ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও পর্ব-১২

0
641

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(১২)

ইশান যখন বাসায় আসে তখন রাত এগারোটা বেজে গেছে মুন নিশ্চয়ই একা একা ভয় পেয়েছে? অবশ্য ইশান এক ঘন্টা পর পর কল করেছিলো বলেছে রাতে রান্না করতে হবেনা সে সাথে খাবার নিয়ে আসবে। মুন বিছানায় শুয়ে ছিলো ইশান ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে একাও ভেতরে এসেছে। মুন বিছানা থেকে নেমে প্রথমেও চুল গুলি বেধেঁ নেয়।

একা একা কি খারাপ লাগছিলো?

হ্যাঁ। বলেছিলেন দ্রুত ফিরবেন।

ইশান খুব ভালো করেই মুনের অভিমান বুঝলো কন্ঠে আকুলতা ফুটিয়ে বললো, ‘আসলে আম টাইম চেঞ্জ করে নিয়েছি। সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত আসলে আজকে আমি ক্লিনিকে গিয়েছিলামই দেরিতে তাই ফিরতেও লেট হলো। এখন থেকে সময় মতো ফিরবো মুন!

বুঝলাম।

চলো খাবার খেয়ে নেবে আমি খাবার নিয়ে এসেছি কাল একদম সকালের বাজারেই চলে যাবো আমার সাথে তুমি ও যাবে কেমন?

আমি কেন?

সংসার সামলাবে তুমি মুন!আমি জানি তুমি অনেক অল্প বয়সী মুন!তবুও এখানে তুমিই সব তাই কিসব লাগবে তুমি নিজে হাতে নিয়ে এসে সাজাবে। আমি তোমার পছন্দকে এখন থেকেই মুল্য দিতে চাই।

মুন ইশানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে তবে কিছু মুখে বলেনা।

——–
মাসুদের সাথে এক টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে ইমরান। ওর খালার এই একটাই ছেলে তাই তো ইশাম আর ইমরান এখানে থেকে পড়াশোনা করেছে। বড় খালা মায়ের মতোই আগলে আগলে রেখেছে দুই ভাইকে। মাসুদ ভাই ইকবালের সমবয়সী হলেও এখনো বাবা হতে পারেনি। ইমরান চুপ করে বসে প্লেট এর ভাত নাড়াচাড়া করছে তবে কোন খাবার মুখে দিচ্ছে না। মাসুদ ইমরানের পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

কি হলো? আজ তোর ভাবীর হাতের খাবার ভালো হয় নাই?

ইমরান মাসুদের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলে, ভাবী সব সময় সুন্দর রান্না করে মাসুদ ভাই। আমি দোয়া করি এই সুন্দর রান্নার জন্য হলেও তোমার ঘরে শত মেয়ের জামাই চলে আসুক।

মাসুদ ওর স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে দেখে একটা সন্তানের জন্য কত রাতই না মেয়ে টা কান্নাঁ করে।

মাসুদ আবার ও ইমরানকে বলে, তুই তবে খাচ্ছিস না যে?

আজকে এমনিতেই ভালো লাগছেনা মাসুদ ভাই। খাবো না, রুমে গেলাম ভাবী।

সে কি! দুপুরেও খাবার খাস নি তুই।

আহ্ মাসুদ ভাই আমি বাইরে খেয়েছিলাম।
ইমরান ওর জন্য দেওয়া রুমে আসে জানালার কাছে গিয়ে বুকের ভেতরের জ্বালা অনুভব করে। ইশান কে সে কি একবার কল করে সরি জানিয়ে দেবে?নাহ্ ব্যাপারটা কেমন হয়ে যাবে না?আর মুন?দুই বার সে ভুল মেয়ের প্রতি অনুভূতি সাজিয়েছে আর নয় যে ভাবেই হোক ওও হিমুর মতো মুনকেও ভুলতে হবে। মুনকে তার ভাই যখন স্ত্রী হিসেবে মানতে চাইছে সে আর ঝামেলা করবেনা। অথচ এখন মুনকেও ভুলতে পারছেনা। সে কি ইচ্ছে করে মুনের প্রেমে পরেছে?ইশান চলে আসার পর মুনকে বাসাতে ইমরানই বেশি সময় দিয়েছে মুনের পছমদের সকু সামগ্রী এনে সামনে হাজির করিয়েছে। তখন এই ইমরান আজকের ইমরান ছিলো না তখন চেয়েছে ইশান আর মুনের সম্পর্ক ঠিক করতে অথচ সে নিজেই ভালোবাসা নামক মায়ায় পরে গেলো। মুনের জন্যই হিমুর প্রত্যাখ্যান মেনে নিতে পেরেছে এখন কি হবে?যখন মুন তার হবে না আর কখনো ভেবেছিলো ইশান মুনকে কখনো মানিয়ে নিতেই পারবেনা তখন সবাইকে বলে মুন আর ইমরানের সম্পর্ক বাধাঁতে চাইবে।

ইমরান বিছানায় শুয়ে পরে । আর ভাবতে ইচ্ছে করছেনা মস্তিস্ক কে এবার চাপ দেওয়া বন্ধ করে আরাম দিতে হবে ঘুমিয়ে যাওয়াই ভালো কিন্তু ঘুম কি আর সব সময় হয়?

