ভালবাসার_প্রতিদান।শেষ_পর্ব।
#তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।
কিন্তু কিছুক্ষণ পর মিহু আমাকে যা দেখালো তা দেখার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।
আমার হাত পা কাঁপতে থাকলো,আমি যেন ওখানেই সেন্সলেস হয়ে পড়ে যাচ্ছিলাম।
আমরা কেউ মাহির মোবাইলের লক জানতাম না, মিহু ছাড়া। মিহু বললো আর একটু পর আমি তোকে সব দেখাবো।
তারপর মাহি যখন কথা বলা শেষ করে আসলো তখন জাহিদ আমায় কল দেয় আর বলে আমার নাকি আগে বয়ফ্রেন্ড ছিলো আর আমি জাহিদকে কেন জানাই নি।
তারপর বলে,আমি নাকি ওকে ভালবাসিনা।
আমি বললাম,জাহিদ কি বলো এগুলা আমি কিছু বুঝতেছি না কি হইছে তোমার?
তখনই মিহু আমায় ডাকলো আর মাহির মোবাইলটা মাহির কাছ থেকে মিহু নিলো। আর আমায় ফিসফিস করে বললো,তুই কথা বল সমস্যা নাই কিন্তু দেখ আমি কি দেখাই।
তখন আমি মোবাইলের দিকে তাকাই,দেখি জাহিদের সাথে মাহির একটু আগের মেসেজ।আর কল লিষ্ট,
এগুলা দেখে আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না আমি বসে পরেছিলাম। আমার হাত পা কাঁপতে ছিলো আর মনে হচ্ছিলো এগুলা আমি স্বপ্ন দেখছি একটু পর আমার ঘুম ভেঙ্গে যাবে আর সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না এগুলো স্বপ্ন না সত্যি ছিলো।
আমি এমন এস এম এস ও দেখেছিলাম যেখানে জাহিদ বলেছে,
মাহি কিছু মনে করো না চৈতিকে কল দিয়েছিলাম ফর্মালিটির জন্য।
এগুলো ছাড়াও অনেক কিছু ছিলো।
ওরা দুইজন কলেজ ছুটির পর আমাদের থেকে আলাদা হয়ে দেখা করতে যেতো। আমি কখনো সন্দেহের চোখে দেখিনি। যখন জাহিদ আর মাহি কথা বলতো হাসা হাসি করতো,আমি ভাবতাম জাহিদ আমার বয়ফ্রেন্ড তাই মাহি দুষ্টুমি করে কথা বলে।।
তারপর মিহু বললো তুই জাহিদের সাথে কথা চালিয়ে যা তখন আমি বললাম মিহু তুই প্লিজ সব এস এম এস গুলা কপি করে রাখ।তখন মিহু আর জারিন মিলে সব এস এম এস কপি করে জারিনের আইডিতে দেয়।
সেদিন আমার মাথায় কিচ্ছু আসছিলো না,আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না জাহিদ আমায় ঠকাবে।
ও আমায় ভালবাসেনি ওর সব কিছু মিথ্যা ছিলো।
সেদিন জাহিদ রিলেশন শেষ করে দিতে চেয়েছিলো।
আর আমি সেদিনই প্রথম জাহিদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি।ও একটুও বুঝেনি আমায়।ও বার বার রিলেশন শেষ করে দিতে চাইছে।কারণ ওর জীবনে এখন যে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এসে গেছে।
আরকি মাহি এসে গেছে।
আমাকে আর ওর কি প্রয়োজন।
তারপর আমি ভাবলাম ওর মতো ঠকবাজ প্রতারক কে এই ভাবে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না ওর মুখোশ টা সবার সামনে খোলা দরকার।
আর মাহি,সে ও বা কম কিসে।
আমার বেষ্টফ্রেন্ড হয়ে আমার সাথে প্রতারনা করেছে।
সেদিন জাহিদের সাথে কথা কাটাকাটি হয় আমার।
আমি তখনও জাহিদকে বলেছিলাম আমি তোমায় ভালবাসি জাহিদ।কিন্তু সে আমার কথায় পাত্তা দেয় নি আমার সাথে সম্পর্ক শেষ করতে যেন ও উঠে পরে লেগেছে। গ্রামের ভাষায় আঁচল বেধে নামা যাকে বলে।
তারপরও আমি ফিরাতে পারিনি।তারপর আনেক কান্না করেছিলাম সেদিন।
মাহিও দেখেছিলো কিন্তু কিছুই বলেনি। হায়রে ফ্রেন্ড একটু সান্ত্বনা তো দিতে পারতো কিন্তু দেয় নি।দিবেই বা কেন,ওর যে এখন লাইন ক্লিয়ার।
সেদিন রাতটা কান্না কাটি করেই কাটিয়ে দিয়েছিলাম।ঘুমাতে পারিনি আমি সারা রাত।
আমার সাথে জারিন কেও ঘুমাতে দেইনি।
এমনি করে না ঘুমিয়ে কেটে গেলো একটা রাত।
জাহিদ আর আমাকে কল বা এস এম এস দিবেনা বলেই দিয়েছে।বাহানা দিয়েছে,আমি নাকি তাকে ভালবাসি না।
রাতের পর সকাল,সকালের পর দুপুর হয়ে গেলো।জাহিদ আর আমায় কল দেয় না।
তারপর মিহু, জারিন আমি মিলে প্ল্যান করলাম যে ওদের সব প্রমাণ যেহেতু আমাদের কাছে আছে।
তো আমরা কেনো বসে থাকবো।ওদের হাতেনাতে ধরা দরকার।ওরাও জানুক ওদের বিশ্বাস ঘাতকতার কথা আমরা জেনে গেছি।
তাই দুপুর যখন ২টা বাজে তখন
আমি বললাম জারিন ওদের হয়তো
প্রতি দিনই দেখা হয়।
আর মাহিও তো বাসায় যাবে বলে চলে গেলো হয়তো আজকে ও দেখা করবে।
তারপর আমরা দুইজন জারিন আর আমি মিলে কল দিলাম মাহি কে।
ও কই আছে জানার জন্য।
তারপর ও বললো আমি একটু বাহিরে আছি কিছু বলবি নাকি।
তখন ই আমরা সিওর হয়ে গেলাম যে হয়তো এক সাথে আছে জাহিদ আর মাহি।
তারপর আমরা সাথে সাথে গেলাম একটা রেস্টুরেন্টে।যেখানে জাহিদ আর আমি প্রায়ই দেখা করতাম।
মন বলছিলো ওরা ওখানেই আছে।
গিয়ে যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না,
আমরা গিয়ে দেখি ওরা পাশাপাশি বসে আছে আর জাহিদ ওর কাধে হাত রেখে অনেকটা ক্লোজ হয়ে বসে আছে।
ওদের এই অবস্থায় দেখে আমার হাত পা কাঁপছিলো।
মনে হচ্ছিলো আমি ওখানেই সেন্সলেস হয়ে পড়ে যাবো।
আমি শুধু ওদের এতটুকুই বলেছিলাম, জাহিদ তুমি না আমায় ভালোবাসো? এই তোমার ভালবাসা?
তখন ও বলেছিলো হ্যা ভালবাসি না আমি তোমায়।এখন যাও এখান থেকে।
-এই তাহলে আমার ভালবাসার প্রতিদান জাহিদ?
-আর তুই মাহি,
কিভাবে পারলি বলতো?
তোকে ভালবাসার,আর বিশ্বাস করার এই প্রতিদান দিলি?
তুই না আমার বেস্ট ফ্রেন্ড?
কি করে পারলি?
মাহি কোন কথা বলেনি।
মাথা নিচু করে বসে ছিলো।
তারপর মিহু আর জারিন আমাকে ওখান থেকে নিয়ে আসে।
শেষ হয়ে যায় আমার আশা,ভরসা ভালবাসা।
ভালবাসার প্রতিদানে পাই আমি বুক ভরা কষ্ট।আর দু চোখ ভরা জল।
জাহিদ আর মাহি দুজন দুজনকে কথা দিয়েছে।
ওরা বিয়ে করবে।
আমি দূর থেকে দোয়া করি,আমার ভালবাসার মানুষটা আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে নিয়ে সুখী হোক।
ওরা বেঈমানি করতে পারে।
আমি তো আর তা পারিনা।
ওরা আমাকে ভালবাসার প্রতিদানে দিয়েছে দু চোখ ভরা জল।
আর আমি না হয় দু হাত ভরে দোয়া ই দিলাম।
(সমাপ্ত)
(এক আপুর বাস্তব জীবনী)