ভালবাসি শুধু তোমায় আমি পর্ব-০৮

0
1312

#ভালবাসি_শুধু_তোমায়_আমি
#পর্ব:৮
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

আরনিয়া ওদের কথা শুনে ছাদের দরজার সামনেই থমকে দাঁড়িয়ে যায়। চোখ থেকে টপ টপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। স্পর্শক ওকে ডিবোর্স দিয়ে দিবে। আরনিয়া আর ঐখানে দাঁড়ায় না। দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়। আরনিয়া বিছানায় উবু হয়ে শুয়ে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদছে। আরনিয়া কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলছে।

হঠাৎ করেই আরনিয়ার মাথায় যন্ত্রনা শুরু হয়ে যায়। যন্ত্রনা তীব্র থেকে তীব্র হতে থাকে। ডক্টর বলেছিল কান্না কাটি আরনিয়ার ব্রেনের জন্য ক্ষতিকর। আরনিয়া মাথা চেপে ধরে ওঠে বসে ড্রয়ার হাতরে নিজের কাঙ্ক্ষিত ঔষধ পেয়ে যায়। ঐ ঔষধটার সাথে একটা হাই পাওয়ারি ঘুমের ঔষধ খায়। আরনিয়া বেডে শুয়ে পড়ে সাথে সাথে ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে।

১২ টার দিকে স্পর্শক রুমে আসে। এসে দেখে আরনিয়া এলোমেলো ভাবে বেডে শুয়ে আছে। স্পর্শক আরনিয়ার কাছে যায়। আরনিয়ার চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে। স্পর্শক নিজের মনে মনে চিন্তা করে।

আরনিয়া কান্না করছিলো? কিন্তু কেনো? আমার কোনো ব্যবহারে আরনিয়া কষ্ট পেয়েছে? কিন্তু আরনিয়াকে তো আমি বকাবকি করি নাই।

স্পর্শক ভালো করে খেয়াল করে দেখে বেড সাইডের টেবিলের ড্রয়ার খোলা। সে এগিয়ে গিয়ে ড্রয়ারে হাত দিয়ে দেখে ঔষধের পাতা খালি। স্পর্শক বুঝতে পারে আরনিয়ার আবার মাথা যন্ত্রনা করছিলো। স্পর্শক আরনিয়াকে ভালো ভাবে শুইয়ে দিয়ে গায়ে কম্বল টেনে দেয়। আরনিয়ার কপালে একটা গভীর চুমু খায়।

তারপর কতগুলো ফাইল আর ল্যাপটপ নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। যাওয়ার আগে রুমের লাইটটা অফ করে যায়। রুমে বসে কাজ করলে যদি আরনিয়ার ঘুমের ডিস্টার্ভ হয় তাই ড্রয়িংরুমে চলে যায় স্পর্শক।

__________________

খুব সকালে ঘুম ভেঙে যায় আরনিয়ার। পাশে হাত দিয়ে দেখে স্পর্শক নাই। আরনিয়া বেড থেকে নেমে এলোমেলো পায়ে ড্রয়িংরুমে যায়। ড্রয়িংরুমের সোফায় জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে স্পর্শক। এটা দেখে আরনিয়ার দু চোখ ভরে আসছে।

আমার সাথে এক রুমে থাকবে না বলে এখানে এসে শুয়েছো। একদিনেই আমি তোমার এতটা পর হয়ে গেলাম। আমাকে আর আগের মতো ভালোবাসো না। ওহ তুমি তো আমাকে কখনো ভালোইবাসো নি। আমাকে সুস্থ করার জন্য আমার সাথে প্রেমের অভিনয় করেছো। তুমি তো জানোই না আমাকে সুস্থ করতে এসে তুমি আমাকে আরো অসুস্থ করে দিয়ো। আমি তো তুমি নামক অসুখে আক্রান্ত হয়ে গেছি।

আরনিয়া কথাগুলো মনে মনে বলে রুম থেকে একটা কম্বল এনে স্পর্শকের গায়ে জড়িয়ে দেয়। স্পর্শকের কপালে কিস করতে গিয়েও থেমে যায় আরনিয়া। দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ারের নিচে বসে পড়ে আরনিয়া। ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে আরনিয়া।

কেনো স্পর্শক কেনো আমার অনুভূতি নিয়ে খেললে? আমি তো তোমার কাছে ভালোবাসার দাবি নিয়ে যায় নি তুমি এসেছিলে। ফিরিয়ে দিলেও বার বার ভালোবাসার দাবি নিয়ে আসতে। বেশ তো ছিলাম একা কেনো আমার জীবনে এলে। আমাকে কেনো ভালোবাসা নামক অনুভূতির সাথে পরিচয় করালে।

আরনিয়া হো হো করে কেঁদে দেয়। ডুব দেয় অতীতে প্রথম যেদিন স্পর্শকের সাথে দেখা হয়েছিল।

আরনিয়া প্রথম দিন কলেজে যাচ্ছে। তার বাসা থেকে কলেজ যেতে সময় লাগে ৩০ মিনিট তার কাছে সময়ও ছিল ৩০ মিনিট। তাই সে তাড়াতাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে। সে কোন ভাবেই প্রথম দিন লেইট করতে চায় না। রাস্তায় তার গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। আরনিয়া গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার পাশে দাঁড়ায় রিকশার জন্য। কিন্তু কোনো রিকসার নাম গন্ধও নেই।

তাই আরনিয়া সিদ্ধান্ত নেয় সে় হেঁটেই কলেজে যাবে। এখান থেকে কলেজ বেশি দূরে না। হেঁটে গেলে ৮ মিনিট সময় লাগে। আনমনে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে সে ফুটপাত থেকে রাস্তায় চলে এসেছে সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। হঠাৎ করে একটা গাড়ি এসে তাকে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। গাড়িটা আস্তে আসায় এতো বেশি ব্যথা পায়নি। হাতে পায়ে সামন্য ছিলে গেছে আর পা মচকে গেছে।

আরনিয়া পায়ে হাত দিয়ে রাস্তায় বসে পড়ে। তখনি গাড়ি থেকে নেমে আসে একজন সুদর্শন পুরুষ। উচ্চতা ৬ ফুটের উপরে, গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা, ডার্ক রেড ঠোঁট, চোখের মনিগুলো কুচকুচে কালো ( একটু বেশিই কালো ), নাকের ডগায় একটা কালো কুচকুচে তিল। তিলটা যেনো ছেলেটার সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আরনিয়া ব্যথা ভুলে ছেলেটার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। ছেলেটার ফর্মাল লোক দেখে আরনিয়া ক্রাশ খায়। ছেলেটি এসে আরনিয়ার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে।

মিস আপনি কি ব্যথা পেয়েছেন?

ব্যথার কথা শুনতেই আরনিয়ার মনে পড়ে সে এক্সিডেন্ট করছে আর ব্যথাও পেয়েছে। ছেলেটাকে দেখে তার সব অনুভূতি কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। এবার আরনিয়া চিৎকার করে কান্না শুরু করে দেয়।

এ্যা এ্যা এ্যা

আরনিয়া এভাবে কেঁদে দেবে ছেলেটা আশা করেনি। এতবড় মেয়ে যে এভাবে চিৎকার করে কাঁদবে সেটা তার কল্পনারও বাইরে ছিল।

আপনি কি খুব বেশি ব্যথা পেয়েছেন?

আপনি আমার পা ভেঙে দিয়েছেন। এ্যা এ্যা আমি এখন হাঁটবো কী করে? এ্যা এ্যা

ছেলেটি বুঝতে পারে আরনিয়ার পা মচকে গেছে। আরনিয়ার পা থেকে জুতা খুলে পা ধরে টান দেয় আরনিয়া ব্যথায় চিৎকার করে ছেলেটার কাধ খামছে ধরে। ছেলেটি খেয়াল করে দেখে আরনিয়ার হাতও ছিলে গেছে তাই সে আরনিয়াকে কোলে তুলে নেয়।

আরনিয়া হতভম্ব হয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। পড়ে যাওয়ার ভয়ে গলা জড়িয়ে ধরে। আরনিয়াকে গাড়িতে বসিয়ে ফাস্ট এইড বক্স এনে ছিলে যাওয়া জায়গাটা সেভলন দিয়ে পরিষ্কার করে আলতো হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়। আরনিয়া শুধু অবাকই হচ্ছে অপরিচিত ছেলেটার কেয়ার দেখে। যেখানে ছেলেটার তাকে ঝারি মারার দরকার সেখানে ছেলেটা তার কেয়ার করছে। আরনিয়াকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ছেলেটি ঠোঁট কামড়ে আলতো হেসে বলে,

এভাবে তাকিয়ে থাকলে প্রেমের পড়ার চান্স ১০০%।

চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে