ভালবাসার_প্রতিদান।পর্ব_২

0
1517
ভালবাসার_প্রতিদান।পর্ব_২ তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু। জাহিদের কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে কোন দিনও ক্ষমা করতে পারবোনা।কোন দিন না। জাহিদের কথা ভাবছি আর বুকের ভেতর অদ্ভুত এক ব্যথা অনুভব করছি। আর কান্না তো আছেই।তারপর ওর একটা ফ্রেন্ড এর নাম্বার ছিলো আমার কাছে ওই নাম্বারে কল দিয়ে সব বললাম,সে রাত ১১টায় জাহিদের কাছে যায়। তারপর জাহিদ কে একটা ফার্মেসিতে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন ডাক্তার বলেন জাহিদ নাকি অনেক গুলো ঘুমের ঔষধ খেয়ে ফেলছে তাই এমন করছে। ওর খারাপ লাগছে। তারপর ডাক্তার বমি করিয়ে ঔষধ গুলো বাহির করেন। আর বলেন যে সম্পূর্ণ ঘুম কাটতে একটু টাইম লাগবে।জাহিদের সাথে আমার দুই দিন কথা হয়নি,কি ভাবেই বা কথা হবে। ও যে তখন ঘুমের রেসই কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এই দুই দিনে বুঝতে পেরেছিলাম আমি ও যে জাহিদ কে অনেকটা ভালবেসে ফেলেছি। ওকে ছাড়া যে আমার আর চলেব না।আমি যে থাকতে পারবোনা ওকে ছাড়া।খুব বেশি ভালবেসে ফেলেছি আমি ওকে।
দুইদিন পরে যখন ওর সাথে আমার কথা হয়,মনে হয়েছিলো যেন আমি আমার আত্মাটা ফিরে পেয়েছি।আমি শান্তি খুঁজে পেয়েছি। ৫মিনিটের কথায় যেন আমার দুইদিনের পিপাসা এক নিমিষে মিটে গিয়েছে।ভালবাসা যে এমন হয় আগে কখনো বুঝতে পারিনি।বুঝবোই বা কি করে,আগে তো কখনো কাউকে ভালই বাসিনি।জাহিদই যে আমার প্রথম প্রেম,আমার প্রথম ভালবাসা। আমি বুঝতেই পারিনি আমি এই কয় দিনে একটা মানুষকে এতোটা ভালোবেসে ফেলবো। ঐ ৫মিনিট কথায় আমি এতো টুকুই বলতে পেরেছিলাম, জাহিদ ঠিক আছো তুমি? আমি তোমায় দেখতে চাই।আমি আর পারছিনা প্লিজ আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবে?সব কথা গুলো এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলেছিলাম ওকে। তারপর ও বললো: চৈতি,ভালবাসো আমায়? তখন আমি আর আমার কান্না থামাতে পারিনি, কারন আমি কি ভাবে ওকে বুঝাই আমি যে ওকে বড্ড ভালবেসে ফেলেছি। তখন আমার কান্না শুনে জাহিদ ও কেঁদে ফেলে। আর কথা বলতে পারিনি ফোনটা কেটে দিয়ে বালিসে মুখ গুঁজে অনেক ক্ষণ কেঁদেছি। কিছু ক্ষণ পর মাথা তুলে দেখি আনেক গুলা কল।তারপর আবার ফোনটা বেজে ওঠার পর রিসিভ করে কান্নার জন্য কিছু বলতে পারছিলাম না। ও নিজে থেকে বলেছিলো চৈতি কালকে একটু আসবে তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। আমি আসবো,বলেই ফোনটা কেটে দেই।আমার পক্ষে কান্না থামিয়ে আর কিছু বলা সম্ভব হচ্ছিলোনা। আমি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ি।কখন যে ঘুমিয়ে গেছি বুঝতেই পারিনি। তারপর দিন সকালে কিছু না খেয়ে বেড়িয়ে গেছি ওর সাথে দেখা করতে। দেখা না করা অবধি যে আমার গলা দিয়ে খাবার নামবে না। অনেক অপেক্ষার পর ওর সাথে দেখা। ও আমার হাতটা ধরে শুধু বলেছিলো, চৈতি I’m sorry আমি আর কখনো এমন করবো না ঐ দিন আমার মাথায় কিছু আসছিলো না, আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না, আমি আর এমন করবো না আমায় মারো কাটো যা ইচ্ছে করো তুমি। কিন্তু কান্না করো না।আমি তোমার কান্না সইতে পারিনা।আমায় ক্ষমা করে দাও প্লিজ। আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না শুধু বলেছিলাম জাহিদ তুমি ও আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমায় ধরে প্রমিস করো আর কখনো এমন করবে না, যত বড় সমস্যাই আসুক না কেনো। সেদিন জাহিদ ও আমায় কথা দিয়েছিলো আর কোন দিন এমন করবে না। তারপর থেকে আবার শুরু হলো ভালবাসার দিন।কেটে যাচ্ছে রাগ, অভিমান আর ভালবাসা নিয়ে দিন গুলো। কলেজ শেষে আমি আর জাহিদ পাশাপাশি হাঁটতাম।যদিও আমি প্রায়ই না করতাম আসতে।কিন্তু ও ঠিকই আসতো। আমার ও ভালো লাগতো। কারণ আমি যে মন থেকে না করতাম না। কলেজে ক্লাস শেষে ছুটির পরে ওর সাথে এক সাথে বসে ফুসকা খাওয়া থেকে শুরু করে ওর হাত ধরে বসে থাকাই যেন ছিলো আমাদের প্রতি দিনকার রুটিন। এমন কোন দিন ছিলোনা যে ওর সাথে আমার কথা বা দেখা হয়নি। কলেজ বন্ধ থাকলেও আম্মুকে মিথ্যা বলে প্রাইভেট আছে বলে ওর সাথে দেখা করতে যেতাম।প্রথম প্রেমে পরার অনুভূতি আমি ওর কাছ থেকেই পেয়েছি।ভালবাসা কি ওর কাছ থেকেই বুঝেছি।অন্ধের মত ভালবাসি আমি জাহিদকে,আর বিশ্বাসও করি খুব। যাকে এতটা ভালবাসি,তাকে বিশ্বাস না করে পারা যায়? আর বিশ্বাস ছাড়া যে ভালবাসাই হয়না। একদিন আমি আর আমার ফ্রেন্ডরা এক সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছি আর সেই সময় আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মাহির মোবাইলে একটা কল আসে আর ও অন্য রুমে চলে যায় কথা বলার জন্য। আমি অবাক হই। কারণ আমরা ওর ফ্রেন্ড।আমি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড।আমাদের কাছ থেকে দূরে গিয়ে কথা বলতে হবে কেন। তখন আমার ফ্রেন্ড মিহু আমায় বলে,অবাক হচ্ছিস না? ভাবছিস,ও কেন আমাদের সামনে কথা বল্লোনা,ফোন রিসিভ না করেই অন্য রুমে চলে গেলো কথা বলতে। তাইনা? আমি কোন কথা বললাম না। মিহু বল্লো, জানিস কে কল দিয়েছে মাহিকে? -কে? -তোর জাহিদ কল দিয়েছে। -ধুর,কি যে বলিস না। জাহিদ কেন মাহিকে কল দিতে যাবে? -বিশ্বাস করলি না আমার কথা তাইনা? আমি সত্যিই ওর কথা একটুও বিশ্বাস করিনি।কারন জাহিদের সাথে যে আমার সন্ধ্যায়ও দেখা হয়েছে।তখনও জাহিদ আমায় বলেছে,চৈতি আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি। তারপর মিহু আবার বললো, তো এখন প্রমাণ দেখবি?জাহিদই যে মাহিকে ফোন দিয়েছে।আর মাহি যে জাহিদের সাথেই কথা বলছে। তখন আমি মিহুকে বলাম আরে না।প্রমাণের কি হলো এখানে। এমনি হয়তো কল দিছে।আর আমি অনলাইনে না থাকলে তো প্রায়ই জাহিদ ওর মোবাইলে কল দিয়ে বলতো,আমি অনলাইনে নাই কেন।আমাকে অনলাইনে আসতে বলতে বলতো। আজ হয়তো অন্য কোন ব্যাপারে কল দিছে। আর আমার মনে হয়না জাহিদ ফোন দিয়েছে মাহি কে।জাহিদ ফোন দিলে মাহি আমাদের সামনেই কথা বলতো। মিহু বুঝতে পেরেছিলো আমি বিশ্বাস করিনি ওর কথা। মিহু যখন আমায় বিশ্বাস করাতে পারছিলো না তখন ও নিজে আমার হাত থেকে আমার মোবাইল টা নিয়ে জাহিদকে কল দেয় এবং নাম্বার ও busy দেখায়। তখন আমি বললাম,ধুর অন্য কারো সাথে কথা বলে হয়তো। আর যদি মাহিকেই কল দিয়ে থাকে তাহলে এমনিতেই কল দিয়েছে হয়তো। অন্য কিছু না।বেশি বেশি ভাবিস না। জাহিদকে আমি অনেক বিশ্বাস করি। আর মাহিতো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। ও নিজেও জানে আমি জাহিদকে কতটা ভালবাসি। আর তোরাই তো আমাকে রিলেশন টা করিয়ে দিলি। মাহিও তো ছিলো।কত বুঝালো আমাকে। তারপরই না আমি জাহিদের সাথে রিলেশনে গেলাম। তারপর এবার আমিই জাহিদকে ফোন দিলাম। এখনো জাহিদের নাম্বার বিজি। কিছু ক্ষণ পর কল ঢুকলে আমি জাহিদকে জিজ্ঞেস করলাম, -কারো সাথে কি কথা বলছিলে? কত ক্ষণ যাবত ট্রাই করছি,শুধু বিজি দেখায়। -এমনিতেই,মোবাইলে সমস্যা।তাই বিজি দেখাচ্ছে। তোমার নাম্বারে ট্রাই করলেও তো বিজি বলে।আমি কি তোমাকে জিজ্ঞেস করি,যে কারো সাথে কথা বলছো কিনা? -তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছো কেন জাহিদ?আর এত রেগে যাচ্ছো কেন? আমি কি দোষের কিছু বলেছি? আমি আর জাহিদের সাথে কথা বাড়াইনা। সুন্দর ভাবে কথা বলে ফোনটা রেখে দেই। সেদিন আমরা চার ফ্রেন্ডই এক সাথে ছিলাম। কারণ একজনের হলুদ সন্ধ্যায় এসেছিলাম আমরা। মিহুকে বললাম,জানিস বাবা আমার জন্য ছেলে দেখছেন। বিয়ের জন্য। -জাহিদ জানে? -হুম ওকে বলেছি দুই তিন দিন আগে। ও খুব বকলো আমায়।আর বল্লো, তুমি আমার ছাড়া আর কারোনা। দেখি কি করা যায়। তুমি কোন চিন্তা করোনা। সব ঠিক হয়ে যাবে। -ওহ আচ্ছা। -হুম,আচ্ছা বলতো।তুই কি আমাকে কিছু বলতে চাস? -নাহ।আমি আর তোকে কিছু বলবোনা। তবে নিজ চোখে দেখাবো। আমাকে একটু সময় দে। আর যত টুকু সম্ভব জাহিদের কাছ থেকে একটু দূরে থাক। আমি একটু একটু বুঝতে পারছিলাম,মিহু আমাকে কি ইংগিত করছে। কিন্তু আমি এই বুঝতে পারছিলাম না যে, আমি কাকে বিশ্বাস করবো। যাকে আমি অন্ধের মত ভালবাসি তাকে? নাকি যে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড (মাহি) তাকে? নাকি আমার ফ্রেন্ড মিহুকে?
কিন্তু কিছুক্ষণ পর মিহু আমাকে যা দেখালো তা দেখার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। আমার হাত পা কাঁপতে থাকলো,আমি যেন ওখানেই সেন্সলেস হয়ে পড়ে যাচ্ছিলাম। চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে