বোরখাওয়ালী পর্বঃ ১৩

0
2002

#বোরখাওয়ালী
পর্বঃ ১৩
লেখাঃ Mst Liza
,
আয়াত লাবন্যকে নিয়ে ওয়াশরুমের বাইরে আসলো।সবাই লাবন্যর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।যার আপাদমস্তষ্ক বোরখার আবরণে ঢাকা।লাবন্যর সান্ডপান্ডরাও নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এটা কি সেই লাবন্য?

উৎসব জমে উঠেছে।কেউ নাচ করছে, কেউ গান করছে তো কেউ স্টেজে গিয়ে ফান করছে।আয়াত নাচ, গান থেকে একটু দূরেই আছে।মেঘ অনেকবার আয়াতের সাথে কথা বলার চেস্টা করেছে কিন্তু আয়াত মেঘকে এড়িয়ে চলছে।এভাবে দুপুর ১টা বেজে গেল।আয়াতের দাদু এসেছে আয়াতকে নিতে।আয়াত চলে যাবে তখনই টোমি এসে একটা সরবতের গ্লাস আয়াতের হাতে ধরিয়ে দিল।আয়াত গ্লাসটা রেখে দাদুর কাছে চলে যায় আর এদিকে গ্লাস সামনে থাকায় লাবন্য ডগডগ করে সরবতটা গিলে নেয়।আর মাতলামি শুরু করে।

নেহাল প্রচুর রেগে যায়।কে করেছে এটা?

টোমি নেচে নেচে উত্তর দেয় দোস্ত আমি তো এটা আয়াতকে…

নেহাল ধুসসস! করে একটা ঘুষি বসিয়ে দেই টোমির নাক বরাবর।

ওদিকে লাবন্যকে সামলানোও কস্টকর হয়ে পরেছে।নেশার ঘোরে কি কি করে যাচ্ছে তা নিজেও যানে না।আয়াত, নেহাল, দাদু আর মেঘ চারজন মিলে মেঘের গাড়িতে করে লাবন্যকে বাড়ি পৌঁছাতে যায়। নেহাল রাস্তায় আজকের পুরো ঘটনা দাদুকে খুলে বলে আর আয়াতের কাছে ক্ষমা চায়।লাবন্য আয়াতের কাধেঁ মাথা রেখে ঢুলে পরে।

লাবন্যকে বাড়িতে আনলে, সখিনা দরজা খুলেই চিৎকার।সাহেব জলদি আহেন।দেইখা যান কি কান্ড ঘটছে!

আবির সখিনার চিৎকার শুনে দৌড়ে আসে।সিঁরি দিয়ে নামতে নামতে, কি হয়েছে সখিনা আপা?

আবির নিচে নেমে দরজার দিকে তাকাতেই অবাক।আবিরের চোখে আর কিচ্ছু আসছে না। শুধু বাবাকে দেখছে।এতো বছর পর তার বাবার সাথে এইভাবে দেখা হবে সে ভাবে নি কখনও।অন্যদিকে আবিরের বাবারও চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে।এ যেন এক নিছক মায়া। আবার তীব্র রাগও বুকের ভেতর পুষে আছে।

তোমরা লাবন্যকে নিয়ে ভেতরে যাও।আমি ওর বাবার সাথে কথা বলছি।

বাবা, কেমন আছো?

কিসের বাবা? কোন বাবা? আমার ছেলে ১৯বছর আগেই মারা গেছে।

প্লিজ বাবা ওভাবে বলো না।কোথায় ছিলে তোমরা?আমি ১৭ বছর আগে গিয়েছিলাম খুলনায়।যেই বাড়িটাতে আমরা থাকতাম সেখানে তোমাদের কাউকে খুজে পাই নি।আমি যানি আমি অনেক বড় অপরাধ করেছি কিন্তু ক্ষমা চাওয়ার সুযোগটাও তো কখনও পাই নি বাবা! হাটু গেরে বসে ২হাত জোড় করে কান্নারত অবস্থায় বলল আবির।

অপরাধ করেছো তুমি? পাপ করেছো পাপ! তোমার মতো পাপি ছেলের আমার প্রয়োজন নেই।আর খুলনা থেকে ঢাকায় আমরা কেন এসেছি সেটা যানার কোনও অধিকার তুমি রাখো না!

প্লিজ বাবা ওভাবে বলো না।আমার আরি কেমন আছে? আর আমার মেয়ে! যাকে আমি এইটুকু ছোট্ট থাকতে দেখেছিলাম।

তোমার মেয়ে? হাসালে আবির! একটা কথা শুনে রাখ আয়াত যেন কিছুতেই যানতে না পারে তুমি ওর বাবা।ছোটবেলা থেকে ও যেনে এসেছে ওর বাবা খুব ভালো মানুষ ছিল।বাবা শব্দটার প্রতি একটা সম্মাণ সৃস্টি হয়েছে আমার দাদুভাইয়ের মনে।সেই সম্মাণটা তুমি ঘৃণায় পরিনত করে দিও না।

আয়াত! আমার মেয়ে আয়াত! কোথায় ও?

দাদু চলো এখন যায়!

হ্যাঁ দাদুভাই চলো!

আবির আয়াতকে পা থেকে মাথা অবদি একবার তাকিয়ে দেখল।একদম আরির মতোই হয়েছে। খুব ইচ্ছা করছে মেয়েটাকে একবার জড়িয়ে ধরতে।

আয়াত!

হ্যাঁ আংকেল! কিছু বলবেন?

না কিছু বলবে না।তুমি চলো তো দাদুভাই।এমনিতেই অনেক দেরী হয়ে গেছে তোমার মাম্মাম চিন্তা করবে।আর হ্যা, মি.আবির খান।মেয়েকে সুশিক্ষা তো দিতে পারেন নি।শুধু ধন-দৌলতই বাড়িয়েছেন।এখন একটু মেয়েকে নিয়ে ভাবুন।বলেই চলে যাই আয়াতের হাত ধরে টানতে টানতে।

আচ্ছা দাদু আংকেল মনে হয় কিছু বলতে চাচ্ছিল আমাকে!

কই তেমনটা তো আমার মনে হলো না দাদুভাই।

দাদু!

বল,

লাবন্য চৌধুরীর বাবার নাম আবির খান হয় কিভাবে?

ছরি দাদুভাই আবির চৌধুরী বলতে যাবো তা আসলে আমার গুলিয়ে গিয়েছে!

ওহহ আচ্ছা।

আয়াতকে ওভাবে নিয়ে যাওয়ায় আবিরের কস্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।আবিরকে কাঁদতে দেখে মেঘ এসে শান্তনা দিচ্ছে।মেঘ তখন আবির আর আয়াতের দাদুর বলা সব কথা শুনে নিয়েছে আড়াল থেকে।
তাই আবিরের কাছে জানতে চাইলে আবির ১৯বছর আগের সব ঘটনাই মেঘকে খুলে বলে।

তার মানে আয়াত আপনার মেয়ে আংকেল?

হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ।আয়াত আমার মেয়ে। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস দেখ আজ নিজের মেয়েকেই আমি আমার পরিচয় দিতে পারবো না।বলতে পারবো না তুই আমার মেয়ে।

আপনি ভাববেন না আংকেল সব ঠিক হয়ে যাবে।

কি ঠিক হয়ে যাবে আবির? নেহা এতোক্ষণ বাড়িতে ছিল না।এইমাত্র বাড়িতে ফিরলো।

কই কিছু না তো! আবির চোখের পানিটা মুছে নেয়।

ইনি কে?

একে চিনছো না? আমার বন্ধুর ছেলে। যার কথা তোমাকে বলতাম আমাদের লাবন্যর জন্য।এ সেই বিজনেন্সম্যান মি.মেঘ রহমান।

কি? আপনি বিজনেন্সম্যান মি. মেঘ রহমান? আপনার সফলতার গল্প কত্তো পরেছি।আরে আবির তুমি তো আমাকে আগে বল নি ইনিই তোমার সেই বন্ধুর ছেলে।
নেহা মনে মনে স্বপ্ন দেখছে, ছেলেটাকে যদি আমাদের লাবুর সাথে বিয়ে দিয় তাহলে তার অধ্যেক সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়া যাবে।

আচ্ছা আবির আংকেল অন্য একদিন আসবো আজকে আসি।

সেকি বাবা কিছু খেয়ে গেলে হতো না?

না আন্টি আজ খুব তারা আছে অন্য একদিন।।।

ঘুম ঘুম চোখে তাকাচ্ছে লাবন্য।একটু উঠে বসতেই মাথাটা ধরেছে।একি লাবন্য তুই উঠে পরেছিস।

নেহাল কি হয়েছিল আমার?

ওই টোমিটা তোকে…

নেহালের আর কিছু বলার আগেই লাবন্যর সব মনে পরে গেল।এই সব আমার প্রাপ্য ছিল।আমি সত্যিই খুব খারাপ রে! আজ আমি আমার নিজের সব ভুল বুঝতে পেরেছি।আর কখনও কারও পিঁছনে লাগবো না।

আচ্ছা আমি এখন আসি অনেক রাত হয়েছে কাল ভার্সিটি যাবি?

যানি না! কিছুদিন নাও যেতে পারি।

ওকে।নিজের যত্ন নিস।বাই।

রাত ১টা। বিছানায় ছটফট করছে মেঘ।একবার এপাশ তো একবার ওপাশ।চোখ বন্ধ করলেই একটি মুখ বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে।আয়াত! এই বোরখাওয়ালী আমায় তো ঘুমাতেই দিচ্ছে না।তাহলে কি আমি আয়াতকে? নাহ কি ভাবছি আমি! আমার তো লাবন্যর সাথে বিয়ে হওয়ার কথা।আয়াতকে ভেবে ভেবেই মেঘের রাতটা পার হয়ে গেছে।ফজরের আজানে মেঘের মা যখন নামাজ পরতে যায়।অজু করে ঘড়ের দিকে যেতেই মেঘের ঘড়ের লাইট অন দেখে এগিয়ে আসে।

কি হলো মেঘ তুই যেগে আছিস?

মেঘ গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে।মা আমি কি করব বুঝতে পারছি না!

কি হয়েছে আমাকে বল?

মেঘ আয়াতের বাবার অতীতের সব কথা মাকে খুলে বলে।মা আবির আংকেলের মেয়ে আয়াত।তাকে ছাড়া যে আমি একমুহূর্তও ভাবতে পারছি না।এখন আমি কি করব মা তুমিই বলও?

আচ্ছা মেঘ, তুই কি কখনও লাবন্যকে ভালোবাসি বলেছিস?

না মা।

তাহলে আর কি! তোর বাবার স্বপ্ন ছিল তার প্রিয় বন্ধুর মেয়ের সাথে তোর বিয়ে দেবে। দেখ লাবন্য যেমন তোর আবির আংকেলের মেয়ে আয়াতও তো তেমনই তোর আবির আংকেলেরই মেয়ে।আয়াতের সাথে তোর বিয়ে হলেও তোর বাবার স্বপ্নটা পূরণ হবে।এখন তুই ভেবে দেখ কি করবি?

এই কথাটাতো আমার মাথায় আগে আসে নি।তুমি যানো না মা কত বড় একটা ভুল ডিসিশন নেওয়ার থেকে বাচিঁয়েছো আমায়।

এখন একটু ঘুমা তো।চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সারারাত ঘুমাসনি।

ভার্সিটিতে,,
মেঘ আয়াতের জন্য অপেক্ষা করেই চলেছে। এখনও আয়াত আসে নি। মন খারাপ করে বসে আছে মেঘ।আচ্ছা আয়াত কি এখনও আমার উপর রেগে আছে? ওকি আমার সাথে আর কথা বলবে না? নাহ আয়াত এখনও কেন আসছে না!

এখানে বসে বসে কি ভাবছেন?

মেঘ মাথা তুলে আয়াতকে সামনে দেখতে পেয়েই জড়িয়ে ধরল।আয়াততো থম হয়ে আছে।বলা নেই কওয়া নেয় হুট করে একজন পরপুরুষ এইভাবে তাকে জড়িয়ে ধরলো!

মেঘ ছাড়ুন আমাকে!

বিশ্বাস কর আয়াত আগে কখনও এমনটা হয় নি আমার সাথে।কাল সারারাত তোমার ওই মুখটাই শুধু আমার চোখে ভেসেছে।তোমাকে আমি কতোটা ভাল….

আয়াতের এক ধাক্কায় মেঘ ছিটকে পরে।আপনি একটা খারাপ লোক।আমাকে স্পর্শ করেছেন কোন অধিকারে?

আয়াত আমার কথাটাতো শোনো?

কি শুনবো আপনার কথা? আপনি একটা নোংরা লোক।নইলে এইভাবে একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরতে পারতেন?

ওই কিসের নোংরা আমি? আমি তো তোমাকে ভালোবাসতে চেয়েছি।

দেখুন, আপনার এইসব প্রেম ভালোবাসার কথা আমাকে একদম শুনাতে আসবেন না।

কেন ভালোবাসা কি অন্যায়?

আপনার কাছে পবিত্র হতে পারে কিন্তু আমার কাছে এটা এক প্রকার পাপ।আমি এসব বিবাহ পূর্ব ভালোবাসায় আগ্রহী নই।

কিন্তু আয়াত আমি তো তোমাকে..

আমি আর কিছু শুনতে চাই না মেঘ।এখন আমার মুখ থেকে খারাপ কিছু বের হবার আগেই আপনি আমার সামনে থেকে চলে যান।

আয়াত!

মেঘ প্লিজ!

মেঘ চলে যায়।আর আয়াত সেথায় বসে রয়।খুব রাগ হচ্ছে।আবার মনের মধ্যে এক অজানা অনুভুতির যানান দিচ্ছে।তখন মেঘের ওই ভাবে জড়িয়ে ধরাটা, তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না আয়াত।কেমন যেন একটা শিহরন সৃস্টি হচ্ছে আয়াতের শরীরের প্রতিটা রোমে রোমে।কেন করল মেঘ এমনটা? একে কি ভালোবাসা বলে? আচ্ছা না ছুঁয়ে ভালোবাসা যায় না? এমন ভালোবাসার তো কোনও নাম নেই ইসলামিক দৃস্টিকোণ থেকে।

আয়াত মেঘকে খুঁজছে কোথাও পাচ্ছে না।হয়তো ভার্সিটি থেকে চলে গেছে।তারপর আর ২সপ্তাহ আয়াত মেঘকে দেখে নি।সাহশও হয় নি মেঘকে একবার ফোন করে খোঁজ নেবে।আজ দূর থেকে মেঘের গাড়ি আসতে দেখে দৌড়ে যায় আয়াত।মেঘ গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালে অপজিট পাশ থেকে আরেকজন গাড়ি থেকে নামলো।তারও আয়াতের মতো আপাদমাস্তষ্ক বোরখার আবরণে ঢাকা।

সে এসেই আয়াতের সামনে দাড়ালো।

আমাকে চিনতে পারছো না? আমি লাবন্য।থ্যাংকস আয়াত।তোমার জন্য আমি অনেক কিছু পেয়েছি।এই নাও।আমার বিয়ের কার্ড।সামনের সপ্তাহে ৫ তারিখে আমাদের বিয়ে।মেঘ বলল সবার আগের কার্ডটা তোমাকেই দিতে।

আয়াত লাবন্যর হাত থেকে বিয়ের কার্ডটা নেয়।চোখ বেয়ে গড়িয়ে আসা অশ্রুগুলো অনেক কস্টে আটকে রাখে।লাবন্য আয়াতকে সাথে নিয়ে একে একে পুরো ভার্সিটির সকলকে বিয়ের কার্ড দিয়ে নিমন্ত্রণ করছে।আর আয়াত দর্শক হয়ে চাপা কস্ট নিয়ে লাবন্যর সাথে লাবন্যর সুখটুকু উপভোগ করছে।ধীরে ধীরে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো।এখন মেঘের আসল পরিচয়ও সবাই যানে।মেঘ তো এই ভার্সিটিতে এসেছিল শুধু লাবন্যর জন্য।ভার্সিটি গেলেই এখন মেঘ-লাবন্যর লাভ-স্টোরি সকলের মুখে মুখে।আজ লাবন্যর গায়ে হলুদ ছিল।ভার্সিটির সকলে গেলেও আয়াত যায় নি।কাল অবশ্যই যেতে হবে।কাল যে বিয়ে।আজ আবির এসেছে লাবন্যর বিয়েতে তার পরিবারের সবাইকে নিমন্ত্রণ করতে।আয়াতকে তার দাদু ঘড়ে যেতে বলে কিন্তু আয়াত লুকিয়ে তাদের সব কথা শুনে নেই।অনেক বড় একটা ধাক্কা খায় যখন যানতে পারে আবির তার বাবা।

আয়াত কস্টে ঘড়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।ঘড়ের সব জিনিসপত্র ভাংচুর শুরু করে।কেন আমাকে সারাজীবন বলা হয়েছে আমার বাবা মৃত! আয়াত আবিরের ডাইয়েরিটা হাতে নিয়ে পুরিয়ে ফেলে।ঘড়ের ভেতরে জিনিসপত্র ভাংচুরের আওয়াজ পেয়ে সকলে দৌড়ে আসে।আবির বাইরের থেকে নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে দরজা ভেঙে মেয়েকে এসে জড়িয়ে ধরে।কি করছিস কি মা? আয়াতের সামনে ডাইয়েরির পাতাগুলো পুরে ছাঁয় হয়ে আছে।আয়াতের মা এসে আয়াতের গালে সজোরে থাপ্পড় মারে।কি পুরিয়েছো তুমি এটা? মারও মাম্মাম! আমাকে তুমি যতো খুশি মারও।তবুও মাম্মাম এই লোকটাকে আমি বাপি বলে মানতে পারব না।এই ডাইয়েরির প্রত্যেকটা কথা মিথ্যা।এই লোকটা সম্পূর্ণ ভুলে ভরা।তোমাকে ঠকিয়েছে এই লোকটা।তুমি এই ডাইয়েরিটা আর কোনও দিন পরবে না।কখনও এই লোকটার কথা মনে করে কস্ট পাবে না।আয়াতের দাদা-দাদি আবিরকে আয়াতের এমন অবস্থা দেখে অনেক অপমান করে তারিয়ে দেয়।

অনেকদিন পর আয়াত ভার্সিটিতে আসে।এসে শোনে লাবন্যর সাথে নেহালের বিয়ে হয়েছে।লাবন্যর হঠাৎ এতো চেন্জ হয়ে যাওয়া আর নেহালের লাবন্যর প্রতি এতো কেয়ারিং এতো দিনের বন্ধুত্ব ভালোবাসাতে পরিণত হয় মনের অজান্তে।আর মেঘ সেটা যানতে পেরে নেহার ভয়ে প্রকাশ করে না। কারণ নেহার কাছে মেঘ হচ্ছে সোনার ডিম পারা হাসঁ।তাই মেঘ বিয়ের দিন নিজের জায়গায় নেহালকে বর বেশে বিয়ের আসনে বসিয়ে দেয়।আর মেঘ? সে কোথায়?

লাবন্য আর নেহাল আয়াতকে মেঘের কাছে নিয়ে যায়।আয়াতের সামনে মেঘ কান ধরে হাটুঁ গেরে বসে পরে।ছরি আয়াত! এটুকু অভিনয় করতেই হলো নেহাল-লাবন্যর জন্য।

আয়াত মেঘকে ইশারাই উঠে দাড়াতে বলে।মেঘ উঠে দাড়ালেই আয়াত মেঘের বুকে কয়েকটা কিল বসিয়ে দেয়।আমাকে কেন বলেন নি?

ছরি বললাম তো।

ছরি বললেই সব ঠিক হয়ে যায়?আমার চোখের পানির বুঝি কোনও মূল্য নেই আপনার কাছে?

আচ্ছা ঠিক আছে, আজই মাকে পাঠাবো তোমাদের বাড়িতে বিয়ে প্রস্তাব নিয়ে।

মেঘ আয়াতকে আবিরের কথা বলে।আবিরের কোনও কথায় আয়াত শুনতে চাই নি।মেঘ বোঝায় আবির পরিস্থিতির শিকার হয়ে নেহাকে বিয়ে করেছে।শুধুমাত্র লাবন্যর কথা ভেবে।মেঘের সব কথা শুনে আয়াত আবিরকে বাবা হিসেবে মেনে নেয়।আর তাই আবির এখন তার পরিবারের সাথে থাকে।

লাবন্যর বিয়ে হয়ে গেল।আবির তার পরিবারের সাথে থাকতে শুরু করল।আর নেহা একদম একা।আজ টাকা,পয়সা, ধন,দৌলত সব নেহার কাছে আছে।নেই শুধু আপনজনেরা।নেহা আর বেশীদিন বাঁচবেও না।ডাক্তার বলেছে ব্রেন্ডটিউমার।এখন লাস্ট স্ট্রেজ চলছে।বরচ ১মাসের মতো সময় নেহার হাতে আছে।জীবনের শেষ সময়ে এসে নেহা তার পাপের জন্য অনুশোচনা করছে।নেহা তার স্থাবর,অস্থাবর সব সম্পত্তি লাবন্য আর আয়াতের নামে লিখে দিয়ে লইয়ারকে নিয়ে আবিরের বাড়িতে যায়।কিন্তু আরিয়া নেহাকে ফিরে যেতে দেই না।জীবনের শেষ সময়টা নেহা অনেক যত্ন আর ভালোবাসা পেয়েছে।আর বুঝে গেছে অর্থ, সম্পদ আর অহংকারই জীবনের আসল সুখ নয়।জীবনের আসল সুখই হচ্ছে ভালোবাসা।

৩০বছর পর।আজ আবির আর আরিয়ার বিবাহের ৫০বছর পূর্ণ হলো।বয়সের ছাপ তাদের শরীরে পরে গেছে।সেই যৌবনটা এখন আর নেই।কিন্তু তাদের ভালোবাসা সেই আগের মতোই আছে।অন্ধকার রাতে ছাদে বসে আরিয়া আবিরের কাধেঁ মাথা রেখে আকাশের চাঁদটাকে দেখছে।আর আবির ওই চাঁদটাকে ডেকে বলছে।এই চাঁদ দেখও আমাদের পথচলা আজ ৫০বছর পূর্ণ হয়েছে।কিন্তু এখন আর আমার বউটার আখঁ চিবিয়ে খাওয়ার দাঁত নেই।এই আবির কি সব বলছো? আরে দাঁত নেই তো কি হয়েছে বিলিন্ডার তো আছে এই নাও।বলেই এক মগ আখেঁর রস আরিয়ার হাতে তুলে দিল।।।

।।।সমাপ্ত।।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে