ভাবিনি ফিরে আসবে
পর্ব-১৪
রোকসানা আক্তার
-আচ্ছা,তারপর বলো??
-তুমি এই বিমর্ষ ভিডিও রেকর্ডের কাছে জিম্মি ছিলে।
যেখানে তুমি আমাকে এবং তোমার আত্মসম্মানকে বিসর্জন দিয়েছিলে।। আর তোমার ভাইয়ার সাথে শিপ্রার রিলেশন হয় ওই শিপ্রারই প্লানে।উনি চেয়েছিলেন তোমায় তিলে তিলে পুড়িয়ে নিজের অন্তঃ জ্বালা নিবৃত্তি করতে। তাই তোমার ভাইয়াকে পটিয়ে পাটিয়ে বিয়ে করে নিয়েছেন। অন্যদিকে শিপ্রাকে বিয়ে করে তোমার ভাইয়ার পথটাও ক্লিয়ার হয়ে গিয়েছে।কারণ,তোমার ভাইয়া তোমার মায়ের সম্পওির উপর অনেকদিনের লালায়িত লোভ ছিল।এসব কিছুতে শিপ্রার সাপোর্ট পেয়ে তিনিও তোমার বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন।
কিন্তু তুমি একটা দিক এখনো জানো না,ওই বিমর্ষ ভিডিওটি শিপ্রা ডাইনীর থেকে হারিয়ে গিয়েছিল তোমার ভাইয়ার সাথে বিয়ে হওয়ার আগেই।তারপরও তোমাকে শিপ্রা ভিডিওর ভয় দেখিয়ে থাবিয়ে রেখেছিল।নিদুর সাথে উনার ভিডিও ভাইরাল হওয়াতে উনি কি চুপসে থাকতেন,বলো?
নেভার!!!উল্টো তোমারটাও ভাইরাল করে দিতেনন।কিন্তু আপসেট!!তা আর পারেননি।পরে, নিদুকে হত্যার মাধ্যমে তোমায় ফাঁসানোর ফন্দি আঁটেন।।
-সোহানা?নিদুকে কে খুন করেছে??
-তোমার ভাই, শাওনন!!
-আমার ভাই!!!??
-ইয়েস!শিপ্রা তোমার ভাইকে দিয়ে নিদুকে খুন করায়।আর সেটা উনাদের পরস্পরের স্বার্থে।
-কেমন স্বার্থ??
-তোমার ভাই চেয়েছিলেন তোমায় ফাঁসিতে ঝুলালে উনার স্বার্থ হাসিল হবে এবং এই সুযোগে সব সম্পওির মালিক উনি হয়ে যাবেন।আর, ওদিক দিয়ে শিপ্রার সব প্লান বিনে পানি হওয়াতে
তার বোনের বদলার জন্যে তোমায় পৃথিবী থেকে বিদায় দিবেননন।
বাট,তা আর হলো না!!!
কপালে হাত রেখে সোহানা কিছুক্ষণ মাথাটা নিচু করে রাখে,আর একটা দৃঢ় নিঃশ্বাস ছাড়ে।।
-আচ্ছা সোহানা, এখন শিপ্রা এবং ভাইয়া কোথায়??
-এখন তাদের জিন্দেগী জেলখানায়।হিহিহিহিহি….
-ভাইয়ার জন্যে খুব কষ্ট লাগতেছে।।
-ইটস সিম্পল,শাওন।কারণ,তারা তাদের প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করতেছে।।এতে কষ্ট পাওয়াটা অর্থহীন।
-সোহানা একটা সত্য কথা বলবে??
-কি,বলো??(আমার দিকে তাকিয়ে)
-এত্তকিছু যে হয়ে গেল তুমি কিভাবে জানো? সোহানা?
সোহানা আমার কথা শুনে একটা মুঁচকি হাসি দেয়।মেয়েটিকে মুঁচকি হাসিতে বেশ মানায়।এই মুঁচকি হাসিটা যেন শুধুই সোহানার জন্যে বিধাতা গড়েছেন।।উফস,দেখলে বার বার ক্রাশ খাওয়ার মতো।
-জানতে চাও,কীভাবে জানি??
-হুম।
-শিমলা আপু আমায় সব বলেছিলেন,শাওন।।যেদিন আমার গায়েহলুদ ছিল,ওদিন সকালে আপু আমায় কল দিয়েছিলেন উনার সাথে আর্জেন্ট একটু দেখা করতে।তারপর আপু আমার সাথে ধানমন্ডি এসেই দেখা করেন।দেখা হওয়ার পর আপু বিস্তারিত সব খুলে বলেন আমায়।ইভেন,আমি বিলিভ করতে চাইনি,যদি না শিমলা আপু তোমার প্রতিটি কথার ভয়েস রেকর্ড না করতেন এবং আমায় না শুনাতেন।।
-ভয়েস রেকর্ড মানে সোহানা??
-মানে যখন তুমি তোমার মনে জমে রাখা সবটা কথা শিমলা আপুর সাথে শেয়ার করতে,তখন আপু মোবাইলে তার রেকর্ড অপশন অন করে রাখতেন।আর ওই ভয়েসগুলোই আমায় শুনালেন।দ্যান,আমি সবকিছু বুঝতে পারি।তোমাকে কতটা ভুল বুঝেছিলাম,কতটা দূরে রেখেছিলামম।।
-এখনো কি দূরে রাখবে??আচ্ছা সোহানা?তোমার কি সত্যিই বিয়ে হয়ে গেছে?
-তোমার মন কি বলে শাওন??
-মন বলে না।
-হিহিহিহি
-হাসলে কেন সোহানা?আমার ইমাজিন কি সত্যি??
-আচ্ছা,আচ্ছা পরে জানবে।।
-য়ু-হু,আমার কিন্তু তর সইছে না।।
-আচ্ছা,শুনো??আব্বু ডাকছেন।এখন যাচ্ছি।।
এ বলে সোহানা বিছানা ছেড়ে উঠতেই আমি সোহানার হাতটা ধরে ফেলি।
-কি হলো, শাওন?ছেড়ে দাও।কেউ দেখে ফেলবে তো!!
-ওয়েট দেখবে না।
এ বলে আমি দরজাটা বন্ধ করে ফেলি।সোহানা অনেকটা ভীত হয়ে যায়য়।।
-এএএইইইই,বলে দিলুম,উল্টাপাল্টা কিছু করবে না কিন্তু!!
-উল্টোপাল্টা না।কথা দিলাম,জাস্ট একটু আদর করবো।সোনা পাখিটিকে আমার অনেকদিন হয়েছে আদর করা হয়নি।।
সোহানা আমার কথায় লজ্জ্বা পেয়ে দরজার দিকে হেঁটে চলতেই বাম হাতটায় হ্যাঁচকা টান মেরে ঘুরিয়ে নিই আমার দিকে।।ওর লজ্জ্বা পাওয়ার প্রতিটি নিঃশ্বাসের আভা আমার মুখে আসছে।।।দু’হাতটা দিয়ে ওর কোমরে চেপে ধরি।।
-এই রূপবতী, লজ্জ্বা পাচ্ছ কেনন??অনেকটা দিন পর তোমায় আজ দেখলাম।মনে হচ্ছে,শতযুগ পর আজ কাছে পেলাম।।
এ বলে আমার একদম কাছে নিয়ে আসি।।আর আলতো চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে মন ভোরে সোহানাকে দেখে নিই।সোহানা লজ্জ্বায় লাল হয়ে যায়।বার বার মাথা উবু করতে চায়,কিন্তু আমি দিই না।।আজ চোখজুড়ে সোহানাকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে। যত দেখি মনে নেশা লেগে যায়,এই নেশার ঘোরে শুধু ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়য়!!
যখন আমার মুখটা ওর ঘাড়ের দিকে গুঁজে দিতে যাবো,ওমনি ও আমায় সরিয়ে দিয়ে বলে,
-আমি অন্যজনের বউ!আমাকে ছোঁয়ার এখন তোমার কোনো অধিকার নেইইই!!
-হোয়াট?!সত্যি সত্যি তোমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে??
-ইয়েস,শাওন!!আজ রাত এ বাসায় তোমার কাকা-কাকি আসবেন।উনাদের থেকেই শুনতে পাবে।
-ম-ম-মানে??এসব কি বলছো তুমি???আমি এসব বিশ্বাস করি না,এ হতে পারে না সোহানা!!
-না বিলিভ করলে আমার কিছুই করার নেই, শাওন।আসি!
আমার হৃদয়ে মুহূর্তের মধ্যে এক দমকা ঝড় বয়ে যায়।
আমার পুরো শরীর থরথরে কাঁপতে থাকে।মোটা মোটা রেখায় কানের পাশ দিয়ে ঘাম বেয়ে পড়তে থাকে।
সোহানার কি সত্যিই তাহলে বিয়ে হয়ে গিয়েছে!?তাহলে কেন আমায় সে বাঁচালো!!কার আশায়?
-স-স-সোহানা?তাহলে মরে যাওয়াইতো আমার জন্যে ভালো ছিল।কেন বাঁচালে আমায়!!!?
সোহানা হাতদুটো ভাঁজ করল স্মিত মুখে বলে,
-অপরাধীকে অপরাধের জন্যে শাস্তি দিতে হয়।আর নিরপরাধকে মিথ্যে অপবাদ থেকে বাঁচাতে হয়।কারণ,এটাই মনুষ্যত্বের ধর্ম।আমার বাবা আমায় শিখিয়েছেনন।
এ বলে রুম ত্যাগ করে সোহানা।আমার ভাবনা গুলো মুহুর্তে দুমড়েমুচড়ে যায়।।আমার হৃদয়টা রক্তক্ষরণে জর্জরিত একসময় নিজে নিজেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে।কারো দয়ার হয়তো আর পরোয়া করবে না।।
মনের জগৎ এর ধ্যানে বিছানার উপর বসে পড়ি।মনটা কিছুতেই মানতেছে না!!
সন্ধের পর,কাকা-কাকিমা আমাদের বাড়ি এসে হাজির হোন।ছকিনা খালা আমায় নিচে ডেকে আনেন।কাকা-কাকিমা আমায় দেখতেই মুঁচকি হেঁসে বুকে জড়িয়ে নেন।আমি কোনোমতে নিজেকে সামলে উনাদের সাথে কুশল বিনিময় করি।
বাবাও কাকা-কাকিমাকে দেখে বড্ড খুশি হয়ে যান।কাকিমা বাবাকে সালাম করেন।আর বাবা কাকাকে জড়িয়ে কেঁদে উঠেনন।
আমি অনেকটা অবাক হয়ে যাই। যে বাবা কাকা-কাকিমার কথা শুনতে অপারগ প্রকাশ করতেন,আজ সে বাবাই অনেক বেশি খুশি কাকা-কাকিমার উপস্থিতে।ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই সন্দিহানের বিষয়।।
আমি কোনোকিছু না ভাবতেই সোহানার বাবা পাশ থেকে বলে উঠেন,
-কি ভাবছো,মাই সন??
-ন-ন্না মানে!
উনি মুঁচকি হেসে দেন আর বলেন,
-তুমি না বললেও আমি জানি তুমি কি ভাবছো!
আমি উনার কথায় মাথা নিচু করে রাখি।পাশ থেকে কাকিমা ও বলে উঠেন,
-আমিও জানি শাওন কি ভাবছো!
আমি কাকিমার কথায় ঝলঝল চোখে তাকায়।কাকিমা ভ্রু উঠিয়ে আমায় ইশারা দিয়ে বলেন,
-শাওন?তোর সন্দিহানটা আপাতত সারপ্রাইজ। আর এউ সারপ্রাইজটা ডিনারের পর পেয়ে যাবি।ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা কর পাপ্পা।
অন্যদিকে,সোহানা কাকিমার কথায় শুধু হাঁসে।আমার খুব রাগ হতে থাকে।মনচায় সবাইকে আচ্ছামত বকি।দাৎ!!কোনোকিছুই ভাল্লাগতাছে না।রাগটাকে গলা পর্যন্ত সামাল দিয়ে বলি,
-কাকা-কাকিমা,আপনারা মনে হয় ভীষণ ক্লান্ত!!আপনাদের এখন রেস্টের প্রয়োজন।আর আমার যে সেমিস্টার গুলো ড্রপ গিয়েছিল,তারজন্যে অনলাইনে ভার্সিটির কিছু কাজ করতে হবে।আমি আসি।পরে কথা হবে।।
-বায়য়, শাওন খোকা।(কাকিমা)
তারপর নিজের রুমের দিকে চলে আসি।।
চলবে….