#ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ১০
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
আজ আমাদের ভার্সিটিতে রিইউনিয়ন।অনেক বড় আয়োজন করা হবে।আমি সকাল থেকেই নীল
রঙের একটি শাড়ি পড়ে তৈরী হচ্ছিলাম।এত বড় অনুষ্ঠান বলে কথা,ভালো করে রেডি তো হতেই হবে।আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে লাগলাম।তখন স্যার এসে আমার পিছনে আলমারির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,বাব্বাহ্ আজ তো দেখি ভালো সাজুগুজু চলছে।
আমি আয়নায় তাকিয়েই হাতে চুড়ি পরতে পরতে
মুখ ভেংগিয়ে বললাম,
চলবেই তো।আজ কলেজে আমাদের সব সিনিয়ররা আসবে।কত বড় আয়োজন!সিনিয়রদের ঠিকমতো আপ্যায়ন করতে হবে না!
স্যার চোখ বড় বড় করে বলল,তাই নাকি।তুমি আবার আপ্যায়নও করতে পারো?তা কি আপ্যায়ন করবে শুনি?
আমি পিছনে ফিরে বললাম,সেটা আপনাকে বলব কেনো?
বলেই একটা ভাব নিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম।
আজ স্যার আমাকে দিয়ে আসে নি।ড্রাইভারকে দিয়ে পাঠিয়েছে।ভার্সিটিতে গিয়ে আমি পুরো বিস্মিত হয়ে গেলাম।এতো দেখি পুরো চেহারা পাল্টে গেছে।এত ডেকোরেশন।
আমার ক্লাসেরই একটি মেয়ে তিশা ওর সাথে আমার খুব ভাব,একটুপর আমার কাছে এসে বলল,এত দেরি করেছিস কেনো?
শুনেছিস?আমাদের সেকশনের মেয়েদের উপর পরেছে সিনিয়রদের আপ্যায়নের ভার।মাহমুদ স্যার বলে গেছে কোনো ত্রুটি যেন না হয়।
তারপর মুখে একটা বিরক্তি ভাব নিয়ে বলল,
বলতো এখন অনুষ্ঠান এনজয় না করে কি সিনিয়রদের পেছনে পেছনে ঘুরবো।
ওর কথা শুনে আমারো চরম বিরক্ত লাগল।
শুভ্র স্যারকে বলা কথাটা যে এভাবে সত্যি হয়ে যাবে কে জানত!আমি তো এমনিই বলে ছিলাম।
হলরুমে গিয়ে দেখলাম শুধু আমি আর তিশা না আমাদের ক্লাসের সব মেয়েরাই চরম বিরক্ত।
সবাই এত সাজগোজ করে এসেছে সেলফি তুলবে
আবার কেউ কেউ বফের সাথে হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়াবে।তা না করে এখন সবাই মিলে হলরুমে সিনিয়রদের জন্য ফুল,মালা,ব্যাচ আরো কত কি রেডি করছে।এই দায়িত্ব তো অন্য ক্লাসের মেয়েদেরও দিতে পারত?
আবার শুনি বেস্ট সিনিয়র স্টুডেন্টদের নাকি ফুলের মালা দিয়ে বরণ করতে হবে গেট থেকে।
উফ!রিইউনিয়নে এত কিছু হয় বলে তো জানতাম না।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
একটুপর আমাদের এক বেশ সিনিয়র প্রফেসর মাহমুদ স্যার এসে বলতে লাগল,এই তাড়াতাড়ি কর।আজকে আমাদের কত সোনার টুকরো ছাত্র ছাত্রী আসবে তাদের যেন কোনো আপ্যায়নে ত্রুটি না হয়।সবাই তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে।
তারা যা চায় তা দিবে।যদি শুনি কাউকে ঠিকমতো দেখাশোনা করা হয় নি তাহলে তোমাদের সব কয়টার আমি পরে খবর নিব।
তারপর বাছাই করতে লাগল কে কে ফুলের মালা দিয়ে বেস্ট সিনিয়র স্টুডেন্টদের বরণ করবে।তারপর আমার হাতেও একটা ফুলের মালা তুলে দিয়ে স্যার চলে গেল।
