ভালোবাসার উষ্ণতা ৬ষ্ঠ পর্ব

0
1772

#ভালোবাসার_উষ্ণতা
#৬ষ্ঠ_পর্ব

– আর ছোট ম্যাডামের ব্যাপারে কিছু বলার ছিলো, ছোট ম্যাডামের আইডিটা আবার এক্টিভেট করা হয়েছে। এবং আগের মতোই ছেলেদের সাথে ফ্লার্ট করা হচ্ছে।
– তুমি কিভাবে জানলে?
– স্যার বিগত এক সপ্তাহে আমার সাথে প্রায় দিনে ৫-৬ ঘন্টা চ্যাট হয়েছে।
– আচ্ছা, আমি রাখছি।

রিয়াদের ফোন রাখার পর থেকেই বিষয়টা অয়নকে প্রচন্ড ভাবাতে থাকে। এই এক সপ্তাহ প্রাপ্তির উপর তার কড়া নজর ছিলো। এমনকি প্রাপ্তির নিজস্ব কোনো হ্যান্ডসেট বা ল্যাপটপ ও নেই। তাহলে আইডি অন হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। কিছু একটা ভেবে আবার ফোনটা হাতে নেয় অয়ন। ফেসবুকে সার্চ করে “প্রাপ্তি শেখ” আইডিটি পেয়েও যায়। রিয়াদ মিথ্যে বলে নি। আইডিটি সব কিছু লক করা। সুতরাং ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এক্সসেপ্ট না করলে কিছুই বোঝা যাবে না। কিছু একটা ভেবে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠালো অয়ন। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। হাতে নাতে প্রমাণ পেলে জ্যান্ত কবর দিতেও পিছ পা হবে না অয়ন, কিন্তু কেনো জানে মন বলছে প্রাপ্তি হয়তো নির্দোষ। আচ্ছা, এমন কি হতে পারে না যে প্রাপ্তির আইডি অন্য কেউ চালায়, হতেই পারে। কিন্তু সেটা হয়ে থাকলে, কে সে যে প্রাপ্তির আইডি দিয়ে ছেলেদের প্রেমের জালে জড়িয়ে হৃদয় ভাঙার মতো অপরাধ করে! আর এতোদিন প্রাপ্তিকে বিনা অপরাধের শাস্তি কি তবে অয়ন দিচ্ছিলো!! না আর ভাবতে পারছি না। ভাবতে কষ্ট হচ্ছে!!

সন্ধ্যা ৭ টা,
প্রাপ্তির ভর্তির সকল কাজ করে মাত্র হাত পা ঝাড়া দিলো অয়ন। আজ একই সাথে অনেক কাজ হয়েছে, একটু চা খেতে পারলে মন্দ হতো না। লোকমান কাকাকে খিবর দিতেই যাচ্ছিলো, অমনি দৌড়াতে দৌড়াতে লোকমান কাকা স্টাডিতে প্রবেশ করলো।
– কি হয়েছে? তুমি হাফাচ্ছো কেনো?
– ব..ড় বাবা, ব-বড় বাবা
– কি হয়েছে ভাইয়ের?

লোকমান কাকার মুখে আবরারের কথা শুনে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায় অয়ন। লোকমান কাকা খানিকক্ষণ দম নিয়ে বলতে লাগে,
– বড় বাবা কথা বলছে
– কিহ!! সত্যি??
– হ্যা, অয়ন বাবা। আমি নিজের কানে শুনেছি।
– আপনি ডাক্তার কল করুন, আমি দেখছি।

বলেই আবরারের ঘরে ছুট লাগায় অয়ন। অয়নের যেনো বিঃশ্বাস ই হচ্ছে না! সত্যি আবরার কথা বলছে। আবরারের ঘরে প্রবেশ করতেই অয়ন খেয়াল করলো আবরার বিছানায় শুয়ে হাত ইশারা করছে। ধীর পায়ে কাছে যেতেই মৃদু স্বরে বলে উঠে,
– অ..য়..ন

আজ ছয় মাস পর আবরারের মুখে নিজের নাম শুনে অয়ন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে নি। এই একটাই তো ভাই তার সে একই সাথে তার বাবা এবং মা। নিজেকে সামলিয়ে আবরারের পাশে বসলো সে। আবরার শুধু মুচকি হেসে অয়নের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। অয়নের চোখ ছলছল করছে। এখনই যেন অশ্রুধারা চোখ গুলোকে মুক্ত করে ঝরে পড়বে। নিজেকে সামলিয়ে বলে উঠলো,
– আজ আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। আমার থেকে সুখী বোধহয় কেউ নেই, এখন ফাইনালি আমি রিলিভ পাবো ভাই।

রাত ১০টা,
অয়ন আবরারের রুম থেকে বের হয়েছে। ডাক্তার বলেছে, আবরারের ঔষধ কাজ করছে। কিন্তু একটা ছোট অপারেশন করতে হবে, তাহলে আগের মতো কথা বলতে পারবে। আবরার শুধু অয়নের নাম উচ্চারণ করার পর আর কোনো কথাই বলে নি। তবে, এখন সে তার হাত, পা হালকা নড়াতে পারছে। অয়ন চাচ্ছে আবরারকে এখনই ইউ.এস.এ পাঠিয়ে দিতে। তাহলে হয়তো, আরো ইম্প্রুভ করবে আবরার। ফোনে নোটিফিকেশনের আওয়াজ কানে আসতেই ফোনটা হাতে নিলো অয়ন। নোটিফিকেশনটা দেখে মুচকি হেসে প্রাপ্তির রুমের দিকে রওনা দিলো অয়ন। রুমে নক করার প্রায় দশ মিনিট পর প্রাপ্তি দরজা খুললো। এতো রাতে অয়নকে নিজের সামনে দেখে খানিকটা ঘাবড়ে যায় প্রাপ্তি। কালরাতে যা হয়েছে তার পরে অয়নের সাথে জরুরি কোনো ব্যাপার বাদে কথা হয় নি। আমতা আমতা করে বলে উঠে,
– এতো রাতে?
– ভেতরে আসতে পারি?
– কেনো?
– কিছু কথা ছিলো, ভয় নেই কিছু করবো না
– আচ্ছা, আসুন।
– কিছু ফর্ম এনেছি, নাম পূরণ করা লাগবে। কালকে ভর্তি। আর একটা কথা, তুমি নাকি আঁকা উকি ভালো করো তাই ফাইন আর্টস এর ফর্ম তুলেছি। তোমার ভালো না লাগলে অন্য কিছু চুজ করতে পারো।

প্রাপ্তির ছোটবেলা থেকেই আর্ট খুব ভালো লাগে, শুধু তাই নয় রুমে সারাদিন বসে বসে কিছু না কিছু আঁকা উকি ই করতে থাকে। অয়ন এই তিন মাসে বেশ কয়েকবার তা লক্ষ্য করেছে। প্রাপ্তি অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে অয়নের দিকে। এই লোকের তার পছন্দ অপছন্দ জানার কথা না, তাহলে কিভাবে জেনেছে?
– আপনি কিভাবে জানলেন? আমি আঁকাউকি ভালোবাসি!
– ইচ্ছে থাকলে সব জানা যায়। আচ্ছা, তোমার মোবাইল নেই তাই না?
– আমার তো কারোর সাথে যোগাযোগের প্রয়োজন হয় না তাই আমি মোবাইল রাখি না কাছে। একটা ছিলো হারিয়ে গেছে।
– আচ্ছা আমি কাল তোমাকে মোবাইল কিনে দিবো।
– লাগবে না, আমার জন্য অহেতুক।
– এখন তো আর বাসায় থাকা হবে না, তাই বলছিলাম। এতে আমারও টেনশন কম হবে।
– আচ্ছা আবরার কেমন আছেন?
– ভাইকে আমি কিছুদিনের জন্য ইউ.এস.এ।পাঠিয়ে দিবো।
– ওমা, কেনো?
– ভাইয়ের কিছু অপারেশন করা লাগবে।
– ওখানে একা?
– সেটা নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। আমি ম্যানেজ করে নিয়েছি। সামি আমার বন্ধু ও যাচ্ছে। আচ্ছা একটা কথা ছিলো।
– জ্বী বলেন।
– কোনো সময় যদি জানতে পারো, তোমার সাথে কেউ খুব বড় অন্যায় করেছে, ধোকাবাজি করেছে, তুমি তাকে ক্ষমা করবে তো?
– জ্বী?? হঠাৎ এই কথা!
– এমনি জানতে ইচ্ছে হলো, করবে ক্ষমা?
– আমি ক্ষমা করার কেউ না, আর সত্যি বলতে এখন আর কিছু যায় আসে না। জীবনে কম ছলনার স্বীকার তো হই নি। আমি এ ফর্ম পূরণ করে রাখবো। আপনি আসতে পারেন

