#ভালবাসার_ঘর।
#বিন্দু_মালীনি।
#পর্ব_৫
বড় ভাবী রণকে ফোন দিয়ে বলতে লাগলো,
রণরে,বিন্দুর অবস্থা খুব খারাপ,আমরা ওকে নিয়ে হসপিটালে আসতেছি,তুই তাড়াতাড়ি হসপিটালে আয়।
সবাই মিলে আমাকে হসপিটালে নিয়ে গেলো।রণ ছুটে এসেছে হসপিটালে।
ডাক্তার দ্রুত আমাকে অপারেশন থিয়েটারে নিলেন।
বাইরে সবাই অপেক্ষা করছে।
রণ বাইরে বসে হাউমাউ করে কাঁদছে।
আম্মু বেলা ওরাও এত ক্ষণে রওনা দিয়েছে।
৩০ মিনিট পর ডাক্তার এসে বলেন,
_আপনি খুব লাকী মিঃ রণ,আপনার ওয়াইফ এ যাত্রায় বেঁচে গেছে।
কিন্তু আমরা আপনার বাচ্চাটাকে বাঁচাতে পারিনি।
_বাচ্চা?বাচ্চা টা না…?
_আপনার ওয়াইফ বাচ্চাটা রেখে দিয়েছিলো।আর নিষেধ করেছিলো আপনাকে যেন না জানাই।
পরিণতি আজ তার এই অবস্থা।
একটুর জন্য তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন।
_আল্লাহ্র কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া যে আমার বিন্দু ঠিক আছে।
ও এখন সঙ্কা মুক্ত তো?
_জ্বী।তবে তাকে কখনো মেন্টালি প্রেশার দিবেন না।
না এখন,না পরে।
_জ্বী ডাক্তার।
আমি কি এখন বিন্দুর কাছে যেতে পারবো?
_না,একটু পরে তাকে বেডে দেয়া হবে।
_আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ডাক্তার।
কেন করলে তুমি এমন কলিজা?
কেন করলে?
আমার তো তোমাকে প্রয়োজন।তোমার জীবনের ঝুঁকি থাকবে আমি ওমন কিছুই চাইনা।কিছুই চাইনা আমি।
শুধু তুমি থাকলেই হবে।শুধু তুমি থাকলেই হবে।
আমাকে বেডে দেয়া হয়।
রণ দ্রুত আমার কাছে আসে।
_সরি রণ, আমি পারলাম না আমাদের বাচ্চাটাকে বাঁচাতে।
_চুপ।কোন কথা না, আমার শুধু তোমাকে লাগবে।শুধু তোমাকে।তুমি।ছাড়া আমার আর কিচ্ছু চাইনা,কিচ্ছু না।
সেদিনের পর দেখতে দেখতে কেটে গেছে তিন তিনটি মাস।
রণ রণর পরিবারের সবাই আমাকে অনেক বুঝিয়েছে।অনেক সাপোর্ট দিয়েছে।
রণ আমাকে প্রতিটা মুহূর্ত হাসাতে চেষ্টা করেছে।
মুছে দিয়েছে আমার চোখের জল।
অথচ আমি জানি,
ওর ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যায়।
ওর সন্তানকে ও মিস করে।স্বপ্ন গুলো আজো ওর বুকের ভেতর লুকিয়ে আছে।
শুধু পারছেনা তা পূর্ণতা দিতে।
বেচারা কাঁদতেও পারেনা আমার জন্য।
কান্না আটকে রাখাটা যে কতটা কষ্টের তা শুধু তারাই বুঝবে,যারা কখনো কান্না আটকে রেখেছে প্রিয় মানুষ গুলোর মুখে হাসি ফোটাতে।বা পরিস্থিতির চাপে।
_বিন্দু,
_জ্বী মা।
_আজ মা তুমি রান্না করো।কবে থেকে তোমার হাতের রান্না খাইনা।
_আচ্ছা মা।
আমি জানি মা চাচ্ছেন আমি যেন আবার স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন শুরু করি।
আজ আমি রান্না করেছি।খেয়ে সবাই প্রশংসা করেছেন।
_কবে থেকে আমার বউটা আমাকে জড়িয়ে ধরেনা।বলে না ভালবাসি।
বরটা বুঝি পুরনো হয়ে গেছে তাইনা?
তাই আর বরটাকে ভালবাসতে ইচ্ছে করেনা।
_রণ প্লিজ।
_আর কত দিন এইভাবে নিজেকে কষ্ট দিবে?আর কত দিন?
যা আমাদের ছিলোনা তার জন্য কষ্ট পেয়ে কি হবে বলো?
অতীত ভুলে নতুন ভাবে আবার শুরু করি না জীবন।
প্লিজ?
আমার খুব কষ্ট হয় তোমাকে এইভাবে দেখতে।
_ওহ আমি বুঝি পুরাতন হয়ে গেছি না?তাই আমাকে দেখতে কষ্ট হয়।
_কিই?আমার কথা আমাকে?
_হি হি হি
ওই কি দেখছো এইভাবে?
_আমার বউকে দেখছি।
_এমন ভাবে দেখছো যে মনে হচ্ছে আগে কোন দিন দেখোনি।
_দেখেছি,তবে এই হাসিটা খুব মিস করছিলাম।
আমি রণকে জড়িয়ে ধরলাম।
_লাভ ইউ বিন্দু।খুউউব ভালবাসি।
_লাভ ইউ টু।
সকাল হতেই ভেজা চুলের ঝাপটা দিলাম রণর মুখে।
_তুমি কি উঠবে?নাকি আমি পানি এনে পানি ঢেলে দিবো?
_আজকের সকাল টা আমি অনেক দিন যাবত মিস করেছি জানো?এই ভেজা চুলের ঝাপটা।এই রাগী কন্ঠে ডাক।
সব কিছু।
_হয়েছে হয়েছে,এবার উঠে ফ্রেশ হয়ে নিন।
আমি আমি কিচেনে যাচ্ছি।
আমি রণকে ঘুম থেকে জাগিয়ে চলে গেলাম নাস্তা বানাতে।
কিছু ক্ষণ পর দেখি রণ এসে পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে।
_কি করছো?ছাড়ো ছাড়ো।
_কেন ছাড়বো?আমার বউ কে আমি ধরেছি।অন্য কারো বউকে তো আর ধরিনি।
_কেউ এসে পড়বে।
_আসুক তাতে কি।
_উফফ,তুমি না।
_উহু উহু।
দেবর জী,আপনি কি আমার জা কে কাজে সাহায্য করছেন?
_না মানে আসলে,আমি তো দেখতে এসেছিলাম নাস্তা বানানো হয়েছে কিনা।
আমি আসছি হ্যাঁ?
এই বিন্দু,তাড়াতাড়ি নাস্তা বানাও।
_জানো বিন্দু,তোমার আর রণর মুখে হাসি দেখে খুব ভালো লাগছে।
তোমরা সারাজীবন এমন হাসি খুশি থাকো দোয়া রইলো।
_ধন্যবাদ ভাবী।
চলছে আমার আর রণর সংসার।
জীবনের সেই ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনাটার কথা মনে করতে চাইনা আমরা।
তবুও মনে পড়ে যায়।
টিভিতে কোন বাচ্চা দেখলে চোখে জল এসে যায়।
কারো বাচ্চা হয়েছে শুনলে বুকের ভেতর টা কেঁপে উঠে।
কোন প্রেগন্যান্ট মহিলাকে দেখলে মনে পড়ে যায় নিজের সেই অতীতের কথা।
দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেছে।
আল্লাহ্ আর মুখ তুলে চান নি আমাদের দিকে।
আমি প্রতিটা মাস অপেক্ষায় থাকি।
কিন্তু অপেক্ষা আমার অপেক্ষাই রয়ে যায়।
এদিকে রণর বন্ধুরা একেক জন রণকে বাবা হবার সু খবর দেয়।
আর রণ..
রণ শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস নেয়।
রণ আজো বাচ্চা দেখলে ঝাঁপিয়ে পড়ে কোলে নিতে।
কেউ কেউ বলে উঠে,তুই বাচ্চাদের এত ভালবাসিস,তোর বাচ্চা হবে কবে?তুই বাবা হবি কবে?
ওর হাসি মুখ টা তখন মেঘে ঢেকে যায়।
আমার চোখ তা এড়ায় না।
আমাদের বিয়ের আজ ৫ বছর পূর্ণ হলো।
রণ বরাবরের মতই আমাকে রাত ১২ টায় জড়িয়ে ধরে উইশ করলো।
_রণ,
_হুম কলিজা,
_আজকের দিনে আমি তোমার কাছে কিছু চাইবো।
দিবে?
_কেন দিবোনা?তুমি আমার প্রাণ টা চাইলে প্রাণ টাও দিয়ে দিবো।
কি চায় আমার কলিজা,শুনি?
_তুমি আরেকটা বিয়ে করো।
_হুয়াট?
তোমার মাথা ঠিক আছে?এসব তুমি কি বলছো?
_আমি যা বলছি ঠিকই বলছি।
আমি তোমাকে কখনো সন্তানের সুখ দিতে পারবোনা।
৫ বছর হয়ে গেছে আমি পারিনি তোমায় বাবা ডাক শোনাতে।
আর হয়তো কোন দিনো পারবোনা।
তাই আমি চাই তুমি আরেকটা বিয়ে করো।
_কিন্তু বিন্দু..
_প্লিজ কোন কথা বলোনা।
তুমি বলেছো আমি যা চাইবো তুমি তাই দিবে।
তাই ওয়াদা ভঙ্গ করোনা।
আমি সকালেই বাসার সবাইকে বলে দেবো তোমার জন্য মেয়ে দেখতে।
চলবে?