে আলাদা করবো।

,,
সামনের মাসের শেষের ওদের বিয়ের ডেট ঠিক করেছে। যদিও মামি আরো আগেই নিতো কিন্তু সামির ভাইয়ার কথাতেই পিছিয়ে নিয়েছে।

বাড়িতে বিয়ে বিয়ে একটা তোড়জোড় চলছে,তবে যত দিন যাচ্ছে ভয়টা ততো বাড়তেছে, সামির ভাইয়া কিভাবে মামিকে রাজি করাবে। মামিকে রাজি করানো খুব একটা সহজ কাজ না।

তার আগে একবার রশনির সাথে কথা বলতে হবে।এসব কথা ফোনে বলা সম্ভব না, তাই আম্মুকে বললাম আম্মু আজ একটু বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে যাবো।

আচ্ছা দেরী করিস না,সন্ধ্যার আগেই যেনো তোকে বাসায় দেখি।

ঠিক আছে আম্মু
আহলে আম্মুকে বললে আম্মু অন্যকিছু ভেবে বসবে তাই বললাম না।

আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পরলাম রশনিকে এক জায়গায় আসতে বলেছিলাম কিন্তু ওর নাকি বাসা থেকে বোরোনো নিষেধ তাই আমাকেই বাড়ি অবদি যেতে হচ্ছে।আমাদের বাসা থেকে ছোট খালামনির বাসায় টোটোতে যেতে সময় লাগে 25 থেকে 30 মিনিট।
পৌছাতেই মিশু আপে দরজা খুলে দিলো,

আরে নেহা তুই এই সময় এখানে

ইয়ে মানে এমনি, এখানে পাশেই একটা কাজে এসেছিলাম তাই ভাবলাম উঠি।

খুব ভালো করেছিস, আম্মু আম্মু দেখো কে এসেছে

কে এসেছে রে

কেমন আছো খালামনি

আমি ভালো আছি,তোর আম্মু আব্বু নাহিদ ওরা সবাই কেমন আছে

হ্যাঁ সবাই ভালো আছে,খালামনি রশনি কোথায়

আছে হয়তো ঘরে

আচ্ছা আমি ওর কাছে গেলাম

রশনির কাছে গিয়ে ওর থেকে সবকিছু জেনে নিলাম। ও যাকে ভালোবাসে সে ওর কলেজেরই সিনিয়র। সেই ছেলের বাড়ি থেকেও বিয়ে দিতে চাচ্ছে না এখনি,এদিকে রশনির বিয়ে ঠিকঠাক।

বাহিরে এসে খালামনিকে জিজ্ঞেস করলাম, খালামনি বড় মেয়েকে রেখে ছোট মেয়ের বিয়ে আগে দিচ্ছো যে

আমার কথা শুনে খালামনি কেমন যেনো সন্দিহান চোখেঁ তাকালো। তাই কথা ঘুরানোর জন্য বললাম, না মানে মিশু আপুর স্বামীকে ঘর জামাই রাখবা নাকি।

মিশু আপু হেসে বললো,ঘর জামাই থাকলে তো রাখবে

সে কি মিশু আপু, তোমারো সব ঠিকঠাক নাকি

না রে এখনো সব ঠিক না, তবে দেশে আসলেই বিয়ে করবে বলেছে,বলেই লজ্জারাঙা একটা হাসি দিলো।

তার মানে হবু জিজু প্রবাসী

হুমম,দেশে আসলে আর যাবে না। বাবার বিজনেস দেখাশুনা করবে।

আসলে আমার খালামনি হলেও একটু লোভী ধরনের, মানে কারো ভালো দেখলে ফোসকা পরে, কিন্তু নিজের সবকিছু ভালো চাই,,

ওদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম। আর সামির ভাইয়াকে ফোন করে বলে দিলাম ঐ ছেলের ব্যাপারে খোজ নিয়ে, খালামনিদের সাথে যেনো তারাতারি কথা বলেন।

পরেরদিন সকালে,,
আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙলো। কি হয়েছে আম্মু

এরকম তুই কেনো করলি নেহা, এই শিক্ষা দিয়েছি কি আমি তোকে,

সকাল সকাল আম্মুর মুখে এমন কথা শুনে ঘুম ঘুম ভাব উরে গেলো। কি করলাম আমি। কাল পর্যন্ত তো সব ঠিক ছিলো,আজ কি এমন হলো,,

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে