ভালোবাসবে তুমিও পর্ব-০১ | বাংলা রোমান্টিক ধারাবাহিক গল্প

0
3050

#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__০১ (সূচনা পর্ব)
#অদ্রিতা_জান্নাত

“তোর মতো একটা মেয়েকে বিয়ে করবো আমি? সিরিয়াসলি? জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছিস? নাকি বিপদের সময় সাহায্য করে নিজেকে মহান প্রমাণিত করছিস, কোনটা? তোর কাছ থেকে এর বেশি আর কি-ই বা পাওয়া যেতে পারে? আর কত নিচে নামবি তুই? ছিহহ তোকে দেখলেই প্রচুর ঘৃণা হয় আমার ৷”

অরূপ ভাইয়ার মুখে এসব কথা শুনে পাথরের মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি ৷ তার চোখে মুখে আমার জন্য ঘৃণা দেখে নিজেকে নিজেরই শেষ করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে ৷ অরূপ ভাইয়া আমাকে ঝাঁকিয়ে চেঁচিয়ে বললো,,,,,,,

“বল তোর বোন কোথায়? কোথায় সরিয়েছিস ওকে? মায়া কোথায় বল?”

কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,,,,,,,,

“ম…মায়া আপু কোথায় জজজানি না আমি ৷”

আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে অরূপ ভাইয়া বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“তোর মতো বোন থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো ৷ নিজের বোনের বিয়ের দিন নিজের বোনকে কিডন্যাপ করে এসব বড় বড় কথা বলতে লজ্জা করে না তোর? ওহ তোর তো লজ্জা নামক জিনিসটাই নাই ৷ থাকলে কি তুই অন্য ছেলেদের সাথে বেড…”

“চুপ! একদম চুপ! আমার ব্যাপারে আপনাকে নাক গলাতে বলেছে কে? আমার যা ইচ্ছা তাই করবো আমি ৷ তাতে আপনার কি?”

তাকে বলকে না দিয়ে চেঁচিয়ে বললাম আমি ৷ অরূপ ভাইয়া তাচ্ছিল্য স্বরে বললো,,,,,,,,,,,

“তোর যা ইচ্ছা কর ৷ তাতে আমার কোনো কিছুই যায় আসে না ৷ তাই বলে তুই মায়াকে আজকের দিনে সরিয়ে দিবি?”

“কত বার বলবো? মায়া আপুকে সরাই নি আমি ৷ আমি জানি না আপু কোথায় আছে?”

অরূপ ভাইয়া পাশের টেবিল থেকে একটা ফুলদানি নিয়ে ঠাস করে ফেলে দিলেন ৷ তারপর আমার দিকে আঙ্গুল তুলে বললেন,,,,,,,,,,

“তোকে দেখে নিব আমি ৷ মায়াকে তুই কিডন্যাপ করিয়েছিস সেটা প্রুভ করে দিব আমি ৷ আর হ্যাঁ বিয়ে করবো? তাও তোকে? মরে গেলেও না ৷”

বলেই হনহনিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন উনি ৷ বিছানায় ধপ করে বসে পরলাম আমি ৷ সব মিথ্যা অপবাদ কেন আমার ঘাড়েই পরে? কিছু না করেও কেন সবকিছুর দোষী আমিই হই? এই মানুষটা কেন ঘৃণা করে আমায়? একটুও কি বুঝতে চায় না? ভালোবাসি বলেই কি এত অত্যাচার সহ্য করে নিতে হবে আমায়? নিজের ভালোবাসা অন্যের হাতে তুলে দিতে গিয়েও সেই আমিই খারাপ হয়ে গেলাম? কেন হচ্ছে আমার সাথে এসব?

আজ মায়া আপুর বিয়ে ছিল ৷ সম্পর্কে ও আমার চাচাতো বোন ৷ মায়া আপুর মা অনেক আগেই মারা গেছে ৷ আর ওর বাবা দেশের বাইরে কাজের জন্য থাকে ৷ আমার ০১ বছরের বড় ও ৷ সবসময় নিজের বোনের মতোই ভেবেছি ওকে ৷ কিন্তু ও ভাবতে পারে নি ৷ এতো বড় একটা বিপদে আমায় একা ফেলে চলে গেল ৷ অরূপ ভাইয়া আর মায়া আপু দুজন দুজনকে ভালোবাসে ৷ আমি বাঁধা হয়ে দাঁড়াইনি তাদের মাঝে ৷ সরে এসেছিলাম ৷ তবুও দোষী হতে হলো আমাকেই ৷

বিয়ের দিন বিয়ের আসর থেকে যে এভাবে পালিয়ে যাবে কে জানতো? আর তার দোষও যে আমায় নিতে হবে ভাবতেও পারি নি আমি ৷ নিচে চেঁচামেচির আওয়াজ পেয়ে দ্রুত নিচে চলে গেলাম ৷ নিচে গিয়ে দেখি অরূপ ভাইয়া আর তার বাবা ঝগড়া করছে নিজেদের সাথে ৷ আমি দৌঁড়ে তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম ৷ অরূপ ভাইয়া রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,

“শ্রেয়াকে বিয়ে করবো না আমি ৷ তোমাদের মান সম্মানের জন্য নিজের জীবনটা নষ্ট করতে পারবো না ৷ আমি মায়াকেই বিয়ে করবো ৷”

দীপ্ত আঙ্কেল (অরূপের বাবা) তার ছেলের কথার উত্তরে বললেন,,,,,,,,,,

“তোমার মত জানতে চাই নি আমি ৷ খুব তো বলেছিলে মায়াকে বিয়ে করবে ৷ কি হলো শেষমেষ? আমাদের পরিবারকে ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেল সে ৷ ওই মেয়েটার নাম তোমার মুখে শুনতে চাইনা আমি ৷”

অরূপ ভাইয়া রেগে বললেন,,,,,,,,

“মায়া চলে যায় নি ৷ এই শ্রেয়াই ওকে কিডন্যাপ করিয়েছে ৷ তুমি…”

“তোমাকে বলেছি না…?”

দীপ্ত আঙ্কেলের কথার মাঝেই আমি বলে উঠলাম,,,,,,,,,

“আঙ্কেল? আমার ওনার সঙ্গে কিছু কথা আছে ৷ আলাদা কথা বলতে পারি আমরা?”

“তোমার সঙ্গে আমার কোনো কথা নেই ৷”

চোখ মুখ কুচকে রাগী স্বরে কথাটা বললো অরূপ ৷ আমি বললাম,,,,,,,,

“আপনাকে জিজ্ঞেস করি নি আমি ৷ আঙ্কেল?”

দীপ্ত আঙ্কেল অরূপের দিকে তাকিয়ে বললো,,,,,,,,,

“যাও শ্রেয়ার সাথে ৷”

“যাবো না আমি ৷” (অরূপ)

আমি অরূপ ভাইয়ার হাত ধরে সবার মাঝেই টেনে নিয়ে এলাম একটা রুমে ৷ তাকে রুমে ঢুকিয়ে দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আমি বললাম,,,,,,,,,

“সমস্যা কি আপনার?”

“হু দ্যা হেল আর ইউ? আমাকে টেনে আনার মানে কি? সরো সামনে থেকে ৷”

হাতে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে বললাম,,,,,,,

“বিয়েটা করবেন কি করবেন না?”

উনি শান্ত স্বরে বললেন,,,,,,,,,

“করবো না!”

“বিয়েটা না করলে আমি মায়া আপুকে মেরে ফেলতে বাধ্য হবো ৷”

“ওহ এখন আসো আসল কথায় ৷ খুব তো বলছিলে মায়াকে কিডন্যাপ করো নি তুমি ৷ তাহলে এখন বলছো কেন যে মায়াকে মেরে ফেলবে তুমি?”

আমি আশেপাশে তাকাতে তাকাতে বলে উঠলাম,,,,,,,,,,

“ইয়েস বিয়েটা না করলে আপনার সো কল্ড প্রেমিকাকে মেরে দিব আমি ৷ এখন ইচ্ছেটা আপনার ৷ তো কি করবেন?”

“বাইরে গিয়ে বলে দিব সবাইকে ৷”

“ওহ রিয়্যালী বিশ্বাস করবে কেউ? করবে না তো? তাহলে রাজি হয়ে যান ৷ নিজের পরিবারের সম্মান বাঁচাতে ৷”

আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে রুমের বাহিরে যেতে নিলেই আমি বললাম,,,,,,,

“রাজি হয়ে যান ৷ বিয়ের পরে নাহয় ডিভোর্স দিয়ে দিয়েন আমাকে ৷ আপাততো এখন বিয়েটা করতেই হবে আপনাকে ৷”

অরূপ ভাইয়া একবার আমার দিকে তাকিয়ে রেগে চলে গেলেন বাহিরে ৷ ফ্লোরে বসে পরলাম আমি ৷ দুই পরিবারের সম্মান বাঁচাতে আজ আমায় আবার মিথ্যা কথা বলতে হলো ৷ সবার ভালো করতে গিয়ে নিজেকেই খারাপ প্রমানিত করতে হচ্ছে আমায় বারবার ৷ ভালোবাসার মানুষটার মুখে ‘ঘৃণা’ নামক শব্দটা বুকে সোজা তীরের মতো লাগে ৷ কেন এতো ঘৃণা করে আমাকে অরূপ ভাইয়া?

“শ্রেয়া?”

কারো গলার আওয়াজে চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালাম ৷ পিছনে তাকিয়ে দেখি আম্মু দাঁড়িয়ে আছে ৷ অামার কাছে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,

“কাঁদছিস কেন?”

“আআসলে… ও কিছু না ৷ ভাইয়া রাজি হয়েছে?”

“হ্যাঁ রে মা ৷ রাজি তো হয়েছে কিন্তু তুই সত্যি এই বিয়েটা করবি?”

“না করার কি আছে আম্মু?”

“না কিছু নাহ ৷ রেডি হয়ে নে ঝটপট ৷ এক্ষুনি তো আবার নিচে নিয়ে যেতে হবে তোকে ৷ হাতে সময়ও নেই বেশি ৷”

“হুম ৷”

“মায়া কেন এরকম করলো বল তো?”

“বাদ দাও আম্মু ৷ আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি ৷”

আম্মু চলে গেলে দুইটা মেয়ে এসে আমার গায়ের গয়না গুলো খুলে ভারী কয়েকটা গয়না পরিয়ে দিল ৷ চোখে কাজলের কালি যেটা লেপ্টে গিয়েছিল সেটা ঠিক করে দিল আর কপালে একটা টিপ দিয়ে মাথায় ওড়না দিয়ে ঘোমটা দেওয়া হলো ৷ মেরুন কালারের লেহেঙ্গা পরেছিলাম আমি ৷ সেটা আর চেঞ্জ করা হয়নি ৷ একটু পর নিচে নিয়ে গিয়ে আমাকে অরূপ ভাইয়ার পাশে বসানো হলো ৷ ওনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি রাজি নন এই বিয়েতে ৷ কিন্তু ভাগ্যের জোরে বিয়েটা একপ্রকার বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছে ওনাকে ৷ জানিনা এই ভাগ্য আবার আমাকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে!!

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে