#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ২১
শুভ্র শিরির দিকে তাকিয়ে রোজকে দেখলো। আবার পুলিশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।”
—-” রোজ কোথাও যাবেনা। কজ সি ইজ মাই ওয়াইফ। আর একজন ওয়াইফ তো তার হাসবেন্ডের সাথেই থাকবে তাই না অফিসার?”
শুভ্রর মুখে নিজেকে ওয়াইফ বলতে শুনে রোজ টুপ করে আকাশ থেকে পড়লো। রোজ হনহন করে নিচে নেমে এসে বললো,
—-” ওয়াইফ মানে?”
—-” ওয়াইফ মানে ওয়াইফ বেবি। গতকাল রাতে সারারাত তো আমাকে ঘুমাতে দাওনি। শুভ্র আরেকটু আদর করুন, শুভ্র আরেকটু আদর করুন বলে জাগিয়ে রাখলে সারারাত। আজ এত তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেলো তোমার জানু?”
শুভ্রর কথায় সবাই অসস্তিতে পড়ে গেলো। রোজের অবস্থা যেন আকাশ থেকে পড়ে খেজুর গাছে আটকে আছে টাইপ। এদিকে শুভ্রকে দেখে মনে হচ্ছে এতে তার কিছুই যায় আসেনি। সে দিব্যি একেরপর এক মিথ্যে বলে যাচ্ছে। রোজের ইচ্ছে করছে মাটি ফাকা করে মাটির নিচে ঢুকে যেতে। অফিসার নিজেকে সামলে বললো।”
—-” মিসেস রোজ এটা কি সত্যি কথা? আপনি মিস্টার শুভ্র চৌধুরীকে বিয়ে করেছেন? আর যদি করেই থাকেন তাহলে সামির খাঁনকে ডিভোর্স করেছেন?”
রোজ কিছু বলার আগে শুভ্র বললো,
—-” ওয়েট অফিসার আমি আসছি।”
বলে রোজকে নিয়ে উপরে গেলো। রোজকে রেখে কাবার্ড থেকে পেপারসটা বের করে বললো,
—-” তুমি এখানেই থাকো আমি আসছি।”
রোজ ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” আপনার হাতে কি?”
শুভ্র রোজের কথার উত্তর না দিয়েই নিচে গেলো। নিচে গিয়ে বুক টান করে দাড়িয়ে বললো।”
—-” হ্যা তো অফিসার কি বলছিলেন? রোজ ওনার ছেলেকে ডিভোর্স দিয়েছে কি না? তা আমি তো জানি বিয়ে হলে ডিভোর্স হয়। বাট বিয়ে না করলে ডিভোর্স কি করে হয়?”
আসলাম খাঁন ঘাবড়ে বললো,
—-” এসব কি বলছো তুমি?”
শুভ্র বাঁকা হেসে বললো।”
—-” আপনি যা বুঝেছেন সেটাই বলেছি। আপনার ছেলে সামিরের সাথে রোজের কখনোই বিয়ে হয়নি। সো ডিভোর্সের প্রশ্নই আসে না। এন্ড দ্বিতীয়ত রোজ আমার ওয়াইফ তাই ও কোথাও যাবে না। অফিসার রোজের সাথে গতকালই আমার বিয়ে হয়েছে এই হচ্ছে রেজিস্ট্রি পেপারস,
বলে পুলিশের হাতে পেপারসটা দিলো। পুলিশ সেটা দেখে আসলাম খাঁনকে বললো।”
—-” উনি তো ঠিকই বলছে। আইনত রোজ ওনার ওয়াইফ। আপনি আমাদের মিথ্যে বলে এখানে আনলেন কেন?”
আসলাম খাঁন রেগে বললো,
—-” অফিসার রোজ সামিরের বউ।”
—-” তাই? তা কি প্রমাণ আছে?”
শুভ্রর কথা শুনে আসলাম খাঁন চুপ হয়ে গেলো,
—-” আমাকে তো আপনারা চেনেন রাইট? তারপরও কোন প্রমাণ ছাড়া এখানে এলেন কোন সাহসে? আপনারা জানেন? আমার একটা ফোনে আপনাদের চাকরি চলে যাবে জানেন?”
শুভ্রর ধমকে পুলিশ ভয়ে, ভয়ে বললো।”
—-” উই আর রিয়েলি ভেরী সরি স্যার আপনাকে বিরক্ত করার জন্য। আর এই যে আপনি চলুন এখান থেকে। নেক্সট টাইম এমন করলে জেলে পুড়ে দেবো,
আসলাম খাঁনের কানের কাছে শুভ্র ফিসফিস করে বললো।”
—-” খেলা শুরু চাচ্চু ওপস আসলাম খাঁন। তোর ধ্বংস আমার হাতেই হবে এখন বেরিয়ে যা,
আসলাম খাঁন রাগী ভাবে বেরিয়ে গেলো। শুভ্র তাচ্ছিল্য হেসে উপরে তাকাতেই চমকে গেলো। রোজ ছলছল চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্র বুঝে গেলো রোজ সব জেনে গিয়েছে। শুভ্র রোজকে সব বলতে উপরে গেলো।”
______________
সোফার কোনে পাথরের মতো বসে আছে রোদ। মুখ দিয়ে আওয়াজটুকুও বের হচ্ছে না। গতকাল রাত থেকে এই একই জায়গায় বসে আছে রোদ। মনে হচ্ছে কোন জিন্দা লাশ বুঝি বসে আছে। যখন শুনেছে ওর বাবাই, আম্মু ২বছর আগে মারা গিয়েছে তখন চিৎকার করে কেঁদে বসে পড়ে। আর তারপর থেকেই এই জায়গায় বসে আছে। একটুপর শুভ্রর মা এলো। উনি এসে রোদের কাঁধে হাত রেখে কেঁদে বললো,
—-” নিজেকে সামলা বাবা এভাবে ভেঙে পড়িস না।”
রোদ শুভ্রর মা কে জড়িয়ে হাউ, মাউ করে কেঁদে বললো,
—-” মামনি এসব কি হয়ে গেলো? আমি আর আমার বোন এতিম হয়ে গেলাম মামনি। আর আমি এমন হতভাগা সন্তান যে বাবাই, আম্মুর লাশ দেখতেও পারলাম না। আমি সন্তান হওয়ার যোগ্য নই। আমি কেন চলে গেলাম সেদিন? বাবার একটা কথাকে বড় করে দেখে কেন গেলাম? মামনি আমরা একা হয়ে গেলাম মামনি। আমার বোন এই ২বছর একা থেকেছে। জানিনা আমার ব্ল্যাক রোজ কেমন আছে। আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না। কি করে ক্ষমা করবো আমি মামনি? মামনি আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।”
শুভ্রর মা রোদের চোখের পানি মুছে বললো,
—-” তুই আমেরিকা কেন চলে গিয়েছিলি?”
রোদ কাঁদতে, কাঁদতে বললো।”
—-” ২বছর আগে আমি ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিলাম। তুমি তো জানো বাবাই চাইতো আমি যেন আমাদের বিজনেস দেখি কিন্তুু আমার ভাল লাগতো না। ১দিন আমি জেদ করে অফিসে যাই আর একটা ফাইলে ভুল করে ফেলি। যার জন্য বাবাইর ১৫কোটি টাকার ডিল ক্যান্সেল হয়ে যায়। ওই ডিলটা তখন বাবাইর জন্য ইনফ্যাক্ট আমাদের পরিবারের জন্য খুব দরকার ছিলো। আর সেদিন বাবাই বাড়িতে এসে,
“অতীত”
রোদ বসে টিভি দেখছে তখনি ওর বাবা এসে ওকে টেনে তুলে চর বসিয়ে দিলো গালে। রোদ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কারণ আজ পর্যন্ত ওর বাবা ওকে মারেনি। রোজ আর ওর মা ও ড্রয়িংরুমে চলে এসেছে। রোজ অবাক হয়ে বললো।”
—-” বাবাই ভাইয়াকে মারলে কেন?”
রোজের বাবা চেঁচিয়ে বললো,
—-” এই অপদার্থ আমার সর্বনাশ করে এসেছে। ওর ভুলের জন্য আমার ১৫কোটি টাকার ডিল হাত ছাড়া হয়ে গিয়েছে। সারাদিন যেসব করে ফাইলে সে সব লিখে এসেছে। আমার লজ্জা করছে ওকে ছেলে বলতে। নিজের বাবার কষ্ট যে সন্তান বোঝে না সে আবার কিসের সন্তান?”
রোদ কথাটা শুনে কষ্ট পেয়ে বললো।”
—-” বাবাই তুমি কি বলছো?”
