ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ৯

0
4520

#ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ৯
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

এখন আমি শুধু সুযোগ খুঁজছি কিভাবে এগুলো
থেকে মুক্তি পাওয়া যাওয়া যায়।হঠাৎ এসব থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি উপায় আমার মাথায় আসল।আর তা হল আমার বাবার বাড়ি যাওয়া।এমনিতেও কতদিন ধরে যাই না।ওখানে গেলে অন্তত কয়দিনের জন্য হলেও তো এসব থেকে বাঁচব।

সকালে স্যার যখন অফিস যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিলো তখন আস্তে আস্তে স্যারের পিছনে দাঁড়িয়ে বললাম,স্যার একটা কথা ছিল।
স্যার আয়নায় আমার দিকে তাকিয়ে চুল ঠিক
করতে করতে বলল,কি?
আমি বললাম,আমি আমাদের বাড়িতে যাবো।
স্যার ভুরু কুঁচকে বলল,না এখন আমার অফিসে জরুরী কাজ আছে আমি যেতে পারব না।
আমি বললাম,আপনাকে কে যেতে বলেছে আমি একাই যাবো।
স্যার বললো,আমি যখন যেতে পারব তখনই তুমি যাবে।আমার সাথে।
স্যারের কথা শুনে তো আমার বিরক্তি চরম শিখরে উঠে গেল।
ইশশ!ওখানেও তাকে সাথে নিয়ে যাবো যাতে সেখানেও আমার ক্লাস নিতে পারে!
আমি কপাল কুঁচকে বললাম,আমি একাই যাবো।
স্যার আমার দিকে ফিরে বলল,আমি তোমাকে যেতে দিবো না মানে দিবো না।
এই বলে সে অফিসে চলে গেল।
আমিও ভাবছি কিভাবে যাওয়া যায়।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



রাতে সবাই একসাথে খেতে বসেছি।আমার মাথায়
একটা বুদ্ধি আসল।
আমি দুঃখী দুঃখী একটা ভাব নিয়ে আমার শ্বশুরকে বললাম,বাবা আমার না বাসার কথা খুব মনে পড়ছে।আমি কয়েকদিন গিয়ে থেকে আসি?
বাবা নরম গলায় বলল,আরে মা এটা আবার জিগ্যাসা করার কি আছে,তোমার যখন ইচ্ছা তুমি যাবে।
শুনে আমি তো সেই খুশি।কিন্তু আমার খুশির
বারোটা বাজিয়ে স্যার থমথম গলায় বলে উঠল,
না না ও এখন যেতে পারবে না।
আমি চেহারায় কাঁদো কাঁদো ভাব এনে রাখলাম।
এবার আমার শ্বাশুড়ি মা বলে উঠল,দিলি তো মেয়েটার মন খারাপ করে।
তারপর আমার মাথায় হাত দিয়ে বলল,মা তুমি মন খারাপ করো না।তুমি অবশ্যই যাবে।
স্যার রাগী গলায় বলে উঠল,আমি বলেছি না ও এখন যেতে পারবে না।
এবার আমার শ্বাশুড়ি মা স্যারকে একটা ধমক দিয়ে বললেন,চুপ।তুই বলার কে রে?বেশি কথা বললে এখন আমার হাতে মার খাবি।
সুপ্তি কালকেই যাবে।

ইয়াহু!আমার তো ইচ্ছা করছে আমার শ্বাশুড়ি  মাকে গিয়ে একটা টাইট হাগ দেই।
স্যারের মুখটা দেখার মতো।একেবারে থমথম হয়ে রয়েছে।

আমি গুনগুন করে গান গেয়ে জামাকাপড় গোছগাছ করছি আর স্যার রুমের ভেতর অস্থির হয়ে পায়চারি করছে একবার এই মাথায় আরেকবার সেই মাথায়।
হঠাৎ থেমে আমার সামনে এসে বলল,তোমার যেতেই হবে,কয়দিন পর গেলে কি হয়?
আমি জামা ভাঁজ করতে করতেই তার দিকে না তাকিয়েই বললাম,অনেককিছু হয়।
স্যার এবার নরম করে বলল,আর কয়দিন পর যাও না!
কিন্তু আমি সেভাবেই বলতে থাকলাম,না আমি কালই যাবো।আপনি আমাকে এখন কিছুই বলতেও পারবেন না।বললে আমি বাবা মাকে বলে দিব।আর এইবার গেলে আমি একমাসের আগে আসছি না।

আমার এতটুকু বলতে না বলতেই স্যার ঝট করে আমায় কোলে নিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে আমার উপর উঠে তার হাত দিয়ে আমার হাত বিছানার সাথে চেপে ধরে আমার ঘাড়ে তার মুখ ডুবিয়ে কামড় দিয়ে উঠল।
আমি তো আচমকা কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

কিছুক্ষণ পর আমাকে ছেড়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,এখন দেখি তুমি কিভাবে যাও।সবাই যখন জিগ্যাসা করবে এই দাগ কিসের তখন কি বলবে?
আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে আমার উপর থেকে সরিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে হাত দিয়ে দেখলাম,সত্যিই গলার কাছটায় লাল হয়ে কামড়ের দাগটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

এখন আমি দাগ নিয়ে কিভাবে ওখানে যাই।কেউ দেখলে কি ভাববে!এখানে তবুও ওড়না দিয়ে ঢেকে টেকে রাখতে পারব কিন্তু সেখানে এভাবে
তো থাকতেও পারব না।আমার LC ভাবীটা দেখলেই ওড়না টেনেটুনে বলবে এমন করে রয়েছিস কেনো?আর যদি এই দাগ দেখে তাহলে তো আর কথাই নেই! লুচু লুচু কথা বলে খ্যাপাতে শুরু করবে।
আমি আয়নাতেই দেখলাম স্যার আয়নাতে আমাকে দেখে মিটিমিটি হাসতেই আছে।
আমি রাগে দুঃখে আমার ভাজঁ করা জামাগুলো সব তার মুখে ছুড়েঁ মারলাম।

এরপর আমি আর ঐ বাড়ি যেতে পারলাম না।আর এখানেও অনেক দিন পর্যন্ত ওড়না দিয়ে গলা ভালো করা পেঁচিয়ে তারপর রুম থেকে বের হতাম।কেউ জিগ্যাসা করলে বলতাম ঠান্ডা লেগেছে।আর সবাই বলা শুরু করত,নিজের একটু যত্ন নাও আরো কতকিছু তার সাথে স্যারও তাল মিলিয়ে বলতে থাকে, সত্যি সুপ্তি!তুমি একটু নিজের যত্ন নিতে পারো না।বলে হাসতেই থাকে।
আর আমি রাগে কটমট চোখে স্যারের দিকে তাকিয়ে থাকি, ইচ্ছা করে তখন স্যারের গলা টিপে ধরি।

বাড়ি তো যেতে পারলামই না কিন্তু প্রতিদিন সেই স্যারের ক্লাস নেওয়া চলতেই থাকল।একটু পড়া না পারলেই বলে হাত পাতো তারপর চলে বেতের বারি।

দুইদিন হলো স্যারের দুই খালাতো ভাই ভাবী এসেছে।সকালে আমরা সবাই একসাথে বসে নাস্তা করছিলাম।বাবা খেয়ে অফিসে চলে গেছে।রাত বারোটা পর্যন্ত পড়ার কারণে এখনো চোখে ঘুমঘুম ভাব রয়েছে তাই বসে বসে হাম্ দিচ্ছিলাম।
এমন সময় স্যারের এক ভাবী বলল,কি ব্যাপার সুপ্তি রাতে ঘুম হয় নি ঠিকমতো?
আমি ভাবলাম এই সুযোগ।সবার সামনে বলে যদি
স্যারকে থামাতে পারি আমাকে রাত বারোটা পর্যন্ত পড়ানো থেকে।তাই ফট করে বলে ফেললাম,কি করব বলেন? আপনার দেবরের জ্বালায় রাতে একটু শান্তিমতো ঘুমাতেও পারি না।
আমার এই কথা বলার সাথে সাথে স্যারের বিষম উঠে গেল।
আর সবাই মুখ টিপে হাসাহাসি শুরু করে দিল।আর মা তো একটা লাজুক হাসি দিয়ে উঠে চলেই গেল।
আমি বুঝলাম না আমার এই কথায় হাসির কি ছিল।কই স্যারকে সবাই একটু বকা দিবে তা না!
আর স্যারের বিষম তো যেনো থামছেই না।
সেই ভাবী স্যারের সামনে একটি পানির গ্লাস দিয়ে বলল,আহারে! শুভ্র,আমাদের সুপ্তিকে একটু মাঝে মাঝে ঘুমাতেও দিয়ো।
বলেই আবার সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।

বিকেলে সবাই মিলে ঠিক করলাম ঘুরতে যাবো।
আমি খুব সুন্দর একটি বেগুনি রঙের শাড়ি বের করলাম পড়ার জন্য।তখনই স্যার রুমে এসে আমার কাছে বলল,সুপ্তি তুমি তো মনে হয় শাড়ি পড়তে পারো না,দাও আমি পড়িয়ে দেই।
আমি তাকে থামিয়ে বললাম,জ্বি না।আমি একাই পড়তে পারি।এতদিন যে পড়লাম।
স্যার হঠাৎ রেগে গিয়ে বলল,সবকিছুই তোমার পারতে হবে।
বলেই একটা রাগ আর বিরক্ত ভাব নিয়ে চলে গেল।আর আমি তো হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
তার আবার কি হল?কেউ কিছু না পারলে মানুষ রাগ হয় জানতাম,কিন্তু কেউ কিছু পারলে যে রাগ হয় এটা তো জানতাম না।

আমি শাড়ি পড়ে হালকা সাজুগুজু করে বেরোলাম।সাজুগুজু বলতে আমার সেই সিম্পল সাজ।
দুটা গাড়ি করে আমরা বেরিয়েছি।একটাতে স্যারের খালাতো ভাই ভাবী আরেকটাতে আমি,স্যার আর সামিয়া।সামিয়া পেছনে বসেছে।
কখন থেকে দেখে যাচ্ছি স্যার ড্রাইভিং এর ফাঁকে ফাঁকে আমাকে দেখেই যাচ্ছে।এত দেখার কি হল বুঝলাম না।এভাবে তাকাতে না তাকাতে আবার অ্যাক্সিডেন্ট করে বসে।

আমরা সবাই অনেক জায়গায় ঘুরলাম।অনেক মজা করলাম।তারপর এলাম একটি নদীর পাড়ে।
আমরা সবাই গাড়ি থেকে বেরোলে আমি সবার সামনেই বললাম,স্যার চলুন না ওদিকটায় যাই।
আমার মুখে স্যার ডাক শুনে সবাই হাসাহাসি করতে লাগল।স্যারের এক খালাতো ভাই বলল,কিরে শুভ্র তোর বউ তোকে স্যার ডাকে কেন?
আবার এক ভাবী বলল,বোধহয় আমাদের সামনে নাম ধরে ডাকতে লজ্জা পাচ্ছে তাই।সুপ্তি তুমি আমাদের সামনে তোমার স্যারকে নাম ধরে ডাকতে পারো।বলেই আবার হাসতে লাগল।
স্যারও দেখলাম খানিকটা লজ্জা পাচ্ছে।

নদীর পারে আমরা একেকজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুরতে লাগলাম।স্যারের ভাই,ভাবী,সামিয়া কাউকেই এখন আর দেখা যাচ্ছে না।আমি আর স্যার পাশাপাশি হাঁটছি। জায়গাটা একটু নিরিবিলি।হঠাৎ আমার চোখে পড়ল একটি আইসক্রিমের ভ্যান।আমি স্যারকে চিৎকার করে বলতে লাগলাম,স্যার আমি আইসক্রিম খাবো।প্লিজ এনে দেন।
স্যার বলল,এখন এই অসময় অাইসক্রিম খাবে?
উফ!আইসক্রিম খাবার আবার সময় অসময় থাকে।আমি স্যারকে আবার বললাম।
স্যার আমার পাগলামো দেখে আর মানা করতে পারলো না।আমাকে গাড়ীর কাছে দাড়া করিয়ে রেখে আনতে গেল।একটুপর ফিরে আসল দুইটা কোন আইসক্রিম নিয়ে তারপর দুইটাই আমার হাতে দিয়ে দিল।আমি অবাক হয়ে বললাম,আপনি খাবেন না?
সে বলল,না।দুইটাই তোমার।
আমার খুশি আর দেখে কে!দুইটা অাইসক্রিম দুই হাতে নিয়ে একসাথে খাওয়া শুরু করলাম।একটা অলরেডি খাওয়া হয়ে গেছে।আমি খাচ্ছি আর স্যার আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে
আছে।তা দেখে আমি দুষ্টুমি করে আমার হাতের আইসক্রিমটি তার গালে লাগিয়ে দিলাম।স্যার চমকে উঠল আর আমি হাসতে লাগলাম।স্যার হঠাৎ খপ করে আমার হাত ধরে আমাকে গাড়ির সাথে চেপে ধরল।তারপর তার গাল আমার গালের সাথে আস্তে আস্তে ঘষে তার গালের ক্রিম আমার গালেও লাগিয়ে দিল।তার ছোঁয়ায় আমি কেঁপে উঠে একদম ফ্রিজ হয়ে গেলাম।হাতের আইসক্রিমটি মাটিতে পড়ে গেল।স্যার আমার সামনের ছোট চুলগুলো আলতো করে হাত দিয়ে কানে গুঁজে দিয়ে আমার চোখে চোখ রেখে খুব আস্তে আস্তে বলতে লাগল,
আমাকে এখনো স্যার ডাকো কেন?
আমি তার চোখের ভেতর হারিয়ে গিয়েই জবাব দিলাম,আপনিই তো বলেন আপনি আমার স্যার।
স্যার একটু মুচকি হেসে বলল,আমি কি শুধু তোমার স্যারই লাগি?
এতটুকু বলে স্যার ধীরে ধীরে আমার মুখের দিকে আগাতে লাগল।খুব কাছে।তার নিঃশ্বাস আমার চোখে মুখে পড়ছে।আমি ব্লাশ করতে লাগলাম। চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
কিন্তু চোখ বন্ধ করতেই আমার সামনে ভেসে উঠল সেই মেয়ের স্যারকে জড়িয়ে ধরার দৃশ্য।
মূহুর্তের মধ্যেই সবকিছু কেমন যেন হয়ে গেল।আমি স্যারকে একটা ধাক্কা দিয়ে ফেললাম।স্যার পেছনে তাল সামলাতে সামলাতে আমার দিকে আহত চোখে তাকাল।আমার চোখেও পানি এসে পড়ল।আমি পেছনে ঘুরে গেলাম।

তখনই সবাই ফেরত এসে পড়ল।সবাই হেসে হেসে বলতে লাগল তারা কি কি দেখল।আমিও মুখে একটা জোর করে নকল হাসি এনে রাখতে চাইলাম।
তারপর যে যার গাড়িতে উঠে বসলাম।সামিয়া হরবর করে কথা বলেই যাচ্ছে।আমি আর স্যার দুইজনই চুপচাপ।কেউ কারো দিকে তাকাতেও পারছি না।গাড়ি চলতে লাগল।
হঠাৎ সামিয়া গাড়ির ব্লুটুথে একটি গান ছেড়ে দিল।একটি সেড সং চলছে।সামিয়া চেঞ্জ করতে চাইল।কিন্তু হচ্ছে না।তাই ওটাই চলতে লাগল।

   ইয়েহ দূরিয়া….ইন রাহো কি দূরিয়া…..♪♪♪♪♪
  নিগাঁহোন কি দূরিয়া….হামরাহো কি দূরিয়া…♪♪♪
               ফানাহ্ হো সাভিঁ দূরিয়া…….♪♪♪♪
     কিউ কোইইঁ পাস্ হে….দূর হে কিউ কোইইঁ…
           জানে না কোইই ইহা পে….♪♪♪
     আআা রাহা পাস্ ইয়া দূরঁ মে যা রাহা…♪♪
            জানু  না  মে  হুন   কাহাঁন পে…..♪♪♪
       ইয়েহ দূরিয়া…..♪♪♪ইয়েহ দূরিয়া…….♪♪♪♪
      
গানটি শুনতে শুনতে আমি জানালা দিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।বারবার চোখটা ছলছল করে উঠছে।স্যারের দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম,স্যার বাম হাত দিয়ে ড্রাইভ করছে আর ডান হাতটি গাড়ির জানালার উপর রেখে মুঠ করে মুখে ধরে রেখেছে।
তার চোখও লাল হয়ে রয়েছে।

এর কিছুদিন পর স্যারের ভাই ভাবীরা চলে গেল।
আজ আমাদের ভার্সিটিতে রিইউনিয়ন।অনেক বড় আয়োজন করা হবে।আমি সকাল থেকেই নীল রঙের শাড়ি পড়ে তৈরী হচ্ছিলাম।এত বড় অনুষ্ঠান বলে কথা,ভালো করে রেডি তো হতেই হবে।আমি আয়নার সামনে চুল আঁচড়াতে লাগলাম।তখন স্যার এসে আমার পিছনে……….

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে