ভাবিনি ফিরে আসবে(পর্ব-০৭)
রোকসানা আক্তার
শিমলার কথায় জিনুকের কলটি রিসিভ করি।শিমলা পাশ থেকে বলে,
-শাওন,লাউড দে?লাউড দে?শুনি কি বলে জিনুক।
তারপর লাউড অপশন অন করি
–
–
-হ্যালো,জিনুক?
-হ্যালো আসসালামু -আলাইকুম ভাইয়া, কেমন আছেন??
-এই তো ভালো।তুমি কেমন আছো?
-জ্বী ভাইয়া,আলহামদুলিল্লাহ। ভাইয়া একটা কথা বলার জন্যে কল দিয়েছি।
-আচ্ছা,কি বলবে বলো?
-ভাইয়া সোহানার বিয়ে আগামী সপ্তাহের মধ্যে হবে।ওর হবু বরের কানাডায় যাওয়ার খুব তাড়া,তাই বিয়ের কাজটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেলবে।
-ওহ!!
-ভাইয়া আপনি মে বি হ্যাপী সোহানার বিয়েতে??
-এখানে দুঃখী হওয়ার কি আছে,বলো??
-ভাইয়া,আমি জানি, আপনি কথাগুলো খুব কষ্টের মাঝে বলতেছেন।তবে একটা কথা–যে বুঝতে চায়না, তাকে কখনো বুঝানো যায় না।ওকে কালও আস্ক করেছিলাম ও আপনার লাইফে ফিরবে কি না?য়ু-হু,ও ওর সিদ্ধান্তেই অটল।ও ওর হবু বরকেই বিয়ে করবে!!আর লাইফ কারো জন্যে থেমে থাকে না।মন খারাপ করবেন না।আজকে যার জন্যে কাঁদছেন,ক’দিন পর ওকে হারিয়ে হাসবেন। কারণ,বিধাতা আপনার লাইফে এরথেকেও ভালো কিছু রেখেছেন হয়তো।
পাশ থেকে শিমলাও জিনুকের কথায় সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে।আর মনে মনে বলে,
-রাইট বলছো জিনুক,একদম রাইট।আমি এ ত্যাড়াকে বুঝাতে পারছি না,তুমি একটু বুঝাও এই গাদাটাকে!!
-আচ্ছা বুঝলাম। আর কিছু বলবে জিনুক?
-নাহ,ভাইয়া।ভালো থাকবেন রাখি।আবার কথা হবে,বায়য়।
-বায়য়, জিনুক।
কলটা কাটার পরই শিমলার বকবকানি স্টার্ট!!
-দেখছিস?জিনুকের সাথে আমিও একমত!তুই-ই শালা শুধু দ্বিমত!আমিতো দোয়া করি সোহানার বিয়েটা ভালোয় ভালোয় শেষ হোক,তারপর তোর বিয়েটা সাথীর সাথে!!
ওর কথা শুনে আমার বড্ড হাসি পায়।
-এই তুই গর্দভের মতো হাসছিস কেনরে?
-তোর কথাশুনে হাসি আসে,তাই হাসলাম।
-আমি কি মন্দ কিছু বলছি নাকি?দেখ,আবার হাসে!!
-আচ্ছা শোন,এতদিন বলতাম সাথী একটা অবুঝ মেয়ে।আর এখনতো দেখি তুইও!তোকে ক্লাস ওয়ান-টু তে ভর্তি করিয়ে দেওয়া উচিত যাতে গোড়া থেকে প্রাইমারী জ্ঞান মাথায় ঢুকাতে পারিস।সাথী বাচ্চা একটা মেয়ে,ওর সাথে বার বার কেন আমার বিয়ের কথা বলিস!ওর কি এখনো বিয়ের বয়স হয়েছে?
-আরতো দেড়/২ বছর।পরেতো ১৮+ এ পা দিবে।সময় কখন উড়ে যাবে নিজেই হদিস করতে পারবি না। আমি আন্টির সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে যাচ্ছি।তুই থাক এখানে।
এ বলে শিমলা তরহর উঠে দাড়ায়!!আর পাগলের মতো বাড়ির দিকে ছুটে চলে।
-আরে দাড়া, দাড়া।পাগল একটা।মাথায় কখন কি আসে কি বলে ও নিজেই জানে না।
শিমলা আমার কথা অগ্রাহ্য করে ও ওর মতোই চলে গেল।মনটা কেন জানি আমার ভীষণ খারাপ!!মানুষ যখন ভীষণ আঘাত পায়,তখন চুপসে যায়।এখন আমার অবস্থাটাও তাই।মনকে কোনোমতে সায় দিতে না পেরে দোলনা থেকে উঠে দাড়ায়।বাড়ির চারপাশটা কিছুটা হেঁটে পুকুর পাড়ে গিয়ে একমগ্নে দাড়িয়ে থাকি।হঠাৎ করে পেছন থেকে কে যেন জড়োসড়ো একটা ধাক্কা লাগিয়ে দেয়।আমি কূল খুঁজে না পেয়ে পানির মধ্যে পড়ে যাই।আর ঘুরে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি সাথী খিলখিল করে হাঁসছে।আমার বুঝতে আর সময় লাগলো না যে এ কাজটি কে করেছে!
মুখটা কোনোরকমে দাঁড় করে নিই সাথীকে আচ্ছামত বকার জন্যে।যেই মুখতুলে কিছু বলতে যাবো,ওমনি সাথী ঝাঁপিয়ে আমার দিকে লাফ মারে।আমি তা দেখে ভয়ে কাবু। এ মেয়ের তো সাহস বেশ!!
আমায় বেখালি মনে ভেঁজাতে থাকে সাথী।আমি ছাড় দি নি,আমিও সাথীকে ভিজিয়ে দিই।এভাবে ভেজাভেজির খেলা অনেকক্ষণ চলে।একটা মুহূর্ত এসে সাথী ক্লান্ত হয়ে যায়।এই মুহূর্তে সাথীকে কেন জানি আমার ভীষণ ভালো লেগে যায়।ভেঁজা চুল,ক্লান্ত হাসি এবং ওর শরীরের প্রতিটি ভাঁজের অংশ আমার নজর কাড়ে।জামা ভেজা থাকার কারনে শরীরের সর্বাঙ্গ দেখা যাচ্ছে,তার উপর পাতলা জামা পরিহিত। আসলে,ওকে এখন একটা যুবতী মেয়ের মতো দেখা যাচ্ছে।
আমি যে ওরদিকে অন্যদৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছি, ওর ওসব দিকে একদম খেয়াল নেই।ও শুধু ওর মতে হেসেই যাচ্ছে,বেশ মানায় সাথী খিলখিলিয়ে হাসলে।
এভাবে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখগুলো ঝাপসা হয়ে আসে। ও এরইমধ্যে চোখে এককোষ পানি ছিটে আমাকে ধ্যানের ঘর থেকে বাহিরে নিয়ে আসে।আমার নিজেরই খেয়াল ছিল না, আমি যে এতক্ষণ নেশার ঘোরে ছিলাম।।নিজেকে অনেক কষ্টে সংযত রেখে বলি,
-সাথী?জ্বর আসবে তোর।ঘরে যা তাড়াতাড়ি।ভেজা জামাকাপড় চ্যান্জ করে নে।
-আচ্ছা ভাইয়া।
এ বলে সাথী চলে যায়।আমি আস্তে আস্তে পা ফেলে বাড়ির দিকে হাঁটতে থাকি এবং রুমে আসি।বাথরুম থেকে জামাকাপড় চ্যান্জ করে কোমরে একটা তোয়ালে পেঁচিয়ে নিই। হঠাৎ করে সাথী আমার রুমে এসে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।মুখে অনেকটা রাগান্বিত ভাব এনে বলি,
-এসব কেমন অসভ্যতা, সাথী?
-ভাইয়া,তুমি আমার সাথে কেন এরকম করো,বলোতো?আমি যে তোমায় কত্ত ভালোবাসি,সত্যি বলে বুঝাতে পারবো না।
-তোর এসব পাগলামো,সাথী।এসব এ বয়সে হয়, বোন।আর এমতাবস্থায় কেউ তোকে আমার রুমে দেখলে খারাপ ভাববে।
-ভাবলে ভাবুক গা,আমি তা পরোয়া করি না।আমি শুধু তোমাকে ভাবি, ভাইয়া।।
-সাথী ছাড়,বলছি!!?
-ছাড়বো না!
-সাথী?!!
এ বলে জোরে চিল্লিয়ে উঠি।আর তরতরিয়ে আমার কোমর থেকে হাতগুলে সরে যায়।আমি বুঝতে পারি,সাথী রাগ করে আমার রুম থেকে চলে গিয়েছে।
ওদিকে আর ভ্রুক্ষেপ না করে জামাকাপড় চ্যান্জ করে ফেলি।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের ফোল্ড ঠিক করতে করতে মাকে আমার রুমে প্রবেশ করতে দেখি।। মায়ের মুখে অনেকটা উৎসুক ভাব,হয়তো কিছু বলবেন।
-মা কিছু বলবে?(আয়নার সামনে দাড়িয়েই বলি)
-হু,বাবা।তোর সাথে কিছু কথা আছে।
-কি বলবে,বলো?
-ব-বাবা,আমাদের সাথীর ব্যাপারে বলতে চাচ্ছি।
আমি অনেকটা অবাক হয়ে মায়ের মুখের দিকে ঘুরে তাকাই। ভ্রু কুঁচকে বলি,
-সাথীর ব্যাপার মানে, আমার বিয়ের কথা বলতে চাচ্ছো?
-হু, বাবা।
আমার মুখে অনেকটা অর্থহীন হাসি চলে আসে।
-মা তুমিও শিমলার সাথে….
-নারে,বাবা। সাথী দেখতে ওতোটা খারাপ নয়।আর ও আমাদের আত্মীয়। সাথী তোকে যতটা বুঝবে,অন্যকেউ ততটা বুঝবে নারে।
-মা,আমিতো তা জানি!আর ওর এখনো বয়স হয়নি।তাছাড়া,আমিও এখন পাএ হিসেবে প্রস্তুত না!
আমার একথায় মায়ের মুখটা মলীন হয়ে যায়।
মলীনতা সুরে বলেন,
-তুই কি এই সংসারে আমার খারাপ চাচ্ছিস?বিয়ে-সাধি আল্লাহর উপর।মানুষ সমস্যায় পড়লে,পরিস্থিতিকে মানিয়ে নিতে হয়।সংসারের যে অবস্থা কখন কার উপর আক্রমণ হয়ে বসে বলা যায় না।তুই আমাকে একা রেখে ঢাকা চলে যাবি,কেউ দেখার মতো আমায় এ বাসায় নেই।বড় ছেলে থেকেও যেন হারিয়ে গেছে। আর বউমার কথা কি বলবো।
-মা আমার-না জানো?মাঝে মাঝ মনে হয় ফাহাদ ভাই আমার আপন ভাই না।কারন,কোনো রক্তের সম্পর্কের ভাই ভাইয়ের সাথে এরকমটি বিহেভ করতে পারে না!!
মা আমার কথা এড়িয়ে বলেন,
-এসব বাদ দে।এখন নিজের কথা ভাব।।সাথীকে যদি এই বাড়ির বউ করে নিয়ে আসিস,ও আমাকে মায়ের মতো শ্রদ্ধা,আদর,মায়া করবে।আমি ওকে পেলে পর মেয়ের কথা ভুলে যাবো,কারণ তখন আমি ভাববো আমারও একটা মেয়ে আছে।
আমি বুঝতে পারি মায়ের মনের আক্ষেপ!!তারপরও সম্ভব না আমার পক্ষে!!কি করবো,কাকে বুঝাবো মাথাটা যেন এখন গোবরে ভরা।
-মা,তুমি এখন যাও।তোমার সাথে আমি পরে কথা বলছি এ ব্যাপারে।মা চলে যাওয়ার পর আমি অনেকক্ষণ যাবৎ বিছানার উপর বসে থাকি।।
শিমলা একটা মেসেজ দেয় আমার ফোনে।
-তাড়াতাড়ি আমাদের রুমে আয় তো একটু??
আমি হতবাক!পাশের রুম থেকে আমায় মেসেজ করার কি এমন প্রয়োজন পড়লো!?একটা ডাক দিলেইতো হতো।
তারপর শিমলাদের রুমে যাই,দরজার সামনে দাড়িয়ে ওদের নাটক দেখতে থাকি।
সাথী তড়িঘড়ি জামাকাপড় গোছগাছ করছে আর ব্যাগে ঢুকচ্ছে।। মুখটায় গোমড়া ভাব দেখা যাচ্ছে।শিমলা বুঝাতে চাচ্ছে,কিছুতেই কর্ণপাত করছে না।এই পিচ্চি মেয়ের রাগ আমি আজ স্বচক্ষে প্রথম দেখলাম।তেলে-বেগুনে আগুন যেন এখনই আমাদের বাঘের মতো গিলে ফেলে।আমি শিমলাকে চোখ ইশারা করে চলে যেতে বলি।শিমলা রুম ত্যাগ করে।আমি রুমে ঢুকে দরজা হালকা ঠেলে দিয়ে সাথীর পাশে গিয়ে বসি।
-সাথী, সোনা,চলে যাবে??
আমার কথার উওর না দিয়ে নিজমগ্নে গোছগাছ করেই যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জামাকাপড় সব ব্যাগে তোলা শেষ।বিছানা থেকে দাড়িয়ে ব্যাগ হাতে নিয়ে অভিমুখে দরজার দিকে রওনা করতেই আমি হাতটা ধরে ফেলি।
-হাত ছাড়ো,আমার!কোন অধিকারে আমার হাত ধরেছ?
-তুই আমায় আগে এটা বল তুই চলে যাচ্ছিস কেন!কেউ কি তোকে তাড়িয়ে দিচ্ছো?
-বাড়ি যাওয়ার মানে জেনেও কথা ঘুরানোর চেষ্টা করো কেন, ভাইয়া!!
-আচ্ছা,আই এম স্যরি!আমি তোর সাথে খারাপ বিহেভ করে ফেলেছি!!
–
–
এখনো গোমড়ামুখ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবি?কথা বলবি না ভাইয়ার সাথে??
ওর থেকে সাড়াশব্দ না পেয়ে আমি আলতোভাবে ওর কোমরে স্পর্শ করি।আর কোমরে হাত রেখে আমার দিকে ঘুরিয়ে নিই,
-এই মেয়ে,এত অভিমান করলে হবে??ভাইয়ার তখন মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিল,তাই এমনটি করেছি।বললাম তো স্যরি!এখনো কি মাফ করবি না?
-ভাইয়া,তুমি সত্যিই কি আমায় ভালোবাসো না?
আমার ওর কথায় বিরক্তিভাব চলে আসে মনে।মেয়েটাকে যে কিভাবে বুঝাবো নিজেই জানি না
-আচ্ছা, শোন?তুই আমার ছোটবোন না?তোকে অবশ্যই ভালোবাসি।
-লাগবে না তোমার এমন ভালোবাসা!গেলাম!
আবার দরজার দিকে পা দিতেই আমি সাথীকে কোলে তুলে নিই।এবার কোলে তুলে কপালে চুমু লাগাতে থাকি।সাথী মেয়েটা ছোট বাচ্চা হলে কি হবে যেন ডানাকাটা পরী!
-লাগবে না তোমার আদর!আমি এ আদর চাই না!!
আচ্ছা শোন,তোর জন্যে কোণ আইসক্রিম আনতেছি।খাবি??
-সত্যি ভাইয়া!!?কোণ আইসক্রিম খাওয়াবা?
-হু।
আচ্ছা,তাড়াতাড়ি আমার জন্যে, শিমলা আপু জন্য দু’টো কোণ আইসক্রিম নিয়ে আসবা!
-ওকে,ছুটকী।
এ বলে ওকে কোল থেকে নামিয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে চলে আসি।
কোণ আইসক্রিম নিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়।চটি চটি পা পেলে গেস্ট রুমের দিকে আসতেই সোফায় বসা দেখতে পাই মাকে,বাবাকে,ভাইয়ার বউকে, শিমলার মা-বাবা এবং সাথীর মাকে! হঠাৎ করে আমাদের বাড়ি উনাদের আগমন-এর মানে বুঝলাম না।
আর হ্যাঁ,সাথীর অবশ্য বাবা নেই।সাথী ছোট থাকতে আঙ্কেল কার এক্সিডেন্টে মারা যান।সে থেকে সাথী একা হয়ে যায়।ভেতরে থাকলে তার মা,আর বাহিরে থাকলে আমরা এবং শিমলাদের ফ্যামিলি।
মা আমায় দেখে বলেন,
-ওই যে শাওন এসে পড়েছে।বাবা,এদিকে আয়।
আমি উনাদের সামনে গিয়ে সবাইকে সালাম করি।উনারা আমার সালামের জবাব নেন।সত্য কথা বলতে,আমি আসলে বড়দের সাথে কথা খুবই কম বলি।মার্জিত আচরণ যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই করি।এজন্য, আজ পর্যন্ত বড়দের সাথে আমার সখ্য মিলেনি।জানি না,কাকা-কাকির সাথে কিভাবে অনেকটা মিশুক হলাম।আমি অনেকটা ইতস্তত হয়ে মাকে উদ্দেশ্য করে বলি,
-মা,আইসক্রিম গুলো শিমলা এবং সাথীর হাতে দিয়ে আসছি,নাহলে গলে যাবে।
-আচ্ছা,যা বাবা।
আমি শিমলাদের রুমের দরজায় নক করি।
-শিমলা?আইসক্রিম গুলো নে।
শিমলা আইসক্রীম গুলো হাত থেকে নেয় এবং আমায় বলে উঠে,
-আমরা এখন চলে যাবো,শাওন।সবকিছু গোছগাছ করে ফেলেছি।
-হঠাৎ চলে যাবি মানে?!!
