#ভালোবাসার অন্যরকম
[পর্ব – ৬]
লেখক – আবির চৌধুরী
রক্তে আমার পুরো শরীর ভিজে যাচ্ছে। আমি চিৎকার করার চেষ্টা করছি কিন্তু আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে-না। শরীরে কোনো শক্তি পাচ্ছিনা। দেখালাম অনেক মানুষ এসে জোড় হয়ে গেছে। আমি আর তাকাতে পারছিনা। আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। তারপর আমি সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। তারপর কি হলো আমার আর কিছুই মনে পড়ছেনা। চোখ খুলে নিজেকে হাসপাতালের বেডের উপরে আবিষ্কার করলাম। দেখি আম্মু আর রাসেল আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আম্মু আমার চোখ খোলা দেখে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল।
— বাবা কেমন আছিস তুই?
আমি কথা বলতে চাইছি কিন্তু কথা বলতে পারছিনা। আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছেনা। আমি দুচোখ দিয়ে দুফোটা পানি ছেড়ে দিলাম।
আম্মু আমার এই অবস্থা দেখে আরো বেশি কান্না করা শুরু করে দিল।
আমি আম্মুকে থামানোর চেষ্টা করবো কিন্তু আমি নিজের শরীর নড়াচড়া করতে পারছিনা। আমার পুরো শরীর অবশ হয়ে গেছে। মুখ দিয়ে কোনো কথা বলতে পারছিনা। সবার কথা শুনেতে পারছি। আমি শুধু তাকিয়ে রইলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে ডাক্তার চলে আসলো আম্মুর কান্নার শব্দ শুনে।
— তাহলে রোগীর জ্ঞান ফিরছে! আলহামদুলিল্লাহ আমি তো ভয় পেয়ে গেছি।
আম্মু — ডাক্তার ঈশান কোনো কথা বলছেনা কেন? ও শুধু তাকিয়ে আছে কেন?
ডাক্তার — ও আজকে ১৯ দিন ধরে কোমায় ছিল। তাই এমন হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্য আবার সব ঠিক হয়ে যাবে চিন্তার কোনো কারণ নেই।
ডাক্তারের কথা শুনে আমি একটা শর্খ খেলাম। আজকের ১৯ দিন ধরে আমি হাসপাতালে!এতো দিন আমি কোমায় ছিলাম! দিয়াকি আমার এক্সিডেন্ট এর কথা শুনে নাই? নাকি শুনেও আমাকে আমাকে দেখতেও আসে নাই। আর আসবেই বা কেন? আমি তো গরীব।
— আম্মু খাবার খাবি তুই?
আমি মুখ দিয়ে কথা বলতে পারছিনা। আম্মু আমাকে খাবার খাইয়ে দিল। ওষুধ খাইয়ে দিল। তারপর আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। এই ভাবে হাসপাতালে দুই দিন পার হয়ে গেলো। এখন আমি ধিরে ধিরে সুস্থ হয়ে যাচ্ছি। ৫ দিন পরে আমাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো। বাসায় নিয়ে আমাকে খাটের উপরে শুইয়ে দিল। আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম কিছুক্ষণ পরে কারো কান্নার শব্দ শুনে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। তাকিয়ে দেখি রাইসা কান্না করছে। ওহ রাইসার পরিচয় টা দিয়ে দেই এবার! রাইসা আমার খালাতো বোন হয়। রাইসা আমাকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করতো কিন্তু আমি তাকে সব সময় ছোট বোনের মতোই দেখতাম। কখনও অন্য কিছু ভাবতাম না। রাইসা এইবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়াশোনা করে। রাইসা তার মা বাবার এক মাত্র মেয়ে। দেখতে খুব সুন্দরী। যে কোনো ছেলে দেখলেই ক্রাশ খাবে। রাইসা উচ্চতা ৫পিট ৭ ইঞ্চি। যে কোনো ছেলেই প্রেমে পড়তে বাধ্য।
রাইসার কান্না শুনে আমি চোখ খুলে তাকালাম।
— এই ভাবে কান্না করছিস কেন তুই?
— তোকে এতো কিছু জানতে হবে না। তোর এই অবস্থা কি করে হলো? আর ভাবি কোথায় তাকে তো দেখতে পারছিনা! এই সময় সে তোর পাসে নাই কেন?
আমি কিছুই বললাম না চুপ হয়ে রইলাম। একটু পরে আম্মু আমার রুমে এসে আমাকে যা বলল আমি সেটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
— বাবা তুই আমার থেকে এতো বড় একটা কথা কি ভাবে গোপন করতে পারলি?
— কি কথা গোপন কলাম আমি?
— দিয়া তোর সাথে এমন একটা অন্যায় করছে অথচ তুই আমাকে বললিনা কিছুই।
আমার আর বুঝতে বাকি রইল না রাসেল আম্মুকে দিয়ার ব্যাপারে সব বলে দিছে।
— আমি ভাবতেও পারিনি দিয়া তোর সাথে এমন করবে৷ দিয়ার জন্য আজ তোকে এতো কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে ওই মেয়েকে আমি কোনো দিন ক্ষমা করবো না। ও কোনো দিন ও সুখী হতে পারবেনা।
রাইসা — খালামনী কি হইছে? ভাবি কোথায়?
আমি — কিছু হয়নি। তুই কি একা আসলি নাকি?
— না,আম্মুও আসছে। আম্মু তোকে দেখে আবার চলে গেছে।
— ওহ আচ্ছা,
— এখন বলেন কি হইছে?
আম্মু — আমি বলছি।
তারপর আম্মু রাইসাকে সব কিছুই বলে দিল। তারপর আম্মু কান্না করতে করতে আমার রুম থেকে বের হয়ে গেলো। জানি কোনো মা তার সন্তানের এতো কষ্ট সহ্য করতে পারবেনা। কোনো মা চায়না তার ছেলেটা কষ্ট করুক। কিন্তু আমার ভাগ্যটাই খারাপ যাকে এতো ভালো বাসলাম সে আমাকে একটি বারের জন্য দেখতে আসে নাই।
— যা হইছে ভুলে যা, তুই এখন কেমন আছিস?
— আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
— আমার খুব কষ্ট হচ্ছে তোকে এই অবস্থায় দেখে। কেন জানি আমি সহ্য করতে পারছিনা। তুই আমাকে ভালো না বাসলেও আমি তো বাসি। কিন্তু সেটা তুই কোনো দিন বুঝতে পারলিনা। যদি আমাকে একটু ভালোবাসতিস আমি তোকে কখনও কোনো ভাবে কষ্ট পেতে দিতাম না। বুকের মাঝে আগলে রাখতাম সব সময়।
রাইসার কথা গুলা শুনে খুব হাস্যকর মনে হচ্ছে। দিয়াও তো আমাকে কতো স্বপ্ন দেখিয়েছে সে কি আছে? সে তো আমাকে ছেড়ে খুব ভালোই আছে।
এখন রাইসার কথা গুলো শুনে খুব হাসি পাচ্ছে।
— রাইসা এসব বাদ দে তুই যা খাবার খেয়ে নে। অনেক রাত হয়ে গেছে আমি ঘুমাব।
রাইসা আর কিছু না বলে চলে গেলো। আমি ঘুমিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু আমার চোখ থেকে ঘুম হারিয়ে গেছে। কিছু তেই চোখে ঘুম আসছেনা। দিয়ার সাথে কাটানো সময় গুলি বড্ড বেশি মিস করছি৷ আজকে কতো দিন হয়ে গেলো দিয়ার সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। দিয়াকি আমাকে সত্যি ভুলে গেছে! দিয়া কি আমার কথা একটি বার ও ভাবেনা? এসব ভাবতে ভাবতে আমার চোখের পাতা ভিজে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম ভেঙে গেলো বুকের উপরে ভারি কিছু অনুভব করতে পেরে। চোখ খুলে দেখি রাইসা আমার বুকের উপরে শুয়ে আছে। আমি একটা ধাক্কা দিয়ে রাইসাকে সরিয়ে দিলাম।
— রাইসা এসব কি? আমার রুম তুই কি করিস?
— এটা তোর একার রুম না ওকে আজকের পর থেকে এই রুম আমার ও।
— মানে কি? কি বলতে চাস?
— কিছু না। আমার ভালোবাসার উপরে আমার বিশ্বাস ছিল আমি জানতাম তুই আমার কাছে ফিরে আসবি।
— একদম চুপ থাক, আর আমার রুম থেকে বের হয়ে যা। আমাকে না বলে আর আমার রুমে আসবি না বলে দিলাম তোকে।
— তুই ফ্রেশ হয়ে নে৷ আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।
— আম্মুকে নিয়ে আসিতে বলিস তোকে আসতে হবেনা। তুই এখন আমার সামনে থেকে যা।
তারপর রাইসা আমার রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মনে করছি ও আর আসবেনা। আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি রাইসা নাস্তা নিয়ে এসে বসে আছে।
— তোকে না বলছি আম্মুকে নাস্তা নিয়ে আনতে? তুই আবার নিয়ে আনতে গেলি কেন?
— আমার ইচ্ছে হইছে তাতে তোর কি চুপচাপ খাবার খেয়ে নে কোনো কথা বলবি না।
এই মেয়ে দেখি আমাকে ধমক দিচ্ছে! এবার রাইসা আমার মুখের সামনে খাবার তুলে ধরলো। কি আর করার খাওয়া শুরু করে দিলাম। খাওয়া শেষ করে রাইসা আমাকে ওষুধ খাইয়ে দিল।
— গুড বয়। এখন ভালো ছেলের মতো ঘুমিয়ে থাকো।
— হুম, এখন তুই আমার রুম থেকে বের হয়ে যা।
— ঈশান তুই এমন কেনরে?
— আমি এমনই। এখন যা আমি ঘুমাব।
তারপর রাইসা রাগ দেখিয়ে আমার রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো। এখন একটু ভালো লাগছে। এবার আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
চলবে,,,,,