#ভালবাসি_শুধু_তোমায়_আমি
#পর্ব:৭
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
ড্রাগসের কথাটা স্পর্শক আরনিয়ার কাছ থেকে লুকিয়ে যায়। স্পর্শক জানে আরনিয়াকে যদি বলে তার পাপা তাকে নিয়মিত ড্রাগস দিতো। তাহলে সে স্পর্শকের কথা বিশ্বাস করবে না। কারণ আরনিয়া নিজের থেকেও বেশি তার পাপাকে বিশ্বাস করে।
আচ্ছা আরু তুমি যদি কখনো জানতে পারো আমি তোমার কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছি বা তোমার কাছ থেকে কিছু গোপন করেছি তাহলে তুমি কী আমাকে ভুল বুঝে দূরে সরে যাবে?
উহু এই জীবনে আর আমি তোমাকে ছাড়ছি না। তুমি দূরে ঠেলে দিলেও আমি যাব না। তুমি যদি আমার কাছ থেকে গোপন করে থাকো তাহলেও আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না। তুমি যদি আমাদের ভালোর জন্য গোপন করে থাকো তাহলে ক্ষমা করে দিবো। আর যদি অন্য কোনো কারণে গোপন করে থাকো তাহলে তোমাকে শাস্তি পেতে হবে। তুমি যদি কোনো দিন আমি ব্যতীত অন্য কোনো নারীর সংস্পর্শে আসো তাহলে সেদিনই হবে আমার জীবনের শেষ দিন।
স্পর্শক আরনিয়ার মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে।
আমি কেনো অন্য কোনো মেয়ের কাছে যাবো? আমি তো জানি আমার একটা পাগলি আছে যে আমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে।
হুহ আমি জানি আমার এই তুমিটা আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। আমার যেটা পছন্দ নয় সেটা সে কখনো করবে না।
সন্ধা হয়ে গেছে নিচে চলো।
দুজন নিচে নেমে আসে।
__________________
স্পর্শক ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছে। আরনিয়া স্পর্শকের কাধে মাথা রেখে মুভি দেখছে। হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠাই দুজনের মনঃসংযোগ নষ্ট হয়। দরজার ওপাশে দাঁড়ানো ব্যক্তিটির ওপর দুজনই চরম বিরক্ত। দুজনেরই ইচ্ছে করছে উস্টা দিয়ে ঐ ব্যক্তিটিকে উগান্ডা পাঠিয়ে দিতে। দুজন দুজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে এই মুহূর্তে কেউ নিজের অবস্থান থেকে উঠতে চায়ছে না। ঐদিকে কলিংবেলের শব্দ তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে। ঐ পাশের ব্যক্তিটা যেনো এক মিনিট অপেক্ষা করতে পারছে। আরনিয়া স্পর্শককে উদ্দেশ্য করে বলে,,
কে এসেছে বলো তো?
আমি কী করে জানবো?
তোমার বাসা তুমি জানবে না তো পাশের বাসার সখিনা জানবে।
এই সখিনাটা আবার কে? আরে ম্যাম আমাদের বাসার আশেপাশে কোনো বাসা নেই তাই কোনো সখিনা ফখিনা থাকার চান্স নাই।
এতো লেকচার না দিয়ে দরজাটা খুলে দেখো কে এসেছে?
আমি পারবো না তুমি যাও।
আমিও পারবো না।
স্পর্শক করুন ভাবে বলে,,
প্লিজ জানেমান তুমি যাও না। যদি ঐ পাশের ব্যক্তিটা কোনো মেয়ে হয় তাহলে দেখবা আমাকে ফট করে জড়িয়ে ধরবে। তুমি কী চাও আমাকে অন্য কেউ জড়িয়ে ধরুক?
একদমই না।
স্পর্শকের প্লেন কাজে দিয়েছে আরনিয়া উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। আরনিয়া দরজা খুলে দেখতে পায় একটা মাত্রাতিরিক্ত ফর্সা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার মাঝে কোনো খুত নেই যে কেউ প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যাবে। এই মুহূর্তে আরনিয়াও মেয়েটাকে দেখে একটা বড় সড় ক্রাশ খায়ছে। পর মুহূর্তে এটা ভেবেই তার ভ্রু কুচকে আসে এই মেয়েটা এখানে কি করছে?
এতক্ষণ লাগে দরজা খুলতে? ( ধমকের সুরে)
মেয়েটা এভাবে কথা বলায় আরনিয়া রেগে যায়। এখন পর্যন্ত কেউ তার সাথে উচ্চ স্বরে কথা বলেনি আর এই মেয়ে তাকে ধমক দিচ্ছে। আরনিয়া রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেয়েটি তাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। এটা দেখে আরনিয়া আরো রেগে যায়। মেয়েটি স্পর্শকের কাছে যায়। আরনিয়া স্পর্শক আর মেয়েটির ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। মেয়েটি স্পর্শককে জড়িয়ে ধরতে গেলে ফট করে স্পর্শক সরে যায়। কারণ তার মাখায় একটা কথাই ঘুরছে। তুমি যদি কোনো দিন আমি ব্যতীত অন্য কোনো নারীর সংস্পর্শে আসো তাহলে সেদিনই হবে আমার জীবনের শেষ দিন।
আমি এসেছি তা দেখে তুই খুশি হসনি?
তুই আমার বাসায় আমার কাছে এসেছিস আর আমি খুশি হয়নি এমন কোনোদিন হয়েছে অনু?
অনু নামটি শুনে আরনিয়া বুঝতে পারে এটা স্পর্শকের ফুফাতো বোন। স্পর্শক তাকে একদিন বলেছিল এই পৃথিবীতে তার তিন জন
ব্যক্তিই আপন আছে। তার ফুফু, ফুফাতো বোন অনু আর আর সে মানে আরনিয়া।
তাহলে এভাবে সরে গেলি কেন?
তুই তো জানিস আমার এসব ভালো লাগে না। বাই দা ওয়ে তুই কিন্তু আগের থেকে অনেক বেশি সুন্দর হয়ে গেছিস।
স্পর্শকের শেষের কথাটা শুনে আরনিয়া ভীষণ ক্ষেপে যায়। অনু একটু লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে বলে,,
যা কি যে বলিস।
আয় তোর সাথে একজনের পরিচয় করিয়ে দেই।
স্পর্শক আরনিয়ার কাছে গিয়ে আরনিয়া কোমর জড়িয়ে ধরে বলে,,
মিট মাই ওয়াইফ মিসেস স্পর্শিয়া আহম্মেদ আরনিয়া।
এটাই তোর আরু যাকে তুই ছো….
স্পর্শক অনুর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকায় যা দেখে অনু ভয়ে চুপসে যায়।
আর আরু ও হচ্ছে আমার ফুফাতো বোন অরুনিমা রহমান অনু।
কেমন আছেন আপু?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তা তুমি কেমন আছো।
আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে না যে তুমি ভালো আছো।
কেনো আপু?
গাড়ের কাছে লাভ বাইটটা দেখিয়ে বলে,,
স্পর্শক তো তোমার অবস্থা একদিনেই ত্যানা ত্যানা বানিয়ে দিছে।
কথাটা বলেই অনু মিটিমিটি হাসতে থাকে। আরনিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। স্পর্শক মাথা চুলকিয়ে মুচকি হাসে।
__________________
অনু আর স্পর্শক ছাদে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।
খুব তাড়াতাড়ি ডিবোর্সের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আর তাড়াতাড়ি ডিবোর্সও হয়ে যাবে।আমি চাই যত দ্রুত সম্ভব ডিবোর্সটা হয়ে যাক। এভাবে তো আর জীবন চলে না। আরনিয়া সুস্থ হয়ে যাবার পর পরই আমি ডিবোর্সের ব্যবস্থা করবো।
হঠাৎই অনু স্পর্শকের হাত চেপে ধরে বলে,
ওকি ডিবোর্স দিবে? আমি এমন লুকোচুরি খেলা আর খেলতে পারছি না।
দিবে না কেনো? যদি দিতে না চায় আমি জোর করে হলেও ডিবোর্স করিয়ে ছাড়বো।
আরনিয়া ওদের কথা শুনে ছাদের দরজার সামনেই থমকে দাঁড়িয়ে যায়। চোখ থেকে টপ টপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। স্পর্শক ওকে ডিবোর্স দিয়ে দিবে।
চলবে……..