ভাবিনি ফিরে আসবে পর্ব-০৫

0
955

ভাবিনি ফিরে আসবে
পর্ব-০৫
রোকসানা আক্তার

-শাওন আমার কি মনে হয়, জানিস?তোকে ঔ শিপ্রা ভাবী আগ থেকেই চেনে।নাহলে, ব্রেকাপ এবং ফাহাদ ভাইকে পটিয়ে বিয়ে এসব নিয়ে ডাউট হচ্ছে ভীষণ!এমনও হতে পারে তোদের সম্পওি পাওয়ার লোভে এসব করছে উনি!
-হুম,ভাইয়াকে বিয়ে করা তারও একটা কারণ হতে পারে।
তবে,এখানে সম্পওির সাথে আমার ব্রেকাপের কি সম্পর্ক !

শিমলা হাই তুলতে তুলতে বলে,
-ফার্স্ট অল, উনি তোকে পছন্দ করেছে।দ্যান,বৃথা চেষ্টায় সেকেন্ড টার্গেট অন ফাহাদ ভাই এবং মিশনে এখন সফলও হয়েছে।

শিমলার থিংকিং-টি মোটেও মন্দ নয়।
-রাইট বলছিস, শিমলা।তবে, আম…….
আমি কিছু বলতে যেয়েও থেমে যাই।কারণ, আমাদের মধ্যকার কথোপকথন এতক্ষণে ভাইয়ার বউ দরজার সামনে দাড়িয়ে সবটা শুনতে পায়।উনি শিমলার কথায় পাল্টা জবাব ছুঁড়ে দিয়ে বলেন,

-আমি সম্পওির লোভে বিয়ে করেছি?আমি শাওনকে ভালোবাসি বিধায় ওদের মধ্যকার বাধা হয়ে দাড়িয়েছি?এতই নিচু ধারণা তোমাদের?

এসব বলে উনি খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠেন। উনার হাসির উচ্চ আওয়াজে পুরো রুম যেন থরথর করে কেঁপে উঠে।
হাসি থামিয়ে আবার বলেন,
-আমি ফাহাদকে বিয়ে করেছি এজন্য যে কারণ আমরা দু’জন-দুজনকে অনেক ভালোবাসি।ফাহাদের সাথে আমার রিলেশন ছিল শাওন ভার্সিটি এডমিট হওয়ার আগে থেকেই ।আর,আমার প্রাণের দেওরা পড়াশুনা অফ করে অন্যমেয়ের সাথে টাংকি-পাংকি মারবে, আমি তা দেখে হাত গুটিয়ে আঙ্গুল চুষবো?পরে রেজাল্ট দিবে,সিজিপিএ আসবে খারাপ।মা-বাবা এবং ফাহাদের ড্রিম গোল্লায় ছুটবে।ওকে জিজ্ঞেস করো, সোহানার সাথে ব্রেকাপ হওয়ার পর রেজাল্ট কি এসেছিল ওর?ও ফার্স্ট ক্লাস অর্জন করেছে।তাও আমার অবদানে।আর,এত কনট্রিবিউশনের জন্যে যদি তোমরা স্বার্থপরতা দেখাও,তাহলে আমার আর কি বলার আছে।বলো শিমলা?

এ বলে উনি ন্যাঁকা কান্না করে দেন!!ন্যাকা কান্নায় শিমলার মায়া হয়।
-ওহ,তাহলে এজন্যে?আমি আসলে ভাবী আপনাকে ভুল বুঝেছি।আই এম স্যরি ভাবী।আমি বুঝতে পারিনি।ক্ষমা করবেন।

শিমলার নতজানু ভঙ্গিটা দেখে আমার মাথা গরম হয়ে যায়।ও ডাইনীটার সব কথাই বিশ্বাস করে ফেলেছে!!
-আচ্ছা ভাবী আপনারা কথা বলুন আমি আসছি।আন্টি মনে হয় আমায় ডাকছেন।
এ বলে শিমলা তরহর করে চলে যায়।আমি অনেকটা ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে যাই!!দূর,সালা তেলা মাথায় তেল দেওয়ায় মনুষ্য জাতির রোগ!! শিমলাও শেষ পর্যন্ত তাই করলো।

শিমলা চলে যাওয়ার পর উনি আমার দিকে আড়নয়নে তাকান। একটা শতানী হাসি মুখে এঁটে ভ্রু কপালে উঁচে বলেন,
-কি কেমন খেললাম?বললাম না আমার বিরুদ্ধে যেও না,নাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে!!তুমি এখনো আমায় বোধহয় চেনো নি!

-আপনার মতো দু’টাকার মেয়েকে আমি সেই ৩ বছর আগেই চিনেছি।ট্রিকিবাজদের এই শাওন পরোয়া করে না,শাওন সত্যের কান্ডারী।কোনো মিথ্যেই এই শাওনকে টলাতে পারবে না!!
উনি আমার কথার জবাব না উল্টো আমার দিকে একপা একপা করে এগুতে থাকেন।
-দেখেন,ভালো হবে না কিন্তু!!আপনি মাএাতিরিক্ত অসদাচরণ করতেছেন! আপনি ভুলে যাচ্ছেন যে আপনি আপনার লিমিটেশন ক্রস করতেছেন!!

আমি এসব বলছি আর পিছু হটছি।পিছু হটতে হটতে একদম বেলকনির গ্রিলে ঘেঁষে যাই।না পারছি পেছনে যেতে, আর না পারছি সামনে হাঁটতে।
উনি ফকফক তাকিয়ে একদম আমার কাছে চলে আসেন। সড়াৎ করে বেলকনির দরজাটা বন্ধ করে দেন। আমি আচমকা হয়ে মুখতুলে কিছু বলতে গেলে উনি ওমনিই টপকে আমার মুখ চেপে ধরেন!হাতের আঙ্গুলের ডগা দিয়ে আমার মুখ হতে বুক পর্যন্ত আলতোভাবে স্পর্শ করেন।

-এত কথা বলো কেন,শাওন?আমাকে তোমার ভালো লাগে না?কিন্তু তোমাকে দেখলে আমি আমার পথের দিশা হারিয়ে ফেলি!সবকিছু যেন আমার উলটপালট হয়ে যায়।আর একবার তোমার স্পর্শের ছোঁয়া পেতে চাচ্ছি।প্রথমটি ছিল জোরপূর্বক, কিন্তু এবার হবে স্বইচ্ছে।আর যদি না মানো,তাহলেতো জানোই সোহানাকে যেভাবে হারিয়েছ,ঠিক সেইম এখন সেভাবে নিজের মান-ইজ্জত হারাবে সোনা।যদি ভিডিওটি ভাইরাল করে দিই!তখন ভাবো একবার, সমাজে মুখ দেখাবে কি করে।সবাই মুখতুলে বলবে,দেওরা ভাবীর সাথে জোর করে এসব করেছে।ছিঃ,কলঙ্কিত হবে তুমি আমি নই!তুমি এবং আমি জানি এই ভিডিওটি আমার বিয়ের আগের!!আর ভাইরাল করবো বিয়ের পরের বলে।হিহিহিহি
উনি আবার খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠে।আমার সারা শরীরের লোম খাড়া হয়ে যায়।চোখ বুঁজে সহ্য করে নিই,কিন্তু নিজেকে মানাতে পারছি না।টলটল করে চোখ দিয়ে পানির স্রোত বের হতে থাকে।শূন্যে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছি আর থমকে ঔ মহিলার কথা শুনে যাচ্ছি।
-না সোনা, কেঁদো না।তুমি কাঁদলে আমি ভীষণ আঘাত পাই।আঘাতটা যেনো এই বুকের মাঝ বরাবর চিনচিন করে ওঠে। আর, নেক্সট সম্মতি দিলে বাংলোর ভাগটাও নিবো না।ওটা তোমার মায়েরই থাকবে।আমার শুধু একটাই চাওয়া তোমাকে আর একবার কাছে পেতে।

-আপনি কি এখান থেকে যাবেন?প্লিজজ!!আই ওয়ান্ট টু লিভ এলোন।আমি আর নিতে পারছি না!!!

-আমি জানি সোনা তুমি বাধ্য।কিন্তু কি করবে বলো এছাড়া তোমার যে আর উপায় নেই।
-আপনি সব আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে করেছেন।আপনি ক’দিন মিথ্যেকে সত্য বলে উপস্থাপন করবেন!?এক দিন,দু’দিন,তিন দিন!কিন্তু সত্যের জয়,মিথ্যের পরাজয়!!ছাড়ুন বলছি!

এক জাটকায় উনাকে সরিয়ে দিই এবং বেলকনির দরজা খুলে রুম থেকে চলে আসি।ঘর থেকে বের হয়ে দোলনায় একমগ্নে বসে দোল খাচ্ছি আর কান্না করছি।বুক ঢুকরে কান্না আসছে আমার।হুট করে সাথী এসে আমার পাশে বসে,আর আমায় জড়িয়ে ধরে বলে,
-ভাইয়া,মন খারাপ?
তড়িঘড়ি চোখের পানি মুছে নিই।আর মুখে মৃদু হাঁসি টেনে বলি,
-চোখে বোধহয় কি যেন পড়েছে।আচ্ছা দেখতো চোখের ভেতর কিছু দেখতে পাচ্ছিস কিনা।
সাথীর দিকে চোখটা এগিয়ে দিই।সাথী আলতো হাতে আমার চোখ দেখতে থাকে।সাথীর ছোঁয়ায় আমার মনে এক অজানা শিহরণ জাগে।ইচ্ছে করে সাথীকে এই দুঃসময়ে জড়িয়ে ধরে বলি সাথী আমি একা,সত্যি আমি আজ বড় একা।কাউকে কিছু বলতে পারছি না সাথী!তুই আমায় বিশ্বাস করবি,বল?ভুল বুঝবি নাতো?

মনের ভাবনার কথাগুলো চোখগুলোকে ঝাপসা করে দেয়।
-ভাইয়া তোমার চোখে একদানা ধলোবালির ছিটেও নেই।তোমার নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে।তোমার মুখ না বললেও তোমার চোখ বলছে।প্লিজজ আমাকে বলো না ভাইয়া কি হয়েছে তোমার?
-স-সাথী?
এ বলে ওকে জড়িয়ে ধরি।সাথীও আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর মাখায়।
-আমিতো ভাবছি সাথী তুই চলে গেছিস।বাসায় আসার পর তোকে একবারও দেখিনি।
-আমি যাইনি ভাইয়া।আমি রুমেই ছিলাম।আমি শুধু তোমার অপেক্ষাই করেছিলাম তুমি কখন আসবে।তুমি যাওয়ার সময় আমাকে বলে যাও নি।জানো?আমি খুব কষ্ট পেয়েছি।
-এখন আসছি না ছুটকী?
এ বলে ওর কপালে একটা চুমু লাগাই। সাথী আমায় আরো কাছে টেনে বলে,
-ভাইয়া,আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালেবাসি।

এরইমধ্যে শিমলা এসে গলা ঝাড়ে।
-ভালেবাসা মাখামাখি একটু বেশি হয়ে যাচ্ছেতো?
আমার ধ্যান ভাঙ্গতেই লজ্জা পেয়ে যাই এবং সাথীও।লাজুকতা মুখে বলি,
-ও আমার ছোটবোন।ছোটবোনকে আদর করতে সমস্যা কোথায়?.
-তুমি আমায় ভালোবাসো না, ভাইয়া?এই আরি!!তোমাদের কারো সাথে আর কথা বলবো না,গেলাম।
সাথী বেজার মুখটা করে চলে যায়।

আমি হালকা মুঁচকি হেঁসে মাথা নেড়ে বলি,
-পাগলী একটা!দেখছিস?এখনও কত অবুজ?আর তুই বলছিস আমি এর সাথে প্রেম করতে?
-ক’দিন পর তুই নিজেই ওর প্রেমে পড়বি।প্রমিজ করলাম।

বেকার একটা হাসি দিয়ে উঠি।।
-তুইতো আমার তেলা মাথায় তেল দিছিস!সো, আমার এখানে কেন! যা ওই ডাইনীর সাথে গিয়ে তাল মিলা?
-এখানে এসেছি একটা গুপ্ত জিনিস নিয়ে।
এ বলে শিমলা হাতের মোবাইলের দিলে ইঙ্গিত করে।
-তো মোবাইলে কি এমন গুপ্ত জিনিস আছে,শুনি?
-ওয়েট দেখাচ্ছি।
শিমলা আমার পাশে এসে বসে এবং মোবাইল রেকর্ডিং এ ঢুকে।আর রেকর্ড লিস্টগুলো চেক করতে করতে হতাশ হয়ে যায়।
-শিমলা,এনিথিং রং?
-শাওন,এখানেতো কোনো কথা রেকর্ড হয়নি।রেকর্ড টাতো আমি সেইভ করেছিলাম।।তাও ৪০ সেকেন্ডের রেকর্ড মাএ শব্দ/কথাহীন!এটা কি করে সম্ভব!?। কেউ কি রেকর্ডটা ডিলিট করে আমাদের বোকা বানালো নাতো?পরে,আবার রেকর্ড অন করে চলে যায় যাতে আমরা সন্দেহ না করতে পারি।
শিমলা এসব বলে হাম্ভীতাম্ভী করতে থাকে।
-আমি বুঝতেছি না কিসের রেকর্ডের কথা বলছিস তুই?
-তোর ভাবীকে সাপোর্ট করা আমার একটাই কারণ ছিল,তা হলো উনার আসল চেহারাটা উন্মোচিত করা!তাই উনাকে একটু উসকে দিয়ে আন্টির বাহানা দিয়ে রুম থেকে চলে আসি।যাতে উনি খুশি হয়ে তোকে আরো অনেক কিছু বলে।তোর রুম থেকে বের হওয়ার আগে রেকর্ড অপশন অন করে যাই।কিন্তু এখন ৪০ সেকেন্ডের একটা রেকর্ড দেখতেছি শব্দহীন।

-উফস!!মিশন ফেইলড!আমি রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরও ওই ডাইনীটা আমার রুমে ছিল।আর তুই আমার রুমে ব্যাক করতে ৪০ সেকেন্ত লেট করিস!ডাইনীটা হয়তো রেকর্ড অন দেখে ফেলে,এই সুযোগে ডিলিট দিয়ে রেকর্ডিং আবার অন করে।
এরইমধ্যে ৪০ সেকেন্ড রেকর্ড সেইভ হয়ে যায়।
।তুই ডাইনীটাকে চিনিস না শিমলা ও অনেক চাটুকার!

-দেখো নিব,এই ডাইনী আমার থেকেও বেশি চাটুকার কি’না!আসল মুখোশ খুলে দিতে সময় লাগবে না।এখন শুধু একটু অপেক্ষা শাওন।
-শিমলা আমি তোকে আজ কিছু সত্য কথা বলতে চাই।আমি সব চাপা রেখে তিলে তিলে পুড়ে যাচ্ছি।বিশ্বাস কর এখন শুধু পাগল হওয়াটা বাকি।

-আচ্ছা সব বল।আমাকে তুই ক্লিয়ার করে আজও কিছুই বলিস নি।এখন বলবি,আর কোনো অজুহাত দেখতে চাই না।
-আচ্ছা।তাহলে শোন,
আমি যখন নতুন ভার্সিটি এডমিট হই,তখন খুবই শান্ত ছিলাম। কারো সাথে ওতোটা মিশতাম না।ভার্সিটিতে আমার চলা-ফেরার ভাবভঙ্গি, এটিটিউড,স্টাডি সবাইকে আকর্ষণ করে।এতে অনেকেই আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে হাত বাড়ায়।।খুশিমনে ওদের বন্ধুত্ব একসেপ্ট করি। শুরু হয় ভার্সিটি লাইফের সুমধুর দিনগুলোর মুহূর্ত। ভার্সিটিতে কখনো নতুন কোনো মেয়ে ভর্তি আসলে সিরিয়াল বাই সিরিয়াল ওদের প্রপোজাল শুরু হতো,আর যারা একসেপ্ট করতো ওদের সাথে টাইমপাস রিলেশন শুরু করে দিত পাজিগুলা।তা দেখে আমরাও আনন্দ পেতাম। তবে ওসব নিয়ে আমার মন তখন উৎসুক ছিল না।দিবানির প্রপোজাল রিজেক্টের মুহূর্তটা মনকে একটু হলেও ব্যথিত করতো।

-তুই তো ওকে পাওাই দেসনি।এখন এসব বলে লাভ নেই।তবে,যাই বলিস শাওন মেয়েটা তোর জন্যে অনেক পাগল ছিল রে।আর,লাস্ট কবে যেন দিবানির সাথে তোর দেখা হয়েছিল?

-ভার্সিটি তে ভর্তি হওয়ার আগে!!!আমার এখনো মনে আছে জানিস?দিবানি যখন লাস্টবার আমার হ্যা/না উওর শুনতে এসেছিল। আমার উওরে নিরাশ হয়ে কাঁদতে কাঁদতে চলে গিয়েছিল,সেদিন আমিও খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।কারণ, দিবানিকে সরাসরি রিজেক্ট করা উচিত হয়নি।আস্তে আস্তে বুঝানো উচিত ছিল।

-রাইট!!তবে,সেদিনের পর থেকে দিবানির আর খোঁজ পাস নি,না?
-নাহ!!
-শিমলা?নাকি আমি দিবানির মনে কষ্ট দেওয়াতে আজ নিজেই তার ফল ভোগ করছি? কারো মনে কষ্ট দেওয়া ঠিক নারে!
-নাহ,নাহ এসব কেমন কথা বলছিস!তুই যখন ওকে ভালোবেসে ছ্যাকা দিতি,তাহলে একটা কথা ছিল।তবে,ওর প্রতি তোরতো ফিলিংসই ছিল না।।আর হ্যাঁ এটাই একপাক্ষিক ভালোবাসা।আর একপাক্ষিক ভালোবাসায় কখনো রিলেশন হয়না।

-তোকে আমি পৃথুলীর ব্যাপারেও কিছু বলবো,আগে পৃথুলীটা কে ভালোভাবে জেনে নিই!!

-পৃথুলী….শিপ্রা ভাবীর খালাতো বোনের কথা বলতেছিস যে বিয়ের সময় এসেছিল?
-হু।
-ওর সাথে আবার কি?(ভ্রু কুঁচকে বলে শিমলা)
-দিবানির সাথে পৃথুলীর সম্পর্ক , আর পৃথুলীর সাথে শিপ্রা ডাইনীর সম্পর্ক!!

-মানে??
-বুঝতেছি না।সব মাকড়সার ঝালে বন্ধি।

-আমি তোর কথা কিছুই বুঝতেছি না।কি বলছিস সব?

-বুঝবি,সবই বুঝবি পরে। তবে আমায় একটু সময় দে।,আমার মন বলছে সম্পূর্ণ ড্রামাটাই দিবানিকে ঘিরে যেটার ফলা ফলছে শিপ্রা!!

-সবকিছু কেন জানি এলোমেলো লাগতেছে!!আচ্ছা,এত্ত প্যাঁচাল শুনি না।যেখান থেকে শুরু করছিস ওখান থেকে বল।(শিমলা)

-পরে,১ বছর এভাবে বন্ধুদের সাথে সময় কাটে।ততদিনে আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই ডাবল,আর আমিই একমাএ ব্যক্তি যে ছিলম সিঙ্গেল।তার ৩ মাস পর সোহানা নামে কোনো মেয়ের ভার্সিটিতে প্রথম আগমন ঘটে।তাকে দেখে সবাই ক্রাশ খায়,এতটাই সুন্দর ছিল সে।।আমারও একটু একটু ভালো লেগেছিল, জাস্ট চোখের দেখা ভালেলাগা তবে ভালোবাসা নয়।সোহানার প্রতি ক্রাশ খাওয়া ছেলেরা ছ্যাকা খেয়ে বসে ওদের গার্লফ্রেন্ডের থেকে।ব্যাপারটা খুবই মজাদার ছিল।তারপরও সোহানাকে পেল না,কারণ সোহানা ছিল খুবই দাম্ভিক মেয়ে,যেই ছেলে তার কাছে গোলাপ নিয়ে যেত সবাই ব্যথার চোটে গাল ঢোলতে ঢোলতে শূন্য হাতে ফিরে আসতো।
তা দেখে আমরা খিলখিলিয়ে হাসতাম

অতঃপর,আমার ফ্রেন্ডরা আমার কাঁধে হাত দিয়ে বলে,
-দোস?এবার তুই একটু ট্রাই কর মেয়েটাকে পটাতে পারস কি না।আমরা ডাবল হয়েতো প্রপোজ করলাম,আর তুই সিঙ্গেল হয়ে করবি।দেখি তোর কপালে কি লিখন!!

আরেকটা ফ্রেন্ড বলে উঠে,
-ভার্সিটির ভিপি পটাতে পারে নি,আর এই ছ্যাংরা পারবে?হা হা হা হা।এত আকাশ কুসুম কল্পনা,কিছুতেই ভাবা যায় না।
ওর সাথে সবাই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।আমার প্রচন্ড রকম একটা জেদ হয়।সেদিন দাঁত কামড়ে ওদের বলি,
-আমি করবো প্রপোজ।তবে বাজি লাগাতে হবে।ও যদি আমার প্রপোজ একসেপ্ট করে,তাহলে তোরা সবাই আমাকে ৫ হাজার টাকা দিবি।আর যদি গ্রহণ না করে,তাহলে তোরা আমায় সবার সামনে কান ধরাবি!!

সবাই অনেকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তারপরও উপহাস করে বলে, আচ্ছা আচ্ছা আমরা রাজি।
পরদিন ভার্সিটিতে সবার সামনে সোহানাকে প্রপোজ করি।সোহানা আমার আপাদমস্তক একনজ দেখে নিয়ে গোমড় হয়ে তাঁকিয়ে থাকে।

ক্যাম্পাসের চারপাশে সবাই দাড়িয়ে ভেবেই নেয় যে সোহানা আমায় ভালোবাসবে না।
যেই দেখি সোহানা হ্যা ও বলছে না এবং না ও বলছে না,আমি মাথাটা নিচু করে অপোজিটে ঘুরে আসতেই সোহানর ডাক পড়ে,
-আরেহ,কোথায় যাচ্ছেন? দাড়ান!আমিতো এতদিন আপনাকেই চেয়েছিলাম।

আমি তখন যতই না খুশি,তারচেয়ে বেশি অবাক।ও আমার হাত থেকে হাসিমুখে গোলাপটা গ্রহণ করে।আর জড়োসড়ো সবার হাতের তালি বেজে উঠে।খুশিতে সেদিন আমার নাচতে ইচ্ছে হয়েছিল।

বাজি ধরা বন্ধুদের দিকে আড়নয়নে তাকাই।তারা বুকের কিনার হাত দিয়ে উইন ইঙ্গিত করে।।।
তারপর থেকে সোহানার চলে আমার প্রতি অগাধ প্রেম আর আমার চলে কৃএিম ভালোবাসা।হয়তো,সোহানার মনে তা অবিদিত।

ভার্সিটি গেলে ৮/৯ ঘন্টাই সোহানার সাথে কাটতো।আর,তখন বন্ধুদেরও ওতো সময় দেওয়া হতো না।

হঠাৎ একদিন হৃদয় এসে বলে,
-দোস,চল?আমরা আজ একজায়গায় যাবো।রাফাজ বলেছিল আজ ওখানে যেতেই যেতে,ডোন্ট মিস।আমাদের জন্যে নাকি সারপ্রাইজ আছে!!

-কিসের সারপ্রাইজ রে?
-আরে বাবা,গেলেইতে বুঝবি।সারপ্রাইজ কি কেউ বলে দেয় নাকি?
-জানি সেটা। আচ্ছা যাবো।

সন্ধের পর হৃদয়ের সাথে হাঁটা ধরি সারপ্রাইজের আাশায়।
হৃদয় আমায় একটা পার্টিতে নিয়ে যায় যেখানে নাচানাচি , ড্রিংক,আড্ডা, মজামাস্তিতে মর্ত সবাই।সব থেকে দুঃখজনক বিষয় হলো, আমার ফ্রেন্ড সার্কেলের সবগুলোই এখানে উপস্থিত। তারা মেয়েদের সাথে নাচানাচির তালে ড্রিংক!! আমি ওখান থেকে ফিরে আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু রাফাজ,হৃদয় এবং অনেকে আমায় জোর করে রেখে দিয়েছিল।
এখানে নাকি ওদের একটা গ্যাঙ্গ আছে! যে গ্যাঙ্গের প্রধান পরিচালকের সাথে আমায় পরিচয় হয়ে পার্টি থেকে বিদেয় নিতাম।

আমি অনেকক্ষণ যাবৎ একটা সোফায় বসে থাকি গ্যাঙ্গ পরিচালকের সাথে সাক্ষাৎ করে হোস্টেলে ফিরবো বলে।এর ফাঁকে অনেকে আমায় ড্রিংকের অফার করে,আমি খুশিমনে৷ ফিরিয়ে দিই।

হুট করে ওদের গ্যাঙ্গের প্রধান আমার সামনে এসে হাত বাড়িয়ে বসতে বসতে বলে,
-আমাদের এই পার্টিতে তোমাকে স্বাগতম!
আমি গ্যাঙ্গের প্রধানকে তখন চিনতাম না।তাই হাসিমুখে হ্যান্ডশেক টাও ফিরিয়ে দিই।উনি হয়তো অনেকটা আমার প্রতি অনুতপ্ত হয়ে যান এবং কলিজার কোণে ক্রোধটাকে ঝাঝালে করতে থাকেন।

কারণ,কোনো মহিলা এধরনের গ্যাঙ্গ নিয়ে মজামাস্তিতে লিপ্ত আমি তা মোটেও পছন্দ করিনা।আর জানিস,এই গ্যাঙ্গের প্রধান কে ছিল?

-কে?

-শিপ্রা আপু!!বর্তমান আমাদের ভাবী!!!

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে