#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__১৫ (বোনাস)
#অদ্রিতা_জান্নাত
আকাশের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকালো ওর দিকে ৷ আকাশ নিচে নেমে মায়ার সামনে এসে দাঁড়ালো ৷ মায়াকে একপলক দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে অরূপকে বলতে লাগলো,,,,,,,,
“তোর ভালোবাসা এতোটা ঠুনকো ৷ সেটা আমার জানা ছিল না ৷ নিজের ভালোবাসার মানুষের প্রতি কোনো বিশ্বাস না থাকলে সেটা কেমন ভালোবাসা? মায়ার ফাঁদে পা দিলি তুই? একবার তো শ্রেয়ার সাথে কথা বলে দেখতে পারতিস ৷ কিন্তু তুই তো সামান্য কিছু জেনে শ্রেয়াকে কষ্ট দিয়ে গিয়েছিস ৷ ইভেন তুই শ্রেয়াকে আমার সাথে দেখেও সন্দেহ করেছিলিস ৷ শ্রেয়াকে তো আমি নিজের বোনের মতো ভাবি ৷ তো একটা ভাই কি তার বোনকে কোলে নিতে পারে না? যখন তার বোন অসুস্থ হয়ে যায়? তুই তো সেটাকেও একটা বড় ইস্যু তৈরি করেছিস ৷ শ্রেয়ার কথাগুলো বিশ্বাসই করিস নি ৷ এই তোর ভালোবাসা? হাহ হাসালি!”
তারপর মায়ার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,
“নিজের বোন না অন্তত একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের সাথে এতো জঘন্য একটা কাজ করার আগে দুবার ভাবতে পারতে ৷ কিন্তু তুমি ভাবো নি ৷ তোমার মতো মেয়েদের এভাবে ছেড়ে দেয়ার সাহসও নেই আমার ৷”
বলেই কয়েকটা মহিলা পুলিশকে ভিতরে ডাকলো আকাশ ৷ শ্রেয়ার বলা সব কথাই আকাশ উপর থেকে শুনেছে ৷ তখনি পুলিশকে ফোন করে আসতে বলে দিয়েছিল ও ৷ মায়াকে তারা নিয়ে গেল ৷ যদিও মায়া ছাড়ানোর জন্য ছোটাছুটি করছিল আর চেঁচাচ্ছিল ৷ তবুও কাজ হয় নি ৷
(০৬ বছর আগে আকাশ দেশের বাইরে পড়ালেখা করতে গিয়েছিল ঠিকই ৷ কিন্তু তার ০১ বছর পর ও আবার দেশে এসেছিল কিছু জরুরি কাজের জন্য ৷ তখনি আচমকা ওর মায়ার সাথে দেখা হয়ে যায় ৷ প্রথম দেখায় ভালো লেগে যায় ওর ৷ আস্তে আস্তে ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকে ৷ কিন্তু আকাশের আবার বিদেশ চলে যেতে হবে দেখে ও মায়াকে ওর মনের কথাগুলো জানিয়ে দেয় ৷ মায়া খুশি হয়ে এক্সেপ্ট করে নেয় ৷ দুই বছর ওরা নিজেদের মধ্যে ফোনে কথা বলে ৷ আকাশ ওর স্টাডির জন্য চাইলেই মায়ার সাথে দেখা করতে দেশে আসতে পারতো না ৷ দুই বছর রিলেশনের পর মায়া হুট করেই বলে ব্রেকআপ করবে ৷ আকাশ সেদিন রাগ করে কিছু বলে নি ৷ তখন থেকেই ওদের মধ্যে ভালোভাবে কোনো কথা হতো না ৷ তার বছরখানিক পর কাউকে কিছু না বলে দেশে ফিরে আকাশ ৷ তখনি জানতে পারে যে অরূপের বিয়ে হবে তাও মায়ার সাথে ৷ ঠিক এই কারনেই ও মায়াকে কিডন্যাপ করায় ৷ এমন একটা জায়গায় ওকে রেখেছিল যে ওকে যেন খুঁজে না পাওয়া যায় ৷ তারপর ও নিজেও অন্য কোনো জায়গায় লুকিয়ে থাকতো ৷ প্রত্যেকদিন সকালবেলা অরূপ নিজে মায়ার খোঁজ করতে বের হতো ৷ কিন্তু প্রতিদিনই নিরাশ হতে হতো ওকে ৷ একদিন কোনো ভাবে জানতে পেরে যায় যে মায়াকে কোথায় আটকে রাখা হয়েছে ৷ অরূপ মায়াকে খুঁজতে যায় কিন্তু আকাশ আর শ্রেয়াকে একসঙ্গে দেখে ওর মাথায় রক্ত উঠে যায় ৷ তাই আর খোঁজাখুঁজি না করে চলে গিয়েছিল ও ৷ ঐ দিনের অনেক দিন পর হঠাৎ অরূপ মায়ার খোঁজ পেয়ে ওই পুরাতন বাড়িটাতে গিয়ে মায়াকে উদ্ধার করে আনে এই বাড়িতে ৷ আর তার সব দোষটা পরে শ্রেয়ার ঘাড়ে ৷)
আকাশ পুরো ঘটনাটা খুলে বলে সবাইকে ৷ সবাই চুপচাপ সব শুনেছে ৷ হঠাৎ করেই অরূপ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল ৷ গাড়ি নিয়ে সোজা শ্রেয়ার বাসায় আসলো ৷ কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে ওর বাড়ির দরজায় তালা ঝুলছে ৷ সেটা দেখে অরূপ অবাক হয়ে গেলো ৷ শ্রেয়ার ফোনে ফোন দিয়েও ফোন বন্ধ পেল ৷ শ্রেয়া বলা ওই কথাটা এখন ওর মাথায় বাজছে যখন শ্রেয়া বলেছিল ‘নিজের ভুল বুঝতে পেরে আবার এই থার্ড ক্লাস চরিত্রহীন মেয়ের কাছে যেন কখনো ফিরে আসতে নাহয়’ ৷ এখন কি করে জানবে শ্রেয়ার খবর? কোথায় আছে ও? সেটা জানা নেই ওর ৷
__________________________________
একটা ক্লাবে বসে এলোমেলোভাবে ড্রিংক করছে অরূপ ৷ ক্লাবের মধ্যে জোরে জোরে গান বাজছে আর একেকজন নাচানাচি করছে ৷ কিন্তু অরূপ বসে বসে একের পর এক গ্লাস খালি করে যাচ্ছে ৷ হঠাৎ ওর ফোন বেজে উঠলো ৷ ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে আকাশের নাম্বার ৷ রিসিভ করে কানে দিতেই আকাশ বলে উঠলো,,,,,,,,,
“অরূপ? তুই কই? আবার ক্লাবে গিয়েছিস? বাড়ি আয় তাড়াতাড়ি ৷”
অরূপ কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো ৷ আরো কয়েকটা গ্লাস খালি করে ঢুলতে ঢুলতে গাড়িতে উঠে বসলো ৷ তারপর সোজা বাড়িতে চলে গেল ৷ অরূপের বাবা মা ওর অপেক্ষাতেই বসে ছিল ৷ অরূপ এসেছে ঠিকই কিন্তু কোনো কথা না বলে সোজা উপরে চলে গেল ৷ এটা এখন ওর কাছে রোজকার রুটিন ৷ এই একবছর এভাবেই কেটেছে ৷ হ্যাঁ শ্রেয়া চলে গেছে এক বছর হয়ে গিয়েছে ৷ কিন্তু অরূপ এখনো জানেনা শ্রেয়া কোথায়? শ্রেয়ার মা বাবা কিছুই বলে নি ওকে ৷ আশা এক গ্লাস লেবুর শরবত নিয়ে গিয়ে অরূপকে খাইয়ে দিল ৷ এলোমেলো করে বিছানায় শুয়ে পরায় ওকে ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে চলে গেল ও ৷ ঘুমের মধ্যেই বিড়বিড় করে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,,,
“আই ট্রাস্ট ইউ শ্রেয়া অ্যান্ড আই এম সরি! প্লিজ ফিরে এসো ৷ আর কখনো এরকম ভুল করবো না ৷ তুমি না বলেছিলে যে ভুল করে তাকে একটা সুযোগ দিতে হয় ৷ আমি চাই সেই সুযোগটা ৷ আর কখনো এরকম ভু..ল হবে না…”
৷
৷
৷
৷
৷
৷
এপ্রিল মাস ৷ মূলত বাংলাদেশে এই সময়টা গ্রীষ্মকাল ৷ কিন্তু কানাডাতে এই সময়টা বসন্তকাল ৷ গাছে গাছে নতুন নতুন রঙ বেরঙের ফুলে চারপাশটা সেজে উঠেছে ৷ দূর থেকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে শহরটাকে ৷ রাস্তাঘাট বেশ পরিষ্কার ৷ মানুষজন তাদের একেক জনের কাজের উদ্দেশ্যে হেঁটে যাচ্ছে ৷
কানাডার একটা সুনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে ‘টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়’ ৷ এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বাহির থেকে দেখতে একদম রাজপ্রাসাদের মতো ৷ বিশ্ববিদ্যালয়টির আশপাশ জুড়ে রয়েছে সবুজে ঘেরা বিশাল মাঠ ৷
এই ভার্সিটির রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে তুহিন ৷ চোখের চশমাটা ঠিক করে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে ভিতরে ঢুকে সোজা দোতলায় চলে গেল ৷ তুহিন এখানে ইংরেজির টিচার ৷ বেশ ভালোই পারে ও সবাইকে পরাতে তাই এই পেশাকেই বেছে নিয়েছে এখানে এসে ৷ আরেকটু সামনে আগাতেই দুইটা মেয়েকে একসাথে দেখতে পেল ও ৷ ওরা ঘুরে দাঁড়িয়ে একে অপরের সাথে কথা বলছে পড়া নিয়ে ৷ তুহিন হালকা হেসে ওদের সামনে গিয়ে হাতে হাত ভাজ করে দাঁড়ালো ৷
মেয়ে দুইটা তুহিনের দিকে তাকিয়ে তারপর দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো ৷ তুহিন মুচকি হেসে বলতে লাগলো,,,,,,,
“দুজন এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আবার পড়াশুনা শুরু করে দিয়েছো?”
ওরা কিছু বললো না ৷ হাতের বইগুলো ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে আবার তুহিনের দিকে তাকালো ৷ তুহিন আবার বলে উঠলো,,,,,,
“তো শ্রেয়া ম্যাডাম আর চৈতি ম্যাডাম আজ কি বাসায় যাবেন? নাকি এখানেই থেকে যাওয়ার চিন্তা করছেন হুমম?”
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,