#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__০৫
#অদ্রিতা_জান্নাত
সকালবেলা সারা বাড়ি খুঁজেও অরূপকে কোত্থাও পেলাম না ৷ এই ছেলেটা প্রত্যেকদিন সকালে যায় টা কোথায়? রুমের মধ্যে বিছানায় বসে এসব ভাবছি আর পা দুলাচ্ছি ৷ গতকাল রাতের তুলনায় আজ শরীর অনেকটা ভালো ৷ হঠাৎ রুমে ঢুকলো আশা ৷ ওকে দেখে ওর দিকে তাকালাম আমি ৷ ও আমার দিকে একবার তাকিয়ে হালকা হেসে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো ৷ তারপর ওর হাতের গ্লাসটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,,,,,,,,,
“শেষ করো ৷”
আমি চোখ মুখ কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,,,,,,,
“দুধ? আমাকে কেন দিচ্ছো? তুমি নিজেই খাও না!”
“আমি তো তোমার জন্য এনেছি ৷ আমি কেন খাবো? ধরো তো!”
“আরে তাহলে রেখে আসো আমি খেতে পারবো না ৷”
“ভাইয়া যাওয়ার আগে বলে গেছে তুমি উঠলে তোমাকে দুধ দিতে ৷ এখন না খেলে কি হবে আমি কিন্তু কিছু জানি না ৷”
আমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে বললাম,,,,,,,,,
“উনি কি করবেন আমার? আমি ভয় পাই নাকি ওনাকে ৷ কিন্তু উনি কোথায় গিয়েছেন?”
“বলে যায় নি ৷ ধরো তুমি শেষ করলে করো নাহলে নাই ৷ ভাইয়া আসলে আমি বলে দিব ভাইয়াকে ৷”
বলেই আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে গ্লাসটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল ৷ কি একজন আমাকে খেতে বললো আর আমি খেয়ে নিব? এতোই যখন খাওয়ানোর ইচ্ছা নিজ হাতে দিতে পারলেন না ৷ অসহ্যকর ৷ গ্লাসটা টেবিলে রেখে হাত পা গুটিয়ে বিছানায় বসলাম ৷ ঠিক তখনি আমার ফোন বেজে উঠলো ৷ ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি আননৌউন নাম্বার ৷ কিছুক্ষন বাজার পর রিসিভ করে বললাম,,,,,,,,,,,,,
“হ্যালো কে?”
ওপাশ থেকে ভেসে এলো,,,,,,,,,
“শ্রেয়া কোথায় তুই?”
পরিচিত একটা কন্ঠ শুনে বুকটা ধুক করে উঠলো ৷ ফোনের স্ক্রিনের দিকে আবার তাকালাম ৷ না এটা তো তার নাম্বার না ৷ তাহলে এতো সেইম গলা কি করে হতে পারে? পরক্ষনেই ভাবলাম হতেই পারে ৷ কিন্তু মনটা এক অজানা ভয়ে খচখচ করছে ৷ ওপাশ থেকে আবার ভেসে এলো,,,,,,,,,,
“কথা বলছিস না কেন? কথা বল না ৷”
কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,,,,,,,,,
“মায়া আপু কোথায় তুই?”
“শ্রেয়া আমি এখানে কি করে এলাম? আমি তো বাড়িতে ছিলাম না? কিন্তু এখানে এলাম কি করে?”
“তুই কেন পালিয়ে গেলি বিয়ের দিন? জানিস সবাই কত রেগে আছে তোর উপর ৷ শেষ মূহুর্তে এসে এরকম কেন করলি?”
“আমি পালিয়ে কেন যাবো? আমি তো নিজেই বুঝতে পারছি না যে আমি বাড়ির বাহিরে এলাম কি করে ৷”
“মানে? তুই পালিয়ে যাস নি? কোথায় তুই এখন?”
“জায়গাটা চিনি না আমি ৷ একটা অন্ধকার বন্ধ রুমে আটকে রাখা হয়েছে আমাকে ৷ আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে ৷ শ্রেয়া প্লিজ আমাকে বের কর এখান থেকে ৷”
“তুই কোথায় না জানলে আমি কি করবো? সবাই জানে তুই পালিয়ে গিয়েছিস ৷”
“অরূপ ভুল বুঝেছে আমাকে?”
মায়া আপুর মুখে অরূপের নাম শুনে আরো ভয় করছে এখন ৷ যদি জানে আমাদের বিয়ে হয়েছে তো কি করবে ও? আমার ভাবনার মাঝেই আপু আবার বলে উঠলো,,,,,,,,,,
“শ্রেয়া কিছু বল প্লিজ ৷”
“জজজানি নাহ ৷”
“আমাকে এখান থেকে বের কর প্লিজ ৷ দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার ৷”
“কার মোবাইল দিয়ে ফোন করেছিস তুই?”
“মোবাইলটা নিচে বন্ধ অবস্থায় পরা পেয়েছি অামি ৷ কিছু একটা কর প্লিজ ৷”
“আচ্ছা দেখছি আমি ৷”
বলেই ফোন রেখে দিলাম ৷ কি করবো আমি? আপুকে কোথায় খুঁজবো? কি করে খুঁজবো আমি? বিছানা থেকে নামতেই পিছনে ঘুরে অরূপকে দেখে চমকে উঠলাম আমি ৷ উনি কি মায়া আপুর সঙ্গে বলা সব কথাই শুনে নিয়েছেন? তাহলে তো ভুল বুঝবেন আমাকে ৷ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,,,,,,,
“কার সাথে কথা বলছিলে তুমি?”
“অঅআমার ফ্রেন্ডের সাথে ৷”
বলেই পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে আমার হাত চেপে ধরে সামনে এনে বললেন,,,,,,,,,,,
“তোমার ফোনটা দাও ৷”
ফোন সমেধ হাতকে পিছনে নিয়ে বললাম,,,,,,,,
“আমার ফোন দিয়ে আপনি কি করবেন? আমি তো বললাম ৷ এখন ছাড়ুন আমায় ৷”
“ফোনটা দাও ৷”
ওনার ধমকে কেঁপে উঠলাম আমি ৷ উনি আমাকে আরো চেপে ধরে ওনার হাত আমার পিছনে নিয়ে আমার হাত থেকে ফোনটা একটানে নিয়ে ছেড়ে দিলেন আমাকে ৷ ফোনের কললিস্ট চেক করে ৷ কাকে যেন কল করলেন ৷ কিন্তু ফোন রিসিভ হলো না দেখে ঝাঝালো গলায় আমাকে বললেন,,,,,,,,,,
“ফোন বন্ধ কেন এখন? এতোক্ষন তো কথা বলছিলে অনেক ৷ কার সাথে কথা বলছিলে?”
“এখন যদি আমি বলি আপনি কোথায় গিয়েছিলেন বলবেন আমাকে?”
“না ৷”
“সেইম ভাবে আমিও বলবো না ৷”
রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই উনি পেছন থেকে বলে উঠলেন,,,,,,,,,,
“কার সাথে কথা বলছিলে যে বলা যাবে না?”
“আমাকে অাপনি ভুল বুঝলেও আমার কিছু করার নেই ৷ জানেন? ভুল কাদেরকে বোঝা যায়? যারা তার খুব আপন ৷ খুব! আচ্ছা মায়া আপু যে বিয়ের দিন পালিয়ে গেল ৷ তাকে কি ভুল বুঝেছেন আপনি? উহু তার পরিবর্তে আপনি তো আমায় ভুল বুঝেছেন ৷ কিন্তু কেন? আমি কি আপনার কেউ হই? তাহলে কেন আমার কাছে আপনার সব প্রশ্নের কৈফিয়ত চাইবেন? আপনি যেমন বাধ্য নন আমার কাছে ৷ আমিও তেমন আপনার কাছে বাধ্য নই ৷”
কিছুক্ষন ওনার দিকে তাকিয়ে থেকে রুমের বাহিরে চলে এলাম ৷ একবারও তাকালেন না উনি আমার দিকে ৷ মায়া আপুকে খুঁজে বের করবো আমি ৷ আপনাকেও মুক্তি দিয়ে দিবো ৷ আমাকে তো আপনার ঘাড়ে চাপানো হয়েছে ৷ আর অন্যের ঘাড়ে চেপে থাকতে চাই না অামি ৷ সব প্রশ্নের সঠিক জবাব দিয়ে অনেক দূরে চলে যাবো আমি ৷
____________________
রাত ০৯ টা বাজে ছাদে দাঁড়িয়ে আছি আমি ৷ চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার ৷ আকাশে এক ফালি চাঁদও নেই ৷ সব তারা গুলোও মেঘের আড়ালে ঢাকা পরে গেছে ৷ চারপাশ জুড়ে শুধু দমকা বাতাস বয়ে চলেছে ৷ অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি আমি একা ৷ কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না ৷ মায়া আপুকে কোথায় খুঁজবো আমি? আর কে-ই বা মায়া আপুকে সরালো ৷ পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পাশে তাকালাম ৷ ভালো মা দাঁড়িয়ে আছে ৷ সে আমার কাছে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,
“মন খারাপ?”
শূন্য আকাশে চোখ রেখে বললাম,,,,,,,,,,
“আম্মু আব্বুর কথা মনে পরছে ৷ তাদের ছাড়া তো থাকি নি কখনো ৷ তারা কেমন আছে জানিও না আমি ৷ খুব ইচ্ছে করছে তাদের কাছে চলে যেতে ৷”
“তাহলে যা ৷”
কপাল কুচকে তাকালাম ৷ মা হালকা হেসে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,
“অরূপকে বলে দিব আমি ৷ ও নিয়ে যাবে তোকে ৷ কয়েকদিন ঘুরে আসিস মন হালকা হবে ৷”
“আমি একাই যেতে পারবো ওনাকে যাওয়া লাগবে না৷”
“তাহলে তো সবাই খারাপ ভাববে ৷ অরূপকে মানিয়ে নিব আমি চিন্তা করিস না তো ৷”
আমি বেশ কিছুক্ষন চুপ থেকে বললাম,,,,,,,
“মায়া আপুর সঙ্গে কথা হয়েছে আজ ৷”
মা চমকে বলে উঠলো,,,,,,
“কককিই?”
“হুম ৷ কেউ মায়া আপুকে বিয়ের দিন সরিয়ে দিয়েছিল ৷ কিন্তু কে? সেটা জানি না ৷ এখন আমায় ওকে খুঁজে বের করতে হবে ৷”
“এসব ঝামেলায় নিজেকে জড়াস না ৷ অরূপ জানলে তোকে ভুল বুঝবে ৷”
“যেটা আমি করি নি সেটার জন্য কেন ভয় পাবো মা? ভয় তাড়াই পায় যারা অপরাধী ৷ আমি তো তেমন কিছুই করি নি ৷ আমি কেন ভয় পাবো?”
“তো কি করবি এখন?”
“জোর করে কিছু হয় না ৷ অরূপ কখনোই মেনে নিবেন না আমাকে ৷”
“তাহলে তুই চলে যাবি?”
আমি চুপ করে রইলাম ৷ সে আবার বললো,,,,,,,
“তুই কি করবি সেটা তুই জানিস ৷ আমি আটকাবো না তোকে ৷ কিন্তু ভুল কিছু করিস না ৷ আমাদেরও ভুল বুঝিস না ৷”
“তোমরা তো কিছু করো নি যে ভুল বুঝবো ৷ যাইহোক কাল আমি আমার বাড়িতে যাবো ৷ অরূপ না গেলেও আমি যাবো ৷”
“আচ্ছা আমি ছেলেটাকে বলে দিবো ৷ চিন্তা করিস না আর ৷”
আমার মাথায় হালকা হাত বুলিয়ে চলে গেল সে ৷ আমি আবার আগের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম ৷
এদিকে অরূপের মা অরূপের রুমে এসে দেখে ও ফোনে টিপছে ৷ সে দরজা বেজিয়ে ওর কাছে এসে বললো,,,,,,,,,,,
“কাল শ্রেয়াকে নিয়ে তুই ওর বাসায় যাবি ৷”
ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে অরূপ বললো,,,,,,,
“কিন্তু কেন?”
“শ্রেয়ার মন ভালো নেই ৷ ওখান থেকে একটু ঘুরে আসলে মনটা ভালো হয়ে যাবে ৷ তুই যাবি ওর সাথে ৷”
“ও যাক আমি কেন যাবো?”
“আমি বলেছি তাই ৷ কয়েকদিন থেকে আসবি ৷ কোনো কথাই শুনতে চাই না আমি ৷ ওই বাড়ি গিয়ে সবার সঙ্গে ভালো ভাবে কথা বলবি ৷ আমার কথার এদিক ওদিক যেন না হয় ৷ শ্রেয়াকে নিয়ে নিচে খেতে আয় ৷”
বলেই অরূপকে কিছু বলতে না দিয়ে চলে গেলেন তিনি ৷ অরূপ রেগে বিছানা থেকে নেমে রুম থেকে বের হতে গেলেই শ্রেয়ার সাথে ধাক্কা খেলো ৷ সামনে তাকিয়ে শ্রেয়াকে দেখে এক প্রকার চেঁচিয়ে বললো,,,,,,,,,
“ইডিয়ট! চোখ কি মাথায় তুলে হাঁটো? একটু দেখে শুনে হাঁটতে পারো না? এটা আমার বাড়ি তোমার বাড়ি না যে সব জায়গায় নাঁচতে নাঁচতে ঘুরে বেড়াবে ৷ উফ জ্বালিয়ে খেলো আমায় ৷”
বলেই হনহনিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো শ্রেয়া ৷ এতো টুকু একটা ব্যাপারে এই ভাবে রিয়্যাক্ট করলো? ওর চোখ থেকে গড়িয়ে পরলো এক ফোঁটা পানি ৷
“আমি আপনাকে অনেক জ্বালাই তাই না অরূপ ভাইয়া! এমন একদিন আসবে সেদিন আমার এই জ্বালানো গুলোই পাগলের মতো খুঁজে বেড়াবেন আপনি! কিন্তু আপনাকে জ্বালানোর মতো তখন কেউ থাকবে না!”
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,