অয়ন কথা বাড়ালো না, আজ নিজের ভূলের কারণে নিজেকেই পশ্চাতে হচ্ছে। নিজের রুমে এসে গা এলিয়ে দিলো সে। ফোনটা অন করে ফেসবুকে লগ ইন করতেই ম্যাসেজ গুলো চোখে পড়লো। এর মধ্যে প্রাপ্তি শেখের ম্যাসেজ ও চোখে পড়লো। ম্যাসেজটা চোখে পড়তেই চোখ কুচকে ফেললো অয়ন। সারারাত বেশ চ্যাট করে ফজরের দিকে ঘুমাতে যায় অয়ন।

এক সপ্তাহ পর,
আজ প্রাপ্তির প্রথম ক্লাস, এতোদিন পর পড়াশুনা করতে যাচ্ছে খুশি যেন ধরছে না। এই সপ্তাহ অয়নের অন্যরকম রুপ চোখে পড়েছে। শান্ত, ভদ্র এমন অয়ন কল্পনার বাহিরে। সকালে নাস্তার টেবিলে বসে এ কথাই ভাবছিলো। অয়নের তুড়িতে বাস্তবে ফিরে প্রাপ্তি। সামনে তাকাতেই দেখে সাদা শার্ট, নীল জিন্স পড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সে। চুলগুলো কপালে পড়ে রয়েছে। ফর্সা মুখে খোচাখোচা দাড়ি যেন আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে তাকে।
– কি ভাবছো?
– আপনি কোথাও বের হবেন?
– তোমাকে পৌঁছে দিবো। খাচ্ছো না কেন?
– ও তাহলে গেটেই নামিয়ে দিয়েন, নয়তো
– নয়তো কি? গেটে নামাবোই বা কেন? তোমাকে ক্লাসে দিয়ে আসবো
– কি দরকার বলুন?
– তুমি খাও এসব নিয়ে তোমার ভাবা লাগবে না।

প্রাপ্তি আর কথা বাড়ালো না, এই লোকের সামনে কথা বলা আর উলো বনে মুক্তো ছড়ানো এক। খাওয়া দাওয়া শেষে কলেজের দিকে রওনা দিলো তারা।

দুপুর ২ টা,
ক্যাফের একটি চেয়ারে বসে আসে অয়ন। অপেক্ষা প্রাপ্তির শেখের আগমনের, ফেসবুকের প্রাপ্তি শেখ। এক ঘন্টা যাবৎ বসে আছে, কিন্তু এখনো আসে নি। অয়নের ধৈর্যের বাধ যেন ভাঙ্গতে লাগলো। ব্যাক্তিটি আসবে না বোঝা যাচ্ছে। এখন আইপি এড্রেস ট্রাক করা ছাড়া উপায় নেই। অয়নের বুঝতে বাকি নেই যে, আবরারের সাথে ধাপ্পাবাজি করা মানুষটি আর যে হোক প্রাপ্তি নয়। প্রাপ্তির ঘরে সি.সি টিভি ক্যামেরা লাগিয়ে ২৪ ঘন্টা অভসারভ করেছে অয়ন। যখন প্রাপ্তি শেখ আইডিটির সাথে চ্যাট করতো তখন প্রাপ্তি ঘরে হয় ঘুমাতো নয় কোনো কাজ করতো। অয়নের সব বিষয়ে খোঁজ নিতেও ভুল হয়েছে। তা না হলে হয়তো আজ প্রাপ্তির চোখে নিজের জন্য ঘৃণা দেখতে পেতো না। চেয়ার থেকে উঠতেই যাবে তখন এক জন রমনী তার সামনে এসে দাঁড়ালো। রমনীটিকে দেখে যেন মাটি থেকে জমি খসে গেছে, রমনীটি আর কেউ নয়….

চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে