ভবঘুরে পর্বঃ০৫
লেখাঃ আরিফুর রহমান মিনহাজ
প্রাণে বাঁচতে যন্ত্রের মতো অবিরত চেঁচিয়ে চলেছে মেয়েটা। পা দুটো তিড়িংবিড়িং করে সামনে-পেছনে ঝাঁকিয়ে আশেপাশের ডালপালা ছোঁয়ার চেষ্টা করছে। নিমেষে আবিদের ঘুমে ঢুলুঢুলু সর্বাঙ্গসমেত পঞ্চইন্দ্রীয় সচেতন হয়ে উঠল। অসংবৃত বিক্ষিপ্ত পায়ে সেই মুহূর্তেই একদাপটে বাগানের দিকে ছুটল সে।এই সাত-সকালে মেয়েটা আমগাছে ঝুলতে গেল কোন্ দুঃখে কে জানে! বাঁদড় হবার শখে যে শিরে সংক্রান্তি সেটা সে জানে না? দ্রুত তাকে গাছ থেকে অবতারণ করে বিগত দিনের সকল হিসাব এক চাপড়ে চুকিয়ে নেয়া যাবে। মনে মনে এই কূটবুদ্ধি আঁটল আবিদ। মিনিট দেড় বুনো মোষের মতোন নাঙ্গা পায়ে থপথপ করে দৌড়ার পর অকুস্থলে এসে পৌঁছাল আবিদ। মূল ঘটনা হৃদয়ঙ্গম করতে উপরে কপাল ভাঁজ করে মুখ হাঁ করে তাকাল সে। মেয়েটার পরনে ঢিলেঢালা রাত্রীকালীন ঘুমানোর পোশাক এখনো। জবড়ে খোলা চুলগুলো কিছু সামনে এবং কিছু পিছনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। আচম্বিতে মেয়েটা মুখ ঝামটে বলে উঠল,
– এতক্ষণ লাগে আসতে?দেখেন না মরে যাচ্ছি?
আবিদের মুখখানা দ্বিগুণ হাঁ হয়ে গেল আপন্ন মেয়েটার কথা শুনে। এই অবস্থায়ও কেউ এভাবে ঝগড়াটে স্বরে কথা বলতে পারে? সে কি এখনো ঘুমিয়ে? দুঃস্বপ্ন নামে কোনো সুস্বপ্ন দেখছে না তো সে? আশ মিটিয়ে চোখ রগড়ে সে নিজেকে কোনোপ্রকারে সামলে নিয়ে বলল,
– আপনি লাফ দিন, আমি আপনাকে ধরব।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
উরবি হাউমাউ করে চেঁচিয়ে পা দু’টো জোরেসোরে নেড়ে একটা অশ্রাব্য গালি দিয়ে বসল আবিদকে। সেই গালি লেখা কঠিন। কিন্তু উরবির নিটোল অঙ্গভঙ্গি মনে হলো যেন পা দু’টো দিয়ে আবিদকে পদাঘাত করে ত্রিসীমার বাইরে নিপতিত করবে এক্ষুনি। আবিদ কোমল গলায় বলল,
– গালাগালি করছেন কেন? আমি কি খারাপ কিছু বললাম?
উরবি আগের মতোই কাঁদুনে গলায় উচ্চরবে চেঁচাল,
– আমি লাফ দিলে আপনি চ্যাপ্টা হয়ে যাবেন। আপনি গাছে ওঠেন, আমাকে নামান তাড়াতাড়ি। আমার কাঁধ ব্যাথা করতেছে খুব।
আবিদ নির্বোধের মতোন দাড়ি চুলকে ইতস্তত করতে লাগল। উরবি এবার আস্ফালন করে উঠল,
– উঠবেন নাকি মুতে দিব মাথার ওপর?
কথাটা বলে ফেলে বোধহয় লজ্জা রাখঢাক করতে স্বীয় বাবার শরণাপন্ন হল,
– আব্বা… বাবা… তোমার মেয়ে গাছে ঝুলে মরে যাচ্ছে আর তুমি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছ?
আবিদ আর সময় তা-না-না করল না। বোঝাই যাচ্ছে মেয়েটার কষ্ট হচ্ছে। মানুষের স্বভাবভেদে দুঃখ- কষ্ট প্রকাশের ভঙ্গিও আলাদা হয়। এই মেয়ে গাছ থেকে পড়ে হা-পা দুমড়ানোর উপক্রম হলেও তার মাঝে নমনীয়তা আসবে না। বরং যত রঙবেরঙের অশ্লীল গালি আর কাজকর্ম আছে সব পেট থেকে উখড়াবে একে একে। কাজেই কালবিলম্ব না করে সে দ্রুত গাছে চড়তে উদ্যত হল। বিশাল হৃষ্টপুষ্ট আমগাছটার পেট আঁকড়ে ধরতে বেশ কসরত করতে হলো তাকে। আস্তে-ধীরে বেয়ে বেয়ে উঠে মগডালের নিচের একটা ডানে প্রসারিত ডালে এগোল সে। মেয়েটা এই ডালেই ঝুলে আছে। উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে আবিদ সেখানের পৌঁছানোর অপেক্ষায়। কি আশ্চর্য!মেয়েটা না কাঁদছিল? কিন্তু তার চোখে পানি কই? অল্প সময়ে তীক্ষ্ণ চোখে গহন নিরীক্ষণেও একরত্তি পানি দেখতে পেল না আবিদ। আরো একটু এগোল সে। এই ডালটা আদতেই ভীষণ নাজুক। অকস্মাৎ আবিদের ভারী শরীরের প্রাদুর্ভাবে একটু ঝুঁকে গেল নিচের দিকে। মেয়েটা স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে চেঁচাল,
-‘ পরে যাচ্ছি, পরে যাচ্ছি।
আবিদ বিরক্তিভরে বলল,
– আহা পড়বেন না। আমি আর এগোচ্ছি না। আপনি ওপরের দিকে হাতটা বাড়ান।’ বলে একহাতে গাছের মোটা শাখা আঁকড়ে অপর হাত বাড়িয়ে দিল উরবির দিকে।
উরবি ম্লানবদনে অবিশ্বাসী দৃষ্টিতে তাকাল কয়েক সেকেন্ড। বুঝতে পেরে আবিদ দু-চোখ বুজে ছোট করে আশ্বাসবাণী দিল,
– বিশ্বাস রাখুন।
উরবি ধীরেধীরে এক হাত ডাল থেকে ছাড়িয়ে আবিদের বাড়িয়ে দেয়া হাতে সঁপে দিল নিজের হাত। আবিদ শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করল হাতটা। বলল,
– ঐ হাতটা ডাল থেকে ছেড়ে দিন এবার।
উরবি পোষ মানা পাখির মতো শুনল কথাটা। তদ্দণ্ডেই শূন্যে ঝুলে গিয়ে একটু ভূতল পানে ঝুঁকল সে। সঙ্গে সঙ্গে নিচের দিকে তাকিয়ে গলা দিয়ে একটা ক্ষীণ ভীতিকর শব্দ বেরোল তার। দুইহাতে আবিদের দোর্দণ্ড জাপটে ধরল সে। আবিদ নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে উপরে টেনে উরবিকে নিজস্ব আয়ত্তে নিয়ে এলো খুব সহজে। তারপর সেই ডাল থেকে নিরাপদ শক্তপোক্ত একটা ডালে সরে এসে শঙ্কামুক্ত হয়ে দাঁড়াল দু’জনে। এতক্ষণ ত্রাহি ত্রাহি করা উরবির মুখে রা নেই এখন। তার নাকে-মুখে নিশ্বাস উদ্গত হচ্ছে ফোঁস ফোঁস করে। দু’হাতে আবিদের বিশাল দেহ জাপটে ধরে তন্বী শরীরটা এলিয়ে দিয়েছে আবিদের হাতে। আধফোটা স্নিগ্ধ গোলাপের পাপড়িগুলো যেভাবে একটার ওপর অন্যটি জড়াজড়ি করে রয় ঠিক সেভাবে আবিদের গায়ের সঙ্গে একেবারে লেপ্টে রয়েছে উরবি। এতক্ষণ পরে থরথর করে কাঁপন ধরেছে তার গায়ে। চোখ দিয়ে নেমেছে দুটি সরু জলের ফোয়ারা। বুকের ভেতর হৃৎপিণ্ডটা আতঙ্কে লাফাচ্ছে ঢিপঢিপ করে। মুখ দিয়ে সে অস্ফুটে শব্দ করল,
-থ্যাংক্স
আবিদ চুপ করে রইল। প্রকৃতিস্থ হতে দিল উরবিকে। মিনিট দুই পর যখন উরবির কোনো ভাবান্তর ঘটল না,তখন আবিদ একটু কঠিন হয়ে বলল,
-‘অনেক হয়েছে নিচে নামতে হবে এবার।’
উরবি যেন এবার নির্মোক পাল্টাল। ত্যাড়া গলায় বলল,
-‘ গাছের আগায় আপনার সঙ্গে ঘর বাঁধার ইচ্ছে নাই আমার। চলুন, নামান তাড়াতাড়ি।
আবিদ গাল উঁচু করে হাসল একবার। বলল,
– এখন তো নিজেই নামতে পারেন। আমার জন্য বসে আছেন কেন?
উরবির পিত্তি জ্বলে উঠল লোকটার কথার ধরণ দেখে। তবু বিচক্ষণতার সাথে নিজেকে প্রগল্ভ মনকে বুঝাল সে। এই মুহূর্তে রাগ দেখালে ভীষণ বিপদ। লোকটাও কম ত্যাঁদড় নয়। কাজেই, শান্ত মেজাজে কথা বলা শ্রেয়। উরবির মন শাসন মানল।
– আমি পারব না। আমার হাত আর কাঁধ ব্যথা করতেছে খুব।
আবিদ নামতে উন্মুখ হয়ে নিচের একটা ডালে পা রেখে বলল,
– কি রাজ্য কাজ উদ্ধার করতে গাছে চড়েছিলেন সাতসকালে? ফাঁসি খাওয়ার ইচ্ছে ছিল নাকি? কই দড়ি কই?
– ফালতু কথা বলবেন না। আমি আম খেতে এসেছিলাম। প্রতিদিন আসি। এইযে দেখুন এখনো মুখে আমের গন্ধ।
বলে আবিদের মুখের কাছে নিজের মুখটা এনে টুথপেষ্টের বিজ্ঞাপনের মতোন হাঃ হাঃ করে দুইটা নিঃশব্দে ছাড়ল মুখগহ্বর থেকে। আবিদ নাকমুখ কুঁচকে চরম বীতশ্রদ্ধ হয়ে বলল,
– বেহায়া মেয়ে।
– কী বললেন?
আবিদ একটা শুকনো ডাল মচমচ করে ভেঙে নিচে ফেলে গাছের কাণ্ড আঁকড়ে ধরে নিচে নামতে শুরু করল।তার বিশাল কাঁধের ডানপাশে গুটিশুটি মেরে মুখ লুকিয়ে উরবি। আবিদ নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল,
– আপনাকে বেহায়া বললাম।
– কেন? উদ্ভ্রম নিয়ে যাচাল উরবি।
আবিদ কথা বলতে বলতে গাছের বিভিন্ন ছোটবড় গিরায় পা রেখে রেখে নামছিল,
– এইযে একটা ছেলের সঙ্গে এভাবে জড়াজড়ি করে আছেন তারওপর আবার মুখের কাছে মুখ এনে নিশ্বাস গেলাচ্ছেন। বেহায়ার লক্ষণ এগুলো।
উরবির শেষ নিভু আগুনেও যেন এক পশলা বৃষ্টি নামল। সে মস্তবড় একটা দীর্ঘশ্বাস মোচন করে বলল,
– ঠিক আছে, যা ভাবেন আরকি! বাঁচাইছেন বলে বেঁচে গেলেন। নাহলে নাক ফাটাইতাম আপনার।
– ঐ পারেন শুধু হুমকি ধামকি দিতে।
কথাটা শেষ করেই ঝপ করে এক লাফে গাছ থেকে মাটিতে নামল আবিদ। এলোমেলো হল তার মাথাভর্তি চুলগুলো। উরবি তখনো তার বলিষ্ঠ বাহুবন্ধনের স্কন্ধের ‘পরে আবদ্ধ। কিন্তু আচানক উরবি শঙ্কা কাটিয়ে দুই পা মাটি ছোঁয়ানোর আগেই আবিদ ধপাস করে মাটিতে ছেড়ে দিল তাকে। উরবি সম্পূর্ণ গা নির্ভারে ছেড়ে দিয়েছিল আবিদের ওপর। অবাঞ্ছিত এই ঘটনায় সে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সোজা গিয়ে পড়ল মাটির ওপর। এঁটোখেকোর ফল বুঝি এই! কটির ব্যথায় কুঁকড়ে উঠল উরবি। রইরই করে বলল,
-‘ আপনি আমায় ফেলে দিলেন কেন? জংলী কোথাকার।’ অধিকন্তু আরো একটি অশ্রাব্য গালি দিয়ে ভেঁক করে কেঁদে দিয়ে মনের খায়েশ পূর্ণ করল সে।
আবিদ সেদিকে কর্ণপাতমাত্র করল না। দুইহাতে মাথার চুলগুলো পেছনে ঠেলে উদাসভাবে হেঁটে চলে গেল বাগানের শেষ প্রান্তে। ততক্ষণে চনমন হয়েছে চারিপাশ। বাতাসে হিম হিম ভাবটা কেটে গিয়ে নৈদাঘের উষ্ণতার জানান দিল প্রকৃতি। কাঁঠালবাগানের মাথার সূর্যটা তেজ বাড়ছে উত্তরোত্তর। চোখমুখে উৎকণ্ঠা নিয়ে আমবাগানের দিকে ছুটে এলো ইশতিয়াক সাহেব এবং উরবির ছোটমামি। আবিদ আগেই চম্পট! বাগানের মধ্যিখানে উরবিকে অদ্ভুতভাবে বসে থাকতে দেখে তাঁরা ভেবেই নিল উরবিকে ভূতে ধরেছে।
চলবে…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share