#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ১৭ (অতিরিক্ত)
দেয়ালে ঘুষি মারার কারণে সামিরের হাত থেকে ঝড়ঝড় করে রক্ত পড়ছে। সামিরের মা এটা দেখেও চুপ রইলো। সামিরের সব কথা শুনে ওনার রাগ লাগছে সামিরের প্রতি। সামির শিরি বেয়ে নিজের রুমে চলে এলো। রুমের জানালা দিয়ে নিচে তাকাতেই শুভ্রকে দেখতে পেলো। শুভ্র এখনো ওখানেই আছে। একটুপর শুভ্র গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। সামিরও ধপ করে নিচে বসে পড়লো। সামিরের চোখ থেকে দু ফোটা পানি ফ্লোরে পড়লো।”
এদিকে রোজও নিজের রুমে এসে কাঁদছে। কাঁদতে, কাঁদতে রোজের হিচকি উঠে গিয়েছে। রোজ জোড়ে কয়েকবার শ্বাস নিলো। এরপর ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকলো। কাঁদতে, কাঁদতে মনে, মনে বলছে,
—-” আর কত সহ্য করবো আমি? আমি আর পারছি না এভাবে বেঁচে থাকতে। আমি সত্যিই এবার মরে যাবো আল্লাহ। আমি কি করবো? আমার কি করা উচিত? শুভ্রকে এসব বলে আমার কষ্ট হচ্ছে কেন? উনি তো আমাকে ঠকিয়েছে। তাও কেন আমার কষ্ট হচ্ছে? এই কষ্টের শেষ কোথায় আল্লাহ?”
শুভ্র বাড়ি এসে সোফায় বসে পড়লো। একজন গার্ড এসে বললো।”
—-” স্যার আর ইউ ওকে?”
শুভ্র মাথা নেড়ে হ্যা বললো। শুভ্র গালে হাত দিয়ে ভাবছে,
—-” সামির এটা কেন বললো? যে আমাকে বেঁচে থাকতে দেখে ওর ভাল লাগলো? ওর কথায় মনে হচ্ছে এতদিন জানতো আমি বেঁচে নেই। কিন্তুু এটা কি করে হতে পারে? আমিতো লন্ডন ছিলাম আর ওরাতো এটাই জানে। কোথাও এমনকিছু হয়নি তো যেটা আমি জানিনা। বা আমাকে জানানো হয়নি। এই ২বছরে এমন কি হয়েছিলো? আর রোজও বা সিম কেন চেঞ্জ করেছিলো? আমাকেই সব খুজে বের করতে হবে। আর রোজকেও আমি আমার কাছে নিয়ে আসবো।”
আমেরিকার একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে রোদ সাথে আরেকটা মেয়ে। মেয়েটা রোদের একটা হাত ধরে রেখেছে। কিছুক্ষণ পর রোদ বলে উঠলো,
—-” আই থিংক এবার আমার বাংলাদেশে যাওয়া উচিত তনয়া।”
মেয়েটার নাম তনয়া। তনয়া মুচকি হেসে বললো,
—-” এটা আগেই বলেছি তোমাকে রোদ। তোমার এবার ফিরে যাওয়া উচিত। অনেকদিন তো হলো ২বছর তুমি সবার থেকে দুরে আছো। এটা একদমি ঠিক হচ্ছে না।”
রোদ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—-” হ্যা আমি যাবো।”
এরমাঝে একটা গুলি রোদের কানের পাশ দিয়ে চলে গেলো। রোদ তনয়াকে নিয়ে দাড়িয়ে পড়লো। সবাই চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে। রোদ তাকিয়ে দেখলো গাড়ি নিয়ে একটা লোক চলে গেলো। তনয়া রোদকে জড়িয়ে ধরে বললো,
—-” রোদ আর ইউ ওকে?”
—-” ইয়াহ আই এম ওকে।”
রোদ একটা কথা ভাবছে গুলিটা কাকে করা হয়েছিলো? তনয়া রোদকে নিয়ে বেরিয়ে চলে এলো। রোদ বাড়ি এসেও একই কথা ভেবেছে,
___________
শুভ্র ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিলো তখন ওর গার্ড ড্যানি এসে বললো।”
—-” স্যার আগামীকাল আপনার কলকাতা যাওয়ার ফ্লাইট আছে কিন্তুু,
শুভ্র ল্যাপটপ রেখে বললো।”
—-” হুম ফ্লাইট কয়টায়?”
—-” স্যার সকাল ১০টায় ফ্লাইট। আর মিস্টার সেনগুপ্ত বললো ওনাদের শো নাকি সন্ধ্যা ৭টায়,
শুভ্র একটু চুপ থেকে বললো।”
—-” ওকে তুমি যাও,
ড্যানি যেতেই শুভ্র ভাবলো।”
—-” এখন কোথাও না গেলেই ভাল হবে। কিন্তুু আমি এটা ক্যান্সেল করতে পারবো না। তাহলে ওনাদের ক্ষতি হবে। আর আমি চাইনা কারো ক্ষতি হোক। পরশুদিন ফিরে এসেই আমি আমার খেলা শুরু করবো,
শুভ্র কিছু একটা ভেবে হাসলো। এরপর সবকিছু রেডি করে রাখলো।”
খাবার টেবিলে সবাই বসে আছে। রোজ হাত দিয়ে ভাত নেড়ে যাচ্ছে খাচ্ছে না। সামির নরম কন্ঠে বললো,
—-” রোজ তুমি খাচ্ছো না কেন?”
—-” আমার ক্ষিদে নেই।”
বলে রোজ প্লেট সরিয়ে চলে গেলো। সামিরের বাবা খাবার শেষ করে সামিরকে ডাকলো। সামির ওনার সাথে ওনার রুমে গেলো। উনি দরজা আটকে কিছু একটা বললো। সামির রেগে বললো,
—-” ইম্পসিবল বাবা আমি পারবো না।”
সামিরের বাবাও রেগে বললো,
—-” কি বললে তুমি?”
—-” আমি আর পারবো না এসব করতে। তুমি কি পেয়েছো আমাকে? তোমার হাতের পুতুল আমি? এত নিচ কি করে হতে পারো তুমি? ওর কথাটা একবারও ভাবছো না তুমি? ওর কতটা কষ্ট হয় বোঝো তুমি? বাবা ও রক্তে, মাংসে গড়া মানুষ এবার তো বোঝো তুমি। কবে কি হয়েছিলো সে সব ধরে বসে আছো কেন? বাবা আমাকে আর নিচে নামিয়ে দিয়ো না প্লিজ। নিজেকে নিজের ঘৃনা করে আমার, তোমার করে না?”
সামিরের বাবা সামিরকে এক চর মেরে বললো।”
—-” তোর এত সাহস? আমার মুখের উপর কথা বলিস তুই? এত সাহস বেড়েছে তোর?”
—-” হ্যা বলছি তোমার মুখের উপর কথা। আর কত করবে তুমি এসব? এত বাজে লোক কি করে হয়ে গেলে? তোমাকে বাবা বলতেও ঘৃনা করে আমার। যেই রোজকে আমি বোনের নজরে দেখেছি। তার সাথে এরকম নোংরা খেলা খেলতে হচ্ছে তোমার জন্য ছিঃ। তুমিই বাধ্য করেছিলে না? সাহেল চাচ্চুকে দিয়ে শুভ্রকে লন্ডন পাঠাতে? তোমার জন্য আমি রোজকে এতটা মেরেছি। নাহলে তো তুমি আমাকে একা করে দেবে। এত জঘন্য তুমি ছিঃ। রোজ কতটা কষ্ট পায় জানো তুমি? ইচ্ছে তো করে ওর কষ্টটা রিয়েলাইজ করতে,
সামিরের বাবা শয়তানি হেসে বললো।”
—-” তাই নাকি রিয়েলাইজ করতে ইচ্ছে করে? চলো আমি তোমাকে রিয়েলাইজ করাচ্ছি,
বলে দেয়াল থেকে চাবুক হাতে নিলো। সামির অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সামিরের বাবা সামিরকে চাবুক দিয়ে একটা বারি দিলো। সামির বিছানায় বসে পড়লো। কিছু বলছে না সামির যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। সামিরকে একেরপর এক চাবুক দিয়ে বারি দিচ্ছে ওর বাবা। সামির একটা শব্দও করছে না। ওর চোখের সামনে ওর বাবার সাথে কাটানো সব ভাল মুহূর্তগুলো মনে পড়ছে।”
—-” এই কি সেই বাবা? যে আমাকে ছোট থেকে বড় করেছে। এই কি সেই বাবা? যার হাত ধরে আমি স্কুলে যেতাম। এই কি সেই বাবা? যে আমার একটু আঘাত লাগলে উতলা হয়ে যেতো? আমার বাবা আমাকে এভাবে মারছে? না এই লোকটা আমার বাবা হতে পারে না। উনি আমার বাবা না হতে পারে না। যে কি না নিজের লক্ষ্য পূরণ করতে সব করতে পারে,
সামিরের বাবা কতক্ষণ পর মারা বন্ধ করে বললো।”
—-” শোন সামির আমি আমার প্রতিশোধ নিতে সব করতে পারি। তাই তুই সেটাই কর যা আমি বলি,
#চলবে…
#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ১৮
সামিরের বাবা সামিরকে মারা বন্ধ করে বললো।”
—-” শোন সামির আমি আমার প্রতিশোধ নিতে সব করতে পারি। তাই তুই সেটাই কর যেটা আমি তোকে করতে বলছি,
সামির বিছানা থেকে দাড়িয়ে রেগে বললো।”
—-” আমি আর তোমার কথা শুনবো না। তোমার কথা শুনে আর রোজকে মারতে পারবো না। ও আমার বোনের মতো বাবা। কিন্তুু তুমি সমাজের কাছে ওকে আমার বউ বানিয়ে দিয়েছো। ওর থেকে ওর ভালবাসা ওর শুভ্রকে দুরে সরিয়ে দিয়েছো। দিনের পর দিন আমাকে বাধ্য করেছো ওকে মারতে। ইনফ্যাক্ট তুমিও মেরেছো লজ্জা করলো না? বাবা ও তোমার মেয়ের মতো এটা মাথায় এলো না? আজ যদি রোজের জায়গায় তোমার মেয়ে হতো? আমি তোমার কথা শুনবো না সরি। তোমাকে বাবা বলছি কেন আমি? তুমি আমার বাবা হতে পারো না। আমি তোমাকে ঘৃণা করি,
সামিরের বাবা এবার যেন হিংস্র হয়ে উঠলো। সামিরকে ধাক্কা মেরে ফ্লোরে ফেলে দিলো। সামির এত মার খেয়ে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। তাই দাড়িয়ে থাকতে পারলো না মুখ থুবড়ে ফ্লোরে পড়ে গেলো। ওর বাবা আবার ওকে মারতে শুরু করলো। একেই তো শীতের দিন এখন হালকা ব্যথা লাগলেই কলিজা কেঁপে ওঠে। সেখানে উনি অনবরত সামিরকে মেরে যাচ্ছে। সামির নিজের গেঞ্জির হাতা কামড়ে সহ্য করছে। সামিরের বাবা চাবুকটা দেয়ালে রেখে বললো।”
—-” আশা করি তোকে আর মারতে হবে না। আমি যা বলি সেটা কর সামির। নাহলে এবার তোকে না তোর মা কে জানে মেরে দেবো। আর তোর পিয়ারের বেস্ট ফ্রেন্ড শুভ্র আর তোর বোন রোজ হা হা হা,
বলে উনি চলে গেলো। সামির আস্তে, আস্তে উঠে বসলো। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। সামির ফ্লোরে বসে থেকে বলতে লাগলো।”
—-” এটা কি সত্যিই আমার বাবা? না আমি ওনার সন্তান? না আমি ওনার সন্তান না উনিও আমার বাবা না। এই লোকটাকে আমি ছাড়বো না,
সকাল ৯:৩০ মিনিট শুভ্র এয়ারপোর্টে পৌছে গিয়েছে। ড্যানি শুভ্রর ব্যাগটা ওর হাতে দিতেই শুভ্র বললো।”
—-” ড্যানি তুই সব খবর নে। এখানকার সব নিউজ আমার চাই,
ড্যানি মুচকি হেসে বললো।”
—-” পেয়ে যাবেন স্যার,
শুভ্র মুখে মাস্ক লাগিয়ে নিলো। তবুও অনেকে এসে শুভ্রকে ঘিরে ধরলো। শুভ্র ক্যাপটাও মাথায় পড়ে নিলো। সবার জন্য শুভ্র বেরও হতে পারছে না। শুভ্র কয়েকজনকে অটোগ্রাফ দিয়ে ড্যানিকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো। ড্যানি সবাইকে সরিয়ে দেয়ার পর শুভ্র ভেতরে চলে গেলো।”
শুভ্রর মা বসে কান্না করছে। পাশেই শুভ্রর বাবা সাহেল চৌধুরী বসে আছে। শুভ্রর মা কাঁদতে, কাঁদতে বললো,
—-” তোমার জন্য শুধু তোমার জন্য আমার ছেলে বাংলাদেশে এসেও আমার কাছে এলো না। তুমি যদি ওকে ২বছর আগে লন্ডন না পাঠাতে তাহলে এসব হতো না। তোমার কি কোন মায়া, দয়া নেই?”
—-” তুমি এভাবে কেন বলছো? আমি কি ইচ্ছে করে শুভ্রকে পাঠিয়েছিলাম নাকি? আমি তো বাধ্য হয়েছিলাম। নিজের ছেলের সেভটির কথা আমাকেই ভাবতে হতো তাই নয় কি বলো? আমি কি আমার শুভ্রকে ভালবাসি না? তুমি যতটা ভালবাসো আমিও ততটাই ভালবাসি। আর ভালবাসি বলেই ওকে লন্ডন পাঠিয়েছিলাম।”
—-” সেভটি মানে?”
কারো কথা শুনে ওনারা দরজায় তাকালো। দেখলো নিরব হেটে আসছে। নিরব ওনাদের সালাম দিয়ে বসে বললো,
—-” চাচ্চু আপনি এসব কি বলছিলেন?”
শুভ্রর বাবা আমতা, আমতা করে বললো।”
—-” কিছু না, তুই কেমন আছিস?”
—-” জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভাল। কিন্তুু আপনি এগুলো কি বলছিলেন? প্লিজ আমাকে লুকোবেন না চাচ্চু,
শুভ্রর বাবা একটু চুপ থেকে বললো।”
—-” যখন শুনতে চাচ্ছিস তো শোন,
এরমাঝে শুভ্রর বাবার ফোনে কল এলো। উনি ফোন কানে নিতেই শুনতে পেলো।”
—-” কি বন্ধু কেমন আছিস? আচ্ছা শুনলাম তোর ছেলে কলকাতা গিয়েছে। নিরব বুঝি তোর বাড়িতে গিয়েছে? তা আবার তোর বুঝি ওকে সত্যিটা বলতে ইচ্ছে করছে? সে তুই বলতেই পারিস তোর ইচ্ছে। তুই তোর ইচ্ছে পূরণ করলে আমিও কিন্তুু আমার ইচ্ছে পূরণ করবো,
শুভ্রর বাবা শুকনো ঢোক গিলে বললো।”
—-” কি্ কি ই্ ইচ্ছে?”
—-” তোর ছেলেকে লাশ বানানোর ইচ্ছে,
শুভ্রর বাবা কেঁপে উঠে বললো।”
—-” তুই এমন কিছু করবি না। আমি কাউকে কিছু বলবো না। প্লিজ আমার ছেলেকে কিছু করিস না,
শুভ্রর বাবা কল কেটে এসে বললো।”
—-” নিরব কোন সত্যি নেই। তুই কি শুনতে কি শুনেছিস কে জানে? যাইহোক অনেকদিন পর এসেছিস খেয়ে যাবি কিন্তুু,
বলে উনি উপরে চলে গেলো। নিরব বুঝলো কোন ঘাপলা আছে এখানে। তবে নিরবও আপাতত কিছু বললো না। আর কতক্ষণ থেকে নিরব চলে গেলো।”
____________
শুভ্র কলকাতা পৌছে একটা হোটেলে গিয়ে উঠলো। বিছানায় নিজের ব্যাগটা রেখে গা এলিয়ে দিলো। একটু রেস্ট করে ওয়েটার ডেকে কফি দিয়ে যেতে বললো। ওয়েটার শুভ্রকে দেখেই খুশি হয়ে বললো,
—-” রকস্টার শুভ্র চৌধুরী? স্যার একটা সেলফি নেই আপনার সাথে?”
শুভ্র মুচকি হেসে বললো।”
—-” হ্যা সিওর,
ওয়েটার শুভ্রর সাথে সেলফি তুলে গেলো কফি আনতে। কতক্ষণ পর ওয়েটার কফি নিয়ে এলো। শুভ্র কফি নিয়ে ব্যালকনিতে এসে দাড়ালো। শুভ্র ফোন বের করে ওয়ালপেপার দেখছে। ওয়ালপেপারে রোজের হাসি মাখা মুখের একটা ছবি। রোজের গায়ে সাদা একটা চুরিদার। কানে সাদা স্টোনের কানের দুল। গলায় সাদা স্টোনের নেকলেস। কপালে সাদা স্টোনের ছোট একটা টিপ। ঠোটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক। ঠোটের কোনে মাঝারী সাইজের একটা তিল। হেসে তাকিয়ে আছে। শুভ্র মুচকি হেসে বললো।”
—-” আগামীকাল আমি আসছি রেড রোজ। আর পরশু থেকে তুমি আমার কাছেই থাকবে। সব সত্যি তো আমি আজই জেনে যাবো। তুমি চাইলেও তুমি আমার তুমি না চাইলেও তুমি আমার। তুমি যতই বলো সামির তোমার স্বামী। কিন্তুু তুমি আজও আমাকেই ভালবাসো। তোমার চোখের ভাষা আমার থেকে ভাল কে বুঝবে? আর আমি তোমার চোখে আমার জন্য গভীর ভালবাসা দেখেছি। কোন কারণে তুমি আমার উপর রেগে আছো। আর সেই কারণটাই আমি জানবো,
শুভ্র কফিটা শেষ করে মগটা পাশে রেখে ল্যাপটপ নিয়ে বসে গেলো। ল্যাপটপের ওয়ালপেপারেও রোজের ছবি দেওয়া। শুভ্র ল্যাপটপে কিছু ডকুমেন্ট চেক করছে। সব চেক করে ল্যাপটপ রেখে দিলো। শুভ্র সন্ধ্যার অপেক্ষা করছে শো শেষ হলেই বাঁচে। আগামীকাল কখন সে তার রেড রোজের কাছে পৌছাবে সেই ভাবনায় মসগুল হয়ে পড়েছে।”
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা রোজ ড্রয়িংরুমে বসে আছে। তার পাশেই সামির বসে আছে। রোজ খেয়াল করছে সামির অনেকক্ষণ যাবত কিছু ভাবছে। আর কতক্ষণ পর, পর কেমন ছটফট করছে। সামিরের প্রতি ঘৃণার কারণে রোজ জানতে চাইছে না যে কি হয়েছে?”
শুভ্র এসে ক্লাবে পৌছে গিয়েছে। সবাই শুভ্রকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছে। শুভ্র হাসি মুখে ভেতরে গেলো। প্রতিটা টিভি চ্যানেলের জার্নালিস্টরা এখানে হাজির হয়েছে। এই শো সরাসরি টিভিতে দেখানো হবে। শুভ্র সুটের পকেট থেকে লাল ওড়নার টুকরোটা বের করে কপালে বেধে স্টেজে উঠলো। সবাই প্রতিবারের মতো এবারও অবাক হয়ে ব্যাপারটা দেখলো। প্রতিটা শোতেই শুভ্র স্টেজে ওঠার আগে এটা কপালে বাঁধে। শুভ্র স্টেজে উঠতেই সবাই শুভ্র, শুভ্র করে চেঁচাতে শুরু করলো। শুভ্র স্টেজে উঠেই মুচকি হেসে বললো,
—-” গুড ইভিনিং কলকাতা। আমি আজ যেই গানটা গাইবো এটা কারো একজনের জন্য গাইবো। একচুয়ালি সামওয়ান স্পেশাল।”
রোজ টিভি চালিয়ে চ্যানেল পাল্টাচ্ছে। চ্যানেল পাল্টাতে গিয়ে এক চ্যানেলে চোখ আটকে গেলো। শুভ্র গান গাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এটা টিভিতে লাইভ দেখাচ্ছে। রোজ চ্যানেল পাল্টাতে গিয়েও শুভ্রর গান শুনে থেমে গেলো,
🎶তুই ছাড়া এক একটা দিন কি যে যন্ত্রণার🎶
🎶বুকের ভেতর অন্তহীন নীল, নীল বেদনা🎶২
🎶ওহ দু চোখ পুড়ে কি দহনে তুই তো দেখিস না🎶
🎶তুই ছাড়া এক একটা দিন কি যে যন্ত্রণার🎶
🎶বুকের ভিতর অন্তহীন নীল, নীল বেদনা🎶২
রোজ রিমোট মুঠ করে ধরে রেখেছে। সামির এসে টিভির সামনে বসলো। শুভ্রর কপালে লাল কাপড় বাধা দেখে বুঝে গেলো এটা সেই টুকরোটা। যেটা রোজ বেধে দিয়েছিলো। সামির মনে, মনে ভাবলো।”
—-” আমি শুভ্রকে সব সত্যি বলে দেবো। ওদের কাউকে আমি আর কষ্ট পেতে দেবো না। আর আমার অমানুষ বাবাকেও আমি ছাড়বো না। তার আগে মা কে কোন সেভ জায়গায় রেখে আসতে হবে,
____________
🎶ওহ চোখের ভেতর বৃষ্টি ঝড়ে🎶
🎶হৃদয়টা হয় যেন নদী🎶
🎶তোর না থাকার এক, একটা ক্ষণ🎶
🎶ছুঁয়ে দেখতি যদি🎶২
🎶আমায় ছেড়ে কখনো দুরে যেতি না🎶
🎶তুই ছাড়া এক, একটা দিন কি যে যন্ত্রণার🎶
🎶বুকের ভেতর অন্তহীন নীল, নীল বেদনা🎶২
শুভ্র স্টেজে হেটে, হেটে গান গাইছে। সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনছে। অনেকে বলাবলি করছে।”
—-” হি ইজ আমেজিং। আর ভয়েসে তো জাদু আছে,
—-” একদম এত সুমধুর ভয়েস মাই গড।”
—-” এরজন্যই তো ওনার এত ফ্যানস,
—-” ওনার গান শুনলে তো ওনার গানেই হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।”
—-” যেমন দেখতে তেমনি তার ভয়েস,
—-” হি ইজ মিস্টার পার্ফেক্ট।”
—-” যেই মেয়ে ওনাকে পাবে সে ভীষণ লাকি হবে,
🎶ওহ হাজার জনম চাই না তোরে🎶
🎶একটা জনম শুধুই চাবো🎶
🎶বুকের ভেতর নিঃশ্বাস জুড়ে🎶
🎶তোকেই শুধু পাবো🎶২
🎶এক জনমের প্রতি ক্ষণে আড়াল হবো না🎶
🎶তুই ছাড়া এক, একটা দিন কি যে যন্ত্রণার🎶
🎶বুকের ভেতর অন্তহীন নীল, নীল বেদনা🎶২
🎶ওহ দু চোখ পুড়ে কি দহনে তুই তো দেখিস না🎶
গান শেষ হতেই চারদিন থেকে হাততালির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। শুভ্র স্টেজ থেকে নেমে আসতেই সবাই ঘিরে ধরলো। আজও লাল কাপড়ের টুকরোর ব্যাপারে জার্নালিস্টরা জানতে চেয়েছে। শুভ্র আজও হেসে সেই কথাটাই বললো।”
—-” এখনো সময় আসেনি জানানোর,
শুভ্র সবার সাথে কথা বলে চলে গেলো। আগামীকাল আবার ফিরে যাবে সে। এদিকে রোজ রিমোট ফেলে দৌড়ে রুমে চলে গেলো। সামির একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রোজের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।”
শুভ্র রাতেই জেনে গিয়েছে সামির আর রোজের বিয়ে হয়নি। শুভ্র বাঁকা হেসে বললো,
—-” আমি আগেই বুঝেছিলাম এটাই হবে। সো রেড রোজ তোমার শুভ্র আসছে তোমাকে নিতে।”
পরেরদিন বিকেল ৩টার দিকে রোজ বসে আছে। অনেকক্ষণ ধরে বসে থাকায় কোমর ব্যথা করছিলো তাই উঠে শিরি বেয়ে উপরে এলো। শিরিতে থাকতেই দেখলো সামির বেল্ট নিয়ে আসছে। রোজের ভয়ে কাঁপুনি উঠে গিয়েছে। সামির রোজের কাছে আসতেই রোজ কেঁদে দিয়ে বললো,
—-” আ্ আমি তো কি্ কিছু করিনি। তা্ তাহলে আমাকে কে্ কেন মার্ মারতে চা্ চা্ চাইছো?”
সামির রোজের অবস্থা দেখে অলরেডি কেঁদে ফেলেছে। কিন্তুু সামিরেরও হাত, পা বাধা। তাই বেল্টটা ওঠালো রোজকে মারতে। রোজ ভয় পেয়ে চিৎকার করে পিছাতে গেলেই শিরি থেকে গড়িয়ে নিচে পড়লো। রোজের মাথা ফেটে গলগল করে রক্ত পড়ছে। নাক, মুখ দিয়েও রক্ত বেরিয়ে গিয়েছে। রক্তে সাদা টাইলস করা ফ্লোর লাল হয়ে গিয়েছে। সামিরের হাত থেকে বেল্ট পড়ে গেলো। সামিরের বাবা উপর থেকে এটা দেখে হাসলো। রোজ মুচকি হেসে বললো।”
—-” আ্ আ্মি মুক্ত,
বলে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো। তখনি কারো আওয়াজ শুনতে পেলো। সামির তাকিয়ে দেখলো শুভ্র।”
—-” রেড রোজ,
শুভ্র ওখানেই স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে। পা দুটো যেন আর সামনে এগোচ্ছে না।”
#চলবে…