ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-২২+২৩

0
1198

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২২

অনেকদিন পর আজ স্কুলে যাব,তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে একদম রেডি হয়েই নিচে নামলাম।বাবা আর আপু ডাইনিং টেবিলে বসে আছে,মা খাবার বেড়ে দিচ্ছে।আমি হাসিমুখে বাবার পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পড়ি,বাবা আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে বসে রয়েছে।বাবা গতকাল আপুদের বিয়েটা মেনে নিলেও আমার উপর অভিমান করে আছে।তাই বাবা কাল থেকে একটা কথাও বলে নি আমার সাথে।আমি এবার মুখটা ছোট করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াই।তখন আপু বলে উঠে,,,

“এই কই যাস তুই না খেয়ে?খেয়ে যা।”

“আপু আমি খাব না,স্কুলে যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে আমি গেলাম।”

“হেনা তোমার মেয়েকে বলে দাও না খেয়ে স্কুলে যাওয়া যাবে না।”

বাবার কথাশুনে আমার খুব হাসি পাচ্ছে কিন্তু আপাতত হাসি কন্ট্রোল করে বাবার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মাকে বললাম।

“মা বলে দাও,তোমার মেয়েকে কেউ খাইয়ে দিলে খাবে,নয়ত না খেয়ে চলে যাবে।”

“আল্লাহ তায়া’লা আমাদের দুটো হাত দিয়েছে কাজে লাগানোর জন্য,তাই হাতদুটো কাজে লাগাতে শেখাও তোমার মেয়েকে।”

“হাতদুটো আপাতত পকেটে আছে তাই কাজে লাগাতে পারছি না,ত মা বলে দাও খাইয়ে দিতে নয়ত খাব না।”

এবার মা আমার কান টেনে ধরে বলে উঠে,,,

“দুই বাপ,বেটি মিলে কী শুরু করেছিস হুম!দুজন সামনা সামনি রয়েছিস তারপরও আমার মাধ্যমে কথা চালান করছিস কেন?”

“মা লাগছে ছাড়ো ত,আর আমার কী দোষ বলো ত সব ত আমার হিটলার বাবার,,,

বাকিটা না বলে জিভ কামড়ে ধরি,আর ভয়ে ভয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি বাবা গম্ভীর মুখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি সেটা দেখে বোকার মত হাসার চেষ্টা করি।আর মার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দেই এক দৌড়,আর এক দৌড়ে একদম গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লাম।বাপরে আজ জোড় বাঁচা বেঁচে গেছি,কার সামনে কী বলে ফেললাম উফফ!সাবিহা তুই দিনদিন বাচাঁল হয়ে যাচ্ছিস নিজেকে সামলা সাবিহা।নয়ত কবে যেন এত কথা বলার জন্য মাইর খাস।নিজের মনে এসব বকবক করে চললাম স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্য।

____________________________________

হঠাৎ করেই গাড়িটা থেমে যায় মাঝ রাস্তায়,আমি সেটা দেখে ড্রাইভার চাচাকে জিজ্ঞেস করি।

“গাড়ি থামালেন কেন চাচা?”

“সামনে ত সাদাফ স্যার দাঁড়ায়ে আছে গাড়ি লইয়া,এমন ভাবে রাখছে কোনদিকেই যাইতে পারমু না।”

আমি চাচার কথাশুনে উঁকি দিয়ে দেখি সাদাফ ভাই ফোন হাতে নিয়ে ড্রাইভিং সিটে দরজা খুলে বসে আছে।এক পা নিচে আরেক পা গাড়িতে দিয়ে,
ভাবখানা এমন যেন কোন সিনেমার হিরো।উনার পাশেই নিলয় ভাইয়া বসে আছে,সাদাফ ভাইয়ের দৃষ্টি আমার গাড়িতেই আবদ্ধ।উনি এবার গাড়ি থেকে নেমে আমার দিকে এগিয়ে আসে।কিন্তু উনার সাথে এখন কথা বলতে চাইছি না আমি।এখন কথা বললেই ঝামেলা হবে,গতকালকের ঘটনা এখনও ভুলি নি আমি।রাগটা আগের মতই আছে,এখন আসছে হয়ত রাগ ভাঙ্গাতে কিন্তু সেটা ত হতে দেয়া যায় না।কয়দিন শাস্তি পাক কালকের ঘটনার জন্য।তাই ড্রাইভার চাচাকে বললাম গাড়ি পিছনে নিয়ে অন্য রাস্তায় যেতে।আমার কথামত চাচা গাড়ি স্টার্ট দেয় আর পিছনে ঘুরাতে নিলেই সামনে এসে দাঁড়ায় সাদাফ ভাই।আমার সেটা দেখে রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে,কিন্তু তারপরও রাগটা কন্ট্রোল করে গাড়ি থেকে নেমে উনার সামনে দাঁড়ালাম।আর হাত গুজে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে উঠলাম,,,

“কী চাই?গাড়ি থামানোর কী মানে?”

“তোমাকে চাই।”

“রাস্তাঘাটে রোমিওগিরি কম কইরেন,নয়ত পাবলিক দিয়ে মাইর খাওয়াতে আমার বেশি সময় লাগবে না।”

“মাইর খেতেও রাজি আছি,কিন্তু তোমার এইরকম অবহেলা মানতে পারছি না।কাল থেকে একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছি কলই ধরছো না।তোমার বাড়িতে গেলাম দেখাও করলা না,দরজা বন্ধ করে বসে ছিলা।এসবে খুব পুড়ছি আমি,কালকের পুরো ঘটনাটা ত আমাকে বলতে দাও।আমার কথা না শুনেই এভাবে শাস্তি দিচ্ছো আমাকে।”

“এক্সকিউজ মি!আপনাকে আমি কী অবিশ্বাস করেছি?”

“না সেটা করো নি,কিন্তু,,,

” যতটুকু জিজ্ঞেস করছি ততটুকু বলবেন এর বেশি কথা বলবেন না।আমি আপনাকে অবিশ্বাস করি নি আমি জাস্ট আপনার ভুলটা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছি।আপনাকে একটা মেয়ে জড়িয়ে ধরে ছিল আপনি তাকে সাথে সাথে সরিয়ে না দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন।আমাকে দেখার পর সরিয়েছেন,এই কাজটা কী আপনার আগে করা উচিত ছিল না?আবার আপনারই সামনে একটা মেয়ে আমার মৃত্যু কামনা করছিল আর আপনি তাকে কিছুই বললেন না।তার জন্য কী আমার রাগ করা জায়েজ নয়?”

“সাবিহা আমি,,,

” চুপ একদম চুপ,কোন কথা নয়।পথ ছাড়ুন আমার লেট হচ্ছে।”

“না আগে তুমি আমার কথা শুনবে তারপর যাবে।”

“আপনার কথাতে চলবে নাকি?”

“দরকার পড়লে আমার কথাতেই চলবে,কারন সে অধিকার আমার আছে।”

“আপনার সাথে কথা বলে লাভ নেই,আপনি কথা শোনার মানুষ নন।”

কথাটা বলেই গাড়িতে উঠে বসলাম,আর চাচাকে ড্রাইভ করতে বললে উনিও তাই করে কিন্তু গাড়ি চলছে না।সেটা দেখে সাদাফ ভাই হাসতে হাসতে বলে উঠে,,,

“গাড়ি কী চাকা ছাড়া চলবে নাকি!আর চাকা কী হাওয়া ছাড়া চলে নাকি!”

কথাটা বলেই উনি আবারও হাসিতে মেতে উঠে।আমি আবারও গাড়ি থেকে নেমে চাকা চেক করে দেখি উনার কথাই সত্যি।আর কাজটা যে উনিই করেছে সেটা বুঝতেও বাকি নেই আমার।অসম্ভব রকম রাগ লাগছে,তাই রেগে উনার কলার টেনে ধরে বলে উঠলাম।

“এটা কী করলেন?এসব করে কী প্রমান করতে চাইছেন আপনি?”

“তোমার সাথে কথা বলতে চাইছি,সেদিনের ঘটা সবটা তোমাকে বলতে চাইছি।”

“আমি শুনতে চাই না,তাই ভালোয় ভালোয় পথ ছাড়ুন।”

উনি একটু সাইড হয়ে বলে উঠে,,,

“তোমাকে ত শুনতে হবেই আর তুমি কই যাবে যাও কে আটকে রেখেছে!আমি ত আটকাই নি।”

উনার কথাশুনে নিজের মাথার চুল নিজেরই ছিড়তে ইচ্ছে করছে।তাই উনাকে আর কিছু না বলে গাড়ি থেকে ব্যাগটা নিয়ে হনহনিয়ে হেঁটে চলেছি।আর সাদাফ ভাইয়ের গুষ্টি উদ্ধার করছি বকে।কিন্তু বেশিক্ষণ বকতে পারলাম না পাশ থেকে কেউ বলে উঠে।

“আমার বউটা রূপে রূপবতী,আর রাগে লঙ্কাবতি।কিন্তু যেমনই হোক আমারই ত বউ তাই না।আমার লক্ষী বউটা,রাগটা একটু কমাও না।”

আমি সামনের থেকে চোখ সরিয়ে উনার দিকে একপলক তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বলে উঠি,,,

“চোখটা একটু বন্ধ করুন।”

উনি অবাক হয়ে বলে উঠে,,,

“কেনো?কেনো?কেনো?”

“আগে করুন না তারপর দেখতেই পাবেন।”

“ঠিক আছে করছি কিন্তু কোন দুষ্টুমি করা যাবে না।”

কথাটা বলেই উনি চোখ বন্ধ করে ফেলেন,আর আমি সেই সুযোগে দেই এক দৌড়।আর একটা চলন্ত বাসে উঠে পড়ি,বাসে উঠেই হাসিতে মেতে উঠি আমি।কিন্তু হঠাৎ করেই মনে হলো আমি হাওয়ায় ভাসছি,পড়ে যাব এখনি।তাই চোখমুখ খিচে বন্ধ করে ফেলি,তখন কেউ বলে উঠে।

“মিসেস সাদাফ কী ভেবেছেন আমাকে বোকা বানিয়ে এভাবে পালিয়ে যাবেন হুম?কিন্তু সেটা ত হবার নয়,যতদিন আমি আছি ততদিন আমার থেকে পালাতে পারবে না।তাই পালানোর চেষ্টা করেও লাভ নেই।”

সাদাফ ভাইয়ের গলা শুনে আমি চোখ খুলে দেখি উনি আমাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আর বাসের সবাই আমাদের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে,কিন্তু উনাকে দেখো কেমন করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।যেনো আশেপাশের লোকজনের তাকানোতে উনার কিছুই যায় আসে না।আমি এবার আস্তে করে বলে উঠি,,,

“নামান আমাকে,সবাই দেখছে।”

“উুহু নামাবো না,যে দেখার দেখুক তাতে আমার কী?আমি ত অন্য কোন মেয়েকে কোলে নেই নি,আমার একমাত্র বউকে কোলে নিয়েছি।”

“প্লিজ এমন করবেন না,নামান আমাকে।আমার লজ্জা করছে।”

“ইসসস্ লজ্জায় একদম লাল হয়ে গেছে গো,ইচ্ছে করছে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে দিতে।”

আমি উনার কথা শুনে চমকে তাকাই উনার দিকে,আর উনি চোখ টিপ মারে।উনার লক্ষ্মণ আমার ভালো লাগছে না।

“প্লিজ এমন করবেন না,এটা পাবলিক প্লেস।ছোট বড় অনেকে আছে এভাবে থাকাটা মোটেও শোভনীয় লাগছে না,নামান আমাকে।”

উনি একটু ভেবে ফট করে বলে উঠে,,,

“ওকে ছাড়ব কিন্তু আমি ত কোন কাজ এমনি এমনি,,,

” এমনি এমনি করেন না আর আপনার একটা শর্ত আছে তাই ত!মেনে নিলাম যা বলবেন সেটাই করব কিন্তু এখন নামান আমাকে।”

“ভেবে বলছো ত?”

আমি দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠি,,,

“হ রে ভাই ভেবেই বলছি,এবার নামা আমারে।”

উনি আমার কথা শুনে বাঁকা হেঁসে কোল থেকে নামায়,আমি আর কোন দিকে না তাকিয়ে বাস থামাতে বলে তাড়াতাড়ি নেমে যাই।আমার পিছন পিছন উনিও নেমে যায়,আর আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে লজ্জা পাওয়ার মত ভাব নিয়ে বলে উঠে,,,

“বউ ও বউ,,,আমার না প্রেম প্রেম পাচ্ছে।”

উনার কথাশুনে আমি ধামধুম কয়টা কিল বসিয়ে দেই উনার পিঠে।আর উনি খিলখিলিয়ে হেঁসে চলেছে।শালা বজ্জাত কাজটা করল কী আজ!এতগুলো মানুষের সামনে,ছিঃ ছিঃ ছিঃ।

______________________________________

দেয়ালের সাথে দুই হাত চেপে ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে কাব্য ভাই আমাকে।উনি আমাকে বারবার বলে চলেছে আমার সাথে কথা বলতে চায় উনি।কিন্তু আমি সে কথা না নিয়ে প্রতিনিয়ত ছোটার চেষ্টা করে চলেছি উনার থেকে কিন্তু উনি ছাড়ছে না।

#চলবে…

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২৩

“আরে এভাবে টেনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন,ছাড়ুন আমাকে।”

সাদাফ ভাই আমার হাত ধরে টেনে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।আমি আমার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেই চলেছি কিন্তু উনি ছাড়ছেও না কিছু বলছেও না।কিছুক্ষণ পর উনি আমাকে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসে।রেস্টুরেন্টে এসে দেখি নিলয় ভাইয়া বসে আছে,আমি ভ্রু কুঁচকে সাদাফ ভাইয়ার দিকে তাকাই।সেটা দেখে সাদাফ ভাই ইশারায় বলে বসো,আমিও বসে পড়ি।আমি এবার ভদ্রতার খাতিরে নিলয় ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করি।

“কেমন আছেন ভাইয়া?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তুমি কেমন আছো সাবিহা?”

“আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।”

“নিলয় তুই গিয়ে ওর্ডার দিয়ে আয়।”

“কেন?ওয়েটার ত এখানেই আসবে ওর্ডার নিতে।উনি শুধু শুধু ওখানে কেন যাবে কষ্ট করে?”

“তুমি বড্ড বেশি কথা বলছো,চুপ করে বসো।”

নিলয় ভাইয়ার সামনে আমাকে এভাবে ধমক দিয়ে কথা বলাতে আমি গাল ফুলিয়ে চুপ করে বসে রই।সেটা দেখে নিলয় ভাইয়া আমাকে হাসানোর জন্য মুচকি হেঁসে বলে উঠে,,,

“সাবিহা একটা প্রশ্ন করি?”

আমি একবার সাদাফ ভাইয়ের দিকে তাকাই উনিও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি এবার নিলয় ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলে উঠি,,,

“জি ভাইয়া বলুন না কী বলতে চান?”

“ওয়েটার নাম কেন রাখা হয়েছে জানো?”

এটা আবার কেমন প্রশ্ন!আমি ভাবনায় পড়ে যাই,সেটা দেখে সাদাফ ভাইয়া আর নিলয় ভাইয়া মুচকি মুচকি হাসছে।আমি এবার গাল ফুলিয়ে বলে উঠি,,,

“জানি না ত।”

নিলয় ভাইয়া হাসল সাথে বজ্জাত সাদাফ ভাইটাও হাসল।আমার রাগ লাগল,উওর জানা নাই থাকতে পারে তার জন্য এমন হাসা লাগে নাকি!”

“ওয়েটার ওয়েট করায় বলেই ওয়েটার বলা হয়।”(আমার এক বড় ভাইয়ের বলা সংজ্ঞা🤭)

আমি কিছু বুঝতে না পেরে বলে উঠলাম,,,

“মানেহ?”

“মানে হল আমরা রেস্টুরেন্টে এসে কিছু ওর্ডার করলে ওয়েটার কিন্তু সেটা আমাদের ওয়েট করিয়েই দেয়।”

আমি নিলয় ভাইয়ার এমন কথায় হু হা করে হেঁসে উঠি,কী যুক্তি বাপরে বাপ।ওয়েটার ওয়েট করায় বলে নাকি নাম রাখা হয়েছে ওয়েটার।কথাটা ভেবেই আরেকদফা হাসিতে মেতে উঠলাম।তখন নিলয় ভাইয়া সাদাফ ভাইয়ার কানে বলে উঠল,,,

“নে ভাবির মুড ঠিক করে দিলাম,এবার তুই সামলা।আর সবসময় ধমক দিয়ে কিংবা রাগ দেখিয়ে কথা বলা বন্ধ কর।নয়ত তোর কপালে দুঃখ আছে,কারন সাবিহা অবলা নারী নয়।এখন আমি আছি বলে তকে কিছু বলল না নয়ত তোর মাথায় চুল থাকত কী না সন্দেহ আছে আমার।তাই সময় থাকতে থাকতে সাবধান হয়ে যা নয়ত কপালে দুঃখ আছে।”