—–
মুন সকাল সকাল রেডি হয়েছে ইশানের সাথে বের হবে বলে ইশান ও মুনকে সাথে করে নিয়ে বের হয়। ফোর্থ ফ্লোর থেকে সিড়ি বেয়েই নেমে এসেছে দুজনে। মুন এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে সবটা ইশান গাড়ি নিয়ে সামনে এসে ওকে তুলে নেয়। সব কেনাকাটা করে মুনকে মাসুদদের বাসাতে আসে ইশান। মাসুদের স্ত্রী দরজা খুলতেই মুন ওকে সালাম দেয়। এর আগেও দেখা হয়েছিলো সবার সাথে। মুনকে ভাবী ভেতরে নিয়ে যায়। ওর রুমে নিয়ে গিয়ে বসায়। ইশানের খালা আসে সেই রুমেই মুনের সাথে কথা বলে এর মাঝেই নাস্তা সাজিয়ে এনে দেউ মাসুদের স্ত্রী। মুন ভাবীকে বলে,

ইমরান ভাইয়া নেই?

না মুন। ও তো সকালেই বের হয়েছে।

এত সকালে?

হ্যাঁ। বললো কোচিং করতে যাবে।

ওহ।

দুপুরে ফিরবে বলেছে তখন দেখা করতে পারবে।

কিন্তু ইশান ভাইয়া যে আমাকে এক্ষুনি নিয়ে যাবে ওই বাসাতে।

আমি তোমায় আজকে যেতে দিবো না মুন।

মুন কিছুই বললো না। ইশান ঘড়িতে টাইম দেখে বলে, মুন চলো তামাক নামিয়ে দিয়ে আমায় আবার ক্লিনিকে যেতে হবে।

ভাবী এসে ইশান কে বলে, এখন না ও আজ এখানেই থাকুক পরে কাল এসে নিয়ে যাস কেমন?

তুমি তো সবটা বুঝতেই পারছো ভাবী সব সাজাতে হবে আমাদের গুছানোর কাজ চলছে গাড়ি তে অনেক সামগ্রী রয়েছে আজ নিয়ে যাই অন্য একদিন আবার নিয়ে আসবো মুনকে।

ভাবী মন খারাপ করে খালামুনিও সবটা বুঝে আর জেড়া করেনা। নতুন বাসা গুছাতে অনেক সময় লাগে।

আচ্ছা তাহলে আবার এসো মুন!

হু।
ইমরান ভাইয়া এলে বলেদেবেন ভাইয়া যেনো আমাদের সাথে দেখা করে আসে।

আচ্ছা বলে দেব।
ইশান মুনের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবে এরপর মুনকে নিয়ে বের হয়।

মুনকে ফ্ল্যাটে দিয়ে এসে ইশান বের হয়ে যায়। আর মুন সব বাজার ফ্রিজে রাখে। দুপুরের রান্না বসিয়ে দেয় ইশান আসবে আবার খেতে দ্রুত কাজ করতে হবে।
—–
ইমরান মাঠের মাঝখানে বাইক রেখে দাঁড়িয়ে আছে।
নাইম আর আরিফ পাশেই রয়েছে কলেজ এখিন অনেক ফাঁকা কেউ তেমন আসেনি।
আরিফ অনেকটা সময় আমতা আমতা করে বলে,কিরে ইমরান কাল ওমন মেজাজ দেখিয়ে গেলি কেন?কিছু নিয়ে কি তুই আপসেট?

না।

শান্ত গলার আওয়াজ শুনে আরিফ আবার বলে,

জেরিন কাল অনেম সময় কান্নাঁ করেছে ইমরান।

কাদুঁক।আমার কি তাতে?

মেয়েটা তোকে অনেক ভালোবাসে………

আমি বলেছি ওকে যে আমাকে ভালোবাসুক?

না।

তাহলে আমায় কেন বলছিস? আমি কিছুই শুনতে চাইনা এ নিয়ে আরিফ।

কিন্তু……

আবার কিসের কিন্তু?

ও তোকে সত্যই ভালোবাসে ইমরান। মেয়েটা দেখতে সুন্দরী, পড়……

প্লিজ চুপ কর। কালকের মতো আমাকে চলে যেতে বাধ্য করিস না।

আচ্ছা নে কিছুই বলবো না আমরা। তোর যা ইচ্ছে কর তুই!!

চলবে
#মিশকাতুল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে