ভাবিনি ফিরে আসবে
পর্ব-০৯
রোকসানা আক্তার
পরে সবাই ব্রেকফাস্টটা সেরে নিই। বাবা আমাদের সাথে আর ব্রেকফাস্ট করেননি।ছকিনা খালা বাবাকে উনার শয়ন ঘরেই নাস্তা দিয়ে আসেন।
আমি আর একমিনিট ও দেরী না করে সাথীকে নিয়ে বাহিরে চলে আসি।।
-উফস ভাইয়া,আস্তে একটু হাঁটো না?দেখতেই তো পাচ্ছ আমি তাড়াতাড়ি হাঁটতে পারি না।
-আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে তুই এখানে একটু বস এবং আমিও একটু জিরিয়ে নিই।ক্লান্ত হয়ে গেছি অনেক।
-ঘর থেকে যেভাবে হাতটা ধরে এদিকে টেনে নিয়ে আসলে মনে হচ্ছে তোমার আইসক্রিম চোরে নিয়ে যাচ্ছে।।তো ক্লান্ততো হবেই!!
সাথীর কথায় বেখেয়ালি হাসি চলে আসে আমার।মাঝেমধ্যে মেয়েটির সপাৎ সপাৎ কথা শুনতে ভালোই লাগে।হাসিটা মুখে চেপে বলি,
-বয়সের তুলনায় পাকা হওয়া ভালো না সাথী!
-আবার সেই বয়স!!তোমার এই ঢং-এর কথায় আর বাঁচি না ভাইয়া!
-হয়েছে হয়েছে যত বেশি বসতে দিব,তত বেশি পটপটাবি।এখন চল
-আচ্ছা চলো।।
বাড়ির গেইট থেকে বের হয়ে পথিমধ্যে একটা রিক্সায় সাথীকে নিয়ে উঠে বসি।
-ভাইয়া আমরা কোথায় যাচ্ছি?
-গেলেই বুঝবি।
বেঘোরে রিক্সা চলতে থাকে।কখনোবা রিক্সার এবং গাছগাছালির বাতাসে মুখ ছুঁয়ে যাচ্ছে।
রিক্সা একটি “কুল শপ” – এর সামনে থামে।আমি সাথীকে নিয়ে কুল শপের ড্রাইনিং বসে পড়ি।ওয়েটার এসে তিনটে কোণ আইসক্রিম দিয়ে যায়।তা দেখে সাথী অনেকটা অবাক হয়ে বলে,
-তিনটা কেন ভাইয়া?আবার কোনো গেস্টকে ইনভাইট করলে নাকি???
আমি থুতনির নিচে হাত গুঁজে বলি,
-হু।
-কাকে!?
-এই যে তোকে।
-আমি বুঝি গেস্ট?আর তাও দু’টো একসাথে!?সম্ভব না ভাইয়া।
-কোণ আইসক্রিম তোর-না অনেক প্রিয়?
-হুম।তাহলে, কোনো কথা না বলে সোঁজা খেয়ে নে এবং আমাকেও খেতে দে।
সাথী শপের চারপাশটা তাকিয়ে বলে,
-ভাইয়া,আমরা এখানে না বসে তারচেয়ে ভালো রাস্তার ফুটপাতে হেঁটে হেঁটে গল্প করবো আর আইসক্রিম খাবো।আমি স্কুলের বান্ধবীদের সাথে এভাবে আইসক্রিম খাই,একবার এভাবে খেয়ে দেখো আলাদা একটা ইন্টারেস্ট পাবা ভাইয়া।
কিছুক্ষণ চুপসে থেকে বলি,
-আচ্ছা,চল।
হাঁটতে হাঁটতে সাথী বলতে থাকে,
-ভাইয়া,ঔ ভক্ষণ কি সত্যি সত্যি আমায় বিয়ে করবে??
-আরেহ না। ও তোর একটা চুলও ছুতে পারবে না।
-কিন্তু আমার কেন জানি ভয় হয়,ভাইয়া?
-কোনো ভয় নেই সাথী।তোর এই শাওন ভাইয়া থাকতে তোর কিছুই হবে না।জাস্ট ট্রাই টু রিলাক্স সাথী এন্ড কিপ ইন বিলিভিং অন মি!!
