বোরখাওয়ালী পর্বঃ ০৬

0
1562

#বোরখাওয়ালী
পর্বঃ ০৬
লেখাঃ Mst Liza
,

সন্ধ্যায় ইফতার শেষে মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হলাম ডাগবাংলা শপিং মলের উদ্দেশ্যে।এই দিনটাই শপিং মলে প্রচুর ভীর থাকে।হবেই না’বা কেন কাল যে ঈদ! চারিদিকে মানুষ গজগজ করছে।অনেক ঠেলাঠেলির মধ্যে দিয়ে একটি দোকানে গিয়ে বসলাম।গিয়ে বললাম, আমাকে কিছু থ্রীপিস দেখান তো ভাই! সেখান থেকে পাচঁটা ফুল হাতার লং সেলোয়াড় কামিজ কিনে নিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম।বাড়ি এসে দেখি মা ব্যাগ থেকে বাজার নামিয়ে ডালাতে সাজিয়ে রাখছে আর বাবা খাতা-কলমে হিসাব করছে কতটাকা খরচ হলো।রেখার ঘড়ে গিয়ে দেখি পাশের বাসার ভাবীরা হাতে মেহেন্দি দিচ্ছে।আর বোরখাওয়ালী মেহেন্দির ডিজাইনের বইটা নিয়ে নারাচারা করছে।আমি গিয়ে শপিং এর ব্যাগগুলো রেখার সামনে রেখে বললাম তোর আরিয়া আপুকে নিয়ে দর্জির কাছে মাপ দিয়ে আসিস কতোদিন এইভাবে বোরখা পড়ে থাকবে?!

সময়টা রাত ১১টার কাছাকাছি।খাওয়া-দাওয়া শেষে ছাদে এসে দাড়িয়ে ওই বিশাল আকাশটাকে দেখছি।আকাশের ছোট্ট নব চাঁদটা বড়ই সুন্দর লাগছে দেখতে।ইচ্ছে করছে এই রাতটা আমার মায়াবতীকে সাথে নিয়ে কাটিয়ে দিতে।আজ কেন যানি না ওর প্রত্যাবর্তন আমাকে আরও বেশী অনুভব করাচ্ছে।ওকে কাছে পেতে খুব ইচ্ছে করছে।কিন্তু সাহশ হচ্ছে না কিছুতেই ওকে বলতে কতটা ভালোবাসি! ও যদি না বলে দেই!!

হঠাৎ পিঁছন থেকে কারও হাতের নরম স্পর্শ অনুভব করলাম আমার কাধেঁ।ঘুরে তাকিয়ে দেখি আরি।আমার মনে আর কোনও বাধঁ মানছে না।এতোক্ষণতো আমি ওকে নিয়েই ভাবছিলাম।এই চাদঁনি রাতে হালকা আলোর ঝলকানিতে ওকে হঠাৎ এভাবে দেখে আমার খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছে!

-এই অন্ধকার রাতে ছাদে এভাবে একা দাড়িয়ে কি করছেন?
-ওই আকাশটাকে দেখছি! আর..
-আর কি?
-তোমার কথা ভাবছি।(আবেগের বসে আমি কি বলে যাচ্ছি তা নিজেও যানি না)
-মানে?
-যানো আরি সেই ছোটবেলায় তোমার দুস্টু, মিস্টি কথাগুলো আমার শুনতে খুব ভালোলাগতো।যেদিন শুনলাম তুমি আর মামি হারিয়ে গিয়েছ সেদিন আমার খুব কস্ট হচ্ছিল। বুকের ভেতরটা শূণ্যতায় ভরে গিয়েছিল।তখন থেকেই এই আকাশটার দিকে তাকিয়ে থাকতাম।আর তোমাকে ভাবতাম।তুমিও তো কোথাও না কোথাও এই আকাশটার নিচেই ছিলে।আমার মনের সব জমানো কথা ওই চাদঁটার কাছে শেয়ার করতাম।আর বলতাম তোমাকে গিয়ে বলতে আমার কথা! এতো বছরে তুমি অনেক বড় হয়ে গেছ।অনেকটা বদলেও গেছ।আমি যানি না এখন তুমি দেখতে কেমন হয়েছ! শুধু যানি তুমিহীনা এই আমির জীবনটাই ব্যর্থ।
-কি বলছেন এসব আপনি?
-সত্যি বলছি আরি বিশ্বাস কর আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি! আর তোমাকে বিয়ে করতে চাই! আমি যানি না আমি তোমার মনের মতো হতে পারবো কিনা! তবে তুমি চাইলেই আমাকে তোমার মনের মতো করে গড়ে তুলতে পারবে! আমাকে একটা সুযোগ দাও প্লিজ!!
-আমি এখানে আপনাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে এসেছিলাম।আর এসে আপনার মুখে যা শুনছি আমি সত্যিই খুব অবাক হচ্ছি।
-কি বলতে এসেছিলে?
-এখন আপনাকে আমার আর কিচ্ছু বলার নেই।বলেই চলে গেল।
ওর এভাবে চলে যাওয়া দেখে আমার হুশ ফিরলো।কি বললাম এসব আমি! আবেগের বসে আমি তো সব বলে ফেললাম।ও রেগে যাবে নাতো! সিইট আমি একটু নিজের ভেতরের আবেগটা কন্ট্রোল করে রাখতে পারলাম না? যদি আমার সাথে আর কথা না বলে? কি করব এখন আমি?

সারাটা রাত জেগে কাটিয়ে দিলাম।সকালে বাবার সাথে ঈদের নামাজ পড়ে এসে রুমে যাব তখন বাবা আর মা আমাকে নিয়ে তাদের রুমে বসলো আগামীকাল মেয়ে দেখতে যাওয়ার কথা বলতে।আমি তো বাবা-মাকে অনেক বুঝিয়েছি।এবার তারা আর ছাড়ার পাত্র না।আমার মাথায় কিছুই খেলছে না।সবকিছু যে আমি গুলিয়ে ফেলছি।দুহাত জোড় করে বাবা-মাকে বোঝালাম।প্লিজ আমাকে তোমরা আর বিয়ের কথা বলো না।আমার এসব শুনতে ভালো লাগছে না।বলেই বাবা-মায়ের রুম থেকে বেড়িয়ে আসবো ঠিক তখনই আরি পাশ কেটে বাবা-মায়ের রুমে ঢুকলো।ওকে দেখে ভাবলাম, কাল রাতের জন্য ওকে সরি বলতে হবে, রুমের বাইরে দাড়িয়ে থাকি ও বের হলেই তখন বলব।তাই দাড়িয়ে ওর অপেক্ষা করছি।আর ভেতরে মায়ের সাথে ওর কথা চলছে,,
-কি হলো ফুপ্পি ওভাবে বসে আছো কেন? রান্না বান্না করবে না, নাকি? শুধু সেমাই খেয়েই সারাদিন থাকা যাই?
-মন ভালো নেই রে মা।
-কেন আমার ফুপ্পিটার আবার কি হলো?
-কি আর হবে।মা হলে ছেলেমেয়ের চিন্তা সবসময় মাথায় ঘুরপাক খাই।আমার ছেলেটা কিছুই বোঝে না।আমাদের বয়স হচ্ছে। কতদিন এভাবে ওদের যত্ন নিতে পারব।এখনই তো সময় ওর বিয়ে করার কিন্তু রাজিই হচ্ছে না!
-কি বললে!! তোমার ছেলের বিয়ে দিবে?
-হ্যা কিন্তু ওতো মেয়ে দেখতেই রাজি হচ্ছে না।
-কেন রাজি হচ্ছে না?
-যানি না! কাউকে পছন্দ থাকলে আমাদের বলুক! কিন্তু তাও বলছে না!
-একটা কথা বলব ফুপ্পি?
-হুমম বল?
-তোমার ছেলেটাকে আমায় দিয়ে দাও।ওকে বল আমায় বিয়ে করতে!
-তুই আমার ছেলেকে বিয়ে করবি মা?
-কেন তোমার আপত্তি আছে?
-কিসের আপত্তি থাকবে! তুই তো আমারই মেয়ে! তোরও তো বিয়ে দিতে হবে।যদি ঘড়ের মেয়ে ঘড়েই থেকে যায় তাহলে তো তার থেকে খুশীর আর কিছুই নেই। কিন্তু আমি ভাবছি আমার ছেলেটাকে নিয়ে।ওকি রাজি হবে?

আমি এতোক্ষণ রুমের বাইরে দাড়িয়েই সব কথা শুনেছিলাম।আরি আমাকে বিয়ে করতে চাই কথাটা শুনেই আমার মনের ভেতরটা খুশীতে ভরে উঠল।আমি খুশিতে ওখানে দাড়িয়েই বললাম,
-মা আমি তোমাদের সব কথাই এতোক্ষণ শুনেছি।ওকে বলে দাও আমার ওকে বিয়ে করতে কোনও আপত্তি নেই।

মা হা হয়ে আছে! এতো তারাতারি আমার সিদ্ধান্ত চেন্জ হতে দেখে হয়তো অবাক হয়েছে! কথাটা বলার পর আমারও একটু লজ্জাবোধ হচ্ছিল।তাই আমি ওখান থেকে আমার রুমে চলে আসি।মনে মনে খুশীতে লাফালাফি করতে থাকি!!

পরের দিন সন্ধ্যার পর মসজিদে আমাদের বিয়ে হয়।বিয়ের সকল নিয়ম আরির সাথে আলোচনা করেই করা হয়েছে।আমাদের গায়ের হলুদও হয়েছিল।ওর পর্দার কোনও ক্ষতি হয় নি।আলাদা রুমে কিছু প্রতিবেশী ভাবী আর চাচিরা ওর গায়ের হলুদের আয়োজন করে।এদিকে রাত হয়ে গেল।খাওয়া-দাওয়া শেষ।আমার বউয়ের মুখটাই এখনও আমার দেখা হলো না।অথচ তাকে আমি কত্তো ভালেবাসি।ভালোবাসার কথা বলতেই তার ছোটবেলার ওই মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে আসে।

রেখা আর প্রতিবেশী ভাবীরা আমাকে বাসর ঘড়ে ঢুকিয়ে দিয়ে চলে গেল।আমার রুমটা আমি নিজেই চিনতে পারছি না।এত্ত সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।ফুলে ফুলে কেমন যেন অন্য রকম এক রাজ্যে মনে হচ্ছে।যেই রাজ্যে আমি শাহাজাদা আর আমার শাহাজাদী আমার জন্য ফুলের বিছানায় বসে আছে। এতোদিনের সব অপেক্ষার আজ বাধঁ ভাঙবে।আমি দরজাটা বন্ধ করে বিছানার কাছে গিয়ে দাড়াতেই আরি আমাকে নেমে সালাম করল।আমি ওকে উঠিয়ে সালামের উত্তর দিলাম।আর বললাম, আমার বউটা দেখছি বাসর ঘড়েও বোরখা পড়েই আছে।আজ কি আমি তার মুখটা দেখতে পারব?

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে