#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__১০
#অদ্রিতা_জান্নাত
“তুহিন তাড়াতাড়ি চলুন ওই গাড়িটাকে ফলো করতে হবে আমাদের ৷”
“কিন্তু শ্রেয়া…”
“কোনো কিন্তু না তাড়াতাড়ি চলুন প্লিজ ৷”
“আচ্ছা চলো ৷”
আমি আর তুহিন গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম ৷ তুহিন ওই গাড়িটার পিছনে পিছনে যেতে লাগলেন ৷ অনেকক্ষন পর ওই গাড়িটা থামলে তুহিনও কিছুটা দূরে গাড়ি থামালেন ৷ আমি গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত ওই গাড়িটার কাছে চলে গেলাম ৷ গাড়ির ভিতরে চেক করেও কাউকে পেলাম না ৷ সামনের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলাম ৷ এটা তো অরূপের বাড়ি ৷ তাহলে গাড়িটা অরূপের বাড়ির সামনে কেন? অরূপ যদি মায়া আপুকে কিডন্যাপ করে থাকেন তাহলে তো উনি আপুকে অন্য কোথাও নিয়ে যাবেন ৷ নিজের বাড়ি কেন নিয়ে আসবেন? কিছু বুঝতে পারছি না উফ!
পাশ থেকে তুহিন বলে উঠলো,,,,,,,,
“বাড়িটার ভিতরে চলো!”
বাড়ির ভিতরে আজ অামাকে সবকিছু জানতে যেতেই হবে ৷ মায়া আপু আর অরূপ এক সাথে ওই বাড়ি কি করছিল? হ্যাঁ ওই বাড়িটা থেকে অরূপই আপুকে বের করেছিল ৷ ওনাকে চিনতে ভুল হয় নি আমার ৷ মনে সাহস নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলাম ৷ সদর দরজা খোলা দেখে অবাক হলাম ৷ ভিতরে যেতেই অরূপ আর মায়া আপুর সামনে পরলাম ৷ বাড়ির সবাইও আছে এখানে ৷ অরূপ আমাকে দেখে তাচ্ছিল্য স্বরে বললো,,,,,,,,
“জানতাম তুমি আজ আসবে এখানে ৷”
আমি অবাক হয়ে বললাম,,,,,,,,,,
“মানে?”
“মানেটা তুমি খুব ভালো করেই জানো ৷ মায়াকে এতোদিন আটকে রেখে কি লাভ হলো? সেই-ই তো ওকে খুঁজে বের করলাম আমি ৷ আফসুস তোমার সব প্ল্যান শেষ হয়ে গেল ৷”
“আমি বুঝতে পারছি না কিছু ৷ আপনি কি বলছেন ৷”
“বুঝতে পারছো না? নাকি না বোঝার ভান করছো? আর কত সাধু সেজে থাকবে? মায়াকে এতোদিন আমার থেকে দূরে সরিয়ে রেখেও শান্তি পাও নি?”
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম অরূপের দিকে ৷ মায়া আপুর দিকে তাকিয়ে ওকে ধরে বলে উঠলাম,,,,,,,,,
“আপু? তুই তো জানিস আমি তোকে আটকিয়ে রাখি নি ৷ তাহলে কেন বলছিস না কিছু? আমি কেন তোকে আটকে রাখবো?”
“লোভে!”
হাত ছেড়ে দিয়ে হালকা পিছিয়ে দাঁড়ালাম আমি ৷ কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,,,,,,
“ল…লোভে? আপু এ…সব কি বলছিস? আ…আমি কেন এরকম ক…করবো?”
“সেটা তো তুই জানিস ৷ এতো দিন আমাকে আটকে রেখে এখন নাটক করছিস?”
“তুই কি বলছিস এসব? আমি কেন তোকে আটকে রাখবো? আমি…”
অরূপ আমার কথার মাঝেই বলে উঠলো,,,,,,,
“তোমাকে আর কৈফিয়ত দিতে হবে না ৷ বের হয়ে যাও এই বাড়ি থেকে ৷”
“বিশ্বাস করুন আমি আপুকে সরাই নি ৷ ওকে আটকে রাখি নি ৷ এই তুই মিথ্যা কেন বলছিস? তুই কেন সত্যিটা বলছিস না সবাইকে? মায়া আপু বল না প্লিজ৷”
মায়া আপু আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো,,,,,
“বেরিয়ে যা এই বাড়ি থেকে ৷ তোর মতো চরিত্রহীন মেয়ের এই বাড়িতে কোনো জায়গা নেই ৷”
সঙ্গে সঙ্গে মায়ার গালে একটা থাপ্পর পরলো ৷ সবাই অবাক হয়ে তাকালো শ্রেয়ার দিকে ৷ শ্রেয়া চেঁচিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,
“হ্যাঁ আমার চরিত্রে দোষ আছে ৷ আর তোর চরিত্রে কোনো খুঁত নেই তাই না? তুই তো অনেক চরিত্রবান ৷ একটা মেয়ের ব্যাপারে এসব বলার আগে নিজের চরিত্রটা যাচাই করে দেখ ৷”
অরূপ শ্রেয়ার হাত ধরে টেনে ওকে সামনে ঘুরিয়ে ওর গালে থাপ্পর দিতে গেলেই তুহিন অরূপের হাত ধরে ফেললো ৷ অরূপ এক টানে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে শ্রেয়াকে একটা ধাক্কা দিয়ে বললো,,,,,,,,
“দেখো এই মেয়ের কত গুন ৷ একটা ছেলে দিয়ে হয় না ৷ আরো একটাকে ধরে এনেছে ৷”
তুহিন চেঁচিয়ে উঠলো ৷ অরূপ হাত উঁচু করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,,,,,,
“গলা নামিয়ে ৷”
তারপর শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,,,,,,
“যদি মান সম্মান বা লজ্জা বলতে কিছু থাকে তাহলে চলে যাও এখান থেকে ৷”
তৎক্ষনাৎ শ্রেয়া দৌঁড়ে এসে অরূপের কলার চেপে ধরে বলতে লাগলো,,,,,,,,,
“কার মান সম্মান বা লজ্জা নেই সেটা ঠিক একদিন জানবেন আপনি ৷”
বলেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো অরূপকে ৷ এতে অরূপ কিছুটা পিছিয়ে গেল ৷ শ্রেয়া মায়ার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,
“স্বার্থপর তুই ৷ তোর সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ আজ ৷ না তুই আমার বোন কখনো ছিলি না তুই আছিস ৷ তোর কাজের ফল পাবি তুই ৷ আর নিজেকেও নির্দোষ প্রমান করবো আমি ৷”
বলেই শ্রেয়া কিছুটা পিছিয়ে গেল ৷ সবাইকে এক নজর দেখে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,
“আজ আমার চরিত্র নিয়ে কথা উঠেছে এখানে ৷ একদিন আপনার চরিত্র নিয়েও কথা উঠবে অরূপ ৷ আপনার সো কল্ড গার্লফ্রেন্ডের চরিত্র আগে যাচাই করে দেখুন ৷ এই সব কিছুর পিছনে কার হাত আছে আর সে কেন করেছে সেটা আমি এই দুই মাসের মধ্যেই খুঁজে বের করবো ৷ ইট’স মাই প্রমিজ ৷ কে কতটা ভালো তা প্রমান করে দিব ৷ আর আজকের দিনটাও মনে থাকবে আমার ৷ নিজের ভুল কখনো বুঝতে পারলে এই থার্ড ক্লাস চরিত্রহীন মেয়ের কাছে ফিরে আসার চেষ্টাও করবেন না ৷ আর কখনোই আমি মেনে নিবো না আপনাকে ৷ আপনার জন্য আমার মনে যতটুকু ঘৃনা ছিল আজ তা দ্বি গুন হয়ে গেল ৷ আর যতটুকু ভালোবাসা অবশিষ্ট ছিল সবটা শেষ হয়ে গেল আজ ৷ আমার জীবনের সবচেয়ে ঘৃনিত ব্যাক্তিটি হচ্ছেন আপনি ৷”
কেউ কিছু বললো না সবাই কিছুক্ষন চুপ করে রইলো ৷ শ্রেয়া নিজের চোখ মুছে দৌঁড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল ৷ ওর পিছু পিছু তুহিনও ছুটে চলে গেল ৷
এদিকে অরূপের মা অরূপের সামনে এসে ঠাস করে ওর গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো ৷ অরূপ গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকালো ওর মায়ের দিকে ৷ ওর মা ওর দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য স্বরে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,
“তোকে আমি মানুষ করতে পারলাম না ৷ ছিহ তুই আমার ছেলে? তোকে আমি এই মানুষ করেছি ৷ এই দিনটাও দেখতে হলো আমার? গলা টিপে মেরে ফেলতে পারলি না আমাকে ৷ তাহলে আরো শান্তি পেতাম ৷”
বলেই সে রাগে সেখান থেকে চলে গেলো ৷ অরূপের বাবা গম্ভীর সুরে বলতে লাগলো,,,,,,
“তোর সাথে আমার সম্পর্কও শেষ আজ ৷ পারলে বেরিয়ে যা এই বাড়ি থেকে ৷ নাহলে মায়াকে নিয়ে বাড়ির এক কোনায় পরে থাক ৷ আমাদের সাথে কোনো কথা বলতে আসলে আমরাই বেরিয়ে যাবো এই বাড়ি থেকে ৷”
ওনার কথার মাঝেই আশা বলে উঠলো,,,,,,
“তুই খুব ভুল করলি রে ভাইয়া ৷ সত্যি মিথ্যা যাচাই করে নেয়ার দরকার ছিল আগে তোর ৷ এভাবে ভাবিকে না বললেও পারতি ৷ অনেক বড় ভুল করে ফেলেছিস তুই৷”
বলেই আশা ওর বাবাকে নিয়ে চলে গেলো ৷ অরূপ রাগে টেবিলে একটা লাত্থি মেরে হনহনিয়ে উপরে চলে গেল ৷ মায়া ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো ৷ ও নিজেই জানে না ওকে কে আটকে রেখেছিল ৷ কিন্তু শ্রেয়ার দোষ না দিলে অরূপ ভুল বুঝতো মায়াকে ৷ তাই ও এরকমটা বললো ৷ আপাততো এসব নিয়ে না ভেবে ও রেস্ট নিতে একটা রুমে চলে গেল ৷
______________________
রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি আমি ৷ অরূপের বলা কথা গুলো মাথায় বাজছে বারবার ৷ ওনার জন্য আজকের পর থেকে আমার মনের সব অনুভূতি গুলো শেষ হয়ে গেল ৷ নিমিষের মধ্যেই আমার ভালোবাসাটা ঘৃনায় পরিণত হয়ে গেল ৷ আচ্ছা এরকম হওয়াটা কি খুব প্রয়োজন ছিল? মায়া আপু কেন এরকম করলো? নিজের সবটুকু দিয়েই তো তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি তবুও সেই দোষী হতে হলো আমাকেই? আসলেই কারো ভালো করতে নেই ৷ কারো ভালো চাইতেও নেই ৷ হঠাৎ তুহিন আমার হাত ধরে তার দিকে ঘুরিয়ে বললেন,,,,,,,,,
“শ্রেয়া প্লিজ নিজেকে সামলাও ৷ তোমার লড়াই বাকি আছে এখনো ৷ সব সত্যিটা সামনে আনতে হবে তোমায় ৷ সবার প্রশ্নের সব জবাব দিতে হবে ৷ কিন্তু তার জন্য তোমাকে শক্ত হতে হবে ৷ এভাবে ভেঙ্গে পরলে চলবে না শ্রেয়া ৷”
নিজের চোখ মুছে চোখ বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস টেনে নিলাম ভিতরে ৷ তারপর চোখ খুলে হালকা হেসে বললাম,,,,,,,,
“হুম ঠিক বলেছেন ৷ আমি কেন অন্যের জন্য শুধু শুধু কষ্ট পাবো ৷ যার কাছে আমার কোনো মূল্যই নেই ৷ কষ্ট পাওয়ার দিন শেষ ৷ কষ্ট দেয়ার দিন শুরু ৷ অরূপকে আমি আমার মূল্য বুঝাবো ৷ মায়া আপু নাহ… মায়া ৷ ওর সঙ্গে বোনের পরিচয় মরে গেছে আজ ৷ মায়ার সত্যিটা সামনে আনবো আমি ৷ মায়ার মায়াজাল থেকে সবাইকে বের করবো আমি ৷ সবার সব সঠিক জবাবও দিব ৷ কিন্তু…”
“কিন্তু কি?”
“আপনার সাহায্য লাগবে আমার তুহিন ৷”
তুহিন মুচকি হেসে বললেন,,,,,,,,,
“আমি সবসময় তৈরি আছি তোমার জন্য ৷”
আমিও হাসলাম হালকা ৷ তারপর বললাম,,,,,,,,,
“বাড়িতে যাই আগে ৷ এসব বিষয় নিয়ে কাল কথা বলবো আপনার সাথে ৷”
“আচ্ছা তুমি একটু দাঁড়াও আমি গাড়িটা নিয়ে আসছি৷”
আমি মাথা নাড়াতেই তুহিন চলে গেলেন ৷ গাড়ি নিয়ে আসলে আমি গাড়িতে উঠে বসলাম ৷ তারপর উনি আমাকে বাড়িতে দিয়ে চলে গেলেন ৷ বাড়িতে এসে কাউকে কিছু না বলে সোজা নিজের রুমে চলে এলাম আমি ৷ রুমে এসে অরূপের সব জিনিস বের করলাম প্রত্যেকটা ড্রয়ার থেকে ৷ অাগে কিছু কিছু জিনিস অরূপ গিফ্ট দিয়েছিলেন আমাকে ৷ আবার কিছু কিছু জিনিস নিজে চেয়েও নিয়েছিলাম ৷ অরূপের দেয়া একটা কাচের শোপিস হাতে নিয়ে ঠাস করে ফেলে দিলাম ৷ সেটা ভেঙ্গে গুড়ো গুড়ো হয়ে গেলো ৷ ওনার সব ছবি গুলো কুচিকুচি করে ছিড়ে আগুনে পুড়িয়ে ফেললাম ৷ আর যা যা আছে সব কিছু একই ভাবে নষ্ট করে ফেললাম ৷ নিজের মনের থেকে যেভাবে মুছে ফেলবো ওনাকে ঠিক সেভাবেই নিজের জীবন থেকেও মুছে ফেলবো ৷ কোনো কিছুর স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবো না আর ৷ অাজ থেকে অরূপ নামক বিষাক্ত চ্যাপ্টার ক্লোজ!”
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,