নিলয় ভাইয়া কথাটা বলেই চলে যায়,আর সাদাফ ভাইয়া নিলয় ভাইয়ার কথাশুনে হাসল।কিন্তু কিছু বলল না,নিলয় ভাইয়া যাওয়ার পর সাদাফ ভাই আমার হাতটা উনার হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে উঠে।

“সরি সাবিহা,গতকালকের ঘটনার জন্য।”

আমি হাতটা সরাতে চাইলাম কিন্তু উনি ছাড়লেন না।

“হাত ছাড়ুন আমার,এমন হুটহাট হাত ধরাধরি আমার একদম পছন্দ নয়।”

“সাবিহা আমি জানি তুমি রাগ করেছো কিন্তু বিশ্বাস করো আমি সে সময়টাই পাই নি লিজাকে সরানোর জন্য।তার আগেই তুমি চলে আসো।”

“কেন সরাতে কী চব্বিশ ঘণ্টা লাগত নাকি!”

“সাবিহা প্লিজ বাঁকা বাঁকা কথা বলো না,রাগটা কমিয়ে বুঝার চেষ্টা করো একটু।তখন লিজা আমার রুমে এসেই হঠাৎ করে আমাকে জড়িয়ে ধরে।আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই তুমি চলে আসো।”

“আচ্ছা মানলাম উনি আপনাকে হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরেছে,আপনি সরানোর সময় পান নি।কিন্তু আপনার সামনে যে আমাকে এতগুলো কথা বলল তার জন্য ত আপনার কিছু বলার উচিত ছিল।তখন ত কিছু বলেননি,তখন ত মুখে গোল আলু ডুকিয়ে রাখছিলেন।”

“সাবিহা আমি মানছি আমি ভুল করেছি,কিন্তু এবারের মত মাফ করে দাও প্লিজ।সামনে থেকে এমন কিছুই হবে না,প্লিজ রাগ করে থেকো না।তুমি যে রাগ করে আমার সাথে কথা বলছো না এটা আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে।প্লিজ এবারের মত মাফ করে দাও আমাকে,আর কখনও এমনটা হবে না।”

“করব তবে একটা শর্ত আছে।”

“তোমারও শর্ত আছে!”

“হ্যাঁ আছে,আপনার থেকেই এই শর্ত দেয়া নেয়া শেখা।এবার আপনার ট্রিকস আপনার উপরই ট্রায় করব।রাজি থাকলে বলুন নয়ত আমি আসি।”

“না না বলো কী শর্ত আছে?”

“আমার শর্ত হল গরিলা মার্কা মহিলার আশেপাশে যাতে আর না দেখি আপনাকে।যদি উনার ছায়া ও আপনার পাশে দেখি তবে উস্টা মাইরা উগান্ডা নিয়ে ফেলব আপনাকে।”

“পাগলি একটা(গাল টেনে),রাজি আমি।”

আমি একগাল হেঁসে উনারও গাল টেনে বলে উঠি,,,

“গুড বয়।”

“আমার গুলুমুলু বউটা,পুরাই কিউটের ডিব্বা,দয়ার সাগর বেগম রোকেয়া,ডাকাত বউ আম,,,

কথাটা বলেই উনি জিব কামড়ে ধরে।

” কী😒?”

“হে হে,কই কিছু না ত।”

“আমি ডাকাত?”

“হে হে(বোকার মত হেসেঁ)তুমি ডাকাত হতে যাবে কেন?ডাকাত ত আমি,আমি ডাকাত হয়ে তোমাকে কেন ডাকাত বলব!আমি একদমই তোমাকে ডাকাত বলি নি,আমি ত বলেছি আমার বউটা খুব ভালো,খুব,,,

” হয়েছে হয়েছে আর মূলাপাম মারতে হবে না,আপনি যে কী কী বলতে পারেন সেটা আমার অজানা নয়।নেহাত এটা রেস্টুরেন্ট নয়ত আপনার খবর আছিল।”

“খবরা খবর পরে নিবে এখন নাও খেয়ে নাও সবাই।”

টেবিলে খাবার রাখতে রাখতে নিলয় ভাইয়া কথাটা বলে উঠল।আমি সাদাফ ভাইয়ের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে খাওয়া শুরু করলাম,তিনজনেই খেয়ে নিলাম।খাওয়ার পর নিলয় ভাইয়া আমাকে জিজ্ঞেস করে,,,

“সাবিহা এখন ত সবই ঠিক আছে,তোমার গলাও ত ঠিক হয়ে গেছে।এবার বলো ত সেদিন তোমার সাথে কী হয়েছিল?”

“আপুর বিয়েটা হোক তারপর এসব নিয়ে কথা বলব।এখন এসব নিয়ে কথা বললে ঝামেলা হবে আর আপুর বিয়ের আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে তাই এখন এসব বাদ দিন।আপুর বিয়ের পর সব বলব আমি,ততদিন আপনারা একটু অপেক্ষা করুন।
আর আমি এখন উঠি,আমাকে যেতে হবে।আপুর কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মামুর বাড়িতে আছে সেগুলো আনতে যেতে হবে।”

মামুর বাড়িতে যেতে হবে কথাটা শুনেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে সাদাফ ভাই।

“তোমাকে যেতে হবে না,কাব্য সেখানে আছে।ত যাওয়ার দরকার নাই।”

“কাব্য যেখানে থাকবে তার ভয়ে কী আমি সেখানে যাব না নাকি!কাব্যর ভয়ে কী আমি ঘর বন্দি হয়ে বসে থাকব?”

“আমি সেটা বলি নি কিন্তু এখন সেখানে না যাওয়াই ভালো।কখন কী করে বসে ঠিক নেই তাই যেও না।”

“আমার যাওয়াটা প্রয়োজন,চাইলে আপনিও সাথে আসতে পারেন সমস্যা নাই।কিন্তু তারপরও আমার যেতে হবে।”

কথাটা বলেই আমি বেরিয়ে আসি রেস্টুরেন্ট থেকে।আমার পিছন পিছন সাদাফ ভাই আর নিলয় ভাইয়াও আসে।তারপর তিনজনে মিলেই চললাম মামুর বাড়িতে।

_____________________________________

মামুর বাড়িতে ঢুকেই মামিমাকে দেখতে পাই ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে,আমি মামিমাকে দেখে দৌড়ে জড়িয়ে ধরি।

“কেমন আছো মামিমা?”

“আমার মা টা এসে গেছে না আমি একদম ভালো হয়ে গেছি।”

“কেমন আছেন আন্টি?” (সাদাফ ভাইয়া)

“আরে সাদাফ বাবা যে,আলহামদুলিল্লাহ বাবা ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?”

“আমিও ভালো আছি।”

“তোমার সাথে কে?চিনলাম না ত,সেদিনও হসপিটালে দেখেছিলাম।”

“আমার ফ্রেন্ড নিলয়।”

“ওহহ,তুমি কেমন আছো বাবা?”

“আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।”

“আচ্ছা মামিমা তোমরা কথা বলো আমি উপর থেকে আপুর লাগেজটা নিয়ে আসি।আর হিয়া স্কুল থেকে আসে নি?”

“না আসে নি ত,এখনই এসে পড়বে।তুই যা লাগেজটা নিয়ে আয়।”

“আচ্ছা মামিমা।”

তারপর আমি উপরে চলে আসি,আর মামিমা সাদাফ ভাইয়াদের সাথে কথা বলছে।আমি ধীরে সুস্থে হেঁটে যাচ্ছি মেঘ ভাইয়ার রুমে।কিন্তু হঠাৎ করে কেউ আমাকে টেনে আনে একটা রুমে।আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই সামনে থাকা মানুষটা আমার হাতটা দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।সবকিছু এত তাড়াতাড়ি হয়েছে যে আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি।

“চিৎকার করিস না সাবিহা,তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।”

কাব্য ভাইয়ার কথাশুনে আমি চোখ খুলি,আর উনাকে দেখে রেগে যাই খুব।নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি উনি ছাড়ছেই না।

“প্লিজ তুই শান্ত হ আমি তোর কোন ক্ষতি করব না।তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।কথা শেষ হলেই ছেড়ে দিব,প্লিজ আমার কথাটা শোন।”

আমি তারপরও উনার কোন কথা কানে না নিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছি।উনি এবার আমার হাত ছেড়ে আমার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।আমি রেগে উনার দিকে তাকাই,উনি সেটা দেখে বলে উঠে।

“ভালো করে বলছিলাম শুনছিলি না,তাই গায়ে হাত তুলতে হল।তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে,আমার কথাটা শোন প্লিজ।অনেক কিছু বলার আছে তকে,প্লিজ শান্ত হ।”

আমি উনাকে কিছু না বলে উনার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে রেগে হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে আসি।আর কাব্য গালে হাত দিয়ে চোখের পানি ফেলছে।

#চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে