#ভালেবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_39( সারপ্রাইজ)
_______________
” মন্ত্রী সাহেব, মন্ত্রী সাহেব আপনি কোথায়? মন্ত্রী সাহেব.. ”
নাহ কারো কোন শব্দ ই পাচ্ছি না,
ভীষন গরম লাগার কারণে গায়ের সাদা কোট টা খুলে রাখলাম,
অন্ধকারেই হেটে চলছি পুরো ঘরে, হঠাৎ হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলাম, মনের মধ্যে ধীরে ধীরে যত বাজে চিন্তা এসে ভর করতে লাগলো।
স্পর্শ গুলো যেন আরও গাঢ় থেকে গাঢ় হতে লাগলো, নাকে এসে লাগলো অতিব পরিচিত ঘ্রান, গন্ধ টা চিনতে আমার বিন্দু মাত্র সমস্যা হলো না কারণ এই ঘ্রান মন্ত্রী সাহেব এর ছাড়া আর কারো নয়,
স্পর্শ গুলো যেন হাত ছেড়ে পেটে এসে থামলো, পেটের মাঝে আলতো হাতে স্লাইড করার জন্য আমার সারা শরীর যেন কাটা দিয়ে উঠলো, অসম্ভব রকমের কাঁপতে লাগলাম, সমস্ত শরীরের শক্তি যেন ধীরে ধীরে কমে আসছে, আমার পিছনেই কারো অস্তিত্ব টের পাচ্ছি, আমি খানিকটা পিছিয়ে যেতেই আমার পিঠ গিয়ে ঠেকলো উনার বুকে, উনার উষ্ণ নিশ্বাস আমার গলা ঘাড়ে আছড়ে পড়ছে,
আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
” মমমন্ত্রী সসসাহেব ককি করছেন টা কি? ”
উনি আমার কথার কোন রুপ উত্তর না করে এক হাতে ঘাড়ের চুল গুলো সরিয়ে গাঢ় ভাবে কিস করতেই আমার সমস্ত সত্তা কেঁপে উঠলো তৎক্ষনাৎ। বুঝতে পারছি না কি অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে আমার মাঝে! আমি আর ভর সামলাতে না পেরে নিজের শরীর পিছনে হেলিয়ে দিলাম যা বুঝতে পেরে মন্ত্রী সাহেব পাঁজা কোলে তুলে নিলেন,
” বউজান!! ”
উনার নেশাক্ত কন্ঠে কেঁপে উঠলাম আমি, উনার বুকে মাথা রেখে ধীরে ধীরে উত্তর দিলাম,
” হুম ”
” আজকের রাত টা শুধু আমার নামে করে দেবে কি বউজান?”
ভীষণ নেশাক্ত কন্ঠে কথা টা বললেন উনি, আমার শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে এলো শীতল স্রোত, কেঁপে কেঁপে উঠলাম ক্ষণে ক্ষণে।
আমার নিরবতা যেন সম্মতির লক্ষন ভেবে নিয়ে মুচকি হেসে এগিয়ে গেলেন রুমের দিকে।
_______________
সকালের সূর্যের তীক্ষ্ণ রশ্মি চোখে মুখে আছড়ে পড়তেই পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালাম,
চোখ খুলতেই সামনে তাকিয়ে দেখি মন্ত্রী সাহেব আধশোয়া হয়ে এক মনে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে ই তাকিয়ে আছে, প্রথমত আমি খানিকটা ভয়ই পেয়ে গেলাম,
ভয় পাওয়ার নির্দিষ্ট কারণ ও আছে , সকাল সকাল ঘুম থেকে জেগেই যদি কেউ দেখে কেউ তার দিকে এভাবে ভুতের মতো তাকিয়ে আছে ভয় পাওয়া টা কি স্বাভাবিক নয়?
আমি উনার দিকে তাকালাম। কাল রাতের কথা মনে পড়তেই আমার মাঝে জেঁকে ধরলো এক ঝাঁক লজ্জা আর অস্বস্তি।
আমার অবস্থা বুঝতে পেরে উনি ঠোঁট কামড়ে হেসে আমার দিকে খানিকটা ঝুকে এসে বলল,
” বউজান, তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো? গাল দুটো কেমন ধীরে ধীরে স্ট্রবেরি হয়ে যাচ্ছে! ”
বলেই সরে এসে আমার দিকে তাকিয়ে আবারো হাসলেন,
আমার লজ্জা আর অস্বস্তির পরিমাণ টা যেন দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেলো,
আমি তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে মনে হলো গায়ে বেড সিট ছাড়া কিচ্ছু নেই, আর বেড সিট মন্ত্রী সাহেব পিছন দিকে টেনে ধরে আছে, আমি রাগী দৃষ্টি তে উনার দিকে তাকাতেই সুন্দর মতো বেডসিট টা ছেড়ে দিলেন,
আমি সোজা ওয়াসরুমে চলে আসলাম, বেসিনের আয়নার সামনে দাড়াতেই আমার চক্ষু চড়ক গাছ, গলায় বেশ অনেক জায়গা কালো হয়ে ফুলে গেছে, এবার আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছে ,
কাঁদো কাঁদো দৃষ্টিতে নিজেকে একবার পর্যবেক্ষন করে নিলাম,
” মন্ত্রীর বাচ্চা মন্ত্রী, খচ্চর কোথাকার আমার শরীর টা যেন বার্গার পাইছিলো, কেমনে কামড়াইছে! আমি এখন বাইরে যামু কেমনে? সবার সামনে কিভাবে যামু আমি? কেউ যদি দেখে কি ভাববে! বান্দরের খালাতো ভাই কোথাকার!”
শরীরে পানি পড়তেই যেন সারা শরীর জ্বলে উঠলো, মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম এই কামড়ের প্রতিশোধ যদি আমি না নিছি আমার নাম ও পূর্ণা না হুহ্।
গোসল শেষ করে বাইরে আসতেই নজরে এলো মন্ত্রী সাহেব এর ঘুমন্ত মুখ, আহ্ কি শান্তির ঘুম! বের করছি আপনার ঘুৃম!
আমি উনার সামনে গিয়ে ভালো ভাবে দেখলাম আসলে উনি ঘুমিয়ে ছে কি না।
হঠাৎ হাতের টান অনুভব করতেই কিছু বুঝে উঠার আগেই আমি সোজা পড়লাম উনার উপর,
মুখ তুলে উনার দিকে তাকাতেই নজরে এলো উনার মুখের বাঁকা হাসি।
” কি সুন্দরী লুকিয়ে লুকিয়ে এভাবে দেখার মানে কি? মানলাম আমি অনেক হ্যান্ডসাম তাই বলে এভাবে নজর দেওয়া কি ঠিক? ”
উনার কথা শুনে আমি মুখ বেকিয়ে বললাম,
” এহহ হ্যান্ডসাম না ছাই! শুনোন ফর্সা হলেই কেউ সুন্দর হয় না হুহ্, আসছে!..
উনি এক ভ্রু উঁচু করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” তাই নাকি? আমি হ্যান্ডসাম না? ”
” না ”
” ওকে ঠিক আছে, এই অসুন্দর মানুষের সাথে ই আজকে সারাদিন এভাবে লেপ্টে থাকতে হবে ”
আমি চোখ বড়ো বড়ো করে বললাম,
” কিহহ?”
” তোমার শাস্তি”
” ঠিক আছে ঠিক আছে ছাড়ুন, আপনি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড হ্যান্ডসাম, ঠিক আছে ছাড়ুন এবার ”
” ছাড়বো? ”
” হুম ”
” ঠিক আছে ছাড়বো তার আগে গুড মর্নিং কিস টা দিয়ে দাও ”
আমি ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
” কি দিবো? ”
” গুড মর্নিং কিস! ”
হঠাৎ মাথার মাঝে এক শয়তানি বুদ্ধি চেপে আসলো,
” ঠিক আছে, আপনি চোখ বন্ধ করেন ”
আমার কথা মতো উনিও সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলল, আমি ও মুখ টা উনার গালের কাছে নিয়ে গিয়ে হুট করে একটা জোরে সরে কামড় বসিয়ে দিলাম,
হঠাৎ এমন হাওয়াতে উনি বেশ হকচকিয়ে উঠে হাত আলগা করে দিলেন আর আমি এই সুযোগে উঠে দাড়িয়ে সোজা দরজার বাইরে,
উনি তৎক্ষনাৎ শোয়া থেকে উঠে গালে হাত দিয়ে ভ্যাবলার মতো আমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো, উনি ঠিক বুঝতে পারছেন না এখানে হচ্ছে টা কি?
গালে চিনচিন ব্যথা অনুভুত হওয়াই উনি চোখ কুঁচকে ফেলল,
আয়নার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে গাল থেকে হাত সরাতেই উনি নিজের লাল হয়ে যাওয়া গাল বিশিষ্ট মুখ টা দেখতে পেলেন,
মুখ খানিকটা কুঁচকে বিরবির করে বলতে লাগলো,
” হুয়াট দা হেল, এটা কি করলো? মুখটার বারোটা বাজিয়ে দিলো, আমি তো লাভ বাইট চাই নাই, কিস চাইছি, ও কি কানে কম শুনলো নাকি ইচ্ছে করে ই দিলো ”
উনি ফ্রেস হয়ে খাবার টেবিলে আসলেন, আমি তখন টেবিলে খাবার দিচ্ছি ,
আমি এক পলক উনার দিকে তাকালাম, বেচারার গালে দাঁতের দাগ অনেকটা গর্ত হয়ে কেটে গেছে আর ফুলেও আছে,
আমি মুচকি মুচকি হাসতে লাগলাম,
উনি আমার দিকে রাগী দৃষ্টি তে তাকিয়ে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো,
আমি উনার প্লেটে খাবার তুলে দিতে দিতে ঠোঁট চেপে হেসে বললাম,
” ব্যথা কি বেশি করছে? আহারে একদম ফুলে গেছে ”
উনি শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো যা দেখে আমি শুকনো ঢুক গিলে বললাম,
” হে হে হে আমি তো যাস্ট বলতে চাইছিলাম, ব্যথা করলে ব্যথার ঔষধ খাবেন না কি? এভাবে তাকাবেন না তো ভয় লাগে তো ”
উনি অবাক হয়ে বললেন,
” তুমি ও ভয় পাও? ”
” কেন না পাওয়ার কি আছে আজব! ”
” না আমি আর ও ভাবছিলাম তুমি হয়তো হিটলারের বংশ ধর! ”
আমি রাগী দৃষ্টি তে তাকিয়ে বললাম,
” আমি হিটলারের বংশ ধর? ”
উনি খাবার মেখে আমার দিকে লোকমা দিতে দিতে বললেন,
” না না কে বলল তুমি শুধু হিটলারের বংশ ধর সাথে জঙ্গলি বিড়াল! ”
আমি লোকমা মুখে নিয়ে গাল ফুলিয়ে চিবুতে লাগলাম, আসলে এখন আমার ঝগড়া করার মুড নাই, খিদে পাইছে। আর উনি খাবার মেখে নিজেও খাচ্ছে আমাকে ও খাওয়াচ্ছে, বলতে গেলে এটা উনার প্রত্যাহিক অভ্যাস।
খাবার মেখে প্রথম লোকমা আমার মুখে দেবে, এবার হোক সেটা বাড়ি তে কিংবা অন্য কোথাও, আগে প্রচুর লজ্জা লাগলেও এখন সব স্বাভাবিক ই লাগে।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে উনি রুমে চলল এলেন, আমি টেবিলের সব কিছু গুছিয়ে রুমে আসতেই উনি আমাকে ডেকে উঠলেন,
” বউজান! ”
আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে উত্তর দিলাম,
” হুম ”
“তোমার নামে একটা বিজ্ঞপ্তি দিব !”
আমি ভ্রু কুচকে উনার দিকে ঘুরে তাকাতেই উনি মুচকি হেসে বলে উঠলেন,
” তাতে লিখা থাকবে ” এই মানুষ টিকে কেউ গ্রহন করবেন না, এই মানুষটা শুধু আমার ! আমার শুধু এই মানুষটাকেই লাগবে! এই মানুষটা ছাড়া আমি একদম একা , বড্ড অ’সহায় বউজান !”
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম একান্ত আমার শুদ্ধতম শুভ্র পুরুষ টার দিকে, ভীষণ ভালোবাসি এই মানুষ টাকে আমি..
চলবে…
#ভালেবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_40
_________________
” মিস্টার রুদ্র তালুকদার! আপনি কি কিছু বলবেন নাকি এই ভর সন্ধ্যায় আমাকে সং সাজিয়ে বসিয়ে রাখার জন্য এখানে ডেকে এনেছেন? ”
রুদ্র নিজেকে প্রস্তুত করে ইলমীর দিকে তাকালো। আজ সে ভেবেই এসেছে আজ ইলমী কে তার মনের কথা বলবে কিন্তু কি দিয়ে শুরু করবে ঠিক ভেবে পাচ্ছে না। আজ সে নিজে থেকে ই একটা ক্যাফে বুক করে ইলমী কে আসতে বলেছে, কিন্তু এখন কোন কথায় সে বলতে পারছে না।
ইলমী আপাদমস্তক ভালো করে রুদ্র কে পর্যবেক্ষন করে নিলো, রুদ্র যে বেশ নার্ভাস সে বুঝতে পেরেছে।
মেয়েদের নাকি ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বেশ একটিভ, কেউ তাকে পছন্দ করলে সেটা নাকি মেয়েরা চট করেই ধরে ফেলতে সক্ষম।
রুদ্র আমতাআমতা করে বলল,
” আআজকে ততোমাকে সুন্দর লাগছে ”
ইলমী ভ্রু কুঁচকে তাকালো নিজের দিকে আজ যে আহামরি কিছু পরে এসেছে তা কিন্তু না, সচরাচর যা পরে আজও তাই পরেছে একটা টপস আর জিন্স সাথে স্কার্ফ।
নিজেকে পর্যবেক্ষন শেষে ভ্রু উচিয়ে বলল,
” আজ সুন্দর লাগছে তার মানে অন্য আর সব দিন সুন্দর লাগে না তাই তো? ”
রুদ্র চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো ইলমীর দিকে, সে তো এটা মিন করে কথা বলে নি তবে ইলু তো কথার উল্টো মিনিং বের করে ফেলল,
” আরে না না, আমি এটা বলি নি, আমি বলতে চেয়েছি তোমাকে সবসময় ই সুন্দর লাগে আজ কমপ্লিমেন্ট টা করলাম আর কি! ”
” হুম, বাট আপনি নিশ্চয়ই এটা বলতে আজ আমাকে ডাকেন নি, কি বলতে ডেকেছেন সেটা বলেন ”
রুদ্র আমতাআমতা করে বলল,
” আআসলে ইলমী.. ”
ইলমী ভ্রু কুঁচকে বলল,
” আসলে নকলে না করে তাড়াতাড়ি বলে দেন কি বলবেন ”
” আই থিংক.. ”
” ইউ থিংক? ”
” ইলমী আই থিংক আই লাভ ইউ ”
ইলমী পরিপ্রেক্ষিতে কোন রিয়েক্ট করলো না, সে ভেবেই রেখেছে রুদ্র তাকে এমন কোন কথায় বলবে।
রুদ্র উৎসুক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে ইলুর দিকে, হয়তো ইলু কিছু বলবে কিন্তু তার আশায় এক বালতি পঁচা পানি ঢেলে দিয়ে ইলু হুট করে দাড়িয়ে বলল,
” আমি আজ আসি ”
বলেই ইলু গটগট পায়ে বের হয়ে আসতে লাগলো, ইলুর পিছনে পিছনে রুদ্র ছুট লাগালো,
” এই ইলমী শোনো, উত্তর তো দিয়ে যাও! ”
রুদ্র ইলমীর পথ আটকে দাঁড়ালো, ইলমী ভ্রু কুচকে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
” কি সমস্যা? পথ আটকাচ্ছেন কেন? ”
” তুমি আমার কথার উত্তর না দিয়ে চলে যাচ্ছো কেন? ”
” আপনি কি এমন বলেছেন যে আমাকে তার উত্তর দিতে হবে? ”
” ওই যে বললাম, আই লাভ ইউ! ”
ইলু দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
” যেই ছেলে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতেই মাস পেরিয়ে যায়, সামান্য ভালোবাসি কথা টা মুখ দিয়ে বের করতে এতো নার্ভাসনেস, এতো সংকোচ! সেই ছেলের সাথে আমি রিলেশনে জড়াবো না, আর তাকে তো মোটেও ভালোবাসব না, যান তো “.
রুদ্র অসহায় দৃষ্টি তে ইলমীর দিকে তাকালো, সে তো চেষ্টা করেছে কিন্তু এতো নার্ভাস লাগে যা বলার বাহিরে, অন্য সব কাজ সে একা হাতেই সামাল দিতে পারে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই ভালোবাসা থেকে সেটা প্রকাশ করা সত্যি ই খুব কঠিন।
ইলু রুদ্র কে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো রুদ্র মাটির দিকে তাকিয়ে রইলো আসলে ইলুর করা প্রশ্নের একটার ও কোন উত্তর নেই তার কাছে,
রুদ্র আনমনে হাটতে হাটতে পাশেই একটা পার্কের বেঞ্চিতে বসলো গিয়ে, দৃষ্টি তার এখনো মাটিতেই নিবদ্ধ, হঠাৎ কেউ তার পাশে বসে মুখের সামনে পানির বোতল ধরতেই চমকে উঠলো সে,
ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে তাকাতেই দেখতে পেলো ইলুর রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখ খানি।
” একটা মানুষ কতটা হাঁদারাম হলে নিজের ভালোবাসার মানুষ রাগ করে চলে গেলে দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে সেটা দেখে? ”
রুদ্র ভ্রু কুঁচকে তাকালো ইলমীর দিকে, ইলমী কি তাকে ইনসাল্ট করছে?
” এই মেয়ে তুমি কি আমাকে অপমান করছো? ”
ইলু চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলল,
” অপমান কোথায় করলাম? যাই হোক পানি টা খান ”
” তুমি না চলে গিয়েছিলে? ”
ইলমী ভ্রু কুচকালো,
” এখন কি আবার চলে যাবো? ”
রুদ্র বাচ্চাদের মতো মাথা ঝাকিয়ে বলে উঠলো,
” না নাহ্ ”
ইলমী রুদ্রের দিকে আরোও চেপে বসলো,
” আপনি কি ছোট বেলা থেকে ই এমন? ”
” কেমন? ”
” কিছু না ”
” আমার উত্তর কিন্তু দিলে না তুমি! ”
ইলমী ঠোঁট এলিয়ে হাসলো,
” কেন আপনি বোঝেন না? মেয়েদের নিরবতাই সম্মতির লক্ষণ ”
রুদ্র ইলমীর হাত চেপে ধরে হাসলো।
_________________________
” মন্ত্রী সাহেব? ”
” হুম বলো ”
” একটা কথা বলব? ”
” হুম বলো এতে আবার অনুমতি নেবার কি আছে? ”
” রাজনীতি ছেড়ে দিলে হয় না, বাবার সাথে ব্যবসা দেখা শুনা করবেন! ”
তাহরিম মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকালো।
বিছানায় হেলান দিয়ে উনি ফোন ঘাটছিলেন, মোবাইল টাকে বিছানায় ছুড়ে দিয়ে আমাকে টেনে বিছানায় বসিয়ে বলল,
” হঠাৎ এই কথা? ”
আমি ঠোঁট ভিজিয়ে বলতে লাগলাম,
” না মানে আমি এটা বলতে চাচ্ছি যে রাজনীতি জিনিস টা আমার কাছে কখনোই ভালো লাগে নি। রাজনৈতিক কারণে মানুষ পাখির মতো মানুষ মারে, এদের ভেতরে দয়া ভালোবাসা কিছু নেই আছে শুধু প্রতিহিংসা। আপনি রাজনীতি ছেড়ে দেন ”
আমার কথা শুনে উনি হাসলেন মনে হলো আমার কথা শুনে উনি মজা পেলেন,
আমাকে টেনে উনার কাছে নিয়ে মাথাটা উনার বুকে রাখতেই আমার মাথায় বিলি কাটতে কাটতে বলল,
” উহুম তোমার ধারণা ভুল রাজনীতি মোটেও খারাপ না। রাজনীতি তখনই খারাপ হবে সেটা যদি তুমি খারাপ কোন কাজে তা ব্যবহার করো।আর কে বলেছে রাজনীতিবীদদের মনে ভালোবাসা নেই? এই যে আমার কথাই দেখো না! আমি আমার বউজানকে কত্ত ভালোবাসি! ”
আমি কিছু বললাম না চুপচাপ মাথা এলিয়ে শুয়ে রইলাম উনার বুকে।
হঠাৎ আমার ফোন টা বেজে উঠতেই আমি তড়িঘড়ি করে উঠে বসলাম, উনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
” কি হয়েছে? ফোন ই তো বাজছে ট্রেন ছেড়ে দেয় নি তো! ”
আমি মোবাইল খুজতে খুজতে বললাম,
” কোন জরুরি দরকার ও তো থাকতে পারে ”
উনি কিছু বললেন না, আমি মোবাইল টা বের করে স্ক্রিনে তাকাতেই ভ্রু কুঁচকে গেলো। ফোনটা তৎক্ষনাৎ কেটে দিয়ে সোজা ফোন সাইলেন্ট করে আবার উনার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম।
উনি চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” কি হলো এটা? ”
” কি হলো? ”
” আমিও তো সেটাই জিজ্ঞেস করলাম কি হলো? ফোন রিসিভ করলে না কেন? ”
” ইম্পর্টেন্ট কল তো তাই রিসিভ করলাম না, যা হোক কথা না বাড়িয়ে মাথায় বিলি কেটে দেন তো, ভালো লাগছিলো ”
” হ্যা সেটাই জামাইয়ের সেবা পেতে তো ভালোই লাগে তাই না? ”
আমি চোখ বন্ধ করে ই মুচকি হেসে বললাম,
” হুম সেটাই ”
” তোমার গর্ব করা উচিত পূর্ণ! ”
আমি ফট করে ই চোখ খুলে ঘাড় উচিয়ে উনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম,
” কেন? ”
” এই যে তোমার স্বামী তোমাকে কত ভালোবাসে! এতো বড় নাম করা মন্ত্রী হয়েও বউয়ের মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে, বউয়ের সব কথা মনোযোগ সহকারে শুনে!”
” হুম পরে? ”
” কিন্তু দুঃখ একটাই, আমার বউটা আমাকে ভালোবাসে ও না, ভালেবাসি বলেও না! ”
আমি মুচকি হাসলাম,
বুঝলেন জামাইজান, আপনাকে ভালোবাসতে আমার সাত জনমের দরকার নেই, আমার এই এক জনমেই আমি আপনাকে ভালোবেসে যেতে চাই”
চলবে,,