ভালোবাসবে তুমিও পর্ব-০৩

0
1650

#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__০৩
#অদ্রিতা_জান্নাত

গাঁয়ের মধ্যে ঠান্ডা কিছু পরতেই ধরফরিয়ে উঠে বসলাম ৷ আশেপাশে তাকাতেই বুঝলাম সকাল হয়ে গিয়েছে ৷ নিজের দিকে একবার তাকিয়ে আবার পাশে তাকালাম ৷ সঙ্গে সঙ্গে অবশিষ্ট পানি আবার পুরোটা ঢেলে দিলেন আমার গাঁয়ে ৷ তারপর অরূপ ভাইয়া বিরক্তির সাথে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,,,,,,

“তোমাকে এখানে সকাল ১০ টা পর্যন্ত ঘুমানোর জন্য আনা হয় নি ৷ যাও কাজে যাও ৷”

আমি আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,,,,,,,,

“সকাল বেলা আমার গাঁয়ে পানি কেন ঢাললেন?”

“সেটা আমার ইচ্ছা ৷ পানি না ঢেলে কি ধরে ধরে তোমাকে ঘুম থেকে ওঠাবো? তোমার এরকম মনে হওয়াটা একটা বোকামো ৷ কারনটা হয়তো তুমি জানো ৷ এখন যাও ৷”

বলেই সামনে থেকে সরে গেলেন ৷ আমি কিছু না বলে ভিতরে চলে এলাম ৷ ভেজা অবস্থায় থাকতে খারাপ লাগছে এখন ৷ সামনে গিয়ে আলমারি খুলে দেখি বেশ কয়েকটা মেয়েদের জামা কাপড় রয়েছে ৷ সেখানে হাত দিতে গেলেই অরূপ ভাইয়া এসে হাত টেনে ধরে তার দিকে ঘুরিয়ে রেগে বলতে লাগলেন,,,,,,,,

“আলমারি খোলার সাহস কোথায় পাও তুমি?”

“আমি তো…”

“অধিকার ফলাতে আসবে না বুঝেছো? এই রুম আমার এই রুমের সব জিনিস আমার ৷ আমার জিনিসে হাত দেয়ার পার্মিশানও দেই নি আমি তোমায়৷”

আমাকে বলতে না দিয়ে অরূপ ভাইয়া কথাগুলো বলে চলে যেতে নিলেই আমি বললাম,,,,,,,,,

“অধিকার তো আছেই আমার ৷”

উনি ঘুরে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলেন ৷ আমি আবার বললাম,,,,,,,,,,

“তিন মাস আপনি না চাইলেও তো আমাকে আপনার বউ হয়ে থাকতে হবে ৷ সেখানে অধিকার কেন থাকবে না?”

“কারণ আমি তোমাকে সেই অধিকার দেই নি ৷ আর কখনো দিবও না ৷ তুমি অন্যের সামনে বউ সেজে থাকলেও আমার সামনে তার কোনো দরকার নেই ৷”

আমি স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে ৷ উনি আমার সামনে থেকে সরে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল আচড়ে বলে উঠলেন,,,,,,,,,,

“এই খানে দাঁড়িয়ে কি দেখছো? চেঞ্জ করে নিচে গিয়ে বাড়ির কাজ করো ৷”

“চেঞ্জ করবো কীভাবে? আপনি তো একটা জামাও নিতে দিলেন না ৷ তাহলে কি পরবো আমি?”

“নিজে কি পরবে তার ব্যবস্থা তুমি নিজেই করো ৷ আমি কেন টেনশান করবো এসব বিষয় নিয়ে? যা ইচ্ছা করো ৷ আর হ্যাঁ আজ বাড়ির সব রান্না তুমি করবে ৷”

বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন উনি ৷ উফ কি অসহ্যকর একটা ছেলে ৷ এই ছেলেটাকে ভালোবেসেছি আমি? নিজের উপরই রাগ উঠছে এখন ৷ রুম থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজতে লাগলাম ৷ হঠাৎ পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো,,,,,,,,,

“কাকে খুঁজছো?”

পিছনে তাকিয়ে আশাকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম ৷ ওকে দেখে বললাম,,,,,,,,,

“শোনো আমাকে কোনো ড্রেস এনে দিতে পারবে? চেঞ্জ করবো তাই ৷”

আশা আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করে বললো,,,,,,,,,,,

“তোমার এরকম অবস্থা কেন? আর এভাবে ভেজা অবস্থায় ঘুরছো কেন?”

“চেঞ্জ করবো দেখেই তো ড্রেসের কথা বললাম ৷ তুমি একটু ব্যবস্থা করো না ৷ এভাবে থাকতে ভালো লাগছে না আমার ৷”

“আচ্ছা ওয়েট আসছি আমি ৷”

বলেই আশা চলে গেল ৷ কিছুক্ষন পর আমার হাতে একটা শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে বললো,,,,,,,,,

“তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নিচে আসো ৷”

আমি মাথা নাড়িয়ে রুমে চলে এলাম ৷ চেঞ্জ করে এলোমেলো করে রাখা রুমটা গুছিয়ে নিচে চলে গেলাম ৷ আশেপাশে কোথাও অরূপকে দেখতে পেলাম না ৷ না জানি কোথায় আছে ৷ বলে তো গেলো আমাকে রান্না করতে ৷ কিন্তু করবো টা কীভাবে? কিচেনের দিকে যেতেই দেখি নয়না আন্টি কাজ করছে ৷ আমি তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালে উনি আমাকে এক পলক দেখে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,

“তুই এখানে কেন? যা একটু কষ্ট করে নিয়ে খেয়ে নে ৷ আচ্ছা দাঁড়া আমি আশাকে বলছি ৷”

বলেই উনি আশাকে ডাকতে নিলে আমি বললাম,,,,,,,,,

“আরে থাক না ৷ আমি খাবো না ৷ ইচ্ছে করছে না প্লিজ৷”

“এটা বললে হবে বল?”

“আই সোয়ার আমার একটুও খিদে পায় নি ৷ প্লিজ আন্টি জোর করো না ৷”

উনি একপলক আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে কাজ করতে করতে বললেন,,,,,,,,

“আমি তোর এখনো আন্টি হই?”

দাঁত দিয়ে জিভ কেটে একটু হেসে বললাম,,,,,,,

“ওহ সরি সরি মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে ৷ আর বলবো না ৷ কিন্তু কি বলে ডাকবো?”

“আমি কি তোর মা হতে পারি না?”

“সেটা কেন হবে? তুমি তো আমার ভালো মা ৷”

বলেই তাকে একসাইড দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম ৷ মা হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,,,,,,,,,,

“অরূপ কোথায় রে?”

“উনি কোথায় আমি তো জানি না ৷”

“সে কি তোকে বলে যায় নি?”

“তোমার ছেলে আমাকে বলে যাবে? এতো ভালো সে? আমাকে তো পাত্তাই দেয় না ৷ বলবে কি?”

“দেখ অরূপের সাথে তোর বিয়ে হয়েছে তাই সবকিছু ঠিক করে নেওয়ার দায়িত্বও তোদের ৷ অরূপকে বোঝা ৷ ছেলেটা জেনে শুনে কেন বিপদ বাড়াতে চাচ্ছে বুঝছি না ৷”

“আচ্ছা ওসব বাদ দাও তো ৷ আর বলো আজ বাড়িতে কী কী রান্না হবে?”

“কেন তুই রাঁধবি নাকি?”

“হুম চেষ্টা করবো ৷ ভাইয়া বলেছে যে ৷”

আমি আনমনেই বলে উঠলাম ৷ মা শব্দ করে হেসে বলে উঠলো,,,,,,,,

“পাগলি মেয়ে ৷ স্বামীকে ভাইয়া বলছিস?”

“উফ তোমরা না ৷ একটু তো সময় লাগবে আমার নাকি? আর তোমার ওই গুণধর ছেলে আমাকে তো মানেই না যে আমি তার বউ ৷”

“মেনে যাবে একদিন দেখিস ৷ আর শোন তোকে রাঁধতে হবে না ৷ হাত পা কেঁটে পরে বসে থাকবি ৷ তার থেকে ভালো তুই নিজের রুমে যা ৷”

“না আমি রান্না করবো ৷ তুমি বলোই না ৷ পারবো বললাম তো ৷ কেন এরকম করছো?”

“আচ্ছা বাবা ঠিক আছে ৷ নে এপ্রোনটা পরে নে ৷ তারপর আমি দেখিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি ৷”

বলেই একটা কুকিং এপ্রোন আমার দিকে এগিয়ে দিলো ৷ আমিও পরে নিলাম ৷

“বউ ভাতের আয়োজন করতে পারি নি ৷ অরূপ মানা করে দিয়েছে ৷ রাগ করিস না মা ৷”

“রাগ করবো কেন? আমার ভাগ্যে যা আছে তাই তো হবে ৷ বাদ দাও তো তুমি ৷ কি কি করতে হবে বলে দাও আমায় ৷”

সে বেশ কয়েকটা খাবারের নাম বলে দিলো তারপর যা যা লাগবে সেগুলোও এগিয়ে দিলো আমার দিকে ৷ কীভাবে কি করবো সবটা বলে দিলো আমাকে ৷ সে অনুযায়ী কাজ করতে লাগলাম আমি ৷ বাড়িতে কখনোই নিজের হাতে পানির গ্লাস অবধি নিয়ে খাই নি আমি আর সেই আমাকে আজ এতোগুলা রান্না করতে হচ্ছে ৷ সত্যি মূহুর্তের মধ্যেই সব কিছু বদলে যায় ৷ কাল সকাল পর্যন্ত আমি ছিলাম অবিবাহিত ৷ কিন্তু আজ হয়ে গেছি এই বাড়ির বউ ৷

বেখেয়ালী ভাবে কাজ করতে গিয়েই হাতের এক প্রান্তে ছুরি লেগে কেটে গেল ৷ শাড়ির আঁচল দিয়ে সেই জায়গাটা চেপে ধরলাম ৷ তারপর আবার কাজে মন দিলাম ৷ হাতে বেশি সময়ও নেই অলরেডি ০১ টা বেজে গেছে ৷ রান্নাগুলা তো শেষ করতে হবে আগে ৷ তাই হাতের বিষয়টা নিয়ে সময় নষ্ট না করে কাজ করতে লাগলাম ৷

_______________________

রান্না শেষে রুমে এসে বিছানায় বসে পরলাম ৷ মাথাটা প্রচুর ঘুরাচ্ছে ৷ কেটে যাওয়া হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে ওয়াশরুমে গিয়ে হাতটা ধুয়ে নিলাম ৷ এই বাড়িতে ফার্স্ট এইড বক্স আদো আছে কি না জানা নেই আমার ৷ ভালো মাকে বলতে গেলে ব্যস্ত হয়ে পরবে ৷ তার দরকার নেই ৷ নিচে যেতেই দেখি অরূপ বাড়িতে এসে পরেছেন ৷ কিন্তু ছিলটা কোথায় এতোক্ষন? কিছু জিজ্ঞেস করবো তার আগেই পাশ কাঁটিয়ে চলে গেলেন ৷

একটু পর নিচে নেমে উনি চেয়ার টেনে টেবিলে বসে পরলো ৷ আমি এক সাইডে দাঁড়িয়ে রইলাম ৷ একে একে সবাই এসে বসলো ৷ দীপ্ত আঙ্কেল মানে বাবা, অরূপের চাচী মানে ছোট মা আর আশা ৷ ভালো মা আমাকে চেয়ারে বসতে বললে অরূপ বলে উঠলেন,,,,,,,,

“ও কেন বসবে?”

“কেন বসবে মানে? খাবে না ও?”

মায়ের কথায় উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,,,,,,,

“ওভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে সবাইকে খাবার সার্ভ করে গিলতে বসো ৷”

সবার সামনে এভাবে না বললেও পারতেন ৷ তবুও কিছু বললাম না আমি ৷ মাকে ইশারায় বসতে বলে একে একে সবাইকে খাবার বেড়ে দিলাম ৷ অরূপ আমার দিকে তাকালেনও না একবারো ৷ নিচের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছেন উনি ৷ সবাইকে খাবার দেয়া শেষ হলে মা আমাকে টেনে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে প্লেটে খাবার দিতে দিতে বললো,,,,,,,,,,,,,,

“খেয়ে নে ৷ সকালে কিছু খাস নি ৷ অসুস্থ হয়ে পরবি ৷”

আমি একপলক অরূপের দিকে তাকালাম ৷ উনি আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলেন ৷ চোখাচোখি হয়ে গেল এতে ৷ সঙ্গে সঙ্গে চোখ ফিরিয়ে নিলাম ৷ আলতো হাতে প্লেটের ভাত নাড়াচাড়া করে যাচ্ছি ৷ তখনি একটা কথা শুনে চোখ তুলে তাকালাম অরূপের দিকে ৷ উনি আবার বললেন,,,,,,,,

“খাবার কে বানিয়েছে?”

“কে আবার? তোর বউ ৷ তুই বলে গেছিস আর ভাবি তোর কথা অমান্য করবে সেটা হয়?”

আশা বললো ৷ ওর কথায় উনি বললেন,,,,,,,,,

“তুই চুপ করে খা ৷ তোকে জিজ্ঞেস করি নি ৷ আর শ্রেয়া রান্না করেছে? এতো ভালো খাবার ও কীভাবে রাঁধবে?”

আমি চোখ মুখ কুচকে বললাম,,,,,,,,

“কেন না পারার কি আছে? আমি রান্না করতে পারি না? যদি সেটা ভেবে থাকেন তো দেখিয়ে দিলাম ৷”

“একা একা করো নি জানা আছে সেটা ৷”

বলেই খাওয়াতে মনোযোগ দিলেন ৷ আমি চুপ করে রইলাম ৷ কাঁটা হাতের জন্য খেতেও পারছি না ৷ শুধু সাদা ভাত নাড়াচ্ছি ৷ আবার খেতেও ইচ্ছা করছে না ৷ তাই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেই সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালো ৷ আমি একটা শুকনো হাসি দিয়ে বললাম,,,,,,,,,,

“পেট ভরে গেছে তাই ৷”

বলেই উপরে রুমের দিকে চলে এলাম ৷

এদিকে অরূপ শ্রেয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে খেতে লাগলো ৷ ওকে এরকম শান্ত থাকতে দেখে ওর বাবা ওকে বললো,,,,,,,,,,,,,

“তোমার মাথায় কি চলছে বলো তো?”

অরূপ মাথা তুলে ওর বাবার দিকে তাকালো ৷ কিছু বুঝতে না পেরে বললো,,,,,,,,,

“মানে? কী চলবে?”

“সেটা তো তুমি বলবে ৷ কোথায় গিয়েছিলে সকালে? আর বউ ভাতের আয়োজনও করতে দিলে না ৷ কি চাও তুমি?”

অরূপ রেগে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,

“তোমাদের কথা মেনে চলতে বাধ্য নই আমি ৷ আমার চাওয়ার কোনো গুরুত্ব দিয়েছো তোমরা? ওই মেয়েটাকে আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছো ৷ আর কি করতে হবে আমায়?”

“ঠিক ভাবে কথা বলো ৷ ও এই বাড়ির বউ তোমার বউ ৷ তাই এভাবে লাগাম ছাড়া কথা দ্বিতীয়বার মুখে আনবে না ৷ আরেকটা কথা কি যেন বললে? তোমার চাওয়ার কোনো গুরুত্ব দেই নি আমরা তাই না? তো মায়ার সাথে তোমার বিয়েতে রাজি কেন হয়েছিলাম?”

অরূপ মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে রাগে ফুসতে লাগলো ৷ অরূপের বাবা খাবার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,,,,,,,,,,

“যা ইচ্ছা করো ৷ কিন্তু মায়াকে এই বাড়িতে আমি আর এলাউ করবো না ৷”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে