#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__০২
#অদ্রিতা_জান্নাত
সবসময় শুনেছি বিদায়ের সময় মেয়েরা তার পরিবারের সবাইকে ধরে প্রচুর কান্নাকাটি করে ৷ কিন্তু আমি তার উল্টা ৷ কেন জানি না কান্না ভেতর থেকে আসছে না ৷ জোর করেও আনাতে পারছি না ৷ আম্মু আব্বু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ৷ কখনো কোনো জায়গায় আমি তাদেরকে ছাড়া একা থাকিনি ৷ জোর করে হলেও আমার সঙ্গে করে নিয়ে যেতাম তাদের ৷ না যেতে চাইলে কেঁদে কেটে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলতাম ৷ সেই আমি কিনা তাদের থেকে দূরে চলে যাচ্ছি তবুও চোখে পানি নেই? বিষয়টা হয়তো কারো কাছে বোধগম্য হলো না ৷ আবার তো ফিরে আসবো এই বাড়িতেই ৷ কেঁদে আর লাভ কি? অরূপ ভাইয়া তো আমায় ডিভোর্স দিয়েই দিবেন ৷ কেননা আমি নিজে ডিভোর্স চেয়েছি ৷
গাড়ি এসে থামলো একটা বাড়ির সামনে ৷ গাড়ি থামতেই ভাইয়া আমাকে ফেলে গাড়ি থেকে নেমে একা একাই ভিতরে চলে গেলেন ৷ একবার ফিরেও তাকালেন না আমার দিকে ৷ চোখের কোণে জমে থাকা পানিটা হাত দিয়ে আড়াল করে নিলাম ৷ দুইটা মেয়ে এসে আমাকে বলতে লাগলো,,,,,,,,
“আরে ভাবি চলো! ভাইয়া তো চলেই গেলো ৷ উফ আজকের দিনেও ভাইয়ার রাগ দেখাতে হবে ৷ কি হলো নামো?”
আমাকে টেনে গাড়ি থেকে বের করলো আশা ৷ অরূপ ভাইয়ার ছোট বোন আশা ৷ আশার পাশের মেয়েটা হয়তো ওর বান্ধবী ৷ আমাকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেল ওরা ৷ বাড়িটার বাহিরে আর ভেতরে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে ৷ সব নিয়ম কানুন মেনে বাড়ির ভিতরে পা রাখলাম ৷ আজ আমি এই বাড়ির বউ ৷ তবে সেটা ক্ষনিকের জন্য ৷ ভাবতেই চোখ ভিজে আসছে ৷ পাশ থেকে নয়না আন্টি (অরূপের মা) আমাকে একটা মহিলার দিকে ইশারা করে বললো,,,,,,,,,
“উনি অরূপের চাচী ৷ যা সালাম করে হালকা কথা বলে নে ৷ বেশি কিছু বলিস না ৷ উনি আবার শান্ত শিষ্ট গ্রাম্য মেয়ে বেশি পচ্ছন্দ করেন ৷”
আমি হালকা মাথা নাড়ালাম ৷ আন্টির সঙ্গে অনেক আগে থেকেই পরিচিত আমি ৷ উনি আমাকে নিজের মেয়ের মতোই দেখে ৷ তাই সবচেয়ে মধুর ভাষা ‘তুই’ করে সম্বোধন করে আমায় ৷ সামনে তাকিয়ে দেখি একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা সোফায় বসে আছেন ৷ মনে হচ্ছে বয়সে আন্টির থেকে অনেক বড় কিন্তু সম্পর্কে হয়তো তার ছোট ৷ দেখেই বেশ ধার্মিক মনে হচ্ছে ৷ ওনার সামনে গিয়ে আমি একটু নিচু হয়ে তার পা ধরে সালাম করলেই উনি আমাকে ধরে তার পাশে বসালেন ৷ উনি এক পলক সবার দিকে তাকিয়ে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,,,,,,
“তো এই হলো রূপের বউ?”
নয়না আন্টি মাথা ঝুলালেন ৷ মহিলাটি আমার মুখটা উঁচু করে ধরে বললেন,,,,,,,,,,
“বাহ! বেশ লক্ষীমন্তর বউ এসেছে তোর ঘরে ৷ তো মা নাম কি তোমার?”
হালকা শব্দে আমি বললাম,,,,,,,,,,
“শ্রেয়া”
“নয়ন বউমাকে দেখে রাখিস ৷ তোর ছেলের যা রাগ কি করবে, না করবে সে নিজেও জানে না ৷ কোন দিক দেখে যে ওই মেয়েটা (মায়া) কে ওর মনে ধরেছে…কে জানে? মেয়েটা চলে গিয়ে ভালোই করেছে আমার রূপের জন্য ৷”
বলেই মহিলাটি তার গলা থেকে একটা মোটা হার আমার গলায় পরিয়ে দিতে গেলেই আমি মাথা নিচু করে বলে উঠলাম,,,,,,
“কি করছেন? লাগবে না আমার এসব ৷”
“তুমি নতুন বউ ৷ আমাদের বংশের বড় বউ তুমি ৷ লাগবে না বললেই কি হবে বলো? এটা আমার আশীর্বাদ হিসেবে দিচ্ছি তোমায় ৷ ফিরিয়ে দিতে হয় না ৷ মন থেকে গ্রহণ করে নিতে হয় ৷”
বলেই তিনি আমার গলায় হারটা পরিয়ে দিয়ে বললেন,,,,,,,,
“বেশ মানিয়েছে ৷ শোনো তুমি আমাকে এখন থেকে ছোট মা বলে ডাকবে কেমন?”
আমি মাথা নাড়ালাম ৷ বেশ কিছুক্ষন এভাবে কথা বলার পর আশা আমাকে একটা রুমের সামনে নিয়ে এসে বললো,,,,,,,,,,
“এটা ভাইয়ার রুম ৷ আর এখন আজ থেকে এটা তোমারও রুম ৷ তুমি ভিতরে গিয়ে বসো ৷ আমি যাই হ্যাঁ?”
আমি মাথা নাড়াতেই ও দৌঁড়ে অন্যদিকে চলে গেল ৷ মেয়েটা একটু ছটফটানি টাইপের ৷ তবুও মনের দিক থেকে অনেক ভালো আর মিশুকে ৷ এই বাড়ির সবাই অনেক ভালো ৷ সহজ সরল আর শান্ত স্বভাবের ৷ কিন্তু অরূপ ভাইয়া কার মতো হয়েছে? কি জানি! এই বাড়ির মানুষের ব্যবহার দেখে বোঝাই যাচ্ছে না যে বিয়ের আসরে কনে বদল হয়ে গেছে ৷ তাদের দেখে একদম স্বাভাবিক মনে হচ্ছে ৷ তাতে অবশ্য ভালোই হয়েছে ৷ কিন্তু ভাইয়া তো মেনে নিবে না আমাকে ৷ রুমের দরজা খুলে ভিতরে চলে গেলাম ৷ বেশ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে ৷ চারপাশে ফুল, ক্যান্ডেল আর বেলুন দিয়ে রুমটাকে অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে ৷ কিন্তু এই রুমটা তো আমার জন্য না সাজানো হয়েছে মায়া আপুর জন্য ৷ কিন্তু আজ মায়া আপুর জায়গায় আমি ৷ যদি ওনার সঙ্গে আজ আপুর বিয়ে হয়ে যেত তাহলে তো মায়া আপু আজ আমার জায়গায়ই থাকতো ৷ ভাবতেই বুকটা ধুক করে উঠলো ৷
হালকা করে রুমের চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলাম ৷ তারপর বিছানার ঠিক মাঝখানে গিয়ে বসলাম ৷ ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখি ১০ টার বেশি বাজে ৷ চোখ বুজে আসছে আমার কিন্তু নয়না আন্টি বারবার করে বলে দিয়েছে ভাইয়া রুমে না আসা পর্যন্ত যেন জেগে থাকি ৷ তবে এভাবে বসে থাকতেও প্রচুর বিরক্ত লাগছে ৷ কিন্তু কিছু করার নেই ৷ জানিনা অরূপ ভাইয়া আসলে কি বলবে বা করবে! মাঝেমাঝে মনে হয় আজকের অরূপ আর আমার দেখা সেই প্রথম দিনের অরূপের মধ্যে কোনো মিলই নেই ৷ মনে পরে গেল সেদিনের কথা যেদিন প্রথম দেখা মাত্রই ভালো লেগে গিয়েছিল আমার উনাকে ৷
৷
৷
৷
৷
৷
“আরে আপনি কি কানা? আমার বই খাতা গুলো ফেলে দিয়ে মজা নিচ্ছেন আমার সাথে? একটু দেখে শুনে চলতে পারেন না?”
বলেই সামনে থাকা ছেলেটার দিকে তাকাতেই হা হয়ে গেলাম ৷ ছেলেটা ভ্রু কুচকে আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে এক এক করে সব বইগুলো তুলে আমার হাতে তুলে দিয়ে বললেন,,,,,,,,,,,,
“একটু দেখে শুনে চলাফেরা করবেন ওকে? এটা আপনার বাসা না এটা একটা রাস্তা ৷ সো আশেপাশে তাকিয়ে চলাফেরা করবেন ৷”
মানে ছেলেটা ইনডিরেক্টলি আমাকে কানা বলছে? কথাটা মাথায় আসতেই তেজি গলায় বলে উঠলাম,,,,,,,,
“আমাকে ইনডিরেক্টলি কানা বলছেন আপনি?”
ছেলেটা উঠে দাঁড়িয়ে নিজের গাঁয়ের জ্যাকেট ঝাড়তে ঝাড়তে বললো,,,,,,
“ইনডিরেক্টলি কেন বলবো? ডিরেক্টলি -ই বলেছি ৷ যদি মাথায় গোবর ছাড়া আর কিছু থেকে থাকে তো বোঝার কথা ৷”
আমি বইগুলো হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,
“গোবর আমার মাথায় না আছে আপনার মাথায় ৷ আপনি কি দেখে শুনে হাঁটতে পারেন নাই? মেয়ে দেখলেই গাঁয়ে পরতে মন চায়?”
“ও হ্যালো? বলুন ছেলে দেখলেই আপনার মতো মেয়েদের তাদের গাঁ ঘেষাঘেষি করতে মন চায় ৷ তাও আবার ছেলেটা যদি হয় আমার মতো এতো হ্যান্ডসাম৷”
নিজের জ্যাকেটের কলার ঝাকাতে ঝাকাতে কথাটা বললো ছেলেটা ৷ আমি একটা ভেংচি কেটে বললাম,,,,,,,,
“জিরাফের মতো লম্বা আর ভেড়ার মতো সাদা হলেই তাকে হ্যান্ডলাম বলে না ওকে?”
“হোয়াট?” (চেঁচিয়ে)
“ইয়াপ! আমার ক্লাস আছে পরে আবার ঝগড়াটা কন্টিনিউ করবো ৷ আপাততো এখানেই স্টপ থাকুক ৷”
বলেই ছেলেটাকে কিছু বলতে না দিয়ে দৌঁড়ে সেখান থেকে চলে এলাম আমি ৷ ক্লাসে ঢুকতেই মায়া আপুর সামনে পরলাম ৷ আমাকে দেখে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,
“এতোক্ষন লাগে এই কয়টা বই আনতে?”
“সরি ইয়ার! খুঁজতে খুঁজতে টাইম লেগে গেল ৷ তুই তোর ক্লাসে চলে যা ৷ পরে কথা হবে ৷”
“আচ্ছা ৷”
বলেই সে চলে গেল ৷ তখন আমি পড়ি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে আর মায়া আপু হচ্ছে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে ৷ ক্লাস শেষে রুম থেকে বের হতেই সকালের সেই ছেলেটার সামনে পরলাম ৷ আমাকে দেখেই পাশ কাটিয়ে চলে গেল ৷ ঠিক তখনি পেছন থেকে একটা আওয়াজ কানে এলো,,,,,,,
“অরূপ?”
পিছনে তাকিয়ে দেখি মায়া আপু ৷ সে আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে সেই ছেলেটার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,,
“একটু তো দাঁড়াবে নাকি? সেই কখন থেকে খুঁজে যাচ্ছি তোমায় ৷”
“আমি নিজেই তো খুঁজছি তোমায় ৷ ফোন কেন ধরছিলে না? কতবার ফোন করেছি জানো?”
“ওহ সরি ৷ ফোন সাইলেন্টে ছিল তাই শুনতে পাই নি ৷”
“ওকে চলো এখন ৷”
তাদের কথা শুনে মনে হলো একে অপরকে চিনে তারা ৷ এটাও মনে হলো তারা নিজেদের মধ্যে অনেকটাই ক্লোজ ৷ কেন জানিনা এই বিষয়টা খারাপ লাগলো আমার ৷ তবুও পেছন থেকে মায়া আপুকে ডাক দিলাম ৷ ওরা দাঁড়িয়ে পিছনে ঘুরে আমার দিকে তাকালো ৷ আমি ওদের সামনে গিয়ে মায়া আপুকে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,,,,
“কোথায় যাচ্ছিস? বাড়ি যাবি না এখন?”
মায়া আপু কিছু বলতে যাবে তার আগেই ছেলেটা বলে উঠলো,,,,,,,,,
“তোমরা দুজন দুজনকে চিনো? মায়া কে এটা?”
মায়া আপু হালকা হেসে বললো,,,,,,,,,
“ওহ ও আমার চাচাতো বোন শ্রেয়া ৷ এই কলেজে নতুন ভর্তি হয়েছে ফার্স্ট ইয়ারে ৷ আর শ্রেয়া ও অরূপ ৷ আমার বন্ধু ৷ অনার্সের স্টুডেন্ট ও ৷”
‘বন্ধু’ শব্দটা শুনে হালকা সন্দেহ হলো আমার ৷ তবুও বিষয়টা নিয়ে আর ঘাটালাম না ৷ স্বাভাবিকভাবেই বললাম,,,,,,,,,,,
“সরি ভাইয়া তখন আসলে…”
“বুঝেছি আমি সমস্যা নেই ৷ হতেই পারে ৷ মায়া তুমি কি বাসায় চলে যাবে?”
আমাকে না বলতে দিয়ে অরূপ ভাইয়া কথাটা বলে মায়া আপুর দিকে তাকালেন ৷ মায়া আপু এদিক ওদিক মাথা নাড়িয়ে বললো,,,,,,,,,,,
“না শ্রেয়া তুই চলে যা ৷ আমি পরে চলে যাবো ৷ ঠিক আছে?”
“আচ্ছা ৷”
ওনারা দুজন কথা বলতে বলতে সামনের দিকে চলে গেলেন ৷ আমি তাদের দিকে একবার তাকিয়ে থেকে বাড়ি যাওয়ার দিকে রওনা দিলাম ৷
ওই দিনের পর থেকেই প্রতিদিন অরূপ ভাইয়ার সাথে কথা হতো আমার ৷ তবে তার সাথে মায়া আপুকে দেখে খারাপও লাগতো ৷ উনি সবসময় আমার সঙ্গে নরমাল বিহেভ করতেন ৷ হেসে হেসে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মজা করে কথা বলতেন ৷ দেখতে দেখতে ছয় মাস চলে যায় ৷ আর এই ছয় মাসে ওনার প্রতি আমার ভালোলাগা গুলো গভীর থেকে গভীর হয়েছে ৷ একসময় ভালোবেসে ফেলেছি আমি ৷ ওনার ব্যবহার দেখে মনে হতো উনি আমায় ভালো না বাসলেও হয়তো পচ্ছন্দ করেন ৷ কিন্তু আমার ভাবনা গুলো ভুল প্রমানিত হয় সেদিন ৷
যেদিন আমি নিজের মনের কথা গুলো সাহস করে অরূপ ভাইয়াকে বলতে চেয়েছিলাম ৷ কলেজে গিয়ে ওই দিন ভাইয়াকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে তার বন্ধুদের কাছ থেকে উনি কোথায় তা জেনে নিয়েছিলাম ৷ কলেজ বিল্ডিংয়ের ছাদে চলে গেলাম আমি ৷ ছাদে গিয়ে দেখি অরূপ ভাইয়া হাতে গোলাপের তোড়া নিয়ে মায়া আপুর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন ৷ আমি স্তব্ধ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানে ৷ তারপর দৌঁড়ে কলেজের বাহিরে চলে গেলাম ৷
সেদিনের পর থেকেই তাদের দুজনের মধ্যে থেকে সরে গিয়েছিলাম আমি ৷ কোনো কথা বলতাম না তাদের সাথে ৷ দেখাও করতাম না ৷ সবসময় এড়িয়ে চলতাম ৷ মায়ার আপুর ইন্টারের এক্সাম শেষ হলে অরূপ ভাইয়ার সঙ্গে বিয়ের ডেট ফিক্সড হয় ৷ আমিও বাঁধা হয়ে দাঁড়াই নি তাদের মাঝে ৷ কিন্তু তবুও কেন ভাইয়া আমাকে খালি দোষী করে সেটার কারণও জানা নেই আমার ৷ আপুও বা কেন পালিয়ে গেল সেটাও জানি না ৷
৷
৷
৷
৷
৷
রাত ০২ টার উপরে বাজে ৷ কিন্তু অরূপ ভাইয়ার আসার কোনো নাম নেই ৷ একটু নড়েচড়ে স্থির হয়ে বসলাম ৷ হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে দরজার দিকে তাকালাম ৷ বুকের মধ্যে ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেছে ৷ যদিও উনি আমাকে কখনোই মেনে নিবেন না ৷ আর এখন হয়তো রাগারাগি করবেন উনি ৷ আমি বিছানা থেকে নেমে তার কাছে এগিয়ে যেতেই উনি আমার মুখের উপর একটা কাগজ ছুড়ে মারলেন ৷ আমি চোখ মুখ কুচকে তাকালাম তার দিকে ৷ তার চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে মনে হচ্ছে ৷ এতোটাই রেগে আছেন উনি ৷ নিচের দিকে তাকিয়ে কাগজটা হাতে তুলে নিতেই অরূপ ভাইয়া বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,,
“ডিভোর্স চেয়েছিলে না? এই নাও তোমার ডিভোর্স পেপার ৷”
চমকে তাকালাম তার দিকে ৷ চোখ জোড়া ভিজে আসছে বারবার ৷ উনি আবার বললেন,,,,,,,,
“কিছু কিছু কাজ আমি আগে থেকেই করে রাখি ৷ বিয়েতে তো এমনি এমনি রাজি হই নি ৷ ডিভোর্স পেপার রেডি করে তার পরেই হ্যাঁ বলেছি ৷ আর দেখো এটা এখন পেয়েও গেলে তুমি ৷ কী বলো তো? কোনো কাজ ফেলে রাখা পচ্ছন্দ না আমার ৷ এখন বের হও আমার রুম থেকে ৷”
বলেই আমার হাত ধরে টেনে রুম থেকে বের করে দিলেন ৷ মুখের উপর দরজা লাগাতে গেলেই আমি হাত দিয়ে দরজা আটকে ধরলাম ৷ উনি ভ্রু কুচকে চেয়ে রইলেন আমার দিকে ৷ আমি দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,,
“আমাকে বাহিরে যেতে বললে কোথায় যাবো অামি এখন? সবাই তো খারাপ ভাববে ৷”
“সেটা তোমার ব্যাপার ৷ রুম থেকে বের হও তুমি ৷”
“ডিভোর্স পেপার দিয়েছেন দেখে কি হয়েছে? ডিভোর্স কি হয়েছে? হয় নি তো? না হওয়া পর্যন্ত আমি এখানেই থাকবো ৷”
“শুধু তিন মাস ৷ তিন মাস পর ডিভোর্স দিব আমি তোমায় ৷ এমনকি তুমিও ৷ এই তিন মাস আমার প্রত্যেকটা অত্যাচার সহ্য করার জন্য তৈরী থাকো ৷ পারলে আরো তাড়াতাড়ি করতাম কিন্তু এসব বিষয়ে একটু হলেও সময় লাগে ৷ সময় শেষ হয়ে গেলে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে তুমি ৷ আর এই তিন মাসের মধ্যে মায়াকেও খুঁজে বের করবো আমি ৷ তোমাকেও দোষী প্রমানিত করবো ৷”
বলেই উনি আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে ব্যালকনিতে নিয়ে গেলেন ৷ তারপর মুখের উপর ব্যালকনির গ্লাস লাগিয়ে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন ৷ খাটের মধ্যে সাজানো সব ফুলগুলো ছিড়ে ফেলে দিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পরলেন উনি ৷ হয়তো আজ থেকেই ভালো থাকার দিন শেষ আমার ৷ ব্যালকনির এক কোনায় গুটিশুটি মেরে বসে রইলাম ৷ বাহির থেকে ঠান্ডা বাতাসে কেঁপে উঠছি আমি ৷ বারবার চোখ ভিজে আসছে আমার ৷ ভালোবাসার মানুষটার এতো কঠিন রূপ আমাকে শেষ করে দিচ্ছে ৷ তিন মাস সময় আমার কাছে ৷ এই তিন মাস আমি এই বাড়ির বউ হয়ে থাকবো ৷ অরূপের স্ত্রী হয়ে থাকবো ৷ তারপর তো আমরা আলাদা হয়ে যাবো ৷ তখন অরূপের থেকে দূরে চলে যেতে হবে আমায়!! হয়তো অনেক দূরে!!
৷
৷
৷
৷
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,