ভালবাসার_প্রতিদান।পর্ব_১
#তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।
রাত সাড়ে দশটার দিকে হঠাৎ একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে আমাকে বললো:চৈতি,জাহিদের অবস্থা খুব খারাপ।খুব একটা ভালো মনে হচ্ছেনা।ও শুধু চৈতি চৈতি করছে আর নিস্তেজ হয়ে পরছে।
কথা গুলো শোনার জন্য আমি একদম প্রস্তুত ছিলাম না।আমার পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যাচ্ছে।আমার হাত পা সারা শরীর কাঁপছে।আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
জাহিদ আমার বয়ফ্রেন্ড।আমার প্রথম প্রেম প্রথম ভালবাসা।
যাকে আমি পাগলের মত ভালবাসি।
আমার আর জাহিদের সম্পর্ক টা শুরু হয় আমার বান্ধবীদের জোরাজুরিতে।ওদের দ্বারা ই।
আমি প্রেম ভালবাসায় বিশ্বাসী ছিলাম না।
কিন্তু জাহিদ আমার জীবনে আসার পর বুঝতে পারি,আসলে ভালবাসা কি।
জাহিদ আমাকে দূর থেকে ফলো করতো,আমাকে পছন্দ করতো।কিন্তু আমাদের প্রথম সামনা সামনি কথা হয় একটা রেস্টুরেন্টে।
আমার সাথে ছিলো আমার তিন ফ্রেন্ড আর জাহিদের সাথে ওর দুইটা ফ্রেন্ড।
আমার ফ্রেন্ডরাই আমাকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়।জাহিদ আর আমি সামনা সামনি বসেছিলাম। ঐ দিন অনেক কথা হয় জাহিদের সাথে আমার।জাহিদ আমাকে সেদিনই প্রপোজ করে,
আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
চৈতি,আমি তোমাকে ভালবাসি।
কিন্তু আমি ওকে না করে দেই।কারন আমার পরিবারে আমার রিলেশনের কথা আমি কখনো বলতে পারবোনা।
কিন্তু যখন ও আমার হাতটা ধরে বল্লো, চৈতি আমিতো আছি,আমি সব সামলে নিবো তুমি চিন্তা করোনা।
তখন ওর কথায় ভরসা পেলাম।
এদিকে আমার ফ্রেন্ডরা আমাকে বল্লো,
চৈতি,ছেলেটা তোকে খুব ভালবাসে।ওকে ফিরিয়ে দিস না।ছেলেটা খুব ভালো।বন্ধুদের ভরসা পেলাম।ওরা সাপোর্ট দিলো।
ভাবলাম,ও যখন আমায় এতো ভালোবাসে তো করি না আমার ভয়টাকে একটু জয় ওর হাতটা ধরে।
আর আমার ফ্রেন্ডরাও যেহেতু বলছে আমাকে ছেলেটা খুব ভালবাসে।
তাহলে বাসিই না ভাল ওকে।
রাজি হয়ে গেলাম।দিনটা ছিলো ১৭ই মার্চ শনিবার।ঐ দিনেই শুরু হলো আমার জীবনের নতুন একটা অধ্যায়।
আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড জারিন, মিহু আর মাহি।
আমরা চার ফ্রেন্ড এতো মিল ছিলাম যে আমাদের ক্লাসের সবাই আমাদের দেখে হিংসে করতো চার জন এক টেবিলে না বসলে মনে হতো যেন সময় কাটছেনা।
ক্লাসের টেবিল গুলো ছোট হলেও আমাদের জন্য কোন সমস্যা হতো না ঠিক বসে যেতাম।কখনো কখনো স্যার রা তো চার জনকে আলদা আলাদা বসতে দিতো কিন্তু ক্লাস শেষে আবার ঠিকই একসাথে হয়ে যেতাম এই ভাবে চলছিলো আমাদের খুনসুটির কলেজ জীবন।
আর তার সাথে শুরু হলো আমার প্রেমময় জীবন।
ভালোই চলছিলো আমার আর জাহিদের সম্পর্ক।
কলেজে গেলেই ওর সাথে সামনাসামনি দেখা হতো।
ওকে দেখলেই লজ্জা লাগতো আমার।
লজ্জায় মাথাটা নিচু করে ফেলতাম।
ও আমাকে দেখে মুচকি হাসে।
ভালো ভাবেই চলছে আমাদের প্রেম।
৯ই জুন আমার বেষ্টফ্রেন্ড মাহির বাথর্ডে আমরা সেলিব্রেসন করার জন্য একটা লেকের পাড়ে যাই। সবার মুখে কেক লাগানো ছাড়া যেন আমাদের বার্থডে জমেইনা।সবাই কেক নিয়ে মজা করার পর। সবার থেকে একটু আলাদা হয়ে জাহিদ আমার মুখে একটু কেক ছুঁয়ে দেয়।অনেক আনন্দ আর মজার মধ্যে দিন টা কাটে।
কিন্তু ঐ দিনটাই যে আমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে বুঝতেই পারিনি। আমাদের সাথে ওই দিন জাহিদের ফ্রেন্ডরাও ছিলো। আর অনেক ছবি তোলা হয়েছিলো সেদিন।জাহিদের এক ফ্রেন্ড দুষ্টুমি করে মাহির মাথায় আর কাধে হাত রেখে ছবি তুলেছিলো।
আর আমরা জানতাম না ঐ ছবি গুলো জাহিদের ফ্রেন্ড ফেসবুকে দিবে।আর আমাদের কলেজের সব স্যার তার সাথে এড ছিলো তাই ছবি গুলো দেওয়ার সাথে সাথে তারা পেয়ে যায়। তারপরের দিন কলেজে যাওয়ার পর স্যাররা আমাদের চার ফ্রন্ডকে ডেকে নিয়ে যায় আর অনেক অপমান করেন। আবার আমাদের সবার বাসায়ও খবর দেন।
আর আমাদের সবার বাসায় আনেক ঝামেলা হয়। আমিও না বুঝে জাহিদের সাথে এটা নিয়া অনেক ঝামেলা করি।
জাহিদ আমায় অনেক বুঝায় কিন্তু আমি বুঝতে চাইনি।
ওই দিন রাতেও জাহিদ আমায় অনেক বুঝায় তারপরেও যখন আমি শুনছিলাম না,তখন অনেক কান্না কাটি করে জাহিদ ফোনটা কাটে দেয়। তার কিছু ক্ষণ পরই ওর রোম্মেট আমায় ফোন দিয়ে বললো,
তুমি কি চৈতি?
তোমার সাথে কি জাহিদের কোন ঝামেলা হয়েছে?
জাহিদের অবস্থা খুব খারাপ।ও শুধু চৈতি চৈতি করছে আর নিস্তেজ হয়ে পরছে।
এটা শোনার জন্য আমি একদম প্রস্তুত ছিলাম না।আমার পায়ের নিচ থেকে মনে হচ্ছিলো সব মাটি সরে যাচ্ছে। আমি কি করবো তখন কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। বুকের ভিতর এক ধরনের ব্যথা অনুভব করছিলাম। তখন মনে হচ্ছিলো,জাহিদের কিছু হবেনা তো?ওর কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে কোন দিনও ক্ষমা করতে পারবোনা।কোন দিন না।
(এক আপুর বাস্তব জীবনী)
চলবে…