কখন থেকে গেটে দাঁড়িয়ে আছি হাতে ফুলের মালা নিয়ে।একএক করে সিনিয়ররা ঢুকছে।আর মাহমুদ স্যারের বেস্ট স্টুডেন্টদের স্যার নিজে হাত ধরে ভেতরে ঢুকাচ্ছে।
হঠাৎ আমার সামনে যে, সিনিয়রের ব্যাচ পড়ে দাঁড়াল তাকে দেখে তো আমি আকাশ থেকে পড়লাম।আমার মুখ হা হয়ে গেল।
আমার সামনে একটি নীল রঙের পান্জাবী পড়ে শুভ্র স্যার দাড়িয়ে আছে।চোখে সানগ্লাস।পান্জাবীর হাতা কনুই পর্যন্ত ভাঁজ করে হাতে কালো দামি ব্রান্ডেড ঘড়ি পরেছে।
স্যার সানগ্লাস খুলে আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমটি হাসছে আর আমি মালা হাতে নিয়ে মুখ হা হয়ে দাড়িয়ে আছি।
হঠাৎ মাহমুদ স্যার এসে শুভ্র স্যারকে জড়িয়ে ধরল।তারপর আবেগে আপ্লুত হয়ে বলল,শুভ্র তুমি এসেছো।কতদিন পর তেমাকে দেখলাম।
তারপর সবার উদ্দেশ্যে বলল,আমাদের ভার্সিটির এই পর্যন্ত সবথেকে সেরা স্টুডেন্ট শুভ্র।ওর মতো ভদ্র আর মেধাবী ছাত্র আমি আজ পর্যন্ত দেখি নি।কি মেধা!এই ভার্সিটিতে এক বছর পড়ে স্কলারশিপ পেয়ে লন্ডনে গিয়ে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে।
তারপর আমাকে এক ধমক দিয়ে বলল,এমন হা করে না থেকে মালাটা তাড়াতাড়ি পড়াও।আর হ্যাঁ সুপ্তি,শুভ্রর ঠিকমতো দেখাশোনা করবে এই দায়িত্ব তোমার উপর রইল।
আমি স্যারকে আস্তে আস্তে মালাটা পড়িয়ে দিলাম।স্যার আমাকে একটি চোখ টিপ মারল।
আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলাম,পৃথিবীটা এত ছোট কেনো?আমার স্যার,বর আবার সিনিয়র একজনই।
স্যার মালা পড়ে সামনে চলে যাচ্ছে আর আমি সাইডে তাকিয়ে দেখলাম,সব মেয়েদের মুখ হা হয়ে গেছে।এখন আর কারো চোখে বিরক্তি নেই
সবার চোখে ইমপ্রেসড ভাব।তিশা আমার কাছে এসে বলল,একটু আগে চোখের সামনে এটা কাকে দেখলাম।এমন সুন্দর সিনিয়রের আপ্যায়ন তো আমাদের সারা জীবন করতে দিলেও খুশি।
সবার মুখেই এক কথা।সবাই শুধু শুভ্র স্যারকে খুঁজছে।
সত্যিই নীল পান্জাবীতে স্যারকে আজ দারুন লাগছে।চোখ ফেরানো যাচ্ছে না।
নাহ্!স্যারকে এতটা সুন্দর আজকে না লাগলেও হত।
এই পেত্নিগুলি আবার আমার স্যারকে নজর না লাগিয়ে দেয়।
আমি একজায়গায় দাঁড়িয়ে পেপসির বোতলে চুমুক মাত্রই দিতে নিয়েছি তো স্যার এসে আমাকে বলল,যাও তোমার সিনিয়রের জন্য এক বোতল পেপসি নিয়ে আসো।
আমি চুপচাপ নিয়ে এসে তার হাতে দিলাম।এখন আবার সে বলে খুলে দাও।
এবার আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,কেনো আপনার হাতে কি মেহেদী লাগিয়েছেন?
স্যার বলল,সিনিয়রের কথা শুনছো না তার উপর আবার বেয়াদবি।বলব মাহমুদ স্যারকে?
আমি তার কথা শুনে ভুরু কুঁচকে মুখ ফুলিয়ে তার বোতলটা নিয়ে মুখ খুলে দিলাম।তারপর তার হাতে দিয়ে আমার পেপসির বোতলে একটা চুমুক দিলাম
আরেকটা চুমুক দিব তার আগেই স্যার তার হাতের বোতলটা আমাকে ধরিয়ে দিয়ে আমার বোতলটা নিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চুমুক দিয়ে চলে গেল।
আর আমি ভাবতে লাগলাম সে আমার এটো করাটা কেন নিয়ে গেলো?
রিইউনিয়ন অনুষ্ঠানের প্রথমে ভার্সিটির প্রফেসররা একে একে লেকচার দিতে লাগল।মাহমুদ স্যার তো শুভ্র স্যারের গুনগান গাইতে গাইতেই শেষ।
আমরা সবাই চেয়ারে বসে আছি।আর বোরিং বোরিং ভাষন শুনছি।
স্যার যেখানে বসেছে তার পেছনের সারিতেই আমি বসেছি।স্যারের একদম পিছনে বসেছে আমাদের ক্লাসের সবথেকে ঢঙ্গী মেয়ে রিয়া।আর ওর তিন সিট পাশেই আমি।
রিয়া পেছন থেকেও হা করে স্যারের দিকে তাকিয়ে আছে।আর একটুপর পর এই সেই বাহানা নিয়ে হেসে হেসে কথা বলছে।
আমার তো মনে হচ্ছে আমার পুরো শরীরে যেন কেউ মরিচের গুরো ছিটিয়ে যাচ্ছে।এত হাসাহাসির কি হয়েছে বুঝতে পারছি না।আর স্যারও দেখো কিভাবে দাতঁ কেলাচ্ছে।
হঠাৎ দেখলাম রিয়া ওর হাত স্যারের কাধেঁ রাখল।আমার পুরো শরীর জ্বলে গেল আমি ফট করে উঠে গিয়ে রিয়ার মাথার চুলগুলো ঝাকাতে শুরু করলাম তারপর ওর হাতের জুসের বোতল ওর মাথায় উপুর করে দিয়ে ফেলে দিলাম।প্রফেসর তার ভাষন থামিয়ে দিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।চারপাশে সবাই দাড়িয়ে গেছে।শুভ্র স্যারও আমাকে থামনোর জন্য দাঁড়িয়ে আমার হাত ধরে সুপ্তি সুপ্তি বলে ডাকছে।
আমি শুধু শুনছি সুপ্তি সুপ্তি সু্প্তি…।হঠাৎ তিশার ধাক্কানোতে আমার ফিরে তাকালাম।ও আমাকে বলল,
কিরে এমন দাঁত কিরমির করে কি দেখছিস?কখন থেকে ডাকছি।
তারমানে এতক্ষণ ধরে আমি কল্পনা দেখছিলাম।
তাদের দিকে তাকিয়ে দেখলাম এখনো তাদের হাসি চলছেই।আমি রাগে সেখান থেকে উঠে বাইরে চলে আসলাম।
মাঠে এক কোনায় দাঁড়িয়ে রয়েছি হঠাৎ চোখে সানগ্লাস পড়া একটি ছেলে এসে আমার দিকে হাত বারিয়ে বলল,হে প্রীটি গার্ল,তোমার নাম কি?
দেখেই বোঝা যাচ্ছে সিনিয়র।আমি বুঝতে পারছি না কি করব।এভাবে কোনো ছেলের হাত ধরতে ভালো লাগছে না কিন্তু সিনিয়র হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বারিয়েছে,না করলে অভদ্রতামি দেখায়।
আমি অতি সংকোচে হাতটা একটু একটু করে বাড়াচ্ছিলাম তখনি শুভ্র স্যার এসে সেই ছেলের বাড়িয়ে দেওয়া হাতে হ্যান্ডশেক করে বলল,কিরে রিফাত কি খবর?
সেই ছেলেটি মানে রিফাত স্যারকে জড়িয়ে ধরে বলল,দোস্ত কতদিন পর দেখা।
স্যারের পাশে আরেকটি ছেলে দাঁড়িয়ে ছিল।
তাকে আমি চিনি।নাহিদ ভাইয়া,স্যারের বন্ধু।বিয়েতে দেখা হয়েছিল।নাহিদ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,আরে ভাবী যে।
রিফাত নামের ছেলেটি চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে অবাক হয়ে বলল,ভাবী??
নাহিদ ভাইয়া বলল,হ্যাঁ।এই তো আমাদের শুভ্রর বউ।কিন্তু ভাবী এখানে কেন?
শুভ্র স্যার বলে উঠল,ও এই ভার্সিটিতেই পড়ে।
রিফাত ভাইয়া বলল,ও তার মানে আমাদের জুনিয়র ভাবী।ভাগ্যিস আগেই বললি আরেকটু হলেই তো আমি প্রপোজ করে বসছিলাম।বলেই সে হাসতে লাগল।
শুভ্র স্যারের সম্ভবত কথাটি ভালো লাগল না।
তাদের দুজনকে বলল,ঐ তোদের ওখানে কেউ মনে হয় ডাকছে।
তারা দুজন চলে গেল।আমি ঠিক বুঝতে পেরেছি যে স্যার মিথ্যা বলেছে।
তারপর আমাকে বলল,একটুপর পর কোথায় চলে যাও।খুঁজে পাই না।
আমি মুখ ভেংগিয়ে বললাম,কেনো হাসাহাসি শেষ হয়ে গেছে?বলেই চলে যেতে নিয়েছিলাম আর তারপরই শাড়ির সাথে পা লেগে হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে নিলাম।স্যার এসে আমার কোমড়ে হাত দিয়ে ধরে ফেলল।না হলে এক্ষুণি মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়তাম।কোনোমতে ঠিক হয়ে দাঁড়ালাম।
কিন্তু সমস্যা একটা বেঁধেই গেলো।আমার শাড়ির কুঁচি খুলে গেছে।এখন কি করি?
মুখটা কাঁদো কাঁদো করে কোনোমতে হাত দিয়ে শাড়ি সামলে রাখলাম।
স্যার আমার অবস্থা দেখে বলল,কি যে কর না!তারপর আমাকে ধরে একটি কাছের করিডোরের চিপায় নিয়ে গেল।সব ক্লাস বন্ধ।তাই এখানেই দাঁড়াতে হলো।
এখানে মানুষের ভালোই আনাগোনা।অন্য কোথাও যে যাবো,এই অবস্থায় তা সম্ভবও না।
আমি চিপায় দাঁড়িয়ে কুঁচি ঠিক করতে লাগলাম।
স্যার পেছনে মুখ করে আমায় আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছে যাতে কেউ দেখতে না পারে।
এমন পরিস্থিতিতে কখনো পড়ি নি।কেমন যেনো লাগছে।তাড়াহুড়োয় কিছুই ঠিক করতে পারছি না।
তারউপর জামদানি শাড়ি বিধায় একা একা কুঁচি ধরতেও পারছি না।সকালেও সামিয়া ঠিক করে দিয়েছিল।
স্যার একটুপর বলল,কি হলো?তাড়াতাড়ি কর।
আমি কাঁদো কাঁদো করে বললাম,পারছি না।
স্যার এবার ফিরে আমার দিকে মুখ করে দাঁড়াল।তারপর আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে নিচু হয়ে শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দিতে লাগল।আর আমি তার দিকে
তাকিয়ে রইলাম।স্যার কুঁচি গুলো সব ভাঁজ করে আমার হাতে দিল।আমি তারপর আমার কোমড়ে তা গুঁজে নিলাম।কুঁচি কোমড়ে গোঁজার সময় শাড়ি ফাঁক হয়ে কোমড়ের খানিক অংশ বের হয়ে গেল।স্যার তা দেখে লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিল।আর আমি তো লজ্জায় খুনই হয়ে গেলাম।
তাড়াতাড়ি আঁচল ঠিক করব তখনই কিছু ছেলে এখানে আসছিল বলে স্যার আমাকে আড়াল করার জন্য একদম আমার কাছে এসে পড়ল।যখন হঠাৎ দুজনেই বুঝতে পারলাম আমরা এত কাছে! তখন একে অপরের মুখে চোখ পড়তেই আমরা যেন কোথাও আটকে গেলাম।স্যার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল আর আমি স্যারের চোখে।দুজন যেন চোখের গভীরতায় হারিয়ে যাচ্ছি।পাশ থেকে হালকা হালকা বাতাস আসছে যার ফলে স্যারের সামনের কিছু চুল বারবার কপালে এসে পড়ছে আর আমার সামনের চুলগুলো পেছনের দিকে উড়ছে।মনে হচ্ছে কেউ মনের ভেতর সুর বাজিয়ে দিচ্ছে।আমাদের দুজনকে কেউ যেন স্ট্যচু করে দিয়ে চলে গেছে।
আচ্ছা একেই কি বলে চোখে চোখে কথা বলা?
বিকেলে শুভ্র স্যার আর তাদের গ্রুপের আরো বেশ কিছু ছেলে গোল হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে।আমি দূর থেকেই দেখছি।স্যারের কাঁধে একটি গিটার।সবাই স্যরকে গান গাইতে বলছে।স্যার আমার দিকে একপলক তাকিয়ে মুচকি হেসে গিটারে সুর তোলা শুরু করল।
তারপর আস্তে আস্তে মুখ দিয়ে সুর তুলে গাওয়া শুরু করল।
হুমম হুমমম…হু♪♪হুমমম….হুমমম…হু♪♪♪♪
এতোটা কাছে.. তবুও কেনো আড়াল..♪♪♪
কোন সে ভুলে….আজ এ দ্বিধার দেয়াল♪♪♪
থামিয়ে আঁধার সময়……♪♪♪♪
চাইছে তোমায় হৃদয়……. ♪♪♪♪
আমি ধীরে ধীরে স্যারের দিকে আগাতে লাগলাম।মনে হচ্ছে যেনো সবকিছু থেমে স্লো মোশনে চলছে।আমি আর স্যার ছাড়া যেন এখানে আর কেউ নেই।
বাতাসেও যেন সুর বইছে।আর এর পরের লাইনটা
যেন আমার মনই গেয়ে উঠল…
ভালোবাসি…তাই কাছে আসি…..♪♪♪
ছুঁয়ে আছো এ মন…তুমি এখনও♪♪♪
ভালোবাসি…তাই কাছে আসি…..♪♪♪
হারাবে না এ পথ….জানি কখনও….♪♪♪
সবাই স্যারের কাছে গিয়ে জড়ো হচ্ছে।আর স্যার চোখ বন্ধ করে গিটারে সুর তুলে যাচ্ছে।তার মুখে এক লাজুক হাসি।হঠাৎ আস্তে করে চোখ খুলে আনমনে তাকিয়ে গেয়ে উঠল..
মিশে আছো তুমি…চেনা অনুভবে♪♪♪
ভুলে যাব আজই কেন তবে…..♪♪♪
খুঁজে দেখ যদি….পিছু অভিমানে♪♪♪
প্রিয় স্মৃতিগুলো কাছে টানে….♪♪♪
বেঁধে ছিলে আমায় অনুরাগে………♪♪♪♪♪♪
তারপর আস্তে আস্তে আমার দিকে তাকিয়ে….
♪♪♪♪♪তুমি হীনা পৃথিবী শূন্য লাগে….♪♪♪♪♪♪
ভালোবাসি তাই….কাছে আসি♪♪♪♪
ছুঁয়ে আছো এ মন….তুমি এখনও♪♪♪♪
ভালোবাসি…তাই কাছে আসি♪♪♪♪♪
হারাবে না এ পথ….জানি কখনও♪♪♪♪♪
আমাকে হারিয়ে যাওয়া থেকে ফিরিয়ে আনলো সকলের হাততালি।সবাই হাততালি দিয়ে শুভ্র শুভ্র করে চেঁচাচ্ছে।সবাই এক জায়গায় জড়ো হয়ে গেছে।সত্যি স্যার এত সুন্দর করে গানটা গাইলো কি করে!অসাধারণের থেকেও বেশি।
সন্ধ্যার পরে কনসার্ট শুরু হল।সিংগার আনানো হয়েছে বড় বড়।তারা ব্যান্ড বাজিয়ে গান গেয়ে যাচ্ছে।আর সবাই লাফালাফি করছে।আমার হঠাৎ ওয়াশরুম যাবার প্রয়োজন পড়ল।তিশাকে যে নিবো ও নেচেই যাচ্ছে।কথা শুনছে না।এত জোরে জোরে গান হচ্ছে যে কানের কাছে কিছুই শোনা যাচ্ছে না।তাই আমি একাই ওয়াশরুমে গেলাম।ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আমার পথ আগলে দাঁড়ালো আসিফ।আমার এক ব্যাচ সিনিয়র।ভার্সিটিতে আসার প্রথম দিন থেকে আমার পিছনে পড়ে আছে।আমি কখনো পাত্তা দেই নি।ওকে এইখানে এভাবে দেখে আমি তাড়াতাড়ি অন্য পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছিলাম কিন্তু সেখানেও সে আমার পথ আগলে দাঁড়িয়ে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,কি হলো সুপ্তি আজকে আমার থেকে কিভাবে পালাবে?এই নিরিবিলিতে আমাদের ডিস্টার্ব করতে কেউ আসবে না।আজকে তোমাকে যা লাগছে না!
ওর কথা শুনে আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল।
ভিষণ ভয় লাগছে।আমি আবারো চলে যেতে নিলে ও আমার হাত খপ করে ধরল।আমি হাত ছুটানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছি।কিন্তু পারছি না।খুব শক্ত করে ধরেছে।আমার হাতের কাঁচের চুরিগুলো ভেঙে হাতের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে।খুব ব্যাথাও লাগছে।
আমার চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়ে যাচ্ছে।এই শব্দের ভেতর কেউ আমার চিৎকারও শুনছে না।
ও আমার হাত ধরে কোথাও নিয়ে যাওয়ার জন্য টান দিতেই আমাদের সামনে এসে কেউ………….
চলবে,,,