—-” চুপ আমাকে বাবাই বলবে না তুমি। তোমার মুখও দেখতে চাই না আমরা। তুমি চলে যাও এই বাড়ি থেকে,
ব্যাস রোদও ভাবে ও চলে যাবে। রোজের বাবা রোজ আর ওর মা কে নিয়ে চলে যায়। রোদও নিজের ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে আসে। ছোট থেকে রোদকে কেউ রেগে কিছু বললে তার সাথে কথা বলতো না। কেউ যদি ওকে বলতো আমার সাথে কথা বলবি না ও কথা বলতো না। আজও সেটাই হলো। ওর বাবা ওকে বলেছে মুখ দেখতে চায় না ওর মস্তিষ্কে এটাই ঘুরছে। রোদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে যায় কাউকে না বলে। রোজ আর ওর মা গিয়েছিলো আহাদ আহমেদকে বোঝাতে। কিন্তুু এসে দেখে রোদ নেই। ভাবে হয়তো রেগে বেরিয়ে গিয়েছে পরে ফিরে আসবে। কিন্তুু রোদ আর ফিরে আসে না। এভাবে ৩দিন কেটে যায় সবার অবস্থা খারাপ। ৩দিন পর রোদ ফোন করে জানায় ও আমেরিকা চলে এসেছে। কারণ ওর কাছে আগে থেকেই সব ছিলো। এটা জানিয়ে রোদ কথা বলা বন্ধ করে সবার সাথে। রোদের রাগ ছিলো একটাই ওর বাবাই বলেছিলো আমরা মুখ দেখতে চাই না। ও ভাবে আমরা কেন বললো? তাহলে ওর মা আর ওর বোনও হয়তো ওর মুখ দেখতে চায় না। আর তখন ওরা প্রতিবাদও করেনি। এভাবেই ২বছর কেটে যায় আমেরিকাতে। ওখানেই তনয়ার সাথে পরিচয় হয় তারপর ভালবাসা।”
“বর্তমান”
শুভ্রর মা সব শুনে চুপ থেকে বললো,
—-” তুই চলে গিয়ে ঠিক করিসনি রোদ। তোর বাবা তোকে আর রোজকে কত ভালবাসতো জানিস না? সেদিন ক্লায়েন্টরা তোর বাবাকে কথা শুনিয়েছিলো। তোকেও কথা শুনিয়েছিলো যখন জেনেছিলো ফাইলটা তুই নষ্ট করেছিস। বাবা হয়ে তোকে কথা শোনানো মানতে পারেনি। ভেবেছিলো তোকে ওসব বললে তুই ঠিক হবি। কিন্তুু তুই যে রাগ করে সত্যিই চলে যাবি এটা ভাবতে পারেনি।”
রোদ এবার আরো জোড়ে কেঁদে দিলো,
—-” আল্লাহ এটা আমি কি করলাম? আমার বাবাই, আম্মুকে আমি শেষ দেখা দেখতেও পারলাম না। তুমি ওদের কেন কেড়ে নিলে আল্লাহ?”
রোদ উত্তেজিত হয়ে বললো।”
—-” মামনি আমার বোন? আমার বোন কোথায়?”
_____________
শুভ্রর মুখে শুভ্রর লন্ডন যাওয়ার কারণ শুনে রোজ চমকে গেলো। রোজ ধপ করে বিছানায় বসে বললো,
—-” আঙ্কেল এটা কেন করলো?”
শুভ্র রোজের পাশে বসে বললো।”
—-” আমি জানিনা রোজ। কিন্তুু বিশ্বাস করো আমি যেতে চাইনি। সবটাই তো তোমাকে বললাম বাধ্য হয়েছিলাম আমি। বাবাই এমন কথা বলে বসলো না গিয়ে পারলাম না,
এদিকে রোজ মনে, মনে ভাবছে।”
—-” আঙ্কেল আমাকে মিথ্যে কেন বললো? শুভ্রকে এটা বলা যাবে না তাহলে উনি কষ্ট পাবে। যখন জানবে ওনার বাবাই ওনার মরে যাওয়া নিয়ে মিথ্যে বলেছে। তখন উনি খুব কষ্ট পাবে,
—-” আমাকে ক্ষমা করে দাও রেড রোজ।”
শুভ্রর কথায় রোজ ভাবনা থেকে বেরিয়ে বললো,
—-” ক্ষমা করবো না। আপনি আমাকে নেশা করিয়ে বিয়ে করলেন কেন?”
শুভ্র হালকা হেসে বললো।”
—-” হুশে থাকলে তুমি কি আমাকে বিয়ে করতে?”
রোজ চুপ হয়ে গেলো। কারণ সত্যিই তো হুশে থাকলে ও শুভ্রকে বিয়ে করতো না। তবে আজ রোজ মনের মাঝে খুব শান্তি অনুভব করছে। অজান্তেই রোজের ঠোটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো। রোজকে হাসতে দেখে শুভ্রও শান্তি পেলো,
রাস্তায় দাড়িয়ে তুমুল ঝগড়া করছে সামির আর রাইসা। রাইসা সামিরকে এক ধাক্কা মেরে বললো।”
—-” আপনার মতো হুতুম পেঁচাকে কোন মেয়ে পছন্দ করে শুনি?”
সামির ভাব নিয়ে বললো,
—-” ভার্সিটির মেয়েদের ক্রাশ ছিলাম বুঝেছো? এখনও সবার ক্রাশ আমি। আর তুমি আমাকে বলছো? তোমার মতো ময়দা সুন্দরীকে কে পছন্দ করবে হ্যা?”
রাইসা রাগে ফোস ফোস করে বললো।”
—-” কি আমি ময়দা সুন্দরী? আজকে আমি যদি আপনাকে মেকআপ না করিয়েছি তো আমার নামও রাইসা না,
সামির ভ্রু কুঁচকে বললো।”
—-” মানে?”
রাইসা ব্যাগ থেকে লিপস্টিক বের করলো। সামির কিছু বোঝার আগেই সামিরের ঠোটে লিপস্টিক দিয়ে দিলো। ফোনের ডিসপ্লেতে সামির নিজেকে দেখে রেগে বললো,
—-” হোয়াট দ্যা হেল?”
রাইসা দাত ৩২পাটি বের করে বললো।”
—-” আব হুয়া মেকআপ সুন্দরী,
সামির চেঁচিয়ে বললো।”
—-” রাইসার বাচ্চা,
—-” আমার বাচ্চা নেই। তবে আপনি আমাকে বিয়ে করলে আপনি আর আমি মিলে একটা ক্রিকেট টিম তৈরী করবো প্রমিস।”
রাইসার কথায় সামিরের চোখ মনে হচ্ছে কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে। আর রাইসা দাত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে,
#চলবে…
#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ২২
রাইসার কথা শুনে সামিরের চোখ মনে হচ্ছে কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে। আর রাইসা দাত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে। সামির মুখের হা বন্ধ করে বললো।”
—-” এই মেয়ে এসব কি বলছো?”
রাইসা সামিরের আরেকটু সামনে এগিয়ে বললো,
—-” ওলে, ওলে, ওলে লজ্জা পেয়েছে বাবুতাহ?”
সামিরের এবার মাথা ঘুরছে নিজেকে সামলে বললো।”
—-” তুমি তো খুব বেয়াদব মেয়ে,
বলে সামির হাটা দিতেই রাইসা বললো।”
—-” এই যে শুনুন আমি বনিতা করতে পারিনা। তাই যা বলার সরাসরি বলছি। মলে আপনাকে দেখেই আমি একদফা ক্রাশ খেয়েছিলাম বুঝেছেন? বাড়ি গিয়ে শুধু আপনাকে নিয়েই ভেবেছি। যেখানে যাই শুধু আপনার কথাই মনে পড়ে আমার। আপনার কথা ভাবতে আমার ভাল লাগে। আপনাকে নিয়ে ভাবলে না চাইতেও মুখে হাসি ফুটে ওঠে। আর এগুলোর নাম নাকি ভালবাসা? তাহলে আমি আপনাকে ভালবাসি। ইয়েস আই লাভ ইউ,
সামির রাইসার দিকে অবাক চোখে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে গাড়িতে উঠে এলো। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সামির ড্রাইভ করছে আর ভাবছে।”
—-” এসব নিয়ে আমার এখন ভাবলে চলবে না। আগে আমার মা তারপর সব। কিন্তুু আমি মা কে কোথায় পাবো? কি করে জানবো মা কোথায়? আমার শুভ্রর সাথে কথা বলতে হবে। ওকে শুরু থেকে সব বুঝিয়ে বলতে হবে। আমার বিশ্বাস শুভ্র আমাকে বুঝবে,
রুমের মাঝে দৌড়াদৌড়ি করছে নিরব। আসলে সে নিজের জিনিষ খুজতে ব্যস্ত। ওয়ালেট খুজে না পেয়ে ফোন কানে রেখেই গলা ছেড়ে বললো।”
—-” আম্মু আমার ওয়ালেট কোথায়?”
ফোনের ওপাশ থেকে তিথি চেঁচিয়ে বললো,
—-” আরে কি করছো? আমার কান বয়রা বানাবে নাকি? এত জোড়ে কেউ কথা বলে?”
নিরব জিভ কামড় দিয়ে বললো।”
—-” ওহহহ সরি, সরি আসলে ওয়ালেট পাচ্ছি না। তাই আম্মুকে ডাকলাম বুঝলে সোনা?”
একটুপর নিরবের মা এসে ওয়ালেট খুজে দিলো আর বললো,
—-” এত বড় হয়েছিস এখনো নিজের জিনিষ নিজে খুজতে শিখিস না?”
—-” আম্মু তুমি যাও।”
নিরবের কথায় ওর মা ভ্রু কুঁচকে বললো,
—-” কেন আমি যাবো কেন? কি করছিস তুই?”
নিরব মিনমিন করে বললো।”
—-” মানে তুমি থাকো মানে যাও মানে,
নিরবের মা ওকে থামিয়ে বললো।”
—-” পাগল হয়ে গিয়েছিস? এখানে থাকলে আমিও পাগল হয়ে যাবো হু,
বলে উনি চলে গেলো। নিরব ওয়ালেটটা প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে একবার আয়না দেখে বেরিয়ে এলো। সে চললো তিথির সাথে দেখা করতে।”
____________
আসলাম খাঁন নিজের বাড়ির ড্রয়িংরুমে বসে আছে। রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। ওনার বিজনেসে প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দুদিন পর রাস্তায় নামতে হবে। আর এটা ভেবেই ওনার রাগ লাগছে খুব। মাথার চুল টেনে নিজেই বললো,
—-” এসব কিভাবে হচ্ছে? কে করছে এসব? শুভ্র তো আজই আমাকে থ্রেড দিলো। আর আমার বিজনেসে লস তো আরো আগে শুরু হয়েছে। আমার গার্মেন্টস শুভ্র শেষ করতে পারেনা। কারণ সামির তো ওকে আমার সত্যিটা বলেনি। আমিই ভুল ভাবছিলাম। এটা নিশ্চয় অন্যকারো কাজ কিন্তুু কার? কে আমার সাথে এই গেম খেলছে? শুভ্রর মতো ভোলা, ভালা ছেলে আর যাই হোক আমার সাথে লাগবে না? ও জানে আমি রোজকে ওর থেকে সরিয়েছিলাম তার শাস্তি নিশ্চয় এভাবে দেবে না। আসল সত্যিটা তো ও আর জানেনা। কিন্তুু এসব কে করছে? একবার তাকে পেলে আমি জানে মেরে দেবো।”
তখনি সামির এসে হাজির হলো। আসলাম খাঁন সামিরের দিকে একবার তাকিয়ে আবার নিজের ভাবনায় ডুবে রইলো। সামির বিরক্তিকর ফেস করে বললো,
—-” এই যে শুনুন।”
আসলাম খাঁন হেসে বললো,
—-” বাবা বলতে লজ্জা করছে বুঝি?”
—-” না তবে ঘৃণা করছে।”
আসলাম খাঁন রেগে চেঁচিয়ে উঠলো। সামির তার দ্বিগুণ চেঁচিয়ে বললো,
—-” চিৎকার করবেন না মিস্টার খাঁন। আপনার মতো একটা লোক আমার বাবা ভেবেই ঘৃণা হচ্ছে। যে নিজের জন্য সবার জান নিয়ে টানাটানি করছে। এমনকি নিজের বউ, ছেলেকেও ছাড় দিচ্ছে না। একদিন আপনার খুব আফসোস করতে হবে দেখবেন। কিন্তুু সেদিন আপনার পাশে কেউ থাকবে না।”
বলে সামির উপরে চলে গেলো। আসলাম খাঁন রেগে টি টেবিলে লাথি মেরে বললো,
—-” খুব বাড় বেড়েছিস তুই সামির। তোর একটা ব্যবস্থা এবার আমার করতে হবে। তারআগে আমার খুজে বের করতে হবে কে এই শত্রু?”
সামির রুমে এসে শুভ্রকে ফোন দিলো। শুভ্র ফোন রিসিভ করলো না। সামির কয়েকবার ফোন দেয়ার পর শুভ্র ফোন রিসিভ করে বললো।”
—-” কেন ফোন করেছিস তুই? তোর সাহস হয় কি করে আমাকে ফোন করার?”
সামির দরজা আটকে আস্তে বললো,
—-” শুভ্র প্লিজ আমার মা কে বাঁচা।”
শুভ্র অবাক হয়ে বললো,
—-” কি হয়েছে চাচীর?”
সামির ছলছল চোখে বললো।”
—-” শুভ্র বিশ্বাস কর আমি তোর ভালবাসা কেড়ে নিতে চাইনি। আমি সবসময় রোজকে বোনের নজরে দেখেছি। কিন্তুু আমি এই ২বছর যা করেছি বাধ্য হয়ে করেছি। কারণ আমার বাবা আমার মা কে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো। এমনকি আমি ওনার কথা না শুনলে উনি রোজ, রোদকেও মেরে ফেলতো। আমার বাবা পাগল হয়ে গিয়েছে শুভ্র। সব জায়গায় ওনার লোক আছে। আমেরিকা থাকতে রোদের উপর উনি এ্যাটাক করেছিলো। যার কারণে রোজও আমাদের মার খেয়ে এখানে পড়ে থাকতো। আর তোর বাবাও তোকে আমার বাবার ভয়তে লন্ডন পাঠিয়েছিলো। ওই লোকটা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে শুভ্র। নিজের প্রতিশোধ নিতে উনি সব করতে পারে। আমিও ওনার অত্যাচারের স্বীকার। রোজকে মারতে রাজী না হলেই উনি আমাকে মারতো। শুধু আমাকে মারলে আমি রাজী হতাম না। কিন্তুু উনি আমার মা কে মেরে ফেলতে চাইতো। শুভ্র তুই তো জানিস আমি মা কে কতটা ভালবাসি। আমার তো এখন বাবা থেকেও নেই। আবার যদি মা কে হারিয়ে ফেলি আমি কি নিয়ে বাঁচবো? প্লিজ আমার মা কে বাঁচা প্লিজ শুভ্র,
____________
সব শুনে শুভ্র স্তব্ধ হয়ে গেলো। সামিরের কান্নায় ওর হুশ ফিরলো। নিজেকে সামলে বললো।”
—-” চাচী কোথায়?”
—-” মা কে ওই লোকটা কোথাও রেখেছে। আমি চাইলেও কিছু করতে পারছি না। কারণ ওনার নজর সবসময় আমার উপর থাকে। শুভ্র আরো একটা সত্যি আছে,
শুভ্র ব্যালকনিতে এসে বললো।”
—-” কি সত্যি?”
—-” রোজ এই ২বছর জানতো তুই মারা গিয়েছিস,
শুভ্র শকড হয়ে বললো।”
—-” হোয়াট?”
—-” হ্যা রোজের বাবা, মা মারা যাওয়ার পর তুই যখন ওর সাথে যোগাযোগ করছিলি না তখন ও তোর বাড়ি যায়। আর সেখানে চাচ্চু ওকে আজিমপুর একটা কবরস্থানে নিয়ে যায়,
এতটুকু শুনেই শুভ্র বললো।”
—-” তারমানে বাবাই ওকে এটা বলেছিলো?”
—-” হ্যা রোজ প্রতিদিন ওই কবরে যেতো। কারণ ও জানতো ওটা তোর কবর। প্রতিদিন কবরে যাওয়ার জন্য মার খেয়েও আবার যেতো। ওর কথা একটাই ছিলো ও ওর শুভ্রর কাছে যাবে। ক্ষমা করে দিস রে তোর রেড রোজকে অনেক আঘাত করেছি। হয়তো ওর সারা শরীরে আঘাতের দাগগুলো আছে,
শুভ্রর আর শোনার ক্ষমতা নেই। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। ধীর পায়ে রুমে এসে রোজের পাশে বসলো। হাতের দাগগুলো আগেই দেখেছে। তখনি শুভ্রর কলিজা কেঁপে উঠেছিলো। রোজ কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে কাত হয়ে ঘুমিয়ে আছে। শুভ্র কাঁপা, কাঁপা হাতে রোজের জামায় হাত দিলো। আস্তে, আস্তে পিঠ থেকে চেইন খুললো। একটুখানি চেইন খুলতেই শুভ্রর রুহু কেঁপে উঠলো। রোজের পিঠে মারের দাগগুলো কালো বর্ন ধারণ করেছে। ফর্সা পিঠে কালো দাগগুলো জ্বলজ্বল করছে। শুভ্র বিছানা থেকে এক চিৎকারে নিচে পড়ে গেলো। শুভ্রর চিৎকারে রোজের ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম ভাঙতেই বুঝলো জামার চেইন খোলা। সেই সাথে এটাও বুঝলো শুভ্র পিঠের দাগগুলো দেখে ফেলেছে। রোজ জামার চেইন লাগিয়ে নিচে নেমে এলো। শুভ্র রোবটের মতো বসে আছে আর চোখ দিয়ে ঝর্ণার মতো পানি পড়ছে। রোজ শুভ্রর পিঠে হাত রাখতেই শুভ্র রোজকে জড়িয়ে ধরে হাউ, মাউ করে কেঁদে দিলো। রোজ শুভ্রকে এভাবে কাঁদতে দেখে অবাকের শীর্ষে পৌছে গেলো।”
_____________
শুভ্রর মায়ের মুখে সব শুনে রোদ উঠে দাড়িয়ে বললো,
—-” এসব কি বলছো মামনি? সামিরের বাবা আঙ্কেলকে ভয় দেখিয়ে শুভ্রকে লন্ডন পাঠিয়েছিলো?”
শুভ্রর মা ও বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো।”
—-” হ্যা তোর বাবা আর শুভ্রর বাবার সাথে ওনার নাকি শত্রুতা আছে। উনি চায় এখন সেটার প্রতিশোধ নিতে। তোর বাবা, মা তো এখন বেঁচে নেই। তাই এখন তোর আঙ্কেলকে প্রতিদিন থ্রেড করে। তোর আঙ্কেল শুভ্রকে নিয়ে একটুও রিস্ক নিতে চায়নি। তাই বাধ্য হয়েই ওকে লন্ডন পাঠিয়েছিলো। শুভ্র রোজকে ভালবাসে তাই সেদিন ওকে লন্ডন পাঠানোর জন্য ও আমাদের সাথে কথা বলে না। ওই আসলাম খাঁন যেভাবে বলেছে তোর আঙ্কেলও সেভাবে চলেছে। কিন্তুু আমরা জানতাম না ওনার টার্গেট রোজও ছিলো,
রোদ ভয় পেয়ে বললো।”
—-” কি রোজ? কি সব বলছো? আমার রোজ কোথায় মামনি? কোথায় আমার বোন?”
—-” আসলাম খাঁনের বাড়ি,
রোদ দেরী না করে বেরিয়ে গেলো। শুভ্রর মা তো আর জানেনা রোজ এখন শুভ্রর কাছে। রোদ সামিরদের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে ভিতরে গেলো। গিয়ে চিৎকার করে আসলাম খাঁনকে ডাকতে শুরু করলো। উনি নিচে এসে রোদকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে গেলো। রোদ ওনাকে দেখা মাত্র এসেই কলার ধরে মারতে শুরু করলো। মারতে, মারতে বললো।”
—-” জানোয়ার আমার বোন কোথায়? বল আমার বোন কোথায়? আমার বোনের কিছু হলে তোকে আমি জিন্দা পুতে ফেলবো,
আসলাম খাঁনের গলা চেপে ধরেছে রোদ। ওনার এখন নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। ভয়ে, ভয়ে তাড়াতাড়ি বললো।”
—-” তোর বোন ওর হাসবেন্ডের বাড়িতে,
রোদ অবাক হয়ে বললো।”
—-” হাসবেন্ড মানে?”
আসলাম খাঁন নিজেকে ছাড়িয়ে বললো,
—-” রকস্টার এসআর মানে শুভ্র চৌধুরী।”
রোদ রাগী চোখে আসলাম খাঁনকে দেখে বেরিয়ে গেলো। আসলাম খাঁনের ইচ্ছে করছে সব শেষ করে ফেলতে। নিজেকে সামলে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো। সামির উপর থেকে সব দেখে আস্তে বললো,
—-” তুমি এবার শেষ।”
এদিকে শুভ্র পাগলের মতো করছে আর বলছে,
—-” আমি তোমার যোগ্য নই রোজ। আমার জন্য হয়েছে এসব। আমার জন্যই তোমাকে ওরা মেরেছে। আমি লন্ডন না গেলে ওরা তোমাকে মারতে পারতো না। আমি তোমার ভালবাসার যোগ্য নই। তো্ তোমার পিঠের এই আঘাতের দাগ আমার বুকটা তোলপাড় করে দিচ্ছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আমার।”
শুভ্র রোজকে ছেড়ে উঠে দাড়ালো। রোজ কোনভাবেই শুভ্রকে সামলাতে পারছে না। শুভ্র হঠাৎ করেই দরজার ফাঁকে নিজের হাত রেখে চাপ দিলো। রোজ মুখে হাত দিয়ে বললো,
—-” শুভ্র কি করছেন আপনি?”
—-” তোমার কষ্টটা আমি বুঝতে পারবো না। তুমি যত কষ্ট সহ্য করেছো তা আমি বুঝতে পারবো না। তোমার কতটা কষ্ট হয়েছে সেটাও আমি বুঝবো না। কারণ আঘাত সহ্য তো তুমি করেছো। তাই চেষ্টা করছি একটু রিয়েলাইজ করার।”
শুভ্রর হাত থেকে ফ্লোরে ফোটা, ফোটা রক্ত পড়ছে। রোজ গিয়ে বের করতে চাইলে শুভ্র ওকে সরিয়ে বললো,
—-” তোমার উচিত আমাকে ঘৃনা করা। কজ আমি তোমার যোগ্য নই। তোমাকে আমি তোমার মতো ভালবাসতে পারিনি।”
রোজ রেগে শুভ্রকে একটা চর মেরে বললো,
—-” একদম চুপ থাকুন আপনি। আপনার আমাকে আমার মতো ভালবাসতে হবে না। আপনি আমাকে আপনার মতোই ভালবাসলেই হবে এখন হাত বের করুন।”
রোজ শুভ্রর হাত বের করে শুভ্রকে বিছানায় বসিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো। শুভ্র একদৃষ্টিতে রোজকে দেখে যাচ্ছে। আর রোজ সে তো ভেবেই অবাক হচ্ছে যে শুভ্র ওকে এতটা ভালবাসে?”
এভাবে কিছুদিন কেটে গিয়েছে। রোদের সাথে রোজ কথা বলে না রেগে। এদিকে আসলাম খাঁন চিন্তায় আছে। একেরপর এক তার বিজনেসে ক্ষতি হয়েই যাচ্ছে। আর তাকে প্রতিদিন শুভ্র শান্তনা দিচ্ছে। যার কারণে ওনার বিশ্বাস শুভ্র এসব করছে না। ড্রয়িংরুমে বসে এসব ভাবছে তখন শুভ্র এসে বললো,
—-” চিন্তায় আছেন চাচ্চু?”
উনি শুভ্রকে দেখে বললো।”
—-” ভাবতে পারছি না এসব কে করছে,
শুভ্র দাত কেলিয়ে বললো।”
—-” যদি বলি আমি করেছি?”
উনি মুচকি হেসে বললো,
—-” তুমি এসব করতেই পারো না। তোমার মতো এত ভোলা টাইপ ছেলে এসব করতেই পারেনা।”
হঠাৎ শুভ্র হো, হো করে হেসে দিলো। যেন আসলাম খাঁন কোন জোকস বলেছে। আসলাম খাঁন তাকিয়ে আছে শুভ্র হাসি থামিয়ে বললো,
—-” এটাই মানুষের ভুল বুঝলেন? সবাই আমাকে সুইট, ইনোসেন্ট, ভোলা, ভালা ভাবে। শুভ্র কারো সাথে উঁচু গলায় কথা বলতেই পারেনা। কারো সাথে এসব করতেই পারেনা। ওই একটা ডায়লগ আছে না? লোক মুঝে সোচতে হে বহাত সুয়ামী টাইপ কা। লিকিন আসলিমে ম্যা তো হু বহাত বাড়ে হারামী টাইপ কা।”
শুভ্র মুহূর্তেই হিংস্র হয়ে উঠলো। আসলাম খাঁন অবাক হয়ে বললো,
—-” তারমানে তুই?”
শুভ্র রেগে চেঁচিয়ে বললো।”
—-” হ্যা আমি, আমিই এসব করেছি। ওই যে বললাম আসলে আমি বহুত হারামী। আর এবার দেখ এই হারামী তোর কি হাল করে। তোর চোখের সামনে তোর সব ধ্বংস করবো আমি। আর ট্রাস্ট মি তুই শুধু তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছু করতে পারবি না। তোর সব পাপের শাস্তি আমি তোকে দেবো। আমার রোজকে করা এক, একটা আঘাত তোকে ফিরিয়ে দেবো আমি। আর হ্যা তোকে দিয়েই তোকে আঘাত করাবো আমি মাইন্ড ইট,
শুভ্র নিজের ঘড়িতে টাইম দেখে বললো।”
—-” এখন রাত ১০টা বাজে। আগামীকাল সকালে তুই নিজে গিয়ে রোজের পা ধরে ক্ষমা চাইবি,
শুভ্র মুখ দিয়ে সিটি বাজাতে, বাজাতে বেরিয়ে গেলো। এদিকে আসলাম খাঁন ভয়ে রীতিমত কাঁপছে। এখন বুঝতে পারছে শুভ্রকে ভোলা, ভালা ভেবে কত বড় ভুল করেছে। শুভ্র ওনার সাথে থেকে যে ওনার এই হাল করবে ভাবতে পারেনি।”
#চলবে…