সাথী আমার কথায় অনেকটা খুশি হয়ে রাজ্যের কথা শুরু করে দেয়।
সাথী কথার ধ্যানে হাঁটছে আর কিছুক্ষণ পর পর মুখের মধ্যে একগাল আইসক্রিম পুরে নিচ্ছে।আমি মাথা হেলিয়ে ওর কথার সম্মতি দিয়ে যাচ্ছি।।হঠাৎ পথিমধ্যে সাথী কাউকে দেখতে পেয়ে বলে উঠে,
-ভাইয়া,দেখো?এই মেয়েটি সেদিনের সেই মেয়েটি না? যে ফাহাদ ভাইয়ার শ্বশুর বাড়ি থেকে বিয়ের সময় এসেছিল?
আমি সাথীর আঙ্গুলের ইঙ্গিতে মেয়েটির দিকে তাকাই।তাকিয়ে দেখি,মেয়েটি আর কেউ নয়,পৃথুলী।
-ও তো পৃথুলী,সাথী।
-হুম,ভাইয়া।দাড়াও কথা বলে আসি।
সাথী একথা বলে আমাকে এড়িয়ে পৃথুলীর সাথে কোলাকুলি করে নেয়।পৃথুলী বোধহয় আমায় এতক্ষণে দেখতে পায়নি।আমিও সাথীর পিছু পিছু পৃথুলীর সামনে হাজির হয়ে ওকে একটা সারপ্রাইজড দিই।পৃথুলী আমাকে দেখামাএই চোখগুলো কপালের দিকে তুলে এবং পিছন ঘুরে পা বাড়াতেই আমি ওর হাতটা ধরে ফেলি।
-কি হয়েছে,পৃথুলী?তুমি আমায় দেখে ভয় পাচ্ছো কেন?আমি কি ভালুক!?
-ভাইয়া,প্লিজজ?আমাকে ছেড়ে দিন।
-আজিব তো!!সমস্যা কি ওটাইতো বলবা।
-কি ব্যাপার,পৃথুলী?তুমি শাওন ভাইয়াকে দেখে এরকম করছো কেন?(সাথী)
-আ-আ-মি কিছু বলতে পারবো না।আমাকে এখন বাসায় যেতে দিন।আমি বাড়ি যাবো।
পৃথুলীর ছটফটানি দেখে আমি হতভম্ব।আর মেয়েটির মনে নিশ্চয়ই কেউ ভয়ের ফলা ফলছে। নাহলে,সাডেনলি এরকম উদ্ভট বিহেভ আশাতীত নয়।আমি পৃথুলীর সামনে হাটু গেঁড়ে বসি এবং ডান হাতটা আলতো ধরে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলি,
-পৃথুলী?আমাকে ভয় পেও না।আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না।এই দেখ,সাথীকে কত আদর করি।তোমাকেও করবো যদি আমায় দেখে ভয় না পাও।
সাথীও আমার কথায় আশ্বাস দেয়।পৃথুলী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
-আপনি আমাদের দিবানি আপুকে কেন মারলেন?!??
-মানে??দিবানি মারা গেছে?
-হ্যা!!আজ থেকে তিন বছর আগে দিবানি আপুকে কেউ খুন করে মেরে ফেলেছে,আর সেটা আপনি!!.
মাথাটা হিম হয়ে আসে আমার!!সাথী বিস্ময় হয়ে মুখে হাত রাখে। পৃথুলী এসব কি বলছে!
আমি নিজেকে সংযত রেখে বলি,
-তোমাকে কে বলেছে এ’কথা আমি দিবানি খুন করেছি?
-শিপ্রা আপু বলেছেন।যেদিন আপনার রুমে গিয়ে আপনার সাথে দেখা করেছিলাম সেদিন আপু আমায় ডেকে বলেছেন,আপনিই সেই খুনী যে দিবানি আপুকে হত্যা করেছিলেন।আর,আমি যদি আপনাকে দিবানি আপুর মৃত্যুর কথা বলে দিই,তাহলে আপনিও আমায় দিবানি আপুর মতো খুন করে ফেলবেন।আমাকে সত্যি খুন করে ফেলবেন নাতো??
পৃথুলীর আঁকুপাঁকু কথায় ক্ষণিকে আমার শরীরের তাপমাএা বাড়তে থাকে,কানদুটো লাল হয়ে যায়।আর পায়ের নিচের মাটি যেন সরে যাচ্ছে।।দিবানি কি সত্যিই মারা গেছে?আর যদি মারাই যায় তাহলে আমি ওকে খুন করতে যাবো কেন এবং কি এমন স্বার্থে?!
নিশ্চয়ই এই শিপ্রা ডাইনী কোনো ফন্দি আঁটার জন্যে আমায় মিথ্যে হত্যাকারীর বানাচ্ছে।তবে,এই শিপ্রা দিবানির কি হয়?
-আচ্ছা, পৃথুলী? দিবানি তোমার শিপ্রা আপুর কি হয়?
-দিবানি আপু শিপ্রা আপুর আপন বোন।
-আ-আপন,বোন!?
-জ্বী।
-তুমি কি নিশ্চিত যে দিবানি মারা গেছে??
-হত্যাকারী হয়ে সাধু সাঁজার নাটক করতে আসছেন??
এ বলে পৃথুলী পিছু হটে দৌড়ে চলে যায়।সাথী আমার দিকে হকচকিয়ে তাকিয়ে বলে,
-ভাইয়া?পৃথুলী এসব কি বলছে??
-ও’তো অবুঝ।তাই পাগলের মতো উদ্ভট কথা বলছে।তুই কি বিলিভ করবি ভাইয়া খুনী??
-তা কখনোই না, ভাইয়া।।
-তাহলে চুপ থাক!!!
সাথী মাথা নেড়ে আমার কথায় চুপসে যায়।কিন্তু আমার কান যেন এসব কিছুতেই বিলিভ করছে না!!পৃথুলীর কথাগুলোই বার বার কানে বাঁজছে!!
সাথী সারা রাস্তায় হেঁসে-খেলে কাটিয়েছে,আর আমি ভাবনাতুর পৃথুলীকে নিয়ে।হুট করে যোহরের আযান পড়ে যায়।সাথী আমার হাত নেড়ে বলে,
-ভাইয়া দুপুর হয়ে গেছে।চলো বাসায় যাবো।।
-আজ রেস্টুরেন্টে আমরা দুপুরের খাবারটা সেরে নিব।বাসায় আজ খাবো না।
-ওকে, ভাইয়া!!
সাথীকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকি।ওখানে লাঞ্চটা সেরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে একটা রিক্সা নিই।সাথী এবং আমি রিক্সায় উঠে বসি।
-ভাইয়া?আমরা কি বাড়ি যাবো?
-নাহ!!
-তাহলে??
-পার্কে।।
-তোমার মনটা এখন এখন ভালো নেই ভাইয়া।চলে,বাসায় ফিরে যাই?
-আরেহ নাহ বোকা,চল!!
সাথীও হয়তো বুঝেছে আমার মনটা ভালো নেই।তবে,মনটা খারাপ থাকলেও আমায় ভালো রাখার চেষ্টা করতে হবে।অনেক বড় ঝড় এসে সবকিছু এলোমেলো করে দিলেও সাথীর আবদার আমি অপূরন রাখবো না।কারণ,বাবা মরা মেয়েটার আক্ষেপগুলো এখনো অপূরন্ত । যখন সর্ট সময়ের জন্যে ঢাকা থেকে বাড়ি আসতাম,তখন একে একে অনেকগুলো ইচ্ছের কথা আমায় জানান দিত।দাবিগুলো মেটাবো মেটাবো বলে সময়ে কূলাতে পারতাম না।তাই আজকের দিনটা শুধুই সাথীর জন্যে।।
পার্কে আসার পর নিদুর কলের পর কল যেন মোবাইলটা ফেঁটে যাবে।সাথী বিরক্ত হয়ে বলে,
-ভাইয়া,কে এত্তবার কল দেয়??
-আরেহ,পাবাজ!!
-নিজের বন্ধু কল দিয়েছে,কলটা রিসিভ করতেই তো পারো?
-আরেহ না,পরে ওর সাথে কথা বলতে পারবো।এবার বল কোন দোলনায় ছড়বি??
-ঘোড়ার দোলনা টা আমার ভীষণ ভীষণ পছন্দ। ওটাতে চড়বো ভাইয়া।।
-ওকে।।
দুটো টিকেট কিনে নিই।একটা আমার এবং অন্যটি সাথীর।দুজনে ঘোড়ার সিটে উঠে বসি।আর আনন্দে খিলখিল করে হেসে দুজন ভেসে যাচ্ছি।সাথী মাঝে মাজ ভয় পেয়ে চমকে উঠে।পেছনের সিটে ঘোড়ার সিটে বসে আমি সাথীকে আশ্বাস দিই,
-আরে বোকা ভয় পাস কেন?পেছনে আমি আছি না?পড়ে গেলে আমি তোকে ধরে ফেলবো।সো,ভয় নেই। ওকে??
সাথীও খুশির তালে মাথা নাড়ে।
সময় শেষ হলে দুজন নেমে পড়ি।নিদু আবার কল দেয়।পরে তটস্তাবোধ নিয়ে কলটা রিসিভ করি,
-হ্যালো??
-আরেহ ভাই,আজ সকাল থেকে আপনার নাম্বার অফ পাচ্ছি।এখন রিং বাঁজছে কল রিসিভ হচ্ছে না। আপনার নাম্বারের ২০০ বারের মতো ট্রাই করেছি।তারপরও, আপনার কোনো রেসপন্স নেই।
কাজ শেষে কি সেরে গেলেন নাকি??এই নিদুকো চেনেন আপনি চেনেন? এক কোপে গলা ফাঁক করে দিব!!আর,বেশি চালাকি করার চেষ্টা করবে না,নাহলে ফেঁসে যাবেন কিন্তু!!বলে দিলাম।সো এলার্ট!!
আমি নিদুর কথায় হম্বিতম্বি হয়ে ইতস্ততা নিয়ে বলি,
-ভাই বিলিভ করুন বাবা রেগে যাওয়ার পর বাবাকে শান্ত করতে করতে বুকের ব্যথা দ্বিগুণ হয়।ফোনে চার্জ ছিল কি ছিল না তা একদম মাথায় ছিল না।পরে,ফোনটা একটু চার্জ লাগিয়ে এতক্ষণ মায়ের কাছে ছিলাম।আর এখন রুমে এসে দেখি আপনার কল বাঁজছে।।দুঃখিত ভাইয়া,আমি সঠিক সময়ে রিসিভ করতে পারিনি।
চোখ টিপে কথাগুলো বলি।নিদু বিশ্বাস করে ফেলে।
-ওকে, নেক্সট বার এমনটি যেন না হয়।আর সাথীর ব্যাপারে কি ভেবেছেন এবং ওকে আমার হাতে কবে তুলে দিবেন?ডেট দিন!!আমার আর তর সইছে না!!
-হবে,হবে।।আচ্ছা আচ্ছা একটু পরে কথা বলছি।বাবা আমার রুমে আসছেন।
তাগাদা দেখিয়ে নিদুর কলটা কেটে দিই।সাথী আমার মিথ্যে অভিনয় দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খায়।
-কি ব্যাপার,ভাইয়া?? তুমি তোমার বন্ধুর কাছে মিথ্যে বললে কেন??
-পাবাজ যদি এমুহূর্তে জেনে ফেলে আমি এখানে,ও চলে আসবে।আমি চাই না আমার আর সাথীর মাঝে থার্ড পার্সোন আসুক।(আবারো চোখ টিপে বলি)
সাথী খুশি হয়ে বলে,
-নাহ,নাহ আসা লাগবে না।তুমি ফোনটা অফ করে ফেল ভাইয়া।।
তারপর আমাদের অনেকক্ষণ ঘুরাঘুরি হয়।অতঃপর,সন্ধের দিকে বাড়ি ফিরি।বাসায় আসতেই ভাইয়ার চিল্লাপাল্লার আওয়াজ শুনতে পাই।ভাইয়া হয়তো ব্যবসার কাজ সেরে বাড়ি চলে এসেছেন।
বাবা ভাইয়ার উপর রাগছেন। আমি বিষয়টি ভালোভাবে ক্লিয়ার হওয়ার জন্যে উনাদের সামনে আসি।
বাবা ভাইয়াকে বার বার একই কথা বলছেন,
-ওই মেয়ের এই বাড়িতে কোনো জায়গা নেই!!!নেক্সট বার ওই মেয়ের কথা তুই আমায় বলবি না!!
-বাবা,শিপ্রা ওরকম না!তোমাদের হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে।।শিপ্রা আমায় সব বলেছে ফোন করে,ও এসবের কিছুই জানে না।শিপ্রার সাথে আমার ১ বছর সম্পর্ক ছিল,আমি জানি ও কেমন মেয়ে।
ভাইয়ার কথায় আমার হট্ট হাসি দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।ওনার বউ ধোঁয়া তুলসী পাতা।হাহাহাহা।।
-ফাহাদ,তুই যদি ওই মেয়েটাকে ডিভোর্স না দিস,তাহলে তুই ওকে নিয়ে অন্যএে চলে যা।।
-বাবা,আবার ডিভোর্স !!?? কিসব বলছো তোমরা এসব!??
-বাবা সং হয়ে দাড়িয়ে অন্যদিক তাকিয়ে আছেন।বাবা খুবই কঠিন মনের মানুষ একবার যে ডিসিশন নেন,তা থেকে আর পিছপা হোননা। কাউকে একবার ঘৃণা করলে,তাকে সহজে গ্রহণ করেননা। এইসব কারণেই আজ পর্যন্ত বাবার সাথে আমার দূরত্ব। এখন এই দূরত্বটা ভাইয়ার সাথেও ঘটছে,আহা সে খুশিতে নাচতে ইচ্ছে হচ্ছে।।
আর আমি যদি এর ফাঁকে একটু মশলা না মিশাই,তাহলেতো আর জমিয়ে উঠবে না
-ভাইয়া?শুধু বাবা না?আমরাও দেখেছি।মাকে জিজ্ঞেস করো??
-আচ্ছা ঠিক আছে।আমি বিলিভ করবো যদি আমায় কোনো প্রমাণ দেখাতে পারিস!
-তুমি প্রমাণ দেখতে চাও??
-হুম!!
-আজ যখন সাথীকে নিয়ে বের হয়েছিলাম, তখন পথিমধ্যে নিদু আমার হাতে একটা মেমরি কার্ড ধরিয়ে দেয়। জিজ্ঞেস করলে বলে,
আপনারাতো আমায় বিলিভ করেন না,তাই এই ভিডিওতে সব প্রমাণ পাবেন।আশা করি ভুলভ্রান্তি কার সব ক্লিয়ার হবেন!!
সাথী কে জিজ্ঞেস করতে পারেন। ওর সামনেই আমার হাতে নিদু একটা মেমরি কার্ড দিয়েছিল।তাই নারে সাথী?(চোখ টিপে)
সাথী আমার দিকে তাকিয়ে থতমত খায়।আর ভাইয়ার ক্রুদ্ধতায় আমায় সেইভ করতে হ্যাঁ বলে।।
-তাহলে দেখা??
-ওয়েট,আমি সেটা তখনই বাসায় এসে আমার রুমে রেখে দিই।দাড়াও নিয়ে আসতেছি।।।
আমি রুমে এসে যে জায়গায় মেমরি কার্ডটা রেখেছিলাম সে জায়গাটা টুকতে থাকি।কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না!আচমকা হয়ে অস্থির হয়ে পড়ি!!!
-ব্যাপার কি!!এখান থেকে মেমরি কার্ডটি কোথায় উধাও হলো!?আমিতো এখানেই সুন্দরভাবে রেখে গিয়েছিলাম।
রাগে আলমারির দরজায় জোরে একটা লাথি মারি।।নিচে গিয়ে এখন ভাইয়াকে কি বলবো?ভাইয়া মা,বাবা এবং আমাকে মিথ্যাবাদী ভাববে। হায় আল্লাহ!!!কপালে কিছুক্ষণ হাত গুঁজে রাখি।নিচ থেকে আবার ডাক আসে আমার।।।
হতভম্বতার সহিত নেচে নামতে থাকি।মা,সাথী এবং আন্টি আমায় দেখে খুশির তালে চোখগুলো উনাদের ঝলঝল করে উঠে,এখন যেন কোনো আসামীকে দোষী সাব্যস্ত করে শান্তি পাবেন।
আমি ব্যর্থমনে নিচে নেমে বলি,
-ভাইয়া,মেমরি টা কোথায় যেন রেখেছি,খেয়াল নেই।ভালোভাবে খুঁজতে হবে।।দুঃখিত ভাইয়া!!
এ বলে নতজানু হয়ে থাকি।।
ভাইয়া দাঁত খিঁচে বলেন,
-সবাই মিথ্যে বলছো তোমরা!!আমার বউকে এই বাড়ি থেকে বিতাড়িত করার জন্যে তোমরা এমন ফন্দি আঁটছো!!!তোমাদের কারো কথা আমি বিলিভ করি না।জীবনে আমার এই একটাই দুঃখ,এই মাকে মা ডেকেও আজীবন আমায় সৎ ভেবে এসছেন।আগেই জানতাম,পরের ছেলে কখনোই আপন হয় না।।
আমি কথাগুলো শুনে হা হয়ে থাকি।ভাইয়া এসব কি বলছেন।মাকে ইঙ্গিত করে বলি,
-মা,ভাইয়া এসব কি বলছেন??!
বাবা কথা ঘুরানোর চেষ্টায় আমাদের ধমক দিয়ে উঠেন।।এই সবাই যার যার ঘরে যাও।আর কোনো অবজারভেশন শুনতে চাচ্ছি না!!
মা ভয়ে কাঁবু হয়ে আমায় বলেন,
-বাবা যা তোর রুমে চলে যা।।
আমার কেন জানি মন বলছে,সবাই আমার থেকে কিছু একটা লুকচ্ছে। যেটা মা,ভাইয়া,বাবা এবং আন্টি সবাই জানেন!!
চলবে…..