#ভালবাসি_শুধু_তোমায়_আমি
#পর্ব:২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
স্পর্শকের মাঝে কোনো হেলদুল নাই। আরনিয়া রেগে স্পর্শকের হাতে কামড় দিয়ে দেয়। স্পর্শক কামড়ের দাগটা দেখে মুচকি হেসে বলে,
তোমার দেওয়া প্রথম ভালোবাসার চিহ্ন।
স্পর্শকের কথা শুনার সাথে সাথে আরনিয়া একটা ভেংচি কেটে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। স্পর্শক আরনিয়াকে গাড়িতে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। এদিকে আরনিয়া গাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে কিন্তু ডোর লক থাকাই বের হতে পারছে না। আরনিয়া এবার স্পর্শকের হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দেয়। স্পর্শক টান দিয়ে আরনিয়াকে কোলে বসিয়ে ড্রাইভ করতে থাকে।
আরনিয়া স্পর্শকের কোলে বসে বাচ্চাদের মতো হাত পা ছুড়া ছুড়ি করতে থাকে। স্পর্শক গাড়িটা রাস্তার এক পাশে দাঁড় করিয়ে আরনিয়ার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। আরনিয়া স্তব্ধ হয়ে যায় যখন বুঝতে পারে তার সাথে কী হচ্ছে তখনি স্পর্শকের চুল ধরে টানাটানি শুরু করে দেয়। কিন্তু স্পর্শককে এক চুলও সরাতে পারেনি। আরনিয়া মনে হচ্ছে সে এখনি দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে। ৫ মিনিট পর স্পর্শক আরনিয়ার ঠোঁটে একটা জুড়ে কামড় দিয়ে আরনিয়ার ঠোঁট ছেড়ে দেয়। আরনিয়া ছাড়া পেয়ে জুড়ে জুড়ে নিশ্বাস ফেলতে থাকে। আরনিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই স্পর্শক ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে চুপ করিয়ে দেয়।
এখন তো শুধু কিস করছি আরেকটা কথা বললে এখানেই বাসরটা সেরে ফেলবো। ( চোখ টিপ দিয়ে)
স্পর্শকের কথা শুনে আরনিয়া ভয়ে চুপসে যায়। তার এতক্ষণে এতটুকু ধারণা হয়ে গেছে যে এই ছেলের দ্বারা কোনো কিছুই অসম্ভব না। স্পর্শক বাঁকা হেসে ড্রাইভ করতে শুরু করে। আরনিয়া ভেংচি কেটে জানালা দিয়ে রাতের শহর দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এদিকে স্পর্শক বারবার আরনিয়ার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে। হঠাৎ স্পর্শক মিউজিক অন করে দিল।
তোমার আমার আমি আজও বুঝিনি
ঐ চোখের চাওয়াতে প্রেম আজও দেখিনি
দুরে তবু দুরে সরে থাকতে পারিনি
কাছে এসে তবু কেনো কাছে আসতে পারিনি
আমি আজও বুঝিনি
আমি আজও বুঝিনি
তোমার আমার আমি আজও বুঝিনি
ঐ চোখের চাওয়াতে প্রেম আজও দেখিনি
গানের প্রতিটা লাইনের সাথে স্পর্শক গলা মিলাচ্ছে। স্পর্শকের গলায় গান আর গরুর ডাকের সাথে আরনিয়ার কোনো পার্থক্য করতে পারছে না। আরনিয়া বিরক্ত হয়ে গানটা অফ করে দেয়। তবু স্পর্শক গান গেয়েই যাচ্ছে।
তোমার আমার আমি আজও বুঝিনি
ঐ চোখের চাওয়াতে প্রেম আজও দেখিনি
দুরে তবু দুরে সরে থাকতে পারিনি
কাছে এসে তবু কেনো কাছে আসতে পারিনি
আমি আজও বুঝিনি
আমি আজও বুঝিনি
তোমার আমার আমি আজও বুঝিনি
ঐ চোখের চাওয়াতে প্রেম আজও দেখিনি
আরনিয়া বিরক্ত হয়ে বলে,
আপনি এই ভাঙ্গা রেডিও বন্ধ করবেন।
কেনো করবো?
আমার বিরক্ত লাগছে।
তো আমি কী করবো?
আরনিয়া বুঝতে পারছে এই লোকটা এক নম্বরের ঘাড় ত্যাড়া সোজা কথায় কাজ হবে না।
আপনি কী আমাকে বিয়ে করে খুশি নন?
আমি তো প্রচুর খুশি তোমাকে বলে বুঝতে পারবো না।
তাহলে এমন ছ্যাকা মার্কা গান শুনছেন কেনো?
সত্যিই তো এখন আমার রোমান্টিক গান শোনা উচিত।
এই একদম আপনি গান গাইবেন নাহ।
কেনো?
আপনার এই ফাটা বাঁশের গলা শুনে আমার কান জ্বালা পালা হয়ে যাচ্ছে।
তাহলে তো আরো বেশি বেশি করে গাইবো।
একবার গেয়ে দেখুন গলা কেটে ফেলবো।
যেমন বাপ তার তেমন মেয়ে। ( বিড়বিড় করে)
কিছু বললেন?
নাহ।
আমার জানামতে আপনার সাথে আমার দুই বছর আগে কোনো বিয়ে টিয়ে হয়নি। তাহলে আপনি মিথ্যা কেনো বললেন?
তোমার আব্বুর নাম এহসান খান তাহলে তোমার নাম স্পর্শিয়া আহম্মেদ আরনিয়া কেনো ? তোমার নাম তো স্পর্শিয়া খান আরনিয়া হওয়া উচিত ছিল।
এতে কী প্রমানিত হয় আপনার সাথে আমার দুই বছর আগে বিয়ে হয়েছিল?
অবশ্যই। আমার নাম আদনান আহম্মেদ স্পর্শক আর তোমার নাম স্পর্শিয়া আহম্মেদ আরনিয়া। এর থেকে বেশি কিছু আমি বলবো না। বাকিটা খুঁজে বের করার দায়িত্ব তোমার।
কথা বলতে বলতেই গাড়িটা থামে একটা বিশাল বড় রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ির সামনে। বাড়ির চারপাশে ঘেরাও করে দাঁড়িয়ে আছে গার্ডরা। আরনিয়া বাড়ির দিকে কেমন অদ্ভুত ভাবে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। স্পর্শক আরনিয়ার তাকিয়ে থাকার মানে বুঝতে পেরে আরনিয়ার মনঃসংযোগ নষ্ট করার জন্য বলে,
কেউ একজন আমার বাড়ির দিকে যেভাবে নজর দিচ্ছে মনে হয় আমার বাড়ি আজকে জ্বর উঠবো।
আপনি বলতে চাইছেন আমার নজর খারাপ।
হতেই পারে। না ভাবা এতো রিস্ক নিয়ে লাভ নেই। আগে থেকে সাবধান হয়ে যাওয়া ভালো।
ইউ……
আরনিয়ার কথা সম্পূর্ণ না করতে দিয়েই স্পর্শক গাড়ি থেকে নেমে আরনিয়াকেও নামায়। আরনিয়াকে নিয়ে বাসার ভিতরে ঢুকে। আরনিয়া সোফায় ধপ করে বসে পড়ে। স্পর্শক আরনিয়াকে কোলে তুলে নেয়। কোলে করে একটা রুমে নিয়ে যায়। রুমটা ফুল, ক্যান্ডেল আর লাভ সেফের বেলুন দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো। স্পর্শক আরনিয়াকে বেডে বসিয়ে দেয়। স্পর্শক আরনিয়ার দিকে ঝুকে পড়তেই আরনিয়া ভয়ে মাথা পিছিয়ে নেয় তা দেখে স্পর্শক মুচকি হেসে সরে দাঁড়ায়।
জোর করে তো বিয়ে করে নিলেন। এখন কী জোর করে স্বামীর অধিকার দেখাবেন?
স্পর্শক বাঁকা হেসে বলে, দেখাতেই পারি আফটার অল আমি তোমার হাজবেন্ড। তোমার ওপর আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে।
আপনাদের মতো ছেলেদের কাছ থেকে এর থেকে বেশি কিছু আশা করা যায় না। দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? আমি তো আপনার সামনেই বসে আছি মিটিয়ে নিন আপনার…..
স্পর্শক আরনিয়ার কথাটা সম্পূর্ণ করতে দেয় না।
আজকে প্রথম দিন দেখে কিছু বললাম না। নেক্সট টাইম যেনো তোমার মুখে এমন কথা না শুনি। আর হ্যাঁ যতদিন না তুমি আমাকে নিজের স্বামি বলে মেনে নিচ্ছো ততদিন পর্যন্ত আমি তোমাকে টাচ করবো না।
হঠাৎ কিছু ভাঙার শব্দ পেয়ে দুজনই পেছন ঘুরে তাকায়। দরজার কাছ থেকে একটা ছায়া সরে যায়। ফ্লোরে ফুলদানির ভাঙা অংশ পড়ে আছে। যা দেখে দুজনরই মুখে রহস্যময় হাসি ফুটে ওঠে।
যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
আমি ফ্রেশ হয়ে কী আপনার মতো খাম্বার শার্ট পড়বো?
পড়লে পড়তে পারো আমার কিন্তু কোনো সমস্যা নাই।
আরনিয়া স্পর্শকের দিকে রাগী চোখে তাকায় দেখে স্পর্শক আমতা আমতা করে বলে,
কাবার্ড অনেক শাড়ি আছে পড়ে নিয়ো।
স্পর্শক রুম থেকে বের হয়ে যেতেই আরনিয়া কাউকে ফোন দেয়।
তোমার কথা মতো কাজ হয়ে গেছে। আর হ্যাঁ আমি কল না দিলে তুমি কখনো নিজে থেকে আমাকে কল দিবা না।
__________________
কিছুক্ষণ পড়ে স্পর্শক আরনিয়ার রুমে খাবার নিয়ে এসে দেখে রুমে যাচ্ছে তাই অবস্থা। ফ্লোরে পড়ে আছে ভাঙা ফুলদানি, সো পিচ। বেডশিট মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। রুমে সাজানো সমস্ত ফুল আর বেলুন ফ্লোরে পড়ে আছে। আরনিয়া রুমের এক কোণে ঘুটিশুটি মেরে বসে আছে।
চলবে……..