#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__০৬
#অদ্রিতা_জান্নাত
গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছি আমি ৷ পাশের সিটে অরূপ ড্রাইভ করছেন ৷ দুজনেই চুপচাপ বসে আছি ৷ মনটা আজ অনেক ভার হয়ে আছে ৷ ওই বাড়ি থেকে আমার বাড়িতে যাচ্ছি আজ ৷ হয়তো কিছু দিনের জন্য ৷ কিন্তু বারবার মনে হচ্ছে আর কখনো ওই বাড়িতে ফিরতে পারবো না আমি ৷ আজই হয়তো শেষ দিন ছিল ৷ জানিনা কেন মনে হচ্ছে এরকম ৷ কিন্তু মনে হচ্ছে ৷ মনটা বারবার কু গাইছে ৷ কিছু একটা তো হবেই কিন্তু কি? বাহিরের দিক থেকে চোখ সরিয়ে অরূপের দিকে তাকালাম ৷ উনি মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভ করছেন ৷ তাকে দেখে মনে হচ্ছে না যে তার পাশে কেউ আছে ৷ চোখ ফিরিয়ে আবার বাহিরের দিকে চোখ রাখলাম ৷
কিছুক্ষন পর গাড়ি এসে থামলো আমার বাড়ির সামনে ৷ অরূপ আমাকে নামতে বলে পাশের কয়েকটা দোকান থেকে বিভিন্ন রকমের ফল আর মিষ্টি কিনে নিলেন ৷ অবশ্য এগুলো কিনতে বলছে আমার শ্বাশুড়ি মা ৷ তাই হয়তো কিনছেন ৷ আমি গাড়ি থেকে নেমে ওনার জন্য দাঁড়ালাম ৷ উনি আসলে আমাকে রেখেই বাড়ির ভিতরে চলে গেলেন ৷ আমি চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে তার পিছু পিছু যেতে লাগলাম ৷ কলিং বেল বাজাতেই আম্মু এসে দরজা খুলে দিলো ৷
আমাকে দেখে খুশিতে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,
“তুই ঠিক আছিস মা? ভালো আছিস? দেখি!”
বলেই আমার মুখটা তুলে কপালে একটা চুমু দিয়ে গালে হাত দিয়ে ধরে বলতে লাগলো,,,,,,,,,
“কতদিন পর দেখছি তোকে ৷ কি যে ভালো লাগছে আমার বোঝাতে পারবো না ৷ আয় মা ভেতরে আয় ৷ এসো বাবা ভেতরে এসো ৷”
বলেই আমাকে ছেড়ে সামনে থেকে সরে গেলো আম্মু ৷ অরূপ আর আমি দুজনেই ভিতরে ঢুকলাম ৷ ভিতরে ঢুকে দেখি আব্বু সোফায় বসে পেপার পরছে ৷ আমাদের দেখে মুখে হাসি ফুঁটিয়ে আমাদের কাছে এসে বলতে লাগলো,,,,,,,
“কেমন আছো অরূপ বাবা?”
অরূপ মুখে হাসি ফুঁটিয়ে হালকা মাথা নাড়ালেন ৷ যার অর্থ ‘ভালো’ ৷ আব্বু অরূপকে হালকা দেখে আমাকে বলতে লাগলো,,,,,,,,,
“শ্রেয়া মা ভালো আছিস তো? তোর কষ্ট হচ্ছে না তো ওই বাড়িতে?”
“না অাব্বু সব ঠিক আছে ৷ আম্মু আমি আগে ফ্রেশ হয়ে আসি ৷ তারপর কথা বলছি ৷”
“আচ্ছা যা আমি গিয়ে দেখি রান্নার কাজ গুলো হলো নাকি ৷”
বলেই আম্মু কিচেনের দিকে চলে গেল ৷ আমিও আর কিছু না বলে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম ৷ নিচে নেমে দেখি আব্বু আর অরূপ কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে ৷ যাক আমার বাবা মায়ের সঙ্গে অন্তত খারাপ ব্যবহার না করলেই হলো ৷ আমি চাই না আমার জন্য তারা কষ্ট পাক ৷ আমাকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আব্বু বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,
“কি রে? ওখানে দাঁড়িয়ে কি দেখছিস? এখানে আয় ৷”
বলেই আমাকে হাতের ইশারায় কাছে ডাকলো সে ৷ অরূপ আমার দিকে তাকাতেই তার মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেল ৷ লোকটা এরকম কেন? আমি সামনে গিয়ে আব্বুর পাশে বসলে সে আমার মাথায় হাত রেখে বলতে লাগলো,,,,,,,,,
“কি রে মা? মন খারাপ তোর?”
আমি ‘না’ সূচক মাথা নাড়লাম ৷ আব্বু আবার বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,
“কি হয়েছে বল না? সব কিছু খুলে বল ৷ মনটা হালকা হবে ৷ তোকে এভাবে দেখতে আমার ভালো লাগে বল?”
জোর পূর্বক মুখে হাসি ফুটিয়ে বললাম,,,,,,,,
“কিছু হয় নি ৷ তুমি প্লিজ এসব ভেবে নিজের শরীর খারাপ করো না ৷ আমি ঠিক আছি একদম ৷”
“আচ্ছা চল তাহলে ৷ দুপুর হয়ে গিয়েছে ৷ আগে খেয়ে নে তারপর যা ইচ্ছা করিস ৷ আসো বাবা ৷”
বলেই আমরা গিয়ে টেবিলে বসলাম ৷ সবাই খেতে খেতে মাঝখানে হালকা কিছু গল্পও করলাম ৷ কিন্তু অরূপ আর আমি নিজেদের মধ্যে কোনো কথা বলি নি আর ৷
______________
“মায়ার কোনো খোঁজ পেলি?”
রাতের বেলা ব্যালকনিতে একা একা দাঁড়িয়ে ছিলাম ৷ আম্মুর কথা শুনে পাশে তাকালাম ৷ কিছু বললাম না ৷ চোখ ফিরিয়ে চুপ করে রইলাম ৷ আম্মু আবার বললো,,,,,,,,
“কি হলো? কিছু বলছিস না যে? অরূপ তোকে মেনে নিয়েছে?”
“বাদ দাও না ওসব কথা ৷ ভালো লাগছে না ৷”
আম্মু আমাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,
“তোদের সম্পর্ক একটুও ঠিক হয়নি জানি আমি সেটা ৷ আমার ভালো লাগছে না তোকে এভাবে দেখতে ৷ তুই অরূপের সাথে ভালো থাকবি না ৷ সেটা জানি আমি ৷ দুই পরিবারের সম্মান বাঁচিয়েছিস ৷ এখন আর ওই বাড়ি যাবি না তুই ৷”
ছলছল চোখে আম্মুর দিকে তাকালাম ৷ আম্মু আবার বললো,,,,,,,,,,,
“আমার একমাত্র মেয়ের কষ্ট আমি সহ্য করবো না ৷ বিয়েতে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম দেখে এই নয় যে সারাজীবন সব কিছু চুপচাপ মেনে নিবো ৷ দীপ্ত ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলবো আমি ৷”
বলেই আম্মু চলে যেতে নিলেই আমি আম্মুর হাত ধরে আটকে ধরে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,
“দীপ্ত বাবাকে কিছু বলো না আম্মু ৷ ওই বাড়ির সবাই মেনে নিয়েছে আমাকে ৷ এখন এই কথা বললে কষ্ট পাবে তারা ৷ প্লিজ আম্মু এরকম কিছু করো না ৷”
“তাহলে কি চুপ করে থাকবো আমি?”
আমি মাথা নিচু করে বললাম,,,,,,,,,,
“আমাকে কয়েকটা দিন সময় দাও আম্মু ৷ এই কয়েকটা দিনে অরূপ আমাকে মেনে না নিলে তোমরা যা বলবে আমি তাই শুনবো ৷ শুধু কয়েকটা দিন ৷ আর এই কয়েকদিনের মধ্যেই আমি অরূপের মনের সব প্রশ্নের সঠিক জবাব দিব ৷ দোষ না করেও দোষের বোঝা বয়ে নিয়ে বেড়াতে পারবো না আমি ৷”
আম্মু আমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,
“অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস রে মা! তুই যেটা করার করে নে ৷ অরূপ ওর ভুল না বুঝলে, তোকে মেনে না নিলে তুই দূরে চলে যাবি ওর থেকে ৷ একটা নতুন জীবন শুরু করবি ৷ কেমন?”
“হুম আচ্ছা ৷”
“কলেজে যাবি না? ফাইনাল এক্সামটা তো দিতে হবে নাকি?”
“হুম ৷ দিব ৷”
“আচ্ছা আসি আমি তাহলে ৷ মন খারাপ করে থাকিস না ৷”
আমি মাথা নাড়ালাম ৷ আম্মু চলে গেল ৷ রুমে এসে বিছানায় বসলাম ৷ চিন্তা হচ্ছে, প্রচুর চিন্তা হচ্ছে ৷ মায়া আপুকে কোথায় খুঁজবো আমি? আর কি করেই বা খুঁজবো? আমি একা কি-ই বা করতে পারি? মোবাইলটা হাতে নিয়ে মায়া আপুর কল দেয়া নাম্বারে কল দিলাম ৷ কিন্তু ফোন বন্ধ ৷ কাল কথা বলার পর থেকেই এরকম ৷ এরকম হলে আমার পক্ষে খোঁজা তো সম্ভবই না ৷
কিছুক্ষনপর অরূপ রুমে এসে ফ্রেশ হতে চলে গেলেন ৷ আমি পা তুলে বিছানার এক সাইডে শুয়ে রইলাম ৷ শরীর ও মন দুটোর একটাও ভালো লাগছে না আমার ৷ বেশ কিছুক্ষন পর উনি বেরিয়ে এলেন ৷ আমার দিকে একবার তাকিয়ে বিপরীত পাশে গিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলে উঠলেন,,,,,,,,,,,,,,
“কোথায় শুবো আমি?”
কপাল কুচকে ঘাড় ঘুরিয়ে ওনার দিকে তাকালাম ৷ গত দুইদিন আমি অসুস্থ ছিলাম দেখে বিছানায় শুতে দিয়েছিলেন ৷ আর উনি সোফায় শুয়েছিলেন ৷ কিন্তু এখানে আমার রুমে শুধু একটা সিঙ্গেল সোফা রয়েছে ৷ যেটাতে শুধু বসা যাবে ৷ আমি ওনাকে বললাম,,,,,,,,,
“বেডের অার বাকি জায়গা গুলো কার জন্যে? এখানে তো আরো তিন জন শুতে পারবে ৷ আপনি পারবেন না?”
উনি বেডের সাইডে বসে হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে বললেন,,,,,,,,,,
“তোমার সাথে শুতে পারবো না আমি ৷”
“তো আমি কোথায় শুবো?”
“সেটা তুমি জানো ৷”
“আমার রুমে আমার বিছানায় আমি ঘুমাবো ৷ আপনার যেখানে ইচ্ছা আপনি যান ৷ আমি পারবো না ৷”
বলেই মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পরলাম ৷ অরূপ আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললেন,,,,,,,,,,,,,
“আমি ঘুমাতে পারবো না তোমার সাথে ৷”
“আপনাকে আমি ঘুমাতে বলিও নি ৷ পারলে সারা রাত জেগে বসে থাকেন ৷ কিন্তু আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না একদম ৷”
বলেই লাইট নিভিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম ৷ অরূপ রেগে বললো,,,,,,,,,
“লাইট কেন অফ করলে?”
“আলোতে ঘুম আসে না আমার ৷ ওকে গুড নাইট!”
বলেই কাঁথা মুড়ু দিয়ে শুয়ে পরলাম ৷ অরূপ রেগে ওপাশ ফিরে শুয়ে পরলেন ৷ তবে আমাদের মাঝে দূরত্ব এখন অনেক ৷ হয়তো মনের দূরত্বের থেকে এই দূরত্ব কিছুই না ৷
_______________________
পরেদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে অরূপকে কোত্থাও পেলাম না ৷ আম্মুকে জিজ্ঞেস করলে সে বললো ‘অরূপ নাকি খেয়েই কোথায় চলে গেছে ৷ আর বলে গেছে তার কি যেন কাজ আছে’ ৷ বুঝি না প্রত্যেকদিন সকালবেলা কি এমন কাজ করে সে? দেখতে হবে আমাকে ব্যাপারটা ৷ সন্দেহ হচ্ছে এখন এই ছেলেটাকে ৷ এই ছেলেটার মাথায় চলছে টা কি?
হঠাৎ ফোন বেজে উঠায় চমকে উঠলাম আমি ৷ ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি তুহিন ফোন করেছে ৷ আমি ধরলাম না কেটে দিলাম ৷ আবার বেজে উঠলো ৷ কিছু করার নেই ধরতে হবে আমাকে এখন ৷ নাহলে শান্তি দিবে না জীবনেও ৷ ফোন ধরে বললাম,,,,,,,,,
“বলুন ৷”
“কি আর বলবো? তুমি তো আমার কথা শুনোই না ৷”
“শুনছি আপনি বলুন ৷”
“ওই দিন আমার কোনো কথা শুনো নি কেন?”
“সেটা আমার ইচ্ছা ৷”
“তোমার শ্বশুড়বাড়ির এড্রেসটা দাও ৷ দেখা করবো আমি তোমার সাথে ৷”
“পারবো না ৷ আমার শ্বশুড়বাড়ি আপনি কেন আসবেন? আর আমি ওই বাড়িতে নেই এখন ৷”
“তো কোথায় আছো?”
“প্লিজ এরকম করবেন না আপনি ৷ কোথায় আছি, কি করছি সেসব আপনাকে বলতে আমি বাধ্য নই ৷ এটা মনে রাখবেন আমি এখন অন্য কারো স্ত্রী ৷ দয়া করে আর ফোন দিবেন না ৷ কোনো ভুল বুঝাবুঝির কারণ হতে চাচ্ছি না আমি ৷”
বলেই ওনাকে কিছু বলতে না দিয়ে ফোন রেখে দিলাম ৷ কিছুক্ষন পর আবার ফোন বেজে উঠলো ৷ সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করে রেগে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,,
“এই আপনাকে না বলেছি আর ফোন করবেন না আমায় ৷ ভালোভাবে কথা বললে বোঝেন না, না? আপনি…”
“তোমার সাহস তো কম না আমাকে ধমক দিয়ে কথা বলছো ৷”
আমি ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখি অরূপের নাম্বার ৷ উফ কেন যে না দেখে রিসিভ করলাম ৷ ওপাশ থেকে অরূপ ঝাঝালো গলায় আবার বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,,,,
“কিছু বলছো না কেন?”
“আআমি তো আআপনাকে বলি নি ৷ অঅঅন্য কাউকে বলতে চেয়েছিলাম ৷”
“অন্যকাউকে মানে? আর তুমি কার সাথে কথা বলছিলে? ফোন ওয়েটিংয়ে ছিল কেন?”
“উফ বাবা আমার ফোন যার সাথে মন চায় আমি কথা বলবো ৷ তাতে আপনার কি? আপনি কেন ফোন দিয়েছেন সেটা বলুন ৷ আর আপনি এখন কোথায়? প্রত্যেকদিন সকালে না বলে কোথায় যান আপনি?”
“আমার যেখানে ইচ্ছা আমি সেখানে যাবো ৷ তোমাকে কেন বলবো?”
“তো ফোন কেন দিয়েছেন?”
“ইচ্ছা হইছে তাই ৷ এখন বকবক বন্ধ করে বাড়ির বাইরে আসো ৷”
আমি অবাক হয়ে বললাম,,,,,,,,,,,,,
“মানে?”
“বাড়ির বাহিরে আসতে বলছি ৷ এটাও কি বোঝো না তুমি?”
“হঠাৎ করে আমি কেন বাহিরে যাবো? আপনি পারলে ভেতরে আসেন ৷ আমি পারবো না ৷”
“ওকে আমি ভিতরে আসলে কিন্তু সবার সামনে তোমাকে কোলে নিয়ে বাহিরে এসে আছাড় মারবো একটা ৷ এখন তুমি জানো কি করবা? আছাড় খাবা নাকি বাইরে আসবা?”
মুখ বাঁকিয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,
“হুহ আসতেছি আমি ৷ আপনি দাঁড়ান একটু ৷ ভালোভাবে বললেও তো হতো ৷ আমি না করতাম নাকি?”
“কথা কম বলে তাড়াতাড়ি বাইরে এসো ৷ ১০ মিনিটের বেশি হলে খবর আছে তোমার ৷”
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,