#ভালেবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_41
_________________
” পূর্ণা আপু তোমার একটা নাম্বার ওদের হাতে চলে গেছে! ইমিডিয়েটলি তোমার নাম্বার টা বন্ধ করে দিতে হবে নয়তো ওরা তোমার লোকেশন বের করে ফেলবে ”
এইটুকু মেসেজ পড়ে তাহরিম ভ্রু কুঁচকালো। বিছানায় লেপটপ নিয়ে কাজ করছিলো তাহরিম আর আমি ওয়াসরুমে, হঠাৎ মেসেজ টোন বাজায় তাহারিম ঘাড় ঘুরিয়ে মোবাইলের দিকে তাকালো, এমন একটা নোটিফিকেশন দেখে তাহরিম কৌতুহল বশত মেসেজ টা অপেন করলো। এটা ঠিক বিনা অনুমতি তে কারো পার্সোনাল জিনিস ধরা ঠিক না তবুও তাহরিম ধরলো।
তাহরিম তালুকদার আর কিছু না ভেবে রিপ্লাই মেসেজে লিখলো,
” কোন নাম্বারের কথা বলছো? আমার তো অনেক নাম্বার ই ”
তাহরিম এটা লিখে চুপ করে বসে রইলো, সে ভাবছে পূর্ণা কি তার কাছে কিছু লুকাচ্ছে? সে কি আদৌও জার্নালিস্ট তো? হাজারো অহেতুক প্রশ্ন এসে ভর করতে লাগলো তাহরিম।
প্রায় মিনিট দুয়ের মাঝেই পুনরায় মেসেজ টোন বেজে উঠলো, তাহরিম মেসেজ টা অপেন করে ভ্রু কুঁচকালো।
” আপু ওই যে আপনার হাইড নাম্বার যেটা ওইটা, 019******** এটা ”
তাহরিম ভ্রু কুচকে নাম্বার টাই দেখছে! কেন জানি তার নাম্বার টা ভীষণ পরিচিত মনে হচ্ছে, কোথায় যেন নাম্বার টা দেখেছে,
ভাবলো, যদি পরিচিত হয় তাহলে নিশ্চয় ই নিজের মোবাইলে সেইভ থাকবে।
কথা টা চিন্তা করে তড়িঘড়ি করে নিজের ফোন বের করে নাম্বার টা টুকে নিলো।
পুরো নাম্বার টা টুকতেই স্ক্রিনে ভেসে আসলো একটা নাম ” অপরিচিতা ”
তাহরিম ভ্রু কুঁচকে ভাবতে লাগলো এই অপরিচিতা টা জানি কে? হঠাৎ মনে হলো ঠিক এই নাম্বার থেকেই তার ফোনে মেসেজ আসতো বিভিন্ন সতর্ক বার্তা। তার মানে এটা পূর্ণার কাজ, কিন্তু কথা হলো এসব কথা পূর্ণা জানতো কিভাবে?
পূর্ণা কি আসলেই জার্নালিস্ট নাকি অন্য কেন পেশায় আছে?
” আপনি আমার ফোন দিয়ে কি করছেন মন্ত্রী সাহেব? কেউ ফোন করেছিলো বুঝি? ”
ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে চুল মুছতে মুছতে কথা টা বললাম, উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ফোন টা খাটের উপর রাখলো,
আমি বারান্দায় গিয়ে তোয়ালে টা রেখে বিছানায় এসে বসলাম,
” কি হলো কথা বলছেন না কেন? কেউ ফোন দিয়েছিলো? ”
” নাহ্ ”
” ওহ আচ্ছা ঠিক আছে, আপনি বসুন আমি নিচে গেলাম ”
কথাটা বলেই আমি উঠে দাড়িয়ে চলে আসতে নিলে হঠাৎ উনি আমার পিছনে থেকে ডেকে উঠলেন,
” পূর্ণা দাঁড়াও ”
আমার পা থমকে গেলো, তৎক্ষনাৎ পিছনে ফিরে তাকালাম।
” কিছু বলবেন? ”
” তুমি কি সত্যি ই জার্নালিস্ট নাকি অন্য কোন প্রফেশনে আছো? ”
তাহরিম তালুকদার এর কথা শুনে আমি খানিকটা চমকে উঠলাম,
আমতাআমতা করে বললাম,
” হহঠাৎ এই প্রশ্ন? আপনি তো জানেন ই আমি একজন সাংবাদিক তাহলে? ”
” হুম বুঝতে পেরেছি ”
উনি নিজের ফোন টা অন করে কিছু একটা বের করে আমার দিকে তাক করলো,
আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে দেখি একটা নাম্বার, কিন্তু যখন ই নাম্বার টা খেয়াল করলাম আমার মাথায় যেন আসমান ভেঙে পড়লো, একটা বড়ো সরো ঢুক গিলে উনার দিকে তাকালাম,
উনি এক ভ্রু উঁচু করে আমার দিকে ই তাকিয়ে আছে,
আমি তাকানো মাত্র ই উনি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
” কি? এই নাম্বার টা চেনো? ”
আমি চমকে উঠলাম, এখন কি বলব আমি? এটা যে আমার নাম্বার!
আমি কোন কথায় বলছি না।
উনি মুচকি হেসে বললেন,
” জানো এই নাম্বার থেকে অনেক বার আমাকে সতর্ক বার্তা পাঠানো হ’য়েছে। আমি অনেক বার ট্রাই করেছি ব্যক্তি টি কে তা জানার জন্য কিন্তু তার হদিস আমি পাই নি, যদিও চাইলে আমি ঠিক ই বের করতে পারতাম কিন্তু আমি ইচ্ছে করে ই করি নি ”
আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি,
আমাকে চুপ থাকতে দেখে তাহরিম তালুকদার হাসলো,
” আমি জানি এটা তোমার নাম্বার! আমি এও জানি তুমি শুধু নামে একজন সাংবাদিক, তবে তোমার আসল পরিচয় টা ও আমার কাছে অজানা নয়, মিস মিফতাহুল পূর্ণা ”
আমি আবারো চমকে তাকালাম উনার দিকে,
উনি জানতেন আমি কে?
আমার অবাক হয়ে তাকানো দেখে উনি হাসলেন,
” আমি কি ঘোড়ার ঘাস কেটে মন্ত্রী হয়েছি? ঘটে একটু তো বুদ্ধি আছে আর এতো এতো কুটনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে টিকে থাকতে হলেও তো বুদ্ধি লাগবে তাই না? ”
আমি মাথা নাড়ালাম।
উনি আবারও বলতে শুরু করলো,
” তোমার পেশা সম্পর্কে আমি অনেক আগে থেকে ই অবগত , প্রধান গোয়েন্দা অফিসার আপনি সেটা আমি জানি, কখন থেকে জানি বলুন তো? ”
আমি আনমনে ই বলে উঠলাম,
” কখন? “.
” যেদিন আপনি আর পূর্ণা মিস্টার মিয়াজি কে ধরতে গিয়েছিলেন ঠিক সেদিন থেকে, আপনার হাবভাবে আমার মোটেও একজন সাংবাদিক মনে হয় নি, কারণ একজন সাংবাদিক নিঃসন্দেহে সাহসী তবে তারা এসব দুঃসাহসিক কাজ করবে না, সেদিন খোঁজ নিয়ে ই জানতে পারি আমার বউ একজন গোয়েন্দা অফিসার। সেদিন বেশ অবাক হয়ে ছিলাম, এমন বাচ্চা একটা মেয়েকে এত বড় পদ কেন দিলো যেখানে এতো এতো সিনিয়র মানুষ আছে! পরে বুঝলাম আমার বউয়ের ঘটে সব টা এখন আর গোবর নেই এখন তা পঁচে জৈব সার হয়ে যাচ্ছে , সব ই আমার সাথে থাকার ফল,
একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য তাই না? ”
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম, লোকটা কি আমার প্রসংশা করলো নাকি অপমান করলো ঠিক বুঝতে পারলাম না।
আমি আঙুল উচিয়ে বললাম,
” শুনোন! আমাকে অপমান করার চেষ্টা ও করবেন না, ফলাফল ভালো হবে না বলে দিচ্ছি! ”
তাহরিম ভ্রু কুঁচকে বলল,
” তা কি করবে শুনি? ”
” দেখুওওন..
” দেখাও”
তাহরিমের শান্ত কন্ঠ শুনে আমি হকচকিয়ে উঠলাম,
পরবর্তী তে নাক মুখ কুচঁকালাম.
” ছিইই অসভ্য কোথাকার! ”
বলেই নাক মুখ কুঁচকে বের হয়ে গেলাম রুম থেকে, পিছনে থেকে শুনতে পেলাম, তাহরিম তালুকদার এর এতক্ষণ চেপে রাখা হাসির শব্দ।
আমার মুখে ও অজান্তেই ফুটে উঠলো হাসির রেখা,
আমি হাঁটতে হাঁটতে মা বাবার রুমের সামনে আটকে গেলাম,
” মা আসবো? ”
ভেতর থেকে উত্তর এলো,
” এসো ”
আমি ভেতরে ঢুকতেই দেখলাম, মা বসে বসে বই পড়ছে, একটা মানুষ এতো বই কিভাবে পড়ে আমি ঠিক জানি না, সারাদিন ই কি কেউ পড়তে পারে না কি? হউক সে টা গল্পের বা উপন্যাস টাইপ তবুও তো।
আমাকে দেখা মাত্র ই মা বইটা অফ করে উঠে বসলো,
” বসো পূর্ণ ”
আমি গিয়ে মা এর সামনে বিছানার উপর আসন পেতে বসলাম,
” কি হয়েছে মুড অফ নাকি পূর্ণ? ”
আমি মুখ গোমড়া করে ই বললাম,
” নাহ্”
” উহুম আমার তো মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে! তাহরিম কিছু বলেছে? ”
” মা জানো তোমার ছেলে সারাক্ষণ আমার পিছনে লেগে থাকে আর খোঁচাতে থাকে, আমাকে খোঁচা দেওয়ার একটা অপশন ও সে মিস করে না, বলো তো কেমন ডা লাগে? ”
আমার কথা শুনে মা বেশ সিরিয়াস হয়ে বলল,
” ঠিক ই তো, কাজ টা একদম ঠিক হচ্ছে না, আচ্ছা আমি তাহরিম কে বলব নে যে আমার মেয়ের সঙ্গে আর এমন না করতে ”
আমি মুচকি হাসলাম।
” আমার নামে আর কি কি বিচার আছে সব বলো আম্মু কে ”
পিছনে থেকে কারো কন্ঠ শুনতে পেয়ে আমি আর আম্মু পিছনে তাকালাম।
তাহরিম দরজার মধ্যে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে বুকের উপর হাত দুটো ভাজঁ করে ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি লাফ দিয়ে আম্মুর সাইডে চলে গেলাম, কখন জানি পিছনে থেকে এসে মাথায় ঠাস করে মারে,,,
চলবে….
#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_42
_________________
” তাহরিম তুমি পূর্ণ কে এত জ্বালাও কেন হুম,? আমার মেয়েটা কত ভালো একটা মেয়ে আর তাকে তুমি জ্বালাও, কাজ টা কি তুমি ঠিক করো? ”
তাহরিম দু পা সামনে এগিয়ে আসলো, ভ্রু কুঁচকে চোখ দুটো ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” আমি তোমাকে জ্বালায়?
কিছু টা থেমে মাথা এলিয়ে বলল,
” ঠিক আছে আর জ্বালাব না, কথাটা মনে রাইখো, মনে থাকে যেন মিস পূর্ণা! পরে আবার কথা ঘুরাবা না কিন্তু ”
বলেই বাঁকা হেসে চলে গেলো রুম থেকে। আমি ভেবলার মতো তাকিয়ে আছি তার যাওয়ার দিকে!
এক পলক মায়ের দিকে তাকাতেই দেখলাম মা ঠোঁট টিপে হাসছে, আমি তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে নেমে দৌড়ে নিজের রুমে এসে দেখি উনি ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবির বোতাম লাগাচ্ছে। আমাকে দেখে ও যেন দেখছে না এমন ভাব।
আমি দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে ওনার পিছনে পিছনে ঘুরছি। মানে উনি যেখানে ই যাচ্ছে আমি ওনার পিছনে পিছনে, রাগ করেছেন মশাই তাই ভাবছি কি করা যায়, বিচার দেওয়া টা মনে হয় ঠিক হয় নি!
আমি কাঁদো কাঁদো দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
” কথা বলছেন না কেন আমার সাথে? ওওওই মন্ত্রী সাহেব ”
উনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল গুলোতে হাত চালাতে চালাতে বলল,
” কেউ একজন বলেছিলো আমি নাকি তাকে জ্বালাই তাই আজ এখন এই মূহুর্তে থেকে আর জ্বালাবো না ”
বলেই উনি ড্রয়ার থেকে ঘড়ি বের করে পড়তে পড়তে আয়না দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” কারো যদি নিজের নখ কামড়ানো শেষ হয় তাহলে আমার নখ গুলোও বড় হয়েছে, চাইলে ধার হিসেবে দিতে পারি নখ গুলো ”
আমি নখ কামড়ানো অফ করে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
” হে? কি বললেন? নখ ও কি ধার দেওয়া যায় না কি? ”
আমার কথার পাত্তা না দিয়ে পকেটে হাত দিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে গেলো, বলেও গেলো না কোথায় গেলো!
বিরবির করে বললাম,
” আহহ মরণ, ঢং দেখলে বাঁচি না বাপু, কিসের এতো ভাব রে তোর, আসছে কোথাকার কোন মহারাজা উনাকে আমার সালাম করে চলতে হবে, খাটাশ কোথাকার! নিজেকে কি যে মনে করে, পূর্ণার সাথে ভাব দেখাতে আসছে, আমি আলাভোলা মেয়ে বলে এই ব্যাটার সংসার করছি নয়তো এই ঝগড়ুটের সংসার কোন মেয়েই করতো না, নিতান্তই আমি নরম মনের মেয়ে আর বোকা বলে! ”
পরবর্তী তে নিজের মনকে প্রশ্ন করলাম,
” আমি কি আদৌও বোকা আর আলাভোলা?”
মন উত্তর দিলো,
” অবশ্যই তুই বোকা আর একটা ভদ্র, শান্ত আর ইনোসেন্ট একটা মেয়ে! ”
পশ্চিমে সূর্য টা ঢলে পড়েছে সেই কখন, আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছে আকাশের ওপারে, অস্তমিত সূর্যের দিকে ই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি, অদ্ভুত কারণে এই সময় টা আমার ভীষণ ভালো লাগে।
হালকা বাতাস দোলা খেয়ে যাচ্ছে শরীরে, পাখি রা নিজেদের নীড়ে ফিরে যাচ্ছে, মাঝে মাঝে ভেসে আসছে কিচির মিচির শব্দ। আলতো হাসলাম।
সেই যে ভাব দেখিয়ে গেলো মন্ত্রী সাহেব এখনো পর্যন্ত একটা খোজঁ ও নিলো না, বাড়ি তে যে একটা বউ ফেলে রেখে গেছে সেই খেয়াল কি তার আছে?
হাতে থাকা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছু ক্ষন। ফোন দিবো নাকি দিবো না, দোটানায় পড়ে গেলাম, পরবর্তী তে মন কে শক্ত করে, ডায়াল করলাম মন্ত্রী সাহেব এর নাম্বারে..
তাহরিম তখন পার্টি অফিসে, একটা মিটিং শেষ করে মাত্রই বসলো, সামনে মেয়র নির্বাচন, প্রায় প্রতিদিন ই তার নিকট বিভিন্ন পার্টির লোক এসে ভীড় করে।
আপাতত তার সামনেই বসে আনোয়ার হোসেন, এইবার মেয়র পদে দাড়াবে সে, তাহরিম ব্যক্তিগত ভাবে লোকটা কে বেশ একটা পছন্দ করে না, লোকটা বেশ ধুরন্ধর প্রকৃতির যা তাহরিমের মোটেও পছন্দ না।
” মিস্টার আনোয়ার আপনি আমার থেকে বয়সে অনেক বড়, আমি আপনাকে সম্মান করি, রাজনীতিতে ও আমার আগেই আপনার আগমন তাই বলে এই ভাববেন না আপনার সকল অন্যায় প্রস্তাব আমি গ্রহন করবো, আপনি যদি মনে করে থাকেন আমি আপনার এই প্রস্তাব মেনে নেবো তাহলে তাহরিম তালুকদারকে আপনি চিনতেই পারেন নি ”
তাহরিম বেশ শান্ত কন্ঠেই কথা গুলো বলে সামনে তাকালো, আনোয়ার হোসেন নিজের পাকাঁ দাড়ি তে হাত বুলাতে বুলাতে বাকাঁ হাসলো,
” আপনি বেশ বুদ্ধিমান ছেলে তাহরিম তালুকদার। আপনার মতো সৎ থেকে আজ পর্যন্ত কেউ গদিতে বেশিদিন টিকতে পারে নি, টেবিলের উপর দিয়ে কিছু না নেন তবে নিচ দিয়ে নিতে হয় এটা এখন ট্রেন্ড হয়ে গেছে তাহরিম তালুকদার , আমার প্রস্তাব টা মেনে নেন আপনার ও সুবিধা সাথে আমার ও”
কথাটা বলেই ঘাড় ঘুরিয়ে আনোয়ার হোসেন এর এসিস্ট্যান্ট কে ইশারা করতেই একটা বিফ কেস টেনে টেবিলে রাখলো।
তাহরিম ভ্রু কুঁচকে তাকালো সে দিকে,
আনোয়ার বিফ কেস এর পিন খুলল, বিফকেস টা খুলতেই তাহরিমের সামনে দৃশ্য মান হলো এক বিফ কেস ভর্তি টাকা।
আনোয়ার হোসেন বিফ কেস টা তাহরিমের দিকে ঠেলে দিতেই তাহরিম মুচকি হেসে বিফকেট টা নিজের কাছে টেনে নিলো, যা দেখে আনোয়ার হোসেন বাঁকা হাসলো,
তাহরিম বিফকেস টা ভালো ভাবে দেখেই সেটা বন্ধ করে দিলো, আর সেটাকে ঠেলে আনোয়ার হোসেন এর দিকে দিয়ে বলল,
” সব ট্রেন্ডে তাহরিম তালুকদার গা ভাসায় না মিস্টার আনোয়ার। আমার গদির চিন্তা না হয় আমাকেই ভাবতে দেন, আপনারা এতো কিছু ভাবলে আমি কি ভাববো? আর এতো টাকা আমাকে না দিয়ে গরীব মানুষ দের উপকারে কাজে লাগান তাহলে মানুষ আপনাকে এমনি তেই ভালোবেসে ভোট দেবে, সেটার জন্য এমপি মন্ত্রী দের দরবারে কুকুরের মতো ঘুরতে হবে না, আর তাদের ভোট চুরির জন্য পেমেন্ট করতে হবে না, এ গুলো আপনার কাছে ই রেখে দেন মিস্টার আনোয়ার হোসেন, আর আজ আসেন তাহলে! ”
তাহরিমের কথা শুনে আনোয়ার হোসেন রেগে তাহরিমের দিকে তাকিয়ে বলল,
” কাজ টা আপনি ভালো করলেন না তাহরিম তালুকদার! এর জন্য আপনাকে পস্তাতে হবে কথাটা মনে রাইখেন ”
বলেই বসা থেকে উঠে আনোয়ার হোসেন গটগট পায়ে কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।
আনোয়ার হোসেন এর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তাহরিম হাসলো, দিনে যে কত অফার আসে এসব এর! মাঝে মাঝে ভীষণ হাসি পায় তার।
আনোয়ার হোসেন যাওয়ার সময় কুশন ভেতরে ঢুকলো, আনোয়ার হোসেন কে এভাবে রেগে বেরিয়ে যেতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো তার যাওয়ার দিকে,
পরবর্তী তে তাহরিম এর তাকিয়ে সে দিকে ই এগিয়ে গেলো,
হাতে থাকা মোবাইল টা এগিয়ে দিলো তাহরিমের দিকে,
” কে? ”
” ভাবি ফোন দিতে বলেছে ভাই, আপনাকে নাকি অনেক বার কল করেছে আপনি নাকি ফোন ধরেন না তাই বাধ্য হয়ে আমার ফোনে কল করেছে বলল আপনাকে যেন বলি ভাবি কে এক্ষুনি কল দিতে, তাড়াতাড়ি কথা বলুন ”
তাহরিম কিছু একটা ভেবে বলল,
” তুমি ফোন দিয়ে বলো, ভাই এখন ব্যস্ত কথা বলতে পারবে না ”
কুশল ঢোক গিলে বলল,
” আমি? ”
” হ্যা তুমি! কেন কোন সমস্যা?
” আবব না, আমি ই কেন? ”
তাহরিম চোখ রাঙিয়ে বলল,
” যা বললাম তাই করো ”
কুশন কাপাঁ কাঁপা হাতে ডায়াল করলো পূর্ণার নাম্বারে, ফোন টা লাউড স্পিকারে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো..
চারপাশে অন্ধকার হয়ে এসেছে, হঠাৎ রিংটোন বাজতেই আমার চোখ যায় ফোনের দিকে,
স্ক্রিনে ক্যাবলাকান্ত নাম টা দেখে ভ্রু কুঁচকালাম,
” হ্যা ক্যাবলাকান্ত বলো, তোমার ভাই কই? ”
কূশন কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
” ভভাবি, ভাই তো মিটিং এ, এখন কথা বলতে পারবে না ”
” জোর করে মোবাইল টা তার কাছে দিয়ে আসো, এহহ আসছে আমার নেতা মশাই, সব নেতা গিরি ছুটামু আমি, বাড়ি তে বউ রাইখা বাইরে গিয়ে নেতা গিরি করে ! লবন ছাড়া করল্লা কোথাকার! ”
পূর্ণার কথা গুলো কানে যেতেই তাহরিমের কাশি উঠে গেলো, কাশতে কাশতে পানির গ্লাস মুখে নিয়ে ইশারা করলো কুশন কে, মোবাইল রেখে বাইরে যেতে, বেচারা কে ইশারা করতে দেরি হলো কিন্তু মোবাইল রেখে দৌড় লাগাতে দেরি হয় নি! তাহরিম তার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল, কেন যে ছেলেটা পূর্ণা কে এত ভয় পায়!
মোবাইলের দিকে এক পলক তাকিয়ে সেটা কে কানে ধরলো, গম্ভীর কন্ঠে বলল,
” কি হয়েছে তোমার? এত বার কল করছো কেন হে? আমি না তোমাকে জ্বালায়? তাহলে আবার আমাকে ফোন করো কেন হে? ”
” আমি আমার জামাইকে ফোন দিসি, আমার দশটা না পাঁচ টা না একটা মাত্র জামাই! আমি ফোন দিলে আপনার কি? আপনার এতো জ্বলে ক্যা? আমার জামাইকে আমি জ্বালাবো! এহহহ আসছে আমার সাথে নেতা গিরি করতে! শুনুন মন্ত্রী সাহেব এই পূর্ণার সাথে নেতা গিরি করতে আসবে না, আমার একটা আর্টেক্যাল আপনার মন্ত্রী গিরি বের করবে কিন্তু ”
” তুমি কি কোন ভাবে আমাকে থ্রেট দিচ্ছো নাকি পূর্ণ? তুমি আমার মতো এতো ভালো আর নীতি বান মন্ত্রী কে থ্রেট দিচ্ছো! ”
” হুওও ধরতে পারেন থ্রেট, আপনি এখন বাসায় আসবেন ”
” আসবনা আমি ”
” আপনি আসবেন আর আসার সময় দুটা আইসক্রিম নিয়ে আসবেন ”
তাহরিম ভ্রু কুঁচকালো,
” দু’টা কেন? আমি আইসক্রিম খাবো না ”
” আমি কখন বললাম আপনার জন্য? দু’টা তো আমার জন্য ই, তাড়াতাড়ি আসেন ”
” পারব না, আসব না আমি কাজ আছে ”
” এখন আপনি না আসলে পরে আমাকেও বাসায় পাবেন না মনে রাইখেন ”
বলেই পূর্ণ ফোন কেটে দিলো,
তাহরিম কান থেকে ফোন নামিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসলো,
পাগলি একটা..
চলবে…