ভালেবাসবে তুমিও পর্ব-০৮

0
1656

#ভালেবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__০৮ (বোনাস)
#অদ্রিতা_জান্নাত

চোখ খুলতেই নিজেকে একটা রুমের মধ্যে পেলাম ৷ এটা অন্য কোনো রুম না ৷ আমার নিজেরই রুম ৷ কিন্তু আমি এখানে এলাম কি করে? আমি তো মায়া আপুকে খুঁজতে গিয়েছিলাম ৷ হ্যাঁ খুঁজেও পেয়েছিলাম ৷ কিন্তু তখন কে আমার মুখ চেপে ধরলো? আর কে-ই বা আমাকে এখানে আনলো? উফ মাথায় ঢুকছে না কিছু ৷ মাথা ধরে উঠে বসলাম আমি ৷ ঠিক তখনি আম্মু ঘরে আসলো ৷ আমাকে বসে থাকতে দেখে তড়িঘড়ি করে আম্মু আমার সামনে এসে বসে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“শ্রেয়া তুই ঠিক আছিস? তোর কোথাও খারাপ লাগছে না তো?”

“আম্মু কি হবে আমার?”

আম্মু একটা জুসের গ্লাস আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“জুসটা শেষ কর আগে ৷ তারপর কথা বলিস ৷ নিজের একটুও খেয়াল রাখতে পারিস না ৷”

আম্মুর কথার মানে কিছুই বুঝলাম না আমি ৷ তবুও জুসটা নিয়ে খেয়ে নিলাম ৷ পিপাসা পেয়েছিল অনেক তার উপর আমাকে না খাইয়ে ছাড়বে না সে ৷ খালি গ্লাসটা আম্মুর হাতে দিয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,,,

“এবার বলো আমি এখানে এলাম কি করে?”

“আচ্ছা তুই কি নিজের একটুও খেয়াল রাখতে পারিস না? তুই কি ছোট এখনো? রাস্তাঘাটে এভাবে অজ্ঞান হয়ে গেলে কি হবে বল?”

“অজ্ঞান? আমি কখন অজ্ঞান হলাম ৷ যতোটুকু মনে আছে কেউ আমাকে অজ্ঞান করে দিয়েছিল ৷”

“এসব আলতু ফালতু কথা কম বল ৷ তোকে অজ্ঞান করবে কে? পাগল হয়ে গেছিস?”

” না আম্মু.. আচ্ছা বাদ দাও ৷ এখানে এলাম কি করে আমি? কে এনেছে আমাকে এখানে?”

“আকাশ!”

আমি অবাক হয়ে বললাম,,,,,,,,,,

“কিহ?”

“এতো অবাক হবার কি হলো?”

“আকাশ ভাইয়া তো দেশের বাইরে ৷ এখানে কীভাবে আসবে?”

“ওর হয়তো কাজ শেষ তাই বিডিতে ব্যাক করেছে ৷ তাতে প্রবলেম কি তোর?”

“আমার আবার কি সমস্যা হবে? কিন্তু সে আমাকে কোথায় পেয়েছে?”

“তুই নাকি ওর গাড়ির সামনে পরে গিয়েছিলি ৷ তাই ও নিজেই বাসায় নিয়ে এসেছে তোকে ৷”

আমি আর কিছু বললাম না ৷ জানিনা কেন আকাশ ভাইয়া মিথ্যা বললো ৷ কি চান উনি? আকাশ হচ্ছে অরূপের চাচাতো ভাই ৷ বয়সে অরূপের থেকে অল্প ছোট কিন্তু দেখে সমবয়সী মনে হয় তাদের ৷ পড়াশুনা করতে দেশের বাইরে ছিল প্রায় ছয় বছর ৷ ছয় বছর পর দেশে আসলেন তিনি ৷ দেশে থাকতে প্রায়ই কথা হতো আমাদের ৷ কিন্তু তখন জানতাম না যে অরূপ ওনার ভাই ৷ নয়না মায়ের মাধ্যমেই আকাশ ভাইয়াকে চিনি আমি ৷ কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম না ৷ মায়া আপু, তুহিন, অরূপ আর আকাশ ভাইয়া সেইম জায়গায় সেইম সময়ে কি করছিলেন? মায়া আপুকে আটকে রাখার মধ্যে তাদের কোনো হাত নেই তো আবার? কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না ৷ আকাশ ভাইয়াও মিথ্যা কেন বললেন? অরূপ কোথায়? বাসায় ফিরেছেন উনি?

আম্মু রুম থেকে চলে যেতে নিলেই তাকে ডেকে আমি বলে উঠলাম,,,,,,,,,,

“আম্মু? অরূপ কি বাসায় এসেছে?”

“না তো ৷ এখনো ফিরে নি ৷ তুই তো ওর সাথে গিয়েছিলি ৷ কোথায় গিয়েছে জানিস না?”

“না ৷ আচ্ছা আকাশ ভাইয়া কি বাসায় আছে এখন?”

“হুম ৷ ছেলেটাকে বলেছি তুই না উঠা পর্যন্ত অন্তত থাকতে ৷”

“আচ্ছা তুমি যাও ৷”

আম্মু চলে গেল ৷ আমি বিছানা থেকে নেমে অরূপের নাম্বারে ফোন দিলাম ৷ রিং হচ্ছে কিন্তু উনি ধরছেন না ৷ কয়েকবার দিলাম তবুও ধরলেন না ৷ টেনশান বেড়ে যাচ্ছে আমার ৷ অরূপ কোথায় আপনি? আমার এখন ভয় করছে অনেক ৷ ফোন রেখে নিচে চলে গেলাম ৷ নিচে গিয়ে দেখি আকাশ ভাইয়া নিচে একা একা সোফায় বসে আছেন আর মোবাইল দেখছেন ৷ আমি ওনার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম,,,,,,,,

“আপনি কেন মিথ্যা বললেন ভাইয়া?”

কপাল কুচকে ভাইয়া আমার দিকে তাকালেন ৷ নিজের ফোন পকেটে ঢুকিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,,,,,,,,,

“ঠিক আছো তুমি? তোমার শরীর ঠিক আছে তো?”

“আমি একদম ঠিক আছি ৷ তার আগে আপনি বলুন আপনি কেন মিথ্যা বললেন?”

“মিথ্যা কোথায় বলেছি আমি?”

“আমি নাকি আপনার গাড়ির সামনে অজ্ঞানরত অবস্থায় পরেছিলাম ৷ কথাটা কি সত্যি?”

উনি চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,,

“হ..হ্যাঁ মিথ্যা কেন হবে? যা সত্যি তাই বলেছি ৷”

“তো আপনি বিডিতে ফিরেছেন কবে? আজ নাকি আরো আগে?”

“তুমি আমাকে সন্দেহ করছো শ্রেয়া?”

“সন্দেহ না করার মতো কিছুই নেই ৷ আপনাদের সবাইকে সন্দেহ হচ্ছে আমার ৷ কোনটা সত্যি, কোনটা মিথ্যা নিজেই বুঝতে পারছি না আমি ৷”

“যুক্তি দিয়ে বিবেচনা করো ৷ তোমার সব প্রশ্নের উত্তর তোমার মধ্যেই আছে ৷ মমের সাথে দেখা করতে হবে ৷ আজ আসি তাহলে ৷ ভালো থেকো ৷”

বলেই চলে গেলেন তিনি ৷ আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম ৷ কিন্তু উনি বলে গেলেন কি? ‘আমার সব প্রশ্নের উত্তর আমার মধ্যেই আছে?’ কিন্তু কি করে?

___________________

সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে কিন্তু অরূপ এখনো বাসায় আসেন নি ৷ তার ফোন এখন বন্ধ ৷ ওই বাড়িতে ফোন করে জেনেছি যে উনি এখনো ওই বাড়িও যান নি ৷ চিন্তা হচ্ছে এখন ৷ কোথায় উনি? কি করছেন? কিচ্ছু জানি নাহ ৷ কিছুক্ষনপর কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে নিচে ছুঁটে চলে গেলাম ৷ দরজা খুলে অরূপকে দেখে শান্তি পেলাম ৷ কিন্তু ওনাকে অন্য রকম লাগছে আজ ৷ মাথার চুলগুলো পুরো এলোমেলো ৷ ফর্সা মুখটাও শুকিয়ে কেমন যেন হয়ে গেছে ৷ তার গায়ের সাদা রঙের শার্টে ধুলো লেগে রয়েছে ৷ আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি আমাকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে চলে গেলেন ৷ যাওয়ার সময় তার গাঁ থেকে সিগেরেটের গন্ধও পেয়েছি আমি ৷ আশ্চর্য উনি সিগেরেট খেয়েছেন? কিন্তু কেন?

আমি দরজা লাগিয়ে রুমে চলে এলাম ৷ কিছুক্ষন পর উনি লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বের হলেন ৷ আমাকে একবার দেখে চুল মুছতে মুছতে ব্যালকনিতে চলে গেলেন ৷ আমিও তার পিছু পিছু গেলাম ৷ গিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,

“কোথায় ছিলেন আপনি সারাদিন?”

উনি কিছু বললেন না ৷ আমি আবার বললাম,,,,,,,,

“অরূপ প্লিজ বলুন ৷ কোথায় ছিলেন আপনি? কি এমন কাজ করেন সারাদিন?”

আচমকা উনি আমাকে দেয়ালে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,,,,,,,,,,,,

“আমার পিছু কেন নিয়েছিলে?”

কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,,,,,,,,,,

“কককোথায়? আআমি কেন আপনার পপপিছু নিবো ৷ ছছছাড়ুন অামাকে ৷”

“জানো? তোমাকে কত জায়গায় খুঁজেছি আমি? কিন্তু তুমি তো আকাশের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছিলে ৷”

আমি অবাক হয়ে বললাম,,,,,,,,,,,

“কিহ? আকাশ ভাইয়ার সাথে আমি কেন ঘুরবো? আমি তো আপনাকে খুঁজছিলাম ৷ কিন্তু পাই নি ৷ তাই…”

“তাই তুমি সময় কাটাতে আকাশের সাথে ঘুরে বেড়াবে?”

“আরে আজব তোহ! আমি বলছি তো আকাশ ভাইয়ার সাথে ঘুরি নি আমি ৷ আর কেনই বা ঘুরবো আমি?”

“আমি তোমাকে ভালো করেই চিনি ৷ ছেলে পাল্টানো তো তোমার স্বভাব ৷ আর স্বভাব কি সহজে বদলায় কখনো?”

“চুপ করুন প্লিজ ৷ কেন দোষ দিচ্ছেন আমাকে ৷ আমি কি কোনো প্লে গার্ল? যে ক্ষনে ক্ষনে ছেলে পাল্টাবো? আমি নিজেই বুঝতে পারছি না কার দোষ আমাকে দিচ্ছেন আপনি ৷ আর কেনই বা দিচ্ছেন? আমি কিছু করি নি কতবার বলবো আমি? আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম ভাইয়া তাই আমাকে বাড়িতে দিয়ে গেছে ৷ এর বেশি কিছুই না ৷”

“তুমি বললা আর আমি বিশ্বাস করবো? তোমার মতো মেয়েদের চিনি আমি ৷”

ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম অরূপকে ৷ রাগে চোখে পানি এসে পরেছে ৷ হাত পা কাঁপছে ৷ যার জন্য কিছু বলতেও পারছি না আমি ৷ তবুও কোনো রকমে চোখ মুছে বলে উঠলাম,,,,,,,,,,

“আপনি আদো কোনো মানুষ নাকি জানা নেই আমার ৷ নিজের উপরই ঘৃণা হচ্ছে এখন ৷ এটা ভেবে যে আমি আপনার মতো এতোটা নিচু মনের ছেলেকে ভালোবেসেছিলাম ৷ আজ থেকে আপনার আর আমার পথ আলাদা ৷ বেরিয়ে যান এই বাড়ি থেকে ৷ আর কোনো দিনও আসবেন না আমার চোখের সামনে ৷ আপনার কোনো কথা মানতে বাধ্য নই আমি ৷ এমন একদিন আসবে যেদিন আপনি আপনার কাজগুলোর জন্য আফসোস করবেন ৷ কিন্তু অতীত কখনো ফিরে আসে না তাই অতীতের ভুল গুলোও শুধরানো যায় না ৷ চলে যান আপনি এখান থেকে ৷ সময় মতো ডিভোর্স পেয়ে যাবেন!”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে