ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-১৪+১৫

0
1250

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৪

কাব্য তার কেবিনে বসে আছে তখন তার কেবিনে হাতে খাবার নিয়ে প্রবেশ করে তার মা।কাব্য তার মাকে দেখে নড়েচড়ে বসে,কাব্যর মা কাব্যকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,

“খাবারটা রেখে গেলাম খেয়ে নিও!”

“মা তুমি আমার সাথে এভাবে কেন কথা বলছো!”

কাব্যর মা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠল,,,

“কীভাবে কথা বলছি!”

“তুমি কী আমার উপর রেগে আছো!”

“তোমার এমন মনে হল কেন?”

“তুমি যখন রেগে থাকো তখনই ত এভাবে তুমি করে ডাকো আমায় তাই জিজ্ঞেস করলাম।”

“তোমার উপর রেগে থাকার কী যথেষ্ট কারন নেই!”

“মা তুমি প্লিজ এখন সবার মত আমাকে দোষী করো না,আমি কিছু ভুল করি নি।তুমি তোমার ছেলেকে বিশ্বাস কেন করছো না?”

মিসেস লতা তার ছেলের কথা শুনে রেগে কাব্যর গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।কাব্য গালে হাত দিয়ে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।কাব্যর চোখে না আছে কোন অভিযোগ না আছে কোন অনুতাপ।কাব্যর চোখে স্পষ্ট রাগ ফুটে উঠছে,সেটা দেখে কাব্যর মা কাব্যর গালে আবারও থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।কাব্য এবার রেগে কিছু বলবে তার আগেই মিসেস লতা রেগে চিৎকার করে বলে উঠে,,,

“চোখ নামা একদম চোখ রাঙাবি না আমাকে।”

কাব্য তার মাকে আবারও কিছু বলতে চাইলে তিনি তার আগেই বলে উঠে,,,

“চুপ একদম চুপ,একটা কথাও বলবি না তুই।নিজের মাকে চোখ রাঙাচ্ছিস তুই ছিঃ।আমার ঘৃনা হচ্ছে তোর প্রতি,তুই যে আমার ছেলে সেটা ভাবতেই ঘৃনা লাগছে,থু।তোর থেকে এর বেশি কিছু আশা করা যায় না।
ছোট মেয়েটার সাথে এতকিছু করেও তুই বলছিস ভুল কিছু করিস নি!আর আমাকে চোখ রাঙানো ত তোর কাছে কিছুই না।সেদিন ছোট একটা কারনে মেয়েটাকে পশুর মত মেরেছিস,আর আজ মেয়েটার সাথেও নিশ্চয়ই ভালো কিছু করিস নি।তারপরও বলছিস তুই ভুল কিছু করিস নি,আরে মেয়েরা মায়ের জাত,আর তুই তোর নিজের মাকে চোখ রাঙাস।আবার তুই সে মেয়েকেই পশুর মত অত্যাচার করিস,ছোট মেয়েটাকে অপমান করিস কোন কারন না থাকা স্বত্বেও।তুই নিজেকে এতটাই প্রাধান্য দিচ্ছিস যে এত অন্যায় করার পরও মনে করিস তুই ভুল কিছু করিস না,করতে পারিস না যা করিস একদম ঠিক।কিন্তু মনে রাখিস নিজের কাছে ভালো থাকা মানে ভালো তুই নস।এতগুলো মানুষ তকে তোর অন্যায়টা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে কিন্তু তুই ত চোখ থাকতেও অন্ধ।নিজের ভুলটা দেখতেই পারছিস না,এতদিন ভালবাসায় অন্ধ ছিল আর এখন রাগে,সাথে তোর বাপও যোগ হয়েছে।তকে আর তোর বাপকে ত একটা মানুষও ভালো বলে না।নিজের রাগ কমা,আর মানুষের মত ভাব যে তুই ঠিক কতটা জঘন্যতম কাজ করেছিস।তোর সাথে কথা বলতেও বাঁধছে আমার।”

কথাটা বলেই মিসেস লতা রেগে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়,আর কাব্য তার মায়ের কথাগুলো এতক্ষণ খুব মনযোগ দিয়ে শুনেছে।কাব্য তার মায়ের কথায় ভাবতে থাকে,,,

“আসলেই কী আমি ভুল করেছি?আমি কী সত্যিই সাবিহার সাথে অন্যায় করেছি?কিন্তু আমি ত অকারণে কিছু করে নি,সাবিহার সাথে আজ এমনটা হওয়ার পিছনে সাবিহা দায়ী তাই আজ এসব হয়েছে।সাবিহার জন্য আমার ভালবাসা আমার থেকে দূরে,আমার থেকে আমার বন্ধুরা দূরে আর আজ আমার মাও আমাকে এভাবে দূরে ঠেলে দিয়েছে।সবকিছুর জন্য সাবিহা দায়ী।”

কথাগুলো কাব্য নিজ মনে আওড়ে আবারও নিজের মনকে প্রশ্ন করল,,,

“সত্যিই কী এসবের পিছনে শুধু সাবিহা দায়ী?তাতে কী আমার কোন হাত নেই!সাবিহা দোষ করত কিন্তু তার দোষের ক্ষেত্রে আমি ত সাবিহাকে তিনগুন বেশিই শাস্তি দিয়েছি।বাচ্চা মেয়েটার বয়সই বা কত?এই বয়সে ভুল হলে সেটা সুধরে দেয়ার দায়িত্ব ত বড়দেরই।সাবিহা অবুঝ কিন্তু আমি ত অবুঝ ছিলাম না,আমি ত ইচ্ছে করলেই ঠান্ডা মাথায় সাবিহাকে বুঝিয়ে সবটা ঠিক করতে পারতাম।কিন্তু আমি ত সেটা করি নি উল্টো মেয়েটাকে আঘাত করেছি।”

কাব্য আর ভাবতে পারছে না,এসব ভেবে কাব্যর মাথাটা ব্যাথা করে উঠল।কাব্য তার মাথা চেপে ধরে বিছানায় শুয়ে পড়ল।

______________________________________

ছাঁদে পা ঝুলিয়ে বসে আছি,দৃষ্টি আমার সুদূর আকাশপানে।আকাশে আজ তারা নেই,চাদটাও মেঘের আড়ালে,চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার।আমার মনের আকাশে যেমন আজ মেঘ জমেছে তেমনি এই আকাশেও মেঘ জমেছে।তাতে মনটা যেনো আরো বিষন্নতায় ঘিরে ধরেছে,হসপিটাল থেকে আজ বিকালেই বাড়ি ফিরেছি।
আর রাতে ডিনার করতে গিয়েই জানতে পারি আপুর বিয়েটা বাবা ভেঙ্গে দিয়েছে।কথাটা ভাবতেই চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল।সব কিছু আমার জন্য হয়েছে,আমি কেন কাব্য নামের অমানুষকে ভালবাসলাম?কেন আমি তার কাছে ভালবাসার দাবী নিয়ে গিয়েছি?আমি তাকে ভাল না বাসলে ত আজ এত কিছু হত না।সবকিছুর জন্য আমি দায়ী,আমার জন্য আজ দুইজন ভালবাসার মানুষ আলাদা হওয়ার পথে।মেঘ ভাইয়া আর আপু ত দুজন দুজনকে খুব ভালবাসে।কীভাবে থাকবে একে অপরকে ছেড়ে,আপু ত কথাটা শোনার পর থেকে এক নাগাড়ে কেঁদেই চলেছে।আমার মাথায় শুধু একটাই চিন্তা ঘুরছে কীভাবে আপু আর মেঘ ভাইয়ার বিয়েটা দেয়া যায়!কিন্তু মাথাতে কিছুই আসছে না।
হঠাৎ হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে ফিরে তাকাই আর দেখি সাদাফ ভাই।উনাকে দেখে কোন রিয়েক্ট করলাম না,হাতটা সরিয়ে নিয়ে আবারও আকাশের দিকে তাকালাম।সাদাফ ভাই আমার হাতটা আবার নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিলো।আমি আবারও ছাড়াতে গেলে উনি ছাড়লেন না।উনি আমার গালে এক হাত দিয়ে তার দিকে ঘুরিয়ে নরম গলায় বলে উঠে,,,

“শীলার বিয়েটা ভেঙ্গে গেছে বলে মন খারাপ?”

আমি উনার থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলাম, ছাড়লেন না উনি আরো শক্ত করে ধরলেন।উনি মুচকি হেঁসে বলে উঠলেন,,,

“চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে,আমি আঙ্কেলের সঙ্গে কথা বলব।”

বাবার সাথে কথা বলবে শুনেই হঠাৎ আমার মুখে হাসি ফুটে উঠল।উনিই পারবে বাবাকে রাজি করাতে,উনি ম্যাজিক জানে কী না সেটা জানা নেই কিন্তু এর আগে উনি বাবাকে কীভাবে যেন মেনেজ করেছিল হিয়াকে আমার সাথে নতুন স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য।তাই আমি খুশিতে গদগদ হয়ে নিজের গলার কাটা জায়গার কথা বেমালুম ভুলে কিছু বলব তার আগেই উনি আমার ঠোঁটে তার আঙুল বসিয়ে বলে উঠে,,,

“কথা বলার চেষ্টা করো না ব্যাথা পাবে।”

উনার কথা শুনে হাসিমুখটা নিমিষেই চুপসে গেলো।কথা না বলতে পারার কষ্টটা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি আমি।সাদাফ ভাই এবার বাঁকা হেসে আমাকে আবারও বলে উঠল,,,

“আমি কিন্তু এমনি এমনি কোন কাজ করি না বুঝেছো!তোমার বাবাকে মেঘ ভাইয়া আর শীলার বিয়েতে রাজি করানের জন্য কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।রাজি থাকলে বলো চুটকি মেরে আঙ্কেলকে রাজি করিয়ে ফেলব।”

উনার কথাটা শুনে এবার রাগ হল,ঐদিনও এমন করেছে আর আজও।এভাবে কারো দুর্বলতার সুযোগ নেয়া ঠিক না,লাগবে না উনার সাহায্য।দরকার পড়লে দুজনকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে দিব নয়ত মেঘ ভাইয়া আর আপুকে কিডন্যাপ করে বিয়ে দিব তারপরও উনার সাহায্য নিব না।কথাগুলো মনে মনে বলে হঠাৎ করেই চুপ করে গেলাম তারপর কিছু একটা ভেবে বাকাঁ হেসে সাদাফ ভাইয়ার নাকে আস্তে একটা ঘুসি দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।আমার কান্ডে সাদাফ ভাইয়া চোখ বড়বড় করে তাকায় আমার দিকে।আমি সেসবে পাত্তা না দিয়ে চলে আসতে নিলে সাদাফ ভাইয়া উঠে দাঁড়ায় আর বলে উঠে,,,

“তোমার মতিগতি ত আমার ঠিক লাগছে না,নিশ্চয়ই কোন শয়তানি বুদ্ধি করছো তাই না?তুমি কী জগাখিচুরি পাকাচ্ছো বলো ত আমাকে?কী চলছে তোমার মনে!কোন শয়তানি বুদ্ধি থাকলে ফটাফট বলে ফেলো নয়ত ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব।”

আমি উনার কথা শুনে একবার নিচের দিকে উঁকি দিলাম।তারপর সুন্দর করে একটা হাসি দিয়ে উনাকে ধাক্কা দিলাম,উনি জোড়ে একটা চিৎকার করে ঠাস করে নিচে পড়ে যায়।আমি হাত দুইটা ঝাড়া দিয়ে হাসতে হাসতে নিচে চলে এলাম।

______________________________________

শীলা তার রুমে বসে থেকে মেঘের দেয়া সবগুলো গিফট দেখছে আর চোখের পানি ফেলছে।মেঘের দেয়া প্রতিটা উপহার খুব যত্ন সহকারে তুলে রেখেছে শীলা।শীলার ফোনে সেই কখন থেকে মেঘ কল দিয়ে চলেছে তাতে শীলার কোন হুসই নেই।কিন্তু হঠাৎ জোড়ে কিছু পড়ার শব্দ শুনে শীলা ভয় পেয়ে যায়।আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে সে দরজা খুলে বের হয়ে যায় রুম থেকে।বাইরে এসে দেখে তার বাবা,মা দৌড়ে বাইরে যাচ্ছে।সেটা দেখে শীলার মনে কেমন একটা ভয় হল,শীলাও তাদের পিছন পিছন গেলো।অরা গিয়ে যা দেখল তার জন্য তারা কেউই প্রস্তুত ছিল না।সবাই এমনভাবে দেখছে যে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।

#চলবে…

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৫

হঠাৎ করেই শীলা জোড়ে হেঁসে উঠে,সেটা দেখে সাদাফ কটমট চোখে শীলার দিকে তাকায় আর বলে উঠে,,,

“এত হাসার কী হল!একদম হাসবি না,হাসলে তোর দাঁতগুলো হাতুড়ি দিয়ে ভাঙ্গব বজ্জাত মাইয়া।”

“আমার দাঁত পড়ে ভাঙ্গিস কিন্তু এখন বল তোর এই অবস্থা কেন?”

“হ্যাঁ সাদাফ সত্যিই ত তোমার এ অবস্থা কেন?আর এমন একটা আওয়াজ হয়েছে আমরা ভাবলাম কী না কী পড়ল?কিন্তু এসে দেখি তুমি।”

সাদাফ শীলা আর মনির সাহেবের কথা শুনে একবার ছাদের দিকে তাকায় কিন্তু সাবিহা সেখানে নেই।সাদাফ আবার আশেপাশে চোখ বুলিয়ে সাবিহাকে খুঁজে আর দেখতে পায় সাবিহা তার রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে চিল মুডে চকলেট খাচ্ছে অর দিকে তাকিয়ে।সেটা দেখে সাদাফের মেজাজ বিগড়ে যায়,ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে এখন এমন ভাব ধরছে যেন কিছুই হয় নি।সাদাফ জোর পূর্বক হেঁসে বলে উঠে,,,

“খুব গরম লাগছে তাই গোসল করছি আঙ্কেল আর লাফ দিয়ে পানিতে নেমেছি তাই একটু আওয়াজ হয়েছে।”

“গোসল করছিস তাও এত রাতে আর সুইমিং পুলে!আর গোসলই যখন করবি তখন নাকে কালির মাখামাখি কেন করলি?”

সন্দেহ করে শীলা বলে উঠে আর শীলার কথাশুনে সাদাফ প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে শীলার দিকে তাকায়।শীলা সেটা বুঝতে পেরে বলে উঠে,,,

“নাকের মধ্যে কালি কেন?”

সাদাফ শীলার কথায় নাকে হাত দিয়ে হাত সামনে এনে দেখে সত্যি সত্যি কালি,তার মানে সাবিহা তখন নাকে কালি দিয়েছিল ঘুসি দিয়ে।কথাটা ভেবেই সাদাফের রাগ উঠে যায়,সে চুপচাপ পানি থেকে উঠে দাঁড়ায় আর মনির সাহেবকে বলে উঠে,,,

“আঙ্কেল কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি!”

“হ্যাঁ বলো না কী বলবে।”

“আমার জামা গুলো ত ভিজে গেছে ত যদি,,,

” হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি ভিতরে যাও আমি জামা কাপড় নিয়ে আসছি।”

মিসেস হেনার কথায় সাদাফ মুচকি হেঁসে হনহনিয়ে সাবিহার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করতে করতে ভিতরে চলে আসে।

_____________________________________

আমার সামনে ভিজা অবস্থায় অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁড়িয়ে আছে সাদাফ ভাইয়া,আর আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চকলেট খাচ্ছি।আমার এমন ভাব দেখে সাদাফ ভাইয়ের গা জ্বলে যাচ্ছে রাগে,তাই তিনি হনহনিয়ে আমার কাছে গিয়ে আমার হাত থেকে চকলেটটা নিয়ে নেয়।আমি সেটা দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকাই সাদাফ ভাইয়ের দিকে।সাদাফ ভাইয়া সেটা দেখে বলে উঠে,,,

“তোমার সামনে যে কেউ রেগে দাড়িয়ে আছে সেটা কী দেখেছো!”

আমি উনার কথায় পাত্তা না দিয়ে উনার দিক থেকে চোখ সরিয়ে উঠে বারান্দায় আসার জন্য পা বাড়াই। আর উনি আমার হাত চেপে ধরে উনার সামনে দাঁড় করায় আর আমার দুই কাঁধে হাত দিয়ে রেগে ধমকে বলে উঠে,,,

“এই আমার কথা কী তোমার কানে যাচ্ছে না!আমি কিছু বলছি তোমাকে আর তুমি এমন ভাব নিচ্ছো কেন?”

সাদাফ ভাইয়ের কথাশুনে রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে,
কতবড় সাহস আমাকে ধমক দেয়!শালা পঁচা কুমড়ো আজ খালি কথা বলতে পারছি না বলে নয়ত কয়টা কড়া কথা শুনিয়ে দিতাম।কিন্তু সেটা ত হওয়ার নয় এখন কিন্তু বেটাকে শিক্ষা দিতে না পারলেও শান্তি পাব না।তাই উনার হাত আমার কাঁধ থেকে সরিয়ে উনার বুকের উপর ক্রস আকারের মত করে উনার হাতটা পিছনে চেপে ধরে উনার পিছনে দাঁড়াই আমি।আমার কাজে সাদাফ ভাই হাতে ব্যাথা পেয়ে চোখ মুখ কুঁচকে ছুটার জন্য ছটফট শুরু করে,আমি সেটা দেখে আরো জোড়ে চেপে ধরি।উনি এবার নরম গলায় বলে উঠে,,,

“সাবিহা কী করছো!ছাড়ো আমাকে লাগছে ত।”

লাগার জন্য ত তরে ধরছিই এইভাবে,আমাকে ধমক দেয়া তাই না এবার বুঝ কেমন লাগে।কথাগুলো নিজের মনে ভেবেই শয়তানি হাসি দিলাম।সাদাফ ভাই আবারও রেগে বলে উঠল,,,,

“সাবিহা আমার হাতটা ছাড়ো নয়ত আমি আঙ্কেলকে ডাকব,আর আঙ্কেল আসলে কিন্তু আমি উনাকে বলে দিব তুমি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ছাদ থেকে সুইমিং পুলে ফেলেছো।”

উনার কথাশুনে আমার হাওয়া ফুস হয়ে যায়,কারন বাবা এটা জানলে আমাকে আস্ত রাখবে না।সারা পৃথিবীর সাথে লড়তে পারব কিন্তু বাবার সামনে আমি কিছুই না।কথাগুলো ভেবেই উনার হাতের বাঁধন আলগা করতেই উনি পিছন ফিরে আমার গাল হালকা চেপে ধরে বলে উঠে,,,

“এবার কী করবে হুম!তখন আমি মজা করে বলেছি শুধু ফেলে দিব আর তুমি সত্যি সত্যি আমাকে ফেলে দিলে।নিচে যদি সুইমিং পুল না থাকত তবে ত আল্লার পেয়ারা বান্দা হয়ে যেতাম।তখন তোমাকে বিয়ে করার শখটা কীভাবে পূরন করতাম হুম!”

শালা হাতির নাতি তোর বিয়ের কাঁথায় আগুন,তোর মত গরুকে কে বিয়ে করব!আর তোরে ত সুইমিং পুল দেখেই নিচে ফালাইছি,আমার কী মাথা খারাপ নাকি যে মানুষ খুন করব হুহ।আমাকে থ্রেট করার শাস্তি এটা,কথায় কথায় থ্রেট মারো চান্দু এবার থেকে যতবার থ্রেট করবা ততবার এভাবেই শাস্তি দিব।একটু আগেও বাবাকে বলে দিবে বলে থ্রেট দিলি না এর শাস্তিও তকে দিব,একটু অপেক্ষা কর তারপর দেখিস।আমাকে চুপ থাকতে দেখে সাদাফ ভাইয়া আবারও বলে উঠল,,,

“কানে ধরো।”

আমি উনার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকাই,উনি সেটা দেখে বলে উঠে,,,

“এত ভ্রু কুঁচকাও কেন হে!আমার সামনে এত ভ্রু কুঁচকাবা না,এমন করলে ইচ্ছে করে টুপ করে একটা মিষ্টি খাইতে।তাই সাবধান,নয়ত অঘটন ঘটে যাবে যেকোন সময়।আর কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি কানে ধরো,আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার জন্য।”

আমি উনার শেষের কথাটা ছাড়া একটা কথাও বুঝতে পারি নি তাই আবারও ভ্রু কুঁচকাই,উনি সেটা দেখে আমাকে উনার কাছে টেনে গালে একটা কামড় বসিয়ে দেয়,আমি ছোটার জন্য চেষ্টা করলে আমার দুই হাত চেপে ধরে।আর কামড় দেয়া জায়গায় চুমু দেয়।আমি উনার কাজে এবার রেগে যাই,কী পেয়েছে সে আমাকে এভাবে একটা মেয়েকে যখন তখন চুমু দিবে।তাই ছাড়া পাওয়ার জন্য এবার মাথা দিয়ে উনার মাথায় বারি দেই।আর উনি ব্যাথা পেয়ে দূরে সরে য়ায়,আমি উনার থেকে ছাড়া পেয়ে উনার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বেরিয়ে যাই ঘর থেকে।আর সাদাফ ভাই উনার মাথায় আর গালে হাত ডলতে ডলতে গাল ফুলিয়ে বলে উঠে,,,

“এই মেয়েরে বিয়ে করলে আমার আর বাবা ডাক শুনতে হবে না।শান্তিতে একটু রোমান্সও করতে দেয় না,রোমান্স করতে গেলে ফাইট শুরু করে দেয়।এখন মনে হচ্ছে তায়কোয়ন্দো শেখানোটাই ভুল হয়েছে।আনরোমান্টিক,নিরামিষ,রোমান্সের বাধাঁ দেয়ার ভিলেন মার্কা মেয়ে একটা,দেৎ ভাল্লাগে না।”

____________________________________

মনির সাহেব আর উনার স্ত্রী তাদের রুমে বসে হাসছে,এমন ভাবে হাসছে যে হাসিতে গড়াগড়ি খাওয়ার মত অবস্থা।মনির সাহেব এবার মিসেস হেনাকে বলে উঠে,,,

“তোমার মেয়েটা কিন্তু অনেক দুষ্টু হয়ে গেছে।”

“তা আর বলতে,কী কাজটা করল দেখেছো তুমি।”

“সাদাফের অবস্থা নাজেহাল করে ছাড়বে সাবিহা আজ যা বুঝলাম আমি।”

কথাটা বলেই মনির সাহেব শব্দ করে হেঁসে উঠল,মিসেস হেনাও উনার হাসির সাথে তাল মেলালো আর বলে উঠল,,,

“সে তুমি যাই বলো,সাদাফ কিন্তু সাবিহাকে খুব ভালবাসে আর আমাদের মেয়েকে আগলেও রাখবে।”

“হুম।”

কথাটা বলে মনির সাহেব আবারও হেঁসে উঠল,আর তখন তাদের ঘরে আসে সাবিহা।সাবিহা এসেই গাল ফুলিয়ে তার বাবার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।সেটা দেখে মনির সাহেব হাসি থামিয়ে সাবিহার মাথায় হাত বুলিয়ে নরম গলায় বলে উঠে,,,

“আমার প্রিন্সেসের কী শরীর খারাপ লাগছে!”

আমি মাথা নেড়ে না জানাই যার অর্থ শরীর খারাপ লাগছে না।তখন মা বলে উঠল,,,

“এবার বল সাদাফকে পানিতে ফেলেছিলি কেন?”

মায়ের কথা শুনে আমি শোয়া থেকে উঠে বসি,মানে কী?সাদাফ ভাইয়া কী বলে ফেলল নাকি যে আমি উনাকে ছাদ থেকে সুইমিং পুলে ফেলে দিয়েছি।কথাটা ভেবেই ভয়ে গুটিয়ে গেলাম,বাবা জানতে পারলে খুব রাগ দেখাবে।মা আবারও বলে উঠল,,,

“অবাক হয়ে লাভ নেই সব জানি আমরা।”

আমি মার দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকালে মা মুচকি হেঁসে বলে উঠে,,,

“সাদাফ আর তুই যখন কথা বলছিলি তখনই শুনেছি।আমি সাদাফের জন্য পোশাক নিয়ে গেছিলাম,বেচারা ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে।ত গিয়ে দেখি আপনি অর হাত চেপে ধরে আছেন,তখন আমি কিছু বলব তার আগেই সাদাফ বলে উঠে যে আপনি সাদাফকে নিচে ফেলেছেন।আর বেচারা তকে বাঁচানোর জন্য তখন মিথ্যা কথা বলেছে যে তার নাকি গরম লাগছে তাই গোসল করছে।”

আমি মার কথা শুনে ভয়ে ভয়ে বাবার দিকে তাকাই, তাকিয়ে দেখি বাবা গম্ভীর মুখ করে আছে।সেটা দেখে আমার প্রানপাখি যায় যায় অবস্থা,আমি শুকনো একটা ঢোক গিলে বাবার থেকে সরে এসে ভো দোড় দেই আর এক দৌড়ে আপুর রুমে।আমার কান্ড দেখে বাবা আর মা দুজনেই হেঁসে উঠে।

______________________________________

হাত-পা বাঁধা অবস্থায় চেয়ারে বসে আছে দুজন,আর তাদের সামনেই একজন হুডি ওয়ালা লোক বসে আছে।হুডি ওয়ালা লোকটা এবার ফোন বের করে কাউকে কল দেয় আর রেগে ধমকে বলে উঠে,,,

“ছোট একটা কাজ দিয়েছিলাম সেটা করতে এতক্ষণ লাগে!তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো নয়ত পাখি আরো ছটফট করবে।তাড়াতাড়ি কাজটা সেরে এদের ছটফটানিটা কমাতে হবে,সো তাড়াতাড়ি এসো।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে