ভালবাসার এক রাত পর্ব-৩৭ এবং অন্তিম পর্ব

0
1809

#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#অন্তিম পর্ব

৫বছর পর।”

ড্রয়িংরুমে রোজ-শুভ্রর ছেলে-মেয়ে খেলছে। খেলছে না ঠিক মারামারি করছে। শুভ্রর মা ওদের কাছে এসে বললো,

—-” তোমরা মারামারি করছো কেন?”

শুভ্রর ছেলে বললো।”

—-” দিদা তোমার নাতনীরা আমাকে মারছে,

শুভ্রর মেয়ে ভাইয়ের চুল টেনে বললো।”

—-” এই তুই মিথ্যে বলছিস কেন?”

ওরা আবার মারামারি শুরু করে দিলো। শুভ্রর মা ওদের কোনরকম ছাড়িয়ে বললো,

—-” উফ এরা যে কি করে? বাবা, মা ছাড়া কেউ পারে নাকি এত ছোট বাচ্চা সামলাতে?”

ওরা ৩জন একসাথে বললো।”

—-” মাম্মা, পাপা কোথায়?”

উনি কিছু বলার আগে মেঘ এসে শুভ্রতাকে জড়িয়ে ধরলো। শুভ্রা গাল ফুলিয়ে বললো,

—-” মেঘ ভাইয়া তুমি আমাকে ভালবাসো না।”

রোজ-শুভ্রর দুই মেয়ের নাম শুভ্রা, শুভ্রতা আর ছেলের নাম অভ্র। শুভ্রার পুরো নাম রোজি চৌধুরী শুভ্রা। শুভ্রতার পুরো নাম রজনী চৌধুরী শুভ্রতা। আর ছেলের নাম রিজন চৌধুরী অভ্র। শুভ্রার কথা শুনে মেঘ শুভ্রার গাল টেনে বললো,

—-” কে বললো তোকে ভালবাসি না? তোকে খুব ভালবাসি বুঝলি? তুই তো আমার বোন তোকে ভালবাসবো না?”

অভ্র মেঘের সামনে এসে বললো।”

—-” শুভ্রতাও তো তোমার বোন ভাইয়া,

মেঘ কপালে ভাজ ফেলে বললো।”

—-” তুই চুপ করবি?”

শুভ্রর মা মেঘকে বললো,

—-” মেঘ তোমার পাপা কোথায়?”

মেঘ দরজার দিকে তাকিয়ে বললো।”

—-” ওই তো মাম্মা, পাপা,

রোদ আর তনয়া ভেতরে এসে বাচ্চাদের কোলে নিলো। ওদের চকলেট দিয়ে খেলতে পাঠিয়ে দিলো। একটুপর আবার ওরা এসে বললো।”

—-” মাম্মা, পাপা কোথায়?”

শুভ্রর মা টিভি চালিয়ে দিলো। বাচ্চারাও বসে গেলো টিভি দেখতে। জীবন কাহিনী নামে একটা শো হচ্ছে,

—-” ভেবেছিলাম ওকে হারিয়ে ফেলবো। আর এটাও ভেবেছিলাম আমিও বাঁচবো না। কজ ও আমার জীবন আর যার জীবন নেই সে মৃত। ওরকম একটা সিচুয়েশনে আমি ঠিক বোঝাতে পারবো না আমার মনের উপর কি ঝড় বয়ে গিয়েছিলো। পুরো সাড়ে ৪বছর কোমায় ছিলো রেড রোজ। এইতো ৬মাস আগে কোমা থেকে ফিরেছে।”

শুভ্রর কথা শুনে সবার চোখে পানি চলে এসেছে। একজন জার্নালিস্ট বললো,

—-” স্যার সেদিন কি হয়েছিলো?”

শুভ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো।”

—-” সেদিন ডক্টর রোজ সেভ না বলার পর আমি উত্তেজিত হয়ে যাই। আমি আমার ছেলে-মেয়েদের মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম। আমার ফ্রেন্ডসরা আমাকে শক্ত করে ধরে রাখে। হঠাৎ বুকে প্রচুর ব্যথা শুরু হয় আর তারপর সেন্সলেস হয়ে যাই,

“৫বছর আগে”

শুভ্র সেন্সলেস হয়ে যাওয়ার পর ডক্টর ওকে তাড়াতাড়ি ভিতরে নিয়ে যায়। একদিকে রোজ আরেকদিকে শুভ্র। আরেকদিকে সদ্য জন্ম নেয়া তিনটে বাচ্চা কাঁদছে। সবাই পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। সবাই কাঁদছে কারো চোখের পানি থামছে না। অন্য লোকজন এসে ওদের শান্ত করার চেষ্টা করে। বেশ কিছুক্ষণ পর ডক্টর বেরিয়ে এসে বললো।”

—-” যা ভেবেছিলাম তাই উনি হার্ট এ্যাটাক করেছে। উনি তো আমার পুরো কথা শুনলো না। মিসেস রোজকে আমরা সেভ করতে পারিনি মানে এই না উনি মারা গিয়েছে,

সবাই অবাক হয়ে বললো।”

—-” তাহলে?”

ডক্টর একটা শ্বাস ছেড়ে বললো,

—-” উনি বেঁচে আছে সবটাই আল্লাহর কৃপা। কিন্তুু উনি কোমায় চলে গিয়েছে। কোমা থেকে কবে ফিরবে আমরা ঠিক জানিনা। হয়তো ৬মাস বা ১বছরেও ফিরতে পারে বা তার বেশী সময় লাগতে পারে। এটাই বলতে চেয়েছিলাম আমি। কিন্তুু মিস্টার শুভ্র সবটা না শুনে। আমি বুঝতে পারছি উনি ওনার ওয়াইফকে খুব ভালবাসে। আপনারা টেনশন করবেন না আল্লাহকে ডাকুন সব ঠিক হয়ে যাবে। ওনারা দুজনই আইসিইউতে আছে।”

১০ঘন্টা হয়ে গিয়েছে শুভ্রর সেন্স আসেনি। বাচ্চাদের চৈতি খাইয়েছে ওদের তো বাঁচাতে হবে। সবাই আল্লাহর দরবারে হাত তুলেছে। পরম দয়ালু আল্লাহ যেন দুজনকে ঠিক করে দেয়। পরেরদিন গিয়ে রাতে শুভ্রর সেন্স আসে। সেন্স আসা মাত্র শুভ্রর রোজের কথা মনে পড়ে। শুভ্র অক্সিজেন আর ক্যানোলা খুলে পাগলের মতো বেরিয়ে আসে। এদিক, ওদিক ছোটাছুটি করছে। কারণ ওকে আলাদা আইসিইউতে রাখা হয়েছিলো। শুভ্র সেকেন্ড ফ্লোরে এসে সবাইকে দেখতে পেয়ে গিয়ে বললো,

_____________

—-” আমার রেড রোজ কোথায়? তোমরা কিছু বলো কোথায় আমার রেড রোজ?”

সামির শুভ্রকে শান্ত হতে বলে বললো।”

—-” শুভ্র তোর রেড রোজ বেঁচে আছে। আমাদের বোঝার ভুল ও বেঁচে আছে,

শুভ্র কান্নার মাঝে হেসে বললো।”

—-” আমি জানতাম ও আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না। আমি মনে, মনে বলেছিলাম আমার ভালবাসা সত্যি হলে ও আমাকে ছেড়ে যাবে না। আমার #ভালবাসার_এক_রাত সত্যি হলে ও ঠিক আমার কাছে থাকবে। দেখলি ও আমাকে ছেড়ে যায়নি?”

নিরব মুখ কালো করে বললো,

—-” কিন্তুু শুভ্র।”

শুভ্র নিরবকে থামিয়ে বললো,

—-” কিন্তুু কি? কোন কিন্তুু না নিরব। রোজকে কেবিনে দিয়েছে তো? কোন কেবিনে দিয়েছে চল যাবো।”

শুভ্র হাটা দিতে গেলেই শারাফ বললো,

—-” কিন্তুু রোজ কোমায় চলে গিয়েছে।”

শুভ্র থমকে গিয়ে পিছনে তাকালো। সব আশা যেন এক মুহূর্তে শেষ হয়ে গেলো। শুভ্র ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো। যেন কোন পাথর বসে আছে। একেবারে অনুভূতিহীন হয়ে গিয়েছে শুভ্র। ৭দিন পর রোজকে বাড়ি নিয়ে এলো। এই ৭দিন শুভ্র একইভাবে ছিলো। রোবটের মতো যে যা বলেছে করেছে। বাড়ি এনে রোজকে শুভ্রর রুমে রেখে শুভ্রকে ওর পাশে বসিয়ে দিলো। শুভ্র এক দৃষ্টিতে রোজের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ বাচ্চাদের কান্নার আওয়াজে শুভ্র সেদিকে তাকালো। বাচ্চাদের ইচ্ছে করেই রুমে রেখে গিয়েছে। সবাই ভেবেছে বাচ্চাদের জন্য হলেও শুভ্র রেসপন্স করবে। শুভ্র ধীর পায়ে বাচ্চাদের কাছে এসে বললো,

—-” তোদের জন্য হয়েছে সব। আমার রেড রোজ তোদের জন্য এভাবে পড়ে আছে। তোদের আমি মেরে ফেলবো এক্ষুণি মেরে ফেলবো।”

বলে যেই গলা চেপে ধরবে সবাই এসে শুভ্রকে ধরে ফেললো। শুভ্রর চোখ রাগে লাল হয়ে আছে। বাচ্চাদের নিয়ে তনয়া বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। শুভ্র চিৎকার করে বসে পড়লো। দিন কাটছে তার মতো শুভ্রর চেহারা পাল্টে গিয়েছে। মাথার চুল বড় হয়ে গিয়েছে দাড়ি বড় হয়ে গিয়েছে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গিয়েছে। বাচ্চাদের বয়স এখন ৬মাস শুভ্র ভুলেও ওদের ছুঁয়ে দেখে না। বরং ওদের দেখলে আরো রেগে যায়। সারাক্ষণ রোজের পাশে বসে এটা, ওটা বলে। খেলে খায় না খেলে না খায়। রকস্টার শুভ্র আর আগের মতো নেই। শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে বললেই চলে। শুভ্র রোজের পাশে বসে ছিলো তখন শুভ্রর মা এসে বললো,

—-” আজ রোজের এই অবস্থা তোদের সন্তানদের জন্য। তাদের বাঁচাতে গিয়ে আজকে মেয়েটার এই অবস্থা। ভাবতে পারিস রোজ সন্তানদের কতটা ভালবাসে। আর সেই সন্তানদের তুই এভাবে অবহেলা করছিস? রোজের সেন্স আসার পর যখন এটা জানবে ও কতটা কষ্ট পাবে ভেবেছিস তুই? তুই কি চাস রোজ কষ্ট পাক? এমনও তো হতে পারে কষ্ট মেনে নিতে না পেরে রোজের আবার কিছু হলো। তখন মেনে নিতে পারবি তো তুই?”

শুভ্র আতকে উঠে বললো।”

—-” না কিছু হবে না আমার রোজের। আমি ওকে আর কষ্ট পেতে দেবো না। আম্মু তুমি বেবিদের নিয়ে এসো আমি আর ওদের দুরে সরিয়ে রাখবো না। আমার রেড রোজের জন্য হলেও আমি ওদের খেয়াল রাখবো ভালবাসবো। আমার রেড রোজ চেয়েছিলো ওদের আমরা একসাথে গোসল করাবো। সেটা হয়তো আল্লাহ চায়নি আমি করবো সে সব,

শুভ্রর মা বেবিদের এনে শুভ্রর কোলে দিলো। শুভ্র আগে মেয়ে দুটোকে কোলে নিলো। বুকের সাথে মিশে গেলো শুভ্রর কোলে এসে। এরপর ছেলেকে কোলে নিলো। ওদের কোলে নিয়ে শুভ্রর কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেলো। শুভ্র ওদের সারা মুখে চুমু খেয়ে বললো।”

—-” আমার ছেলে-মেয়ে আম্মু। পাপা তোমাদের অনেক কষ্ট দিয়েছে তাই না? আজ থেকে তোমাদের আমি আর কষ্ট দেবো না। তোমাদের বুকে আগলে রাখবো। আমার বুকে তো তোমাদের মাম্মার বসবাস। সেখান থেকে একটুখানি জায়গা তোমাদের দেবো বেশী না। দেখবে পাপা এখন থেকে তোমাদের আগলে রাখবে। আমরা সবাই মিলে তোমাদের মাম্মাকে সুস্থ করে তুলবো। আম্মু ওদের নাম রেখেছো?”

শুভ্রর মা মাথা নেড়ে বললো,

—-” না এতকিছুর মাঝে ওদের নাম রাখা হয়নি।”

শুভ্র রোজের দিকে তাকিয়ে বললো,

—-” আমি রাখবো ওদের নাম।”

______________

শুভ্র বেবিদের নাম রাখে রোজ আর নিজের নামের সাথে মিলিয়ে। এরপর থেকে শুভ্র ওর বেবিদের খেয়াল রাখতে শুরু করে। কিন্তুু ছোট বাচ্চাতো মায়ের অভাব থেকেই যেতো। তাই শুভ্রর মা বুকে পাথর রেখে শুভ্রর বিয়ের কথা ভাবে। কিন্তুু কথাটা শুভ্রকে বলে উনি নিজেই কেঁপে ওঠে। শুভ্র অগ্নিরুপ ধারণ করে চিৎকার করে বললো,

—-” তুমি এটা কি করে ভাবতে পারো হ্যা? তোমার মনে হয়নি আমি কি করতে পারি? ছিঃ আমি ভাবতেও পারছি না এরকম চিন্তা তোমার মাথায় এসেছে। আমার জীবনে রোজ ছাড়া আর কেউ কখনো আসবে না। তুমি জানো না আমি ওকে কত ভালবাসি? সি ইজ মাই লাইফ বুঝেছো? তুমি কেন এটা বললে কেন?”

বলে শুভ্র টি টেবিলে লাথি মারলো। শুভ্রর মা কেঁপে উঠে বললো।”

—-” শুভ্র আমি তো তোর ছেলে-মেয়ের জন্য বলেছি। তিন, তিনটে বাচ্চা তোর ওদের কথা ভেবে বলেছি,

শুভ্র চেঁচিয়ে বললো।”

—-” ওদের কথা তোমার ভাবতে হবে না। কারোই আমাদের কথা ভাবতে হবে না। আমি নিজেই আমার বউ, ছেলে-মেয়েদের দেখে রাখতে পারবো। সরি টু সে কিন্তুু আমি আজই এই বাড়ি থেকে চলে যাবো। আমি আমার বাড়িতে চলে যাবো,

শুভ্রকে সেদিন কেউ আটকাতে পারেনি। শুভ্র এম্বুলেন্স খবর দিয়ে রোজকে নিয়ে ওর বাড়িতে চলে আসে। নিজের ছোট, ছোট ছেলে-মেয়ে আর রোজের খেয়াল রাখতে, রাখতে ৪বছর কেটে যায়। রোজ কোমায় আছে সাড়ে ৪বছর হয়ে গিয়েছে। ওদের ছেলে-মেয়ের বয়সও এখন সাড়ে ৪বছর। ওরাও ওদের মায়ের কাছে বসে থাকে। নিজেদের বাবার মত মায়ের সাথে কথা বলে। সবারই এখন ছেলে-মেয়ে আছে। শারাফ আর জারার এক মেয়ে নাম আরিয়া, বয়স ৩ বছর। রিক আর চৈতির এক মেয়ে সবাই জানেন তার নাম রিতিকা, রিতিকার বয়স সাড়ে ৫বছর। নিরব আর তিথির এক মেয়ে নাম মেঘলা বয়স ৩বছর। সামির আর রাইসার এক ছেলে নাম আরাফ বয়স সাড়ে ৩বছর। রোদ আর তনয়ার ছেলে মেঘ এখন বড় হয়ে গিয়েছে তার বয়স ৭বছর। শুভ্র ছেলে-মেয়েকে খাওয়াচ্ছে তখন সবাই নিজেদের ছেলে-মেয়ে নিয়ে হাজির হলো। শুভ্র ওদের দেখে বললো।”

—-” তোরা এখানে?”

এমন সময় উপর থেকে আওয়াজ পেয়ে শুভ্র দৌড়ে গেলো। গিয়ে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ওর কাছে সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে। শুভ্র দৌড়ে এসে রোজকে জড়িয়ে ধরলো। সবাই অবাক সাথে খুশী হয়েছে। শুভ্র রোজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। শুভ্র আওয়াজ পেয়ে এসে দেখে রোজ বসে আছে। ওদের ছেলে-মেয়ে এসে বললো,

—-” মাম্মা তোমার ঘুম ভেঙেছে?”

রোজ দেখলো একটা ছেলে দুটো মেয়ে। মেয়ে দুটোর চেহারা একই রকম। রোজ বুঝতে পারছে না এরা কারা। একবার মনে হচ্ছে ওর ছেলে-মেয়ে। আবার ভাবছে ওর ছেলে-মেয়ে এত বড় কিভাবে হবে? শুভ্র রোজের হাবভাব দেখে বললো।”

—-” রেড রোজ ওরা আমাদের ছেলে-মেয়ে,

রোজ অবাক হয়ে বললো।”

—-” শুভ্র এসব কি বলছেন আপনি? আমার ছেলে-মেয়ে এত বড় কিভাবে হবে?”

_____________

রোজের এবার চোখ গেলো দরজায়। সবাইকে দেখে খুশী হলেও সাথে বাচ্চাদের দেখে অবাক হয়ে বললো,

—-” ওরা কারা?”

রোদ রোজের কাছে এসে বললো।”

—-” ওরা সবাই আমাদের ছেলে-মেয়ে,

রোজ কিছু বুঝতে না পেরে বললো।”

—-” এসব কি বলছিস? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আর আমার ছেলে-মেয়ে কোথায়? আমার তো বাঁচার কথা ছিলো না। আমাকে কেউ বলবে কি হচ্ছে?”

শুভ্র রোজকে ধরে বললো,

—-” রেড রোজ তুমি সাড়ে ৪বছর কোমায় ছিলে। আর ওরা আমাদের বেবি শুভ্রতা, শুভ্রা আর অভ্র। জানো তোমাকে এভাবে দেখে আমার কত কষ্ট হয়েছিলো? তুমি তোমার পেইনের কথা আমাকে কেন বলোনি?”

রোজ নিজের ছেলে-মেয়েদের জড়িয়ে ধরে সারা মুখে চুমু খেয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে বললো।”

—-” সব আমার ভুল। আমি যদি ব্যথাটাকে পাত্তা দিতাম এসব হতোই না। আমার বাচ্চারা আমাকে ছাড়াই বড় হয়েছে আমার ভুলে। আমি তো ওদের বড় হওয়াটাও দেখতে পেলাম না। সব আমার ভুল আমার জন্য সব হলো। মাম্মাকে ক্ষমা করে দিস তোরা। মাম্মা থেকেও তোদের খেয়াল রাখতে পারিনি,

সবাই রোজকে শান্ত করলো। শুভ্রর থেকে খুশী সেদিন কেউ হয়নি। শুভ্রর মা এসে রোজকে বলে ওদের বাড়ি ফিরিয়ে আনে। এরপর সবাই হাসি, খুশী থাকতে শুরু করে। এখন ওদের জীবনে শুধুই খুশী। রোজ শুভ্রর চুল, দাড়ি কাটায়। কারণ শুভ্রর চেহারার নকশাই চেঞ্জ হয়ে গিয়েছিলো। শুভ্রও আবার তার মিউজিক লাইফে ব্যাক করে। সবাই রকস্টার শুভ্রকে পেয়ে খুশী। এভাবে আরো ৬মাস কেটে যায়। একটা শো তে রোজ-শুভ্রকে ইনভাইট করে যার নাম জীবন কাহিনী। সেখানে ওরা দুজন যায় নিজেদের কথা বলতে।”

“বর্তমান”

সবাই স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। সকলের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। এমন লাভ স্টোরি কারো হতে পারে কারো জানা ছিলো না। কেউ কাউকে এতটা ভালবাসতে পারে জানা ছিলো না। একজন লোক চোখ মুছে বলে উঠলো,

—-” আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না কি বলবো। আসলে আমি ভাষাহীন হয়ে গিয়েছি। কেউ কাউকে এতটা ভালবাসতে পারে? সীমাহীন ভালবাসা এ ভালবাসার কোন সীমা নেই। আপনারা দুজনই দুজনকে পেয়ে লাকি। এর বেশী কিছু আমি বলতে পারছি না। আমি বুঝতে পারছি না আর কিভাবে বলবো।”

একজন জার্নালিস্ট বলে উঠলো,

—-” স্যার আপনার ছেলে-মেয়েদের আনেননি?”

তখনি সবাই হাজির হলো। ওদের ছেলে-মেয়ে দৌড়ে চলে এলো। শুভ্র কোলে নিলো মেয়ে দুটোকে আর রোজ কোলে নিলো ছেলেকে। শুভ্র মুচকি হেসে বললো।”

—-” এই হচ্ছে আমাদের ছেলে-মেয়ে,

সবাই ওদের ফ্যামিলি ছবি তুললো। শুভ্র সবাইকে ডেকে সবার সাথে ছবি তুলে বেরিয়ে এলো।”

রাত ১২টা, ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছে রোজ-শুভ্র। হঠাৎ রোজ বললো,

—-” আচ্ছা শুভ্র আমি মরে গেলে আপনি কি করতেন?”

শুভ্র রোজকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,

—-” আমার বিশ্বাস ছিলো তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারো না। যদিও এক মুহূর্তের জন্য ভয় কাজ করছিলো। বাট মনের বিশ্বাস হারাইনি। আমার বিশ্বাস ছিলো আমার ভালবাসা সত্যি হলে তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না। আমার বিশ্বাস ছিলো আমার ভালবাসার এক রাত সত্যি হলে তুমি আমার কাছে থাকবে।”

রোজ শুভ্রকে জড়িয়ে ধরলো। শুভ্র ফিসফিস করে বললো,

—-” হবে নাকি #ভালবাসার এক রাত?”

রোজ চোখ বড়, বড় করে তাকালো। শুভ্র রোজের ঠোটের দিকে এগোচ্ছে। এরমাঝে রোদ, সামির, রিক, শারাফ আর নিরব বললো।”

—-” হ্যাপি এ্যানিভার্সেরী,

রোজ-শুভ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সবাই বউ, বাচ্চা নিয়ে এই রাতে হাজির। আর ওদের বাচ্চারাও দাড়িয়ে আছে। তবে ওরা খুশী হলো সবাই মিলে কেক কাটলো। আরাফ শুভ্রতাকে কেক খাওয়াতে গেলে মেঘ বললো।”

—-” এই ওকে আমি কেক খাওয়াবো। #মেঘের_শুভ্রতা ও তাই মেঘই ওকে কেক খাওয়াবে,

বলে শুভ্রতাকে কেক খাইয়ে দিলো। অভ্র মেঘলাকে কেক খাইয়ে বললো।”

—-” তাহলে ও আমার মেঘলা,

সবাই হা করে থেকে হেসে দিলো। ওরা সারাজীবন এভাবেই সুখে থাকুক ছেলে-মেয়ে নিয়ে। ওদের জীবনে সুখ থাকুক কানায়, কানায়। হাত বাড়ালেই যেন সুখ ওদের হাতের মুঠোয় থাকে। সবাই ওদের জন্য দোয়া করবেন।”

#সমাপ্ত…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে