ভাবিনি ফিরে আসবে পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

0
1416

ভাবিনি ফিরে আসবে
শেষ পর্ব
রোকসানা আক্তার

আমাদের কথাবার্তা শেষ হলে আমি সাথীর রুমে একটু উঁকি মারি।মেয়েটার সাথে এতটা মাস পর দেখা হলো,কিন্তু ভালোভাবে কথা বলা হয়ে ওঠেনি।
ওর রুমে প্রবেশ করতেই হালকা থমথমে পরিবেশে গটগট ফ্যানের আওয়াজ কানে বাঁজছে,ফাঁকা রুমটায় তাকাতে বেলকনিতে নজর পড়ে।সাথী একমগ্নে আকাশের দিকে তাকিয়ে দৃঢ় নিঃশ্বাস ফেলছে।তার এলোমেলো কেশ বাতাসে হৈ হৈ উড়ছে।।আমি আস্তে হেঁটে ওর ডান পাশে গিয়ে দাড়াই বেলকনির রেলিং ধরে।।গলাটা ঝেড়ে বলি,
-সাথী কেমন আছিস??

হয়তো তার নয়ন পানিতে টলমল ,আমার শব্দ শুনে তাড়াতাড়ি চোখদুটো মুছে নেয়।আমার দিকে চেয়ে মুচকি হেসে বলে,
-এইতো ভালো ভাইয়া,আপনি??
আমি দু’হাত পকেটে গুঁজে বলি,
-হু,ভালো।।সবাই নিচে আর তুই এখানে একা একা কি করিস??
সাথী নীরবতার সহিত হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে পূব-আকাশের বড় ঔ চাঁদটিকে।
-তো চাঁদ দেখতে এসছিস??
-হু।(মাথানিচু করে)
আমি পকেট থেকে হাতদুটো বের করে হাই তুলতে তুলতে বলতে থাকি,
-রাতে নিরিবিলি আমারও একা একা চাঁদ দেখতে বড্ড ভালে লাগে।

সাথী আমার কথায় ড্যারা চোখে তাকিয়ে বলে,
-আপনার মনেতো কোনো দুঃখ নেই।দুঃখে ক্ষোভে ভরা মানুষগুলোই তার মনের যত অব্যক্ত কথা ঔ উজ্জ্বল্য চাঁদকে সপে।
-হিহিহিহিহিহি।
-হাসলেন কেন??
-সাথী,তুই কিন্ত আগ থেকে অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গেছিস।
-কেমন পরিবর্তন,ভাইয়া??
-এইযে আগে অনেকটা চঞ্চল ছিলি,কিন্তু এখন খুব গম্ভীর।মুখ দিয়ে যেন কথাই বের হয়না তোর।এইতো সেদিন,আমার কানের কাছে এসে মাছির মতো ভনভন করেছিলি।আর সেই ছোট্র মেয়ে এত বড় হয়ে গেল!?আমি পুরাই ফিদা।যাইহোক,ঘুমিয়ে পড়।রাত অনেক হয়েছে।আমিও ঘুমতে যাচ্ছি।
আমি পা বাড়াতেই পেছন থেকে সাথী বলে উঠে,
-মানুষ কখনো এমনি এমনি পরিবর্তন হয়না, ভাইয়া!পরিবর্তন তার পরিস্থিতিতে বাধ্য।

আমি ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে যাই।গূঢ়ার্থ কথার ব্যাখ্যা না বুঝতে পেরে আবার বলি,
-ম-মানে??

