#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(৬)
মুনের বিছানাতে শোয়ার স্টাইল খুবই ভালো যেভাবে শুয়ে পরে সকালে উঠে একদম সেভাবেই কিন্তু সেদিক থেকে ইশানের ঘুমানোর স্টাইল একদমই বাজ্ব। আশে পাশে সাইড বালিশ না রাখলে সারা বিছানায় তার পদচারণ হয়।বিগত বছর গুলো তে সাইড বালিশ রেখেই ঘুমিয়েছে সে কিন্তু এই মুন!মুন চলে আসার পর সকল সাইড বালিশ সরিয়ে সেখানে স্থান করে নিয়েছে টেডিবিয়ার। ইশান এ নিয়েও বিরক্ত। যেনো দুই বছরের বাচ্চা একটা যত্তসব!মাঝের টেডি মুন নিজেই জড়িয়ে রেখেছে আর ইশান?সে তো এক পাঁ সরাসরি মুনের পেটের উপর দিয়ে তুলে দিয়েছে। এতে করে মুনের ঘুমের সমস্যা হয়ে গেলো তবুও তেমন করেই রইলো সকালে ইশানের আগে মুনের ঘুম ছুঁটে গেলো। নতুন করে ক্লাস শুরু হয়েছে মুনের স্কুলে সে আজ যাবে তাই তো সকাল সকাল স্কুল ইউনিফর্ম পরে তৈরি হয়ে নিয়েছে। ইমরান ওকে আসতে দেখেই নাস্তা করে নিতে বললো, মুন ওর পাশের চেয়ারেই বসলো তার একটু পরেই ইশান ও চলে এলো দাদুর পাশের চেয়ারেই সে বসেছে। রিয়া আজ আর নিচে আসেনি সে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে দিন দিন । মুন নাস্তা করে স্কুলের জন্য বের হবে সেই সময় ইমরান বললো, থামো ভাবী আমি নিয়ে যাচ্ছি ওদিকেই যাবো আমি।
ইমরান মুনকে কখনো কখনো ভাবী বলে যতই মেয়েটা ছোটো বোন হোক না কেন এখন সে বড় ভাইয়ের বউ সন্মান তো দিতেই হবে। ইশান ওদের দিকে তাকিয়ে আবার নাস্তা করতে মোন দিলো কিন্তু এবার মুখ খুলেছে শামছুর আহমেদ নিজেই। ইশানের দিকে তাকিয়ে বললো, ইশান দাদু ভাই তোমার বউকে তুমিই আজকে না হয় নিয়ে যাও। ওর বন্ধু রা তোমাকে দেখতে চেয়েছে। হাজার হলেও তাদের বান্ধবীর এক মাত্র স্বামী বলে কথা!
দাদু প্লিজ!আমাকে আর এরকম কথা শুনিওনা ! তোমার ওই নাতবউকে নিয়ে দয়া করে আমাকে আর একটা কথাও শুনাবেনা। আমার পছন্দ নয় ওকে। বলেই ইশান উঠে রুমের দিকে যেতে নেয় তখন ইমরান বলে,তবুও বউ কিন্তু তোরই ভাইয়া এভাবে ওকে নিয়ে ইগো দেখানোর কি আছে?
ইশান ইমরানের দিকে তাঁকিয়ে রয় ইমরান টা ওর ভাই কম বন্ধু বেশি ওর সাথে ইশান সব প্রায় শেয়ার করে কেউ না জানলেও ইমরান জানে সে কেন হুট করে বিয়ে করতে চেয়েছে সেই ভাইও আজ মুনের দিকে কথা বলছে?বলুক সমস্যা কি?তারই তো বিয়ে করা বউ!!
দেখা গেলো ইশান নিজেই মুনকে রাখতে এসেছে। মুনের বান্ধবীদের আর ডাকতে হলো না গেট এর পাশেই দেখা হয়ে গেলো মুন সবার সাথে ইশানের পরিচয় করিয়ে দিলো সবাই ওকে হ্যাই, হ্যালো জানালেও ইশান থাকলো চুপচাপ যে টুকু সময় ওদের সাথে ছিলো সে। সকলকেই আইস্ক্রিম ধরিয়ে দিয়ে ফিরে আসার সময় শুনলো একজন মুনকে বলছে, তোর বাবা মায়ের কি পছন্দরে?ছেলে সুন্দর মানলাম তাই বলে বয়স দেখবেনা?তোর থেকে তো কম করে হলেও ১২-১৩ বছরের বড় হবে ।
আরেকজন বলছে, আসলেই মুন তুই তো আমাদেরই বয়সে ছোটো শুধু ট্যালেন্ট এর কারনে উপর ক্লাসে এসেছিস। এভাবে কেন বিয়ে দিলো তোকে? এখন তবুও ভাইয়া স্মার্ট আছে কিন্তু কয়েক বছর গেলে কি হবে বুঝতে পারছিস?তোর আবার না বিয়ে করতে হয়!একদম মানাবে না তখন আর তুই নিজেও মানিয়ে নিতে পারবি না আমার কথা গুলি মিলিয়ে নিস তখন।
মুন কিছুই বললো না আরেকজন ও কিছু বলছে কিন্তু ইশান উল্টো দিকে চলে আসায় তা আর শুনতে পেলো না। তবে ঠোঁটের কোণায় তাচ্ছিল্য হাসিঁ আকঁলো। গাড়ি তে বসে জানালার কাচঁ তুলে দিলো মুনের দিকে তাকিয়ে দেখল, মুন ওর গাড়ির দিকেই দেখছে চিন্তিত চোখে মুখে! হয়তো বন্ধুদের বলা কথা গুলোই ভাবছে! ভাবুক!এতে ইশানেরই ভালো আসলেই মুন তার থেকে অনেক ছোটো ওর বয়স হিসেবে ক্লাস নাইনে নয় সিক্সে থাকার কথা অথচ পড়াশোনাতে ভালো থাকার কারণে কয়েকটা ক্লাসের বই সে তিন থেকে চার মাসেই শেষ করে দিয়েছে তাই তো এত দ্রুত উপর ক্লাসে এসেছে মুন। লম্বায় বড় হলেও বাচ্চামো রয়ে গেছে। এমন একটা মেয়ে কিছুতেই সারা জীবন ইশানের স্ত্রী হয়ে থাকতে চাইবে না। এখন ছোটো রয়েছে মা বাবার ইচ্ছেতে বিয়ে করেছে কিন্তু যখন নিজে সব বুঝতে শিখবে তখন কি ইশানকে মোন থেকে মেনে নিতে পারবে?হয়তো না! আবার হয়তো হ্যাঁ!
————————————
ইমরান ছুটেছে পাশের গ্রামে সেখানেই একটা মেয়েকে গত এক বছর ধরে পটানোর চালিয়ে যাচ্ছে সে। গ্রামের কলেজেই সে পড়াশোনা করছে সেম ব্যাস দুজনের মেয়েটা তার কথাই শুনতে চায়না। ইমরান জানাবে কি করে যে তার মোনের লুকানো কথা গুলো তাই বুঝতে পারেনা। কলেজ থেকে বেশ কিছুটা ফাকেঁ দাঁড়িয়ে রয়েছে সে এখন এই পথেই আসবে মেয়েটা আজকে যে করেই হোক বলতেই হবে মেয়েটাকে। ওর ভাবনার মাঝেই দল বেধেঁ কয়েকটা মেয়ে আসলো ওর সামনে দিয়ে ইমরানের বুকের মাঝে ঢিপঢিপ আওয়াজ শুরু হয়ে গেলো কি থেকে কি শুরু করবে?এত গুলি মেয়ের মাঝে একটা মেয়েকে সে কি করে প্রেম নিবেদন জানাবে?ভেবেই হাত পা শীতল হয়ে আসছে! সব গুলোকেই প্রেম নিবেদন জানাবে কি?ধ্য্যাতঁ কি সব চিন্তা ভাবনা করছে ইমরান?একটা মেয়েকেই জানাতে হবে!যাকে সে চাইছে হাতের ঘড়ির দিকে সময় দেখে নিয়ে রাস্তার দিকে এগিয়ে এলো, মেয়েদের সামনে যেতেই সবাই হিমু নামের মেয়েটাকে রেখে চলে গেলো হিমু বিরক্ত হয়ে ইমরানকে দেখলো ছেলেটা তাকে বছর খানেক সময় ধরে বিরক্ত করে চলেছে।
সমস্যা কি আপনার?
ইমরান একটু এগিয়ে আসে হিমুর দিকে তাকিয়েই বলে, কতদিন হয় দেখা করতে আসিনা তাই চলে এলাম!খুশি হওনি নাকি?
না! একদম খুশি হইনি কেন এসেছেন?
কেনো আবার? তোমাকে দেখা দিতে এলাম!
ওহ আপনি বলতে চাইছেন আমি আপনার চাঁদবদন মুখটা দেখার জন্য অস্থির হয়ে ছিলাম?
ইমরান মুখের হাসিঁটা বজায় রেখেই বলে, একদম!আমি তো তাই বুঝাতে চেয়েছিলাম কি ভাবে বুঝলে তুমি?
সেভাবেই!যত্তসব!আপনি এখন আসতে পারেন। আমার ক্লাস আছে।
আমার কিছু কথা আছে তোমার সাথে।
আমি শুনতে চাইনা
তোমার শুনতেই হবে।
বাধ্য করতে চাইছেন?
তেমনটাই! আমার কথা শুনবে তুমি! আমি তোমাকে যা বলতে চাই সব শুনতে হবে তোমাকে।
না শুনলে কি করবেন?
জোড় করবো শুনাতে।
আমার ক্লাস আছে হাতে সময় নেই আসছি এখন।
তাহলে আমি কাল আবাএ আসবো তুমি একটু আগেই আসার চেষ্টা করো, ওকে?
একদম না।আমি আসবো না কালকে। আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাইছিনা এখন যান আপনি।
সে কাল দেখা যাবে।
ইমরান ঘড়িতে সময় দেখে চলে এলো আসলেই ইমুর সময় নেই এখন ক্লাস শুরু হবে। এই হিমু কি কখনোই ওর ভালোবাসা বুঝবে না??
বাসায় ফিরে এসে দেখে ইশান সোফায় বসে বই এর দিকে নজর দিয়ে আছে আর মাত্র একটা বছর তারপরেই ইশান ডাক্টার
হয়ে বের হবে । হার্ট সার্জন কি না#
কি অবস্থা?
এই তো! যেমন রাখলি সবাই মিলে!
নৌমির জন্য তুই মুনকে কেন মেনে নিচ্ছিস না?
নৌমি আমার কেউ ছিলো না ইমরান আর না আমি ওকে ভালোবাসতাম। নৌমিকে আমি শুধু ভালো বন্ধু হিসেবেই মেনেছি।
কিন্তু ও তো তা মনে করেনি ইশান ভাইয়া।
সে ওর ব্যাপার এসব নিয়ে কেন কথা বলছিস?
তাহলে তুই ওর সাথে জেদ করে কেন বিয়ে করলি?
বিয়ে করতে চেয়েছি যেনো ও জানে এবং বুঝতে পারে আমার স্ত্রী আছে! আর আমার পক্ষে ওকে ভালোবাসা সম্ভব না।
তাহলে মুনকে কেন মেনে নিচ্ছিস না?
কারন ওর সাথে আমার কোন কিছুই মিলছেনা আর মিলবেও না ও সব দিক থেকেই আমার অনেক ছোটো। তুই বিশ্বাস না হলে ওকেও জিজ্ঞেস করিস দেখবি বলে দেবে! মুন আর যাই হোক সব বুঝতে পারবে আমার মনে হয়।
সময় নিয়ে চেষ্টা তো একবার করা দরকার তাই না ভাইয়া?ও কি বলেছে যে তোকে পছন্দ করে না?ও তোকে মেনে নেওয়ার চেষ্টা তো করছে।
মোন থেকে নয় ইমরান ও আমাকে ওর বাবা মায়ের জন্যই মেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
ইমরান আর কিছুই বললো না। এটা ঠিক মুন ওকে বিয়ে হয়েছে বলেই সন্মান বাড়িয়ে দিয়েছে ইশানের প্রতি নিজের অনুভূতি থেকে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়নি।
চলবে
#মিশকাতুল