-সাথীর জন্যে।
-সাথীর আবার কি হয়েছে?
-সাথীকে এতদিন বিয়ে করার কথা তোকে কেন বলছি, জানিস?কারণ,সাথীকে এক ভক্ষণ থেকে বাঁচানোর জন্যে।কিন্তু তুই বার বার ওর বিয়ের বয়স হয়নি বলে পিছিয়ে গিয়েছিস।আর-কি,ও এখন অন্যের হয়ে যাবে তুইও হাফ ছেড়ে বাঁচবি।
-কি বলছিস,তুই এসব!?আমিতো কিছুই বুঝছি না!!
-এখন এসব বলার সময় নেই।সবাই নিচে অপেক্ষা করছে,বাসায় যেতে হবে।
শিমলা আমার কাছ থেকে চলে যায়।আমি রুমের দিকে একটা নজর দিই,সাথীকে কোথাও দেখতে পাইনা।হয়তো বেলকনিতে হবে।
বেলকনির দিকে হেঁটে গিয়ে দেখি সাথীর চোখদুটো পানিতে ঝলসানো,আর বার বার ফুঁপিয়ে যাচ্ছে সাথী
।
পাশে একটা চেয়ার টেনে বসি।আর ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলি,
-সাথী,কি হয়েছে ভাইয়াকে সব খুলে বল?
-ভাইয়া,আমি কি অন্যের হয়ে যাচ্ছি?তোমার বউ হওয়ার ভাগ্য আমার কপালেকি নেই, ভাইয়া?নাকি বাবা নেই বলে!
সাথীর কথায় আমার শরীরের লোমগুলো খাড়া হয়ে যায়।
-এসব কি বলছিস,সাথী?!
-নিদু ভাইয়া কেমন তুমিতো ভালো করেই জানো!
-নিদু আবারো তালবাহানা শুরু করেছে,সাথী??
সাথী আমার কথার ভ্রুক্ষেপ না করে বেলকনি ত্যাগ করে।
নিদু হলো এলাকার গুন্ডা-মাস্তানদের মধ্যে একজন।নিদুর বাবা আহনাস খিদ্দেরী অসহায় মানুষদের ঠকিয়ে দ্বিগুণ হারে চড়া সুদ হাতিয়ে নেয় এবং কারো দেনা পরিশোধ করতে দেরী হলে ছেলেকে দিয়ে উনাদের বস্ত-ভিটা বিক্রি করিয়ে দেন।
সাথীর বাবা মারা যাওয়ার আগে আহনাস খিদ্দেরী থেকে বাড়ি বন্ধক দিয়ে যান।আর বাড়ি বন্ধক দেওয়ার একটাই কারণ ছিল, তা হলো সাথীর বাবার চিকিৎসার খরচ বহনের জন্যে।উনার অনেক বড় হৃদরোগ হয়েছিল যেখানে লাখ লাখ টাকাও ব্যয় করে কোনো লাভ হয়নি।
আমি তখন অনেক ছোট ছিলাম,আর সাথী ছিল তার মায়ের পেটে। আজ পর্যন্ত দেনা পরিশোধ না করায় নিদুর চোখ পড়েছে সাথীর উপর!ও সাথীকে চায়,ওরা ওদের বন্ধকের টাকা ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছে না।তারপরও,৩ মাস আগে সাথীর মা নিদুকে কথা দিয়েছিল সুদসমেত সবটাকা পরিশোধ করে দিবে,তবুও ওই ভক্ষণের এখন টাকা চাই না,চাই শুধু সাথীকে।
আমি ঢাকা থাকতে এতকিছু মাথায় গাঁথি নি।মা বলতো,আর আমি হু-হা করে শুনতাম।তবে,ব্যাপারটা যে এতটাই ক্রিটিকাল হবে, এখন শুধু আমার হাত-পা কাঁপতেছে।
আমি তড়িঘড়ি নিচে নেমে আসি।আর সাথীর মাকে উদ্দেশ্য করে বলি,
-আন্টি , সাথীকে নিয়ে যাবেন না,ও আমাদের বাড়ি থাকুক।নিদুর সাথে আমি বুঝবো!!!
-বাবারে,নিদুকে তুমি চেননা।ওকে এতদিন বিভিন্ন বাহবা দিয়ে দমিয়ে রেখেছি।এখন ওর হিংস্র শক্তির কাছে আমার মেয়ের বলী হতে হবে।কিছুই করার নেই!!টাকা ছাড়া আমার মেয়ের জীবন রক্ষে নেই,আর এতগুলো টাকা আমার পক্ষে দেওয়া ও সম্ভব না!কেউ কি চায় কারো মেয়েকে কেউ জোর করে একটা কুলাঙ্গারের হাতে তুলে দিতে?বলো?কোনো মা-ই চায়না!!
সাথীর মা কাঁদতে কাঁদতে একথাগুলো বলেন।আর আমি ড্যারাচোখ দিয়ে বাবার দিকে তাকাই।
এ বাবার প্রতি কেন জানি ঘৃণা হয়।এতগুলো বছর নিজের কোনো অন্তরঙ্গ আত্মীয় দুর্দশায় পড়ে আছে,অথচ এই হৃদয়হীন বাবার টনক নড়ে না!এত্তটাকা থেকেও যদি মন না থাকে,তাহলে সে মানুষ না!!
আমার চোখের সামনে থেকে শিমলা,শিমলার মা-বাবা এবং সাথী,সাথীর মা চলে যায়।সাথী চলে যাওয়ার সময় কাঁদো মুখকরে একবার পেছন ঘুরে আমার দিকে তাকায়।
অবুঝের মতো চোখবুঁজে দাড়িয়ে আছি।কিছু বলতে যেয়েও পারছি না।।
আমার মাও কেঁদে যাচ্ছেন!!আর বলছেন,
-বাবা,সাথীকে বাঁচা বাবা।ওই বদমাশ সাথীর জীবনটাকে নষ্ট করে দিবে।
-শাওন সাথীকে বাঁচিয়ে কি লাভটা হবে,শুনি??(বাবা)
-মা চুপসে থাকেন।
-তুমি কি ভেবেছ আমি কিছুই জানি না!?তোমার ফকিন্নি মার্কা আত্মীয়-স্বজন নিজের মাথার উপর গেড়ে রাখো,আমার বংশের ধারেকাছেও যেন না ঘেঁষে!!আত্মীয় আছে আত্মীয়ই থাকবে!!আর যদি শাওন ঔ মেয়েকে বিয়ে করে,তাহলে ওর এ বাড়িতে কোনো জায়গা নেই।বলে দিলাম!!
বাবা ক্রুদ্ধ হয়ে চলে যান।মা মুখে কাপড়ের আঁচল গুঁজে সোফায় বসে কাঁদতে থাকেন।
কারণ,সাথীর মা আমার মায়ের খালাতো বোন।তাই,নিজের রক্তের জন্যে মায়া লাগাটাই স্বাভাবিক।
এরই মধ্যে বদ মহিলা আমার কাছে এসে ফিসফিস করে বলে,
-বাবার মনে সন্দেহের বীজ বুনা আমার কাজ।আর বিয়ে বন্ধ হবে তোমার!ভালো তোমাকে কখনোই থাকতে দিব না, মিস্টার শাওন!যদি না তুমি আমাকে খুশি পারো।তাহলে,তোমার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।
এ বলে উনি ওনার রুমে প্রস্থান করেন।আমি সং এর মতো দাড়িয়ে আছি।আমার ভাবনা শুধু সাথীকে নিয়েই।মেয়েটি এভাবে আমাদের আমাদের বাড়ি থেকে চলে গেল,ভাবতেই বুকের বাম পাঁজরটা ছ্যাৎ করে উঠে।সেই কোণ আইসক্রিম টি-টেবিলের উপরই পড়ে রইলো,আর মানুষগুলো চলে গেলো!!
চলবে…..