সাথী রেলিং থেকে হাতগুলো ছাড়িয়ে সরু হয়ে দাড়িয়ে বলে,
-আসলে মায়া জিনিসটা খুবই অদ্ভুত!এই মায়ার কারণেই মানুষ মানুষকে ভুলতে পারে না।বিধাতা আজন্ম পৃথিবীতে কেন মানুষের প্রতি মায়া,আবেগ,ভালোবাসা দিয়েছেন,নাহলে নিবৃওে কষ্ট পাওয়া মানুষগুলো রাত -ভোর জেগে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাতো না।।আর,আমি খুবই হ্যাপী,সোহানা আপুর মতো এমন দৃঢ় প্রত্যয়ী,সাহসী মনোবলের একজন লাইফ পার্টনার পেয়েছন।দোয়া করি,আপনারা আজীবন সুখী হোন।।(মুঁচকি হেসে বলে সাথী)
সাথীর কথায় আমি অনেকটা নাছোড়বান্দা।বুঝতেছি না কি থেকে কি বলবো।সাথী আবারও বলে উঠে,
-ভাইয়া,আপনি হয়তো ভাবেন আমি এখনো আপনাকে ভালোবাসি।হুম ভালোবাসি,তবে আমার ভালোবাসাটা জাস্ট ভালোলাগা।ক্ষণিকের দেখা ভালোবাসা থেকেও মনের ক্ষুদ্র কোণে অব্যক্ত ভালোবাসাটাই ট্রুলি লাভ যেটা সোহানা আপুর মধ্যে ছিল।নিজের জীবন দিয়েও নিজের প্রিয় মানুষটিকে এতটা কপটতার পর বিলিভ করেছেন,পাশে দাড়িয়েছেন,সে মানুষটিই আপনার যোগ্য ভাইয়া।আর আমার প্রিয় মানুষটির জন্যে যিনি এতটুকু করেছেন,আমি তার কাছে চির কৃতজ্ঞতা থাকবো।কারণ,আমার প্রিয় মানুষটির ঔ প্রিয় মানুষটিও আমার প্রিয়।। আসলে,পৃথিবীত
আমার মনে কোনো দুঃখ নেই ভাইয়া,বরং আমি সবথেকে বেশি খুশি নিজের লালায়িত ভালোবাসার মানুষটিকে এত বছর পর নিজের করে পেয়েছেন।।।ভালো থাকুক আমার সেই প্রিয় মানুষগুলো।এই দোয়াই করি।।।

সাথীর কথাগুলো অনেকটা স্বাভাবিক,কিন্তু গভীরতা বিশাল।সাথী হয়তো এখনো আমায় অনেক ভালোবাসে যা তার গভীর অনুভূতিরাই জানান দিচ্ছে।যদিও সে মুখে বলছে না।কিন্তু আমারতো আর কিছুই করার নেই।। কারণ,আমি একজনকে ভালোবাসি।

এরইমধ্যে কাকিমা এসে হাজির।
-কি শাওন,কথাবার্তা হচ্ছে???আর এইযে সাথী?একা একা এখানে কি করো?আমরা সবাই নিচে কত্ত এনজয় করতেছি।আর তুমি এখানে হাওয়া খেতে এসছো??
–কাকিমা,সাথীর নাকি চাঁদ দেখতে ভীষণ ভাল্লাগ। তাই চাঁদ দেখতে আসছে।

-তুমিও একটু দেখ না,কাকিমা?প্লিজজ??
-দূর,ছাই!আমার কি এখন চাঁদ দেখার বয়স আছে নাকি?
-হিহিহিহিহি হাহহাহা।
কাকিমার কথায় সাথী এবং আমি কটকটিয়ে হেসে উঠি।
-যাইহোক,বহুৎ হাসছেন দু’জন।সাথী তোকে আপা(আমার মা)ডাকেন।যাও।।
-জ্বী কাকি।

সাথী মাথা হেলিয়ে চলে যায়।সাথী চলে যাওয়ার পর কাকিমা আমায় আঁকড়ে ধরে বলেন,
-এই লেটকা,জানিস??তোরই কারণে তোর বাবার মন জয় করতে পেরেছি আমি এবং তোর কাকা।নাউ উই আর সো হ্যাপী এন্ড ইউনিটি ইন অল এগেইন।
-কিভাবে কাকি??
-আমার উছিলায় সোহানা,সোহানার উছিলায় সোহানার বাবা।আর সোহানার বাবার উছিলায় তুই।হিহিহিহি।
-বুঝি নি কাকি।একটু ক্লিয়ার করো না,প্লিজজ??
-হু!!এখনো তুই ছোট বাচ্চা নাকি??আর মাএ ক’দিন পর তোর বিয়ে!!
-য়ুয়ুয়ুয়ুয়য়ুয়ু।আচ্ছা বলো না??
-মানে সোহানার বাবা তোকে জেল থেকে মুক্ত করেছেন আর গোড়ায় ছিলাম আমরা।সোঁজা একটা বিষয়, হায়রে খোদা।।
-কাকিমা আমি বুঝছি।হিহিহি।তোমার মুখ থেকে সরাসরি শুনার জন্যে আমার একটু জাস্ট বাহানা।
-বোকা বানালি??
-স্যরি কাকিমা।
-দাড়া তুই….
এই বলে কাকিমা আমায় শতানীর ছলে একটা দৌড়ানি দেন।আমিও দৌড়াতে দৌড়াতে সোহানার রুমে এসে ধপ্পাস করে পড়ে যাই।সোহানা আয়নার সামনে দাড়িয়ে শাড়ির আঁচল ঠিক করছে।।আর হুট করে আমার প্রবেশে অনেকটা দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে যায়।লজ্জ্বায় জিব কাটে।।
আমি তড়িঘড়ি চোখবুঁজে রাখি।।সোহানা আঁচলটা তড়িঘড়ি ঠিক করে বলে উঠে,
-কমনসেন্স নেই?কোনো মেয়ের রুমে যখন-তখন ঢুকে পড়া এ কেমন অসভ্যতা!!

সোহানার কথা শুনে আমি নাজেহাল অবস্থায় পড়ে যাই।রাগে মুখটা ফঁসফঁস করতে থাকে।কারণ,ক’দিন পর ও আমার স্ত্রী হতে যাচ্ছে,এখনই এসব বলা শুরু করছে!??একমুহূর্তে আর দেরী না করে রুমের দরজাটা বন্ধ করে একদম সোহানার কাছে চলে আসি।আমার বামহাত দিয়ে সোহানাকে আঁকড়ে অন্যহাত দিয়ে সোহানার হাতের উপর চেপে ধরে বলি ,
-এখানে আমার আসতে হলে কি পারমিশন লাগবে??

আমার কথায় সোহানার চোখের পাতাদুটে ঘনঘন পলক ফেলে,আর দৃঢ় নিঃশ্বাস ছাড়ে।আর থরথর করে সোহানার ঠোঁটদুটো কাঁপতে থাকে।
হুট করে সোহানার গাঢ় গোলাপী ঠোঁটে আমার নজর পড়ে।আমার জিহবায় পানি আসার উপক্রম তার গোলাপী দু’ঠোঁট দেখে।নিজেকে সংযত না রাখতে পেরে সোহানর ঠোঁটের উপর আমার ঠোঁট দুটো চুবিয়ে নিই।সোহানাও তার ঠোঁটদুটো আমার মুখের দিকে মেলে দিচ্ছে।এভাবে আমাদের ঠোঁট আদুরে ভালোবাসা চলে অনেকক্ষণ। একটা মুহূর্তে সোহানা হাঁপিয়ে উঠে।পরে আমায় দু’হাত দিয়ে জোর করে সরিয়ে দেয়।।তবুও আমার মন মানছে না।আমি সোহানার দিকে আরো বেশি ঝুঁকে যাই।ওকে আমার দু’হাত দিয়ে একদম কোলে উঠিয়ে নিই।আর বিছানার উপর শুইয়ে আলতো ওর গাঁয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ি।সোহানা তার চোখদুটো বুঁজে রাখছে লজ্জ্বায়।
আমি সোহানার দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে ঘাড়ের দিকে মুখটা গুঁজতেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ।বিরক্ত উঠে যায়।।বোধহয় শিমলা।
-এই শাওন,দরজা খোল?দরজা খোল?
-উফস,এই মেয়েটার আসার আর সময় হলো না। একটু ভালোবাসতেও দিবে তা না।।

সোহানা আমার কথায় খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।আমার ভীষণ রাগ উঠে যায়।
-হাসছো না?আর মাএ ক’দিন!!বিয়েটা ভালোয় ভালোয় শেষ হোক।তারপর ইচ্ছেমতো ভালোবাসবো।এখনকার জন্যে ছেড়ে দিলাম।।হু…

এ বলে বিছানা থেকে নেমে দরজাটা খুলতেই শিমলা বলে উঠে,
-আপনাদের ডিস্টার্ব করে ফেললাম নাকি???
আমি চুপসে থাকি।আর সোহানা থতমত খেয়ে লজ্জ্বায় লাল।

শিমলা ভ্রু কুঁচকে বলে,
-আচ্ছা বলতে হবে না।না বললেও আমি বুঝি।হিহিহি।
-এরে,বুড়ি!!দাড়া!!??
শিমলা জানে এখন ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে বেচারীর আর রক্ষে নেই, কাজেই কেটে পড়া শ্রেয়।কিছু বলতে না বলতেই তৎক্ষনাৎ শিমলা উধাও।সোহানা হেসে দেয় এসব দেখে।

আমিও নিচে চলে আসি।সবাই আমাদের বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করার জন্য গোল মিটিং এ বসছেন।মা আমায় দেখে ডেকে বলেন,
-শাওন,একটু এদিকে আসতো,বাবা??
-হু মা, বলো??
-আমরা সবাই মিলে আগামী শুক্রবার তোর বিয়ের দিন ঠিক করেছি।
-ওমা,সেকি!!এংগেইজমেন্ট বুঝি বাদ যাবে!?(কাকিমা)
-আসলে আপা,কি বলবো,বলেন!?আমার আবার অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার খুব তাড়া।একটা প্রজেক্ট নিয়ে আমার বন্ধু কাজ করছে,তাই সেখানে আর্জেন্ট যাওয়া তার মর্জি।।নাহলে,আমার একমাএ মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে কোনোকিছুই কমতি থাকতো না।তাই বাধ্য হলাম এংগেইজমেন্ট উছিলায় শুভকাজটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেলতে।।(সোহানার বাবা)
-ওহ আচ্ছা।
-তো,শাওন তুই কি চাচ্ছিস শুক্রবারেই বিয়ের ডেট ফাইনাল করতে?(বাবা)
-তা তোমাদের ইচ্ছে,বাবা।।
-হু,,,

আমার খুশি আর ধরে না।কারণ,আর মাএ ২ দিন পর আমার এবং সোহানার বিয়ে হতে যাচ্ছে।আমরা স্বামী-স্ত্রী হতে যাচ্ছি যে স্বপ্নটা দু’জন ভার্সিটিতে বসে বসে দেখতাম।স্বপ্নের যে পূর্ণতা হতে যাচ্ছে ভাবতেই মনের মধ্যে এক অন্যরকম শিহরণ জাগতে থাকে।।এই খুশির খবরটা সোহানাকে দিতে তার রুমে চলে আসি।।
-সোহানা?সোহানা?সোহানা????

-জ্বী বলেন,স্বামী।
এ বলে খিলখিল করে হেসে উঠে সোহানা এবং পাশ থেকে আরেকটা হাসির আওয়াজও শুনতে পাই।ভালোভাবে পরক্ষ করে দেখতে পাই সাথী এবং সোহানা বসে বসে গল্প-গুজব করছিল এতক্ষণ। সাথীর মুখটায় হাসির আভা ফুঁটে আছে।আমি শুধু এটুকুই চাই,সাথীর মুখ কখনো যেন বিষণ্নতায় না ছুঁয়ে যায়।।
-হাসি থামাবে দু’জন???
-আচ্ছা থামালাম।এবার বলেন স্বামী??
-এই এত্ত স্বামী স্বামী করছো কেন??বিয়েতো এখনো হয়নি!!

পাশ থেকে সাথী বলে উঠে,
-বিয়েতে কাল বাদে পরসু ভাইয়া।সো আর দেরী নেই।এখনই সোহানাকে আপু বউ বলার প্রস্তুতি নিয়ে নাও।।হিহিহিহি।।

এ বলে সাথী সোহানার মাথার সাথে মাথা মিলিয়ে খুশিতে গুড়গুড়ি খায়।আমার তা দেখে কেন জানি ভীষণ ভালো লাগছে।আমি চাই সাথী সবসময় এভাবে হাসি মুখ করে থাকুক।ওর মনে যেন কষ্টের ফুঁটোও না থাকে।।
-আচ্ছা,তোমরা দু’জন কথা বলো।আমি আসি ভাবী।
সাথী সোহানার গাল ছুঁয়ে মুঁচকি হেসে চলে যায়য়।।
আমি সং এর মত দাঁড়িয়ে ওদের দুজনের তামাশা দেখি।।
তারপর সোহানার পাশে এসে বসি।
-শাওন জানো??সাথী অনেক ভালো একটা মেয়ে।আমাদের বিয়েতে কিভাবে সাঁজবে,কিভাবে নাচবে তার প্রি-প্ল্যান করে ফেলেছে।।
-ওহ আচ্ছা,তাই??
-হু।।তোমার এখন ফিলিংস কেমন?আমায় একটু বলবে??
-জানতে চাওও??
-হু।
-তাহলে আমার বুকের পাশে মাথা মাথা গুঁজো।
-মাথা গুঁজবো কেন??

সাথীর ভাবাবেগ প্রশ্নে আমি ওর কাঁধে হাত রেখে বলি,
-কারণ,তুমি যদি আমার বুকে মাথা রাখো,তাহলে শুনতে পাবে আমার হৃদয় স্পন্দনের গুণগান যে শুধু সোহানারই গায় গানন।
-য়ুয়ুয়ু,,পাগল একটা….আচ্ছা শুনো??দিবানির চিঠিটা তো এখনো দেওয়া হয়নি তোমায়!
-লাগবে না।
-কেন??
-তুমিতো সব বলে দিয়েছ।আর কি পড়বো!! চিঠিটা পড়ে এই মুহূর্তে কষ্টটা আরো দ্বিগুণ করতে চাচ্ছি না সোহানা
-আচ্ছা,শাওন।
এ বলে সোহানা আমার কাঁধে মাথা রাখে।।



আজ আমাদের বিয়ের ২বছর পূর্ণ হলো।সোহানা এখন কিচেন রুমে।। মায়ের সাথে রান্নাবান্না নিয়ে বিজি।আর আমি বৈবাহিক জীবনে বাবার ব্যবসাটা এবং ভার্সিটি দুটোই সামলাচ্ছি। জেলে গিয়ে তো ২’টো বছর শেষ!!তাই এখনো ভার্সিটির কোর্সটা শেষ হয়নি।এখন ১০ম সেমিস্টারে আছি।।তাই,বইপত্রগুলো ছড়াছড়ি করতে আমার সেই পুরনো একটা ডায়েরী টেবিলের উপর দেখতে পাই।।
ডায়েরীর পেইজ খুলতে প্রথম পৃষ্ঠায় একটা লেখা চোখে পড়ে।।
লেখাটি পড়া শুরু করি,
প্রিয় শাওন ভাইয়া,
আশা করি, এই মুহূর্তে আপনি অনেক ভালো আছেন।আমিও চাই আপনি সবসময় ভালো থাকেন।।আপনার মনে হয়তো এখনো সন্দেহ আমি আপনায় ভালোবাসি।আমার এই ভালোবাসার তাড়নায় আপনি হয়তো অনেকটা দ্বিধাদ্বন্দে আছেন।তবে,সত্যটা কি জানেন ভাইয়া?যখন আপনি জেলে ছিলেন,তখন প্রথম শুনলাম আমার গার্লফ্রেন্ড আছে যেটা আপনি আমায় বলেননি।যদি আগেই জানতাম আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে,তাহলে আমি আপনার লাইফ থেকে তখনই সরে যেতাম।
আর,তখন কষ্টটির মুহূর্তের কথা সত্যি আপনাকে বলে বুঝাতে পারবো না। যখন শুনলাম,আপনার গার্লফ্রেন্ড মানে সোহানা ভাবীর বাবাই আপনাকে বাঁচানোর জন্যে দিনকে দিন এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছেন,তখন বুঝছিলাম সোহানা ভাবীর থেকে আপনাকে আর কেউ বেশি ভালোবাসতে পারে না।যে ভাবী বিয়ের দিনই সব ভেঙ্গেচুরে আপনার কাছে চলে আসেনন,তখনই বুঝলাম ভালোবাসা কাকে বলে।
আমার হয়তো সামান্য একটু মন খারাপ থাকতেই পারে। কারণ,আমার ছিল ফার্স্ট সাইড এট লাভ।।তাই,সব ভুলে গিয়ে সত্যি আগ থেকে অনেকটা ঠিক আছি।সোহানার ভাবীর মুখটা যতবার দেখি,ততবারই আপনার থেকেও সোহানা ভাবীর প্রতি আমার ভালোবাসাটা একটু বেশি কাজ করে।প্রিয় আপুকে আমি অনেক ভালোবাসি।ভাবীকে আমার সালাম দিবেন।।
ভালো থাকবেন।
ইতি,
সাথী।
১০ ই ডিসেম্বর ২০১৮।

চিঠিটি পড়ে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ি।তাহলে চিঠিটা প্রায় ২ বছর আগে লিখেছে বউভাতের সময়।।এত মাস পর খুঁজে পেলাম!!ব্যস্তময় লাইফে বেখেয়ালিপনা হয়ে গেলাম।।

হুট করে নিচ থেকে কেউ আমার প্যান্ট ধরে টানতে থাকে।।।নিচে তাকিয়ে দেখি আমার ৯ মাসের ফুটফুটে বাচ্চা নিহাদের এই কান্ড!!
সবে হাঁটাহাঁটি পায়ে হাঁটতে শিখেছে।এক কদম পা বাড়ালেই ধপ্পাস করে ফ্লোরে পড়ে যায়।।।
আমি নিচ থেকে কোলে তুলে কপালে দু’টো চুমু লাগিয়ে দিই।
এরইমধ্যে সোহানা এসে নিহাদ কে খুঁজতে থাকে।
-নিহাদ পাপ্পু তুমি কোথায়??কোথায় তুমি??
-আমার ছেলে আমার কাছে।
-উহ,ক্লান্ত হয়ে গেলাম ওকে খুঁজতে খুঁজতে।রান্নাটা সবে বসালাম,কোনফাঁকে এখানে ববাবাকে খুঁজতে আসছে!!ছেলেটাও ঠিক বাবার মতো বাঁদর একটা।।

এ বলে সোহানা মুখ ভেঙ্গছি কাটে ।আমার মুখে হাসি চলে আসে।সোহানার দিকে তাকিয়ে একধরনের নারীর সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারছি।শাড়ির আঁচল টা কোমরে গুঁজে আছে, সারা মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে।আজকের রান্নাটা বোধহয় ভালোই হবে।তাই বউ আমার রান্নায় উঠে পড়ে লাগার মতো।

সোহানা ঠিক আগের মতোই আছে।মুখে সেই এঁটো হাসি সবসময়।সোহানাকে আমি আমার লাইফ থেকেও বেশি ভালোবাসি।আর এই ভালোবাসার টানেই আমাদের নীড়ে ফুটফুটে বাচ্চার আগমন।ভালোবাসি প্রিয় নিহাদ এবং আমার স্ত্রীকে।।।

সমাপ্ত

—সবার হয়তো খারাপ লেগেছে।গল্পের নায়িকা সাথীকে দেওয়ার জন্যে।।কিন্তু দেখুন,আমি অনেক চেষ্ট করেছি।সম্ভব হয়নি।কারণ,গল্পের নামের সাথে কাহিনী সংযত রাখতে হয়েছে।আশা করি,এই দিকটা একটু দেখবেন।নাহলে,আমার গল্পটি অসমাপ্ত থেকে যেত এবং অসঙ্গতিপূর্ণ ।।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে