ভালবেসে রাখব কাছে পর্ব-০৬

0
1311

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৬

শীলা পার্কের একটা বেঞ্চে বসে আছে,আর তার সামনেই মেঘ কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কারন মেঘ আজ শীলার সাথে দেখা করতে সাত মিনিট লেট করেছে তাই মেঘকে শীলা শাস্তি দিয়েছে যে সাত মিনিট কানে ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে।বেচারা মেঘ অনিচ্ছা সত্বেও কানে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।আশেপাশের সবাই মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে,কেউ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আর কেউ হাসছে।সেটা দেখে মেঘ নিজেকে যতটা সম্ভব লুকাতে চাইছে।আর এসব কিছু শীলা বেশ এনজয় করছে।এভাবে সাত মিনিট কেটে যাওয়ার পর মেঘ শীলার হাত ধরে বলে উঠে,,,

“চলো এখান থেকে,জায়গা গরম হয়ে গেছে এখানে আর থাকা যাবে না।”

“কেন?কী হয়েছে এখানে?এখানে যথেষ্ট ঠান্ডা লাগছে।”

“বইন আমার চুপচাপ এখান থেকে চল,সাত মিনিট কানে ধরে দাঁড় করিয়ে রেখে ত সেলিব্রিটি বানাইয়া ফেলছো।মানসম্মান সব ইনজেকশন হয়ে গেছে।সবাই কীভাবে তাকিয়ে আছে দেখেছো তুমি,চলো এখান থেকে।”

মেঘের কথা শুনে শীলার খুব হাসি পাচ্ছে,তাই মেঘকে আরেকটু জ্বালানোর জন্য বলে উঠল,,,

“না আমি যাব না,জায়গাটা খুব সুন্দর আর খুব ভাল্লাগতাছে আমার কাছে।”

“যাবে না তুমি?”

“উহু যাব না,তুমিও যাবে না।চুপচাপ আমার পাশে বসো ত,কথা না বলে।”

“ওকে।”

কথাটা বলে মেঘ শীলার পাশে গিয়ে শীলাকে কোলে তুলে নেয়,হঠাৎ এমনটা হওয়াতে শীলা ঘাবড়ে যায়।আর তাড়াতাড়ি মেঘের শার্ট আঁকড়ে ধরে,সেটা দেখে মেঘ শয়তানি হাসি দিয়ে বলে উঠে,,,

“এখন যদি তোমাকে আমি ফেলে দেই তবে আমার সম্মানের মত তোমার সম্মানও ইনজেকশন হয়ে যাবে।”

কথাটা বলেই মেঘ আবার খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠে,সেটা দেখে শীলা রেগে বলে উঠে,,,

“খালি ফেলো তারপর দেখো না কী করি তোমাকে,একদম ডিভোর্স দিয়ে দিব😤।”

“বাপরে বিয়ে না হতেই ডিভোর্স,ত চলো বাসরটাও সেরে ফেলি।”

মেঘ শীলার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলে উঠল,শীলা সেটা দেখে বলে উঠল,,,

“উস্টা মাইরা পঁচা পানিতে নিয়ে ফেলব,আরেকবার এই কথাটা বললে।সেদিন সাবিহার সামনেও এমনটা বলেছো আর এখনও!লজ্জা সরম কী সব নদীর জলে ভাসিয়ে দিছো নাকি হে?”

“হে নদীর জলেই ভাসিয়ে দিয়েছি,আর এখন তোমাকেও ভাসিয়ে দিব।”

কথাটা বলেই মেঘ শীলাকে ফেলে দেয়।শীলা ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে আল্লা বলে হালকা চিৎকার করে উঠে,কিন্তু শীলা কোন ব্যাথা না পাওয়ায় চোখ খুলে দেখে সে গাড়িতে বসে আছে।আসল কাহিনি হল শীলা তখন কথা বলতে এতটাই ব্যাস্ত যে মেঘ গাড়ির দরজা খুলে ফেলেছে খেয়ালই করে নি।শীলাকে গাড়িতে বসিয়ে মেঘ সিট বেল্ট লাগিয়ে দেয় আর শীলার ঠোঁটে হালকা একটু চুমু খায়।সেটা দেখে শীলা চোখ বড়বড় করে তাকায় মেঘের দিকে।আর মেঘ শীলাকে চোখ মেরে নিজের সিটে বসে ড্রাইভ করা শুরু করে।

____________________________________

“খাব না,কিচ্ছু খাব না আমি।মামুকে রাজি না করালে কিছু খাব না আমি।”

“সাবিহা একদম পাগলামি করবে না,চুপচাপ খেয়ে নাও মেডিসিন নিতে হবে তোমাকে।”

“বাবা তুমি একটু মামুর সাথে কথা বলো না,আমি হিয়াকে ছাড়া নতুন স্কুলে ভালো নেই।হিয়াকে খুব মিস করছি আমি।”

“নতুন স্কুলে তোমার কারো সাথে বন্ধুত্ব হয় নি?”

“হয়েছে ত অনেকগুলো ফ্রেন্ড হয়েছে।”

“তবে তাদের সাথে সময় দেও দেখো আস্তে আস্তে ভালো লাগবে।”

“ভালো লাগবে না বাবা,আমার হিয়াকেই চাই।প্লিজ বাবা তুমি মামুকে রাজি করাও না।”

“হিয়া কোন স্কুলে পড়বে সেটা অর পরিবারের ব্যাপার আমরা জোড় করার কে সাবিহা?”

“বাবা জোড় কোথায় করছো?শুধু বলবে আমার একা ভালো লাগছে না নতুন স্কুলে তাই হিয়াকে চাইছি আমি।ত হিয়াকে যাতে আমার সাথে নতুন স্কুলে ভর্তি করায়।”

“তবে তুমিই তোমার মামুকে বলো সবটা।”

“মামুর সাথে কথা বলতে ভয় করে,নয়ত তোমাদের কাউকে বলতাম না আমি।তুমি মামুকে বলো নয়ত এখান থেকে যাও আমি খাব না কিছু।”

“সাবিহা তুমি এখনও ছোট বাচ্চা নও যে এমন মর্জি করবে আর তোমার মর্জি মত আমাদের চলতে হবে।তোমার মাকে পাঠাচ্ছি তখন বুঝবে তুমি।ভালো করে বুঝালাম কিন্তু বুঝলে না,তোমার মা এসে যখন পিঠে দুইটা দিবে তখন ঠিকই খাবে।আমি এখনই তোমার মাকে পাঠাচ্ছি দাঁড়াও।”

কথাটা বলেই বাবা চলে যায় রুম থেকে,আর আমি জোড়ে চিল্লিয়ে বলে উঠি,,,

“হে যাও যাও,আমাকে কেউ ভালবাসে না।আমাকে মারলেও আজ আমি খাব না।”

কথাটা বলেই পিছন থেকে চিপস নিয়ে চিপস খাওয়া শুরু করি আর ফোনটা আড়াল থেকে বের করে হাসিমুখে বলে উঠি,,,

“দেখলি বনু আমার বাপটা কেমন হিটলার হয়ে গেছে,কত করে বললাম কোন কাজ হইল না।”

“হ রে বইন সবই ত দেখলাম ভিডিও কলে,এখন কী করবি ভাবছিস?”

আমি মুখে আরেকটা চিপস দিয়ে চিবুতে চিবুতে বললাম,,,

“তুই মামুকে একটু বল না বনু,আমি না হয় মামুকে ভয় পাই কিন্তু তোর ত বাবা তুই বলে দেখ না।”

“না বাবা না আমি এটা পারব না,বাবার সাথে আমি ভয়ে ঠিক করে কথাই বলি না আর সেখানে বলব আমি স্কুল চেন্জ করব।তবে ছোট বেলার মত আবার আছাড় দিয়ে ব্যাংঙ বানাইয়া ফেলব।”

“উহুম,উহুম কেউ একজন বলেছিল সে কিছু খাবে না কিন্তু এখন ত অন্য কিছুই দেখছি।”

কারো গাল শুনে আমি ঘুরে তাকিয়ে দেখি সাদাফ ভাইয়া হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি সঙ্গে সঙ্গে চিপসের প্যাকেটটা লুকাতে গিয়ে তাড়াহুড়োয় ফোনটা লুকিয়ে ফেলি।ফোন লুকিয়েছি কথাটা মাথায় আসতেই আবার তাড়াহুড়ো করে ফোনটা সামনে এনে চিপসের প্যাকেটটা লুকিয়ে ফেলি পিছনে।আমার কাহিনী দেখে হিয়া শয়তানটা মিটমিটিয়ে হাসছে,আর সাদাফ ভাইয়াও হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে।সাদাফ ভাইয়াকে দেখে আমি হালকা হেঁসে বলে উঠি,,,

“ভাইয়া আপনি আমার রুমে?আপু ত এখানে নেই।”

সাদাফ ভাইয়া রুমের ভিতরে ডুকে বলে উঠে,,,

“আমি ত শীলার সাথেই দেখা করতে এসেছিলাম কিন্তু এসে শুনি তুমি খাবে না।তাই দেখতে এলাম কেন খাবে না,কিন্তু এসে ত দেখি আরেক কাহিনি।তা মেম এসব করার কারনটা কী বেস্টুকে নিজের সাথে নতুন স্কুলে নিয়ে আসা?”

“না মানে,,,

আমার কথা শেষ করার আগেই ফোনে হিয়া খুশিতে গদগদ হয়ে বলে উঠল

” হ্যা ভাইয়া একদম ঠিক ধরেছেন,আসলে ছোট কালের বান্ধবী ত তাই আলাদা স্কুলে কারোরই ভালো লাগছে না।তাই সাবিহা আর আমি মিলে প্ল্যান করছিলাম কীভাবে একসাথে হওয়া যায় আবার?”

“ওও এই ব্যাপার,সেটা ত আমাকে বললেই হয় আমিই সবটা মেনেজ করতে পারতাম।তোমাদের আর এত কষ্ট করার কোন প্রয়োজন হত না।”

“মানেহ?আপনি কী করবেন?”

“আমি আঙ্কেল কে রাজি করাতে পারব তোমার মামুর সাথে কথা বলার জন্য।”

“সত্যি!”

“হুম সত্যি।”

“তবে ভাইয়া আপনি প্লিজ বাবাকে রাজি করান না!”

“রাজি করাতে পারি কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।”

শর্তের কথা শুনেই আমার মুখটা কালো হয়ে গেলো,তাই সমস্ত উত্তেজনা দমিয়ে বলে উঠলাম,,,

“এর জন্য শর্তও মানতে হবে?”

“শর্ত বলতে তেমন কিছু নয় শুধু আমার সাথে একটা জায়গায় যাবে।”

“কী?”

“ভাইয়া রাজি রাজি সাবিহা রাজি,আপনি প্লিজ মামুকে রাজি করান।”

“এই হিয়ার বাচ্চা হিয়া আমি রাজি তুই এটা বলছিস কেন?”(রেগে)

“তুই চুপ কর,আর ভাইয়া আপনি প্লিজ ফুপাকে রাজি করান।আর সাবিহাকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার।”

“খুব খুশি হলাম তোমার কথা শুনে,তুমি তবে সাবিহাকে রাজি করিয়ে রেডি হতে বলো।আমরা আধা ঘন্টার মধ্যে বের হব।ততক্ষণে আমি আঙ্কেলকে রাজি করিয়ে আসি।”

কথাটা বলেই সাদাফ ভাইয়া বের হয়ে যায়,আর আমি রেগে হিয়াকে বলে উঠি,,,

“শয়তান মাইয়া,বজ্জাত মাইয়া এসব কী কইলি তুই?আমি সাদাফ ভাইয়ার সাথে যাব মানে?”

“আরে এটা করলে আমাদেরই লাভ,কারন সাদাফ ভাইয়া ফুপাকে রাজি করাবে আর ফুপা বাবাকে।তারপর আমরা দুজন আবার একসাথে উফফ ভাবতে পারছিস তুই,আমরা আবার একসাথে স্কুলে যাব,ক্লাস করব আরো কত কী করব!আর তকে ত শুধু উনার সাথে যাওয়ার জন্যই বলছে,আর কিছু করতে ত বলছে না।”

“কিন্তু,,,

” কোন কিন্তু নয় তাড়াতাড়ি রেডি হ,নয়ত তোর সাথে কাট্টি তেরো দিনের জন্য।”

বলেই হিয়া ফোনটা কেটে দেয় আর সাবিহা বেচারি ফোনটা হাতে নিয়ে গভীর ভাবনায় ডুব দেয়।

_____________________________________

কাব্যর আর সাবিহা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে,সাবিহা ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে।আর কাব্য চোখে পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,কাব্যর কাছে সবকিছু অগোছালো লাগছে।এমনটা কী হওয়া খুব প্রয়োজন ছিল,এভাবে সবটা কেন ধ্বংস হয়ে গেলো।

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে