#ভালবাসার_ঘর।
#বিন্দু_মালীনি।
#পর্ব_৪
যেকোন মুহূর্তে বৃষ্টি নেমে যেতে পারে তাই আমি ছাদ থেকে সবার কাপড় চোপড় গুলো আনতে যাই।
আর নিয়ে আসার সময় হঠাৎ কিভাবে যেন আমার পা স্লিপ করে আর আমি সিঁড়ি থেকে পড়ে যাই।
সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে উঠি,এর পর আর আমার কিছু মনে নেই।
যখন আমার জ্ঞান ফিরে তখন আমি নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করি।
আর আমার মাথার কাছে বসে আছে রণ।
আমি চোখ খোলা মাত্রই রণ বলে ওঠে,
_কলিজা,ঠিক আছো তুমি?
_হ্যাঁ ঠিক আছি।রণ আমার বাচ্চা ঠিক আছে তো?আমার বাচ্চার কিছু হয়নিতো?
আমাদের বাচ্চা ঠিক আছে তো?
_হ্যাঁ কলিজা।ও ঠিক আছে।তুমি কোন চিন্তা করোনা।একটু চুপ করে রেস্ট নাও।
_রণ,আমার যেন কেমন লাগছে।
_আরে পাগলী চিন্তা করোনাতো।কিছু হয়নি আমাদের বাচ্চার।
_জানো আমি যখন ৩য় সিঁড়িতে তখন আমি পা স্লিপ করে ৫নং সিঁড়িতে পড়ে যাই,আর কিভাবে যে আমার বাচ্চাটাকে বাঁচানোর জন্য আমি রেলিংটা ধরে ফেলি তা শুধু আমি জানি।
তারপর আর কি হয়েছে আমার মনে নেই।
কিন্তু আমার পেট টা এইভাবে চাপ ধরে আছে কেন?
_ও কিছু না,ব্যথা পেয়েছো যে সেই জন্য।
ঠিক হয়ে যাবে।
তারপর বাইরে থেকে আমার বাসার আর রণর বাসার সবাই ভেতরে এসে আমার সাথে কথা বলে।
ডাক্তার আমাকে দুই দিন হসপিটালে রেখে দেন।
রণ আর আমার শাশুড়ি মা আমার সাথে থাকেন।আম্মুও থাকতে চায়,কিন্তু রণ বলে,সমস্যা নেই আম্মু।আমি আছি তো আমি ওকে দেখে রাখবো।বাসায় বেলা একা না?আপনি বাসায় চলে যান।
তাই আম্মু চলে যায়।
এদিকে আমার শুধু একটাই চিন্তা,আমার বাচ্চা ঠিক আছেতো?
দু দিন পর ডাক্তার আমাদের একটা আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে বলেন,ওটা দেখেই নিশ্চিত হওয়া যাবে আমার বাচ্চাটা এখন কেমন আছে।
আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে এসে ডাক্তারের কেবিনে বসে আছি।
আজকের মত ভয় আমার আর কোন দিন লাগেনি।বার বার দোয়া দরুদ পড়ছি।যাতে আমার বাচ্চাটা ঠিক থাকে।
_আমি আপনাদের যা বলছি আপনারা খুব মনোযোগ সহকারে শুনুন।
_জ্বী ডাক্তার।
_আমার যত টুকু সম্ভব আমি চেষ্টা করেছি বাচ্চাটাকে ঠিক রাখার।ইনজেকশনও পুশ করেছি।মেডিসিনও দিয়েছি।
আজ দুইদিন পর আল্ট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্ট দেখে আমার খুবই দুঃখের সাথে আপনাদের জানানো লাগছে যে,
আপনাদের বাচ্চাটার পজিশন খুব একটা ভালোনা।
ওর দুনিয়াতে আসার এবং দুনিয়া থেকে চলে যাবার চান্স ফিফটি ফিফটি।
তবে বাচ্চাটাকে রাখলে বাচ্চার মায়ের জীবন সঙ্কায় পড়ে যেতে পারে।
তাই আমার মতে আপনাদের উচিৎ এখন বাচ্চাটাকে এভয়েড করা,এ্যাবরশন করে ফেলা।
এখন আপনারা সিদ্ধান্ত নিন,কি করতে চান আপনারা।
বাচ্চাটাকে কি রাখতে চান, নাকি…
কথা টা শোনার সাথে সাথে পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যাচ্ছিলো।
বুকের ভেতর টাতে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছিলো।
আমি যেন বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম।
রণ কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।
গিয়েই হসপিটালের বারান্দায় বসেই দু হাত দিয়ে মুখ চেপে কান্নার শব্দ লুকোনোর বৃথা চেষ্টা করতে লাগলো।
তারপর মিনিট সাতেক পর এসে আমার হাত ধরে বল্লো,
_ডাক্তার, বাচ্চাটাকে এভয়েড করার ব্যবস্থা করুন।
_না রণ,এ কি বলছো তুমি?আমি আমার বাচ্চা টাকে মেরে ফেলবো?তাও আবার নিজ হাতে?
না না,কক্ষনোই না।কোন দিন না।
_বিন্দু,বোঝার চেষ্টা করো।ও থাকলে তোমার জীবন রিস্কে থাকবে।
আর ওর বেঁচে থাকার ৬০% ও চান্স নেই।
কেন বুঝতে পারছোনা?
_তাই বলে আমি মা হয়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি এড়াতে আমার সন্তানকে মেরে ফেলবো?
এটা কি বলছো তুমি রণ?
_তুমি সুস্থ হলে আমাদের আবার বাচ্চা আসবে বিন্দু।আর যদি তুমিই না থাকো তবে আমি বাচ্চা দিয়ে কি করবো?
যে আসেনি এখনো দুনিয়ায়,তার জন্য আমি আমার ভালবাসার জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে পারবোনা।পারবোনা আমি আমার ওয়াইফের জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে।
_ডাক্তার আপনি ব্যবস্থা করুন।
_আচ্ছা ঠিক আছে,আপনি এখন একটু পেসেন্টকে রেখে বাইরে যান।
_আমি যাচ্ছি,আর আপনি বাচ্চাটাকে এভয়েড করার ব্যবস্থা করুন।
রণ বাইরে চলে যায়।
আর আমি ডাক্তারকে বলি,
_আমার পক্ষে বাচ্চাটাকে মেরে ফেলা সম্ভব না ডাক্তার।এই বাচ্চাটাকে নিয়ে আমার হাজবেন্ডের অনেক স্বপ্ন।ও অনেক স্বপ্ন দেখেছে এই বাচ্চাটাকে নিয়ে।
আমি পারবোনা ডাক্তার আমার জীবন বাঁচানোর জন্য ওর স্বপ্ন টা ভেঙে ফেলতে।
_তো কি চাচ্ছেন আপনি এখন?
_আমি চাচ্ছি আমার বাচ্চাটা থাকবে আমার পেটে।
আর এই কথা আপনি আমার হাজবেন্ডকে জানাবেন না।
ও আমাকে অনেক ভালবাসে,
ও কখনোই চাইবেনা আমার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোন প্রাণ এই পৃথিবীতে আনতে।
_কিন্তু আপনি কি ভেবে দেখেছেন এর পরিণাম কি হতে পারে?
_হয়তো মরে যেতে পারি, যত দিন হায়াত আছে ততদিনই তো বাঁচবো বলুন?
তাই আমি আমার বাচ্চাটাকে রাখতে চাই।
_আপনার যেমন ইচ্ছে।
কিন্তু কোন রকম খারাপ লাগলেই আপনি কিন্তু দ্রুত আমার এখানে চলে আসবেন।
কোন রকম হেলা করবেন না।
_জ্বী আচ্ছা।
অনেক ক্ষণ পর ডাক্তার রণকে বলেন,
আপনার স্ত্রীকে বেডে দেয়া হয়েছে।আপনি এখন যেতে পারেন।
_ডাক্তার,সব ঠিক আছেতো?
এখন আর ওর কোন ক্ষতি হবার সম্ভবনা নেই তো?
_সব ঠিক আছে।
রণ দৌড়ে আমার কাছে আসে।
আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
_কিচ্ছু হবেনা কলিজা,
সব ঠিক হয়ে যাবে।কিছু দিন পরই আবার তোমার গর্ভে আমাদের বাচ্চা আসবে।
চিন্তা করোনা তুমি।
আমি রণর দিকে তাকিয়ে কাঁদতে থাকি।
রণ ভাবে আমি হয়তো বাচ্চাটা হারানোর দুঃখে কাঁদছি।
কিন্তু আমিতো কাঁদতেছি রণর কাছ থেকে এত বড় সত্যটা লুকোনোর কারণে আর রণ আমাকে এতটা ভালবাসে, এই ভেবে।
এর পরের দিন আমাকে রিলিজ দিয়ে দেয় আর আমরা বাসায় চলে আসি।
বাসার সবাই আমাকে সান্ত্বনা দেয়।বলে কিচ্ছু হবেনা।আবার সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
আমি চুপ করে থাকি,কোন কথা বলিনা।
দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে যায়।
হঠাৎ খেয়াল করি আমার প্রেগন্যান্সির লক্ষণ গুলো এক এক করে গায়েব হয়ে যাচ্ছে।হঠাৎ এমন কেন হচ্ছে?
আগে মাথা ঘুরতো প্রায়ই।এখন ঘুরেনা,আগে বমি বমি লাগতো,এখন লাগেনা,আগে পেটে এক রকম অনুভূতি অনুভব করতাম।কিন্তু এখন আর তা হচ্ছেনা।এমন কেন হচ্ছে?
সকাল থেকে এমন অনুভব করছি।
সারাদিন এমন গেলো।ভাবলাম আজকের দিন টা দেখি,আগামীকাল ডাক্তারের কাছে যাওয়া যাবে।
কিন্তু সন্ধ্যা থেকে হঠাৎ করে শুরু হলো তল পেটে ব্যথা।
আর সেই ব্যথা প্রচন্ড আকার ধারণ করলো।
আমি চিৎকার করে ভাবীদের ডাকলাম আর মাকে ডাকলাম।
মা আর ভাবীরা আমার কাছে আসলো,
জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?
আমি তাদের সত্যি টা খুলে বললাম,
আর বললাম আমাকে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে চলুন।
নয়তো আমি আমার বাচ্চাটাকে বাঁচাতে পারবোনা।
মা কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলেন,
তুই তোর বাচ্চাটার চিন্তা করছিস।
আর আমি তো এখন তোকে নিয়ে চিন্তা কিরছিরে মা।
এদিকে হঠাৎ ই আমার ব্লিডিং শুরু হয়ে গেলো।
আর বড় ভাবী রণকে ফোন দিয়ে বলতে লাগলো,
রণরে,বিন্দুর অবস্থা খুব খারাপ,আমরা ওকে নিয়ে হসপিটালে আসতেছি,তুই তাড়াতাড়ি হসপিটালে আয়